নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।

মৌতাত গোস্বামী শন্তু

মানুষ বলে ভুল করলেও নিজেকে মানুষই বলব আমি।

মৌতাত গোস্বামী শন্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি আবেদন- অনুগ্রহপূর্বক ঠিক বাংলা বানানরীতি অনুসরন করুন, বাংলা ভাষাকে অবিকৃত রাখুন।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪৩

ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগগুলোয় অনেক লেখা দেখা যায় যেখানে বাংলা বানানের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়, যতি চিহ্নের বংশ ধ্বংস করা হয়। যারা ফেসবুকে বা ব্লগে লিখেন, ধরে নেওয়া যায় তারা বেশিরভাগই অন্ততপক্ষে দশম শ্রেণি পাশ করেছেন। তাই দশম শ্রেণি পাশ করা একজনের কাছ থেকে ভুল বাংলা বানান দেখতে পাওয়া কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণি থেকে আমরা বাংলা এবং ইংরেজি ব্যাকরণ পড়া শুরু করি (নিশ্চিত নই এখন কোন শ্রেণি থেকে পড়ানো শুরু হয়)। তন্মধ্যে ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয় বলে এটায় হওয়া ভুল ভ্রান্তি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলা ভাষার সাধারণ বানানগুলোর ভুল হতে দেখলে বা যতিচিহ্নের বেঠিক ব্যবহার দেখলে সত্যিই কষ্ট লাগে!

অনেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য বলেন, ‘আমি অত ভালো ছাত্র নই, তাই বানান টানান জানি না’, কিংবা ‘ব্যাকরণ খুব কঠিন লাগে। তাই সেভাবে পড়ি নাই’, কিংবা ‘আমি বাংলায় খুব দুর্বল!’ ইত্যাদি। নিজেই ভেবে দেখুন, এগুলো শুনতে কতোটা বোকার মতো লাগছে! আপনি একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, শিক্ষিত হয়েছেন বলেই আপনার কাছ থেকে শুদ্ধ বানান আশা করা যায়। যারা অ আ ক খ পারে না, তাদেরকে নিশ্চয় কেউ ভুল বানান লেখার জন্য দোষ দেবে না! তাছাড়া আপনি যদি জেনেই থাকেন আপনি বানানে দুর্বল, তাহলে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠাই কি আবশ্যক নয়? যদি সজ্ঞানে দুর্বলতাটা মেনে নিয়ে ভুল বানান ব্যবহার করতে থাকেন, তাহলে সেটা কিন্তু আর ভুল থাকছে না; ইচ্ছাকৃত অজ্ঞানতায় পরিণত হচ্ছে।

বাংলা ব্যাকরণ বেশ কঠিন জিনিস, এটা সত্যি। কিন্তু একজন বাঙালি হয়ে কেউ ‘ন/ণ’, ‘জ/য’, ‘স/শ/ষ’, ‘র/ঢ়/ড়’ –এর মধ্যকার পার্থক্যটুকু বজায় রাখবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না। যখন যেভাবে খুশি একটা বর্ণের পরিবর্তে আরেকটা বর্ণ বসিয়ে দেওয়াই যদি স্বাভাবিক হতো, তাহলে আর ব্যাকরণের উদ্ভব হল কেন? ভবিষ্যতে যদি শুধু “দন্ত্যন ন” চালু রেখে “মূর্ধন্য ণ” উঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আপনি করুণার বদলে করুনা লিখলেও কেউ ধরবে না। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত সঠিক বানান শেখাটা আমাদের কর্তব্য বলেই মনে করি।

বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বাঙালিদেরই। আমরা যাচ্ছেতাই বানান লিখলে বিদেশিরাও কোনোরূপ নিয়মের ধার ধারবে না। রংকে ড়ঙ লিখবে, সংকে ষঙ লিখবে আর সেই ভং দেখে প্রতিবাদ করার মতো মাটি আমাদের পায়ের নিচে থাকবে না।

যদি একসাথে ব্যাকরণের সব খুঁটিনাটি মনে রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাহলে অত্যন্ত পরিশ্রমের পরও দেখবেন কিছুই মনে থাকছে না। তাই বানান দিয়েই শুরু করুন না! যখন বানানে মোটামুটি ওস্তাদ হয়ে যাবেন, তখন লেগে পড়ুন যতিচিহ্নের সঠিক ব্যবহারের পেছনে।
এই লেখায় আমি আজ বানান নিয়েই কথা বলবো। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সবচেয়ে বেশি বানান ভুল হয় ‘ন/ণ’, ‘জ/য’, ‘স/শ/ষ’, ‘র/ঢ়/ড়’ –এর বেলায়। যেহেতু এগুলো একই ধাঁচের বর্ণ, তাই কোন শব্দে কোন বর্ণটি ব্যবহৃত হবে, সেটা আমরা গুলিয়ে ফেলি। নিচে বাংলা বানানের বেশ কিছু নিয়ম উল্লেখ করছি, যেগুলো বাংলা একাডেমি প্রদত্ত “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” (সংশোধিত সংস্করণ ২০০০) বইটি থেকে নিয়েছি।

১) ‘ন/ণ’, ‘জ/য’, ‘স/শ/ষ’, ‘র/ঢ়/ড়’ –এর বেলায় খুব সাধারণ কিছু নিয়ম হলঃ
• একান্ত কোন ব্যতিক্রম ছাড়া বিদেশি বানানে ণ, ষ, ড়, ঢ়, য বসবে না।
• ব্যতিক্রমঃ ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি শব্দে য লেখা যেতে পারে। যেমনঃ আযান, ওযু।
• বাংলা বানানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নিয়ম আছে কখন কোন বর্ণ ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে। সেগুলো দেখতে পারেন “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটির সংশোধিত সংস্করণ থেকে। এক্ষেত্রে মুখস্তবিদ্যাই ভরসা আর মুখস্ত করতে না চাইলে লেখালেখির সময় বইটা পাশে রাখা জরুরি!

২) ি (ই-কার) এবং ী (ঈ-কার), অথবা ু (উ-কার) এবং ূ (ঊ-কার) নিয়েও আমাদের কম ঝামেলা হয় না। এদের বেলায় কিছু নিয়ম হলঃ
• কোন বিদেশি শব্দে ী (ঈ-কার) এবং ূ (ঊ-কার) ব্যবহৃত হবে না।
• বাংলা বানানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নিয়ম আছে কখন কোন কার ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে। সেগুলো দেখতে পারেন “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটির সংশোধিত সংস্করণ থেকে। এক্ষেত্রে মুখস্তবিদ্যাই ভরসা আর মুখস্ত করতে না চাইলে লেখালেখির সময় বইটা পাশে রাখা জরুরি!

৩) এবার আসি আরেকটা ঝামেলাযুক্ত নিয়ম নিয়ে। সেটি হল কি এবং কী শব্দ দুটোর ব্যবহার।
• কি-এর ব্যবহারঃ যখন কোনো প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ দিয়ে দেওয়া যাবে, তখন ‘কি’ শব্দটা ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ আপনার বন্ধু দুপুরে খেয়েছে কিনা, সেটা জানার জন্য প্রশ্ন করতে পারেন – তুমি কি দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলেছ?
• কী-এর ব্যবহারঃ উপরের ক্ষেত্র বাদে বাকি সব জায়গায় ‘কী’ শব্দটি বসবে। যেমনঃ আপনার বন্ধু কোন পদ দিয়ে ভাত খেয়েছে সেটা জানার জন্য প্রশ্ন করতে পারেন – তুমি আজ কী দিয়ে ভাত খেলে?
• কীভাবে, কীরূপে, কীরকম ইত্যাদি শব্দে সবসময় কী বসবে।

৪) আরও কিছু সাধারণ নিয়ম জেনে রাখা ভালোঃ
• যখন না বাচক বাক্য লিখবেন, তখন খেয়াল রাখবেন ‘না’ এবং ‘নি’-এর ব্যাপারে। ‘না’ লিখতে হবে আলাদা পদ হিসেবে, যেমনঃ করি না, খাই না। আর ‘নি’ লিখতে হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে, যেমনঃ করিনি, খাইনি।
• যখন অধিকন্তু অর্থে ‘ও’ প্রত্যয় উচ্চারণ করবেন, তখন শব্দে সেটা ‘ও’ হিসেবেই লিখবেন, ‘ো’ দিয়ে নয়। যেমনঃ আমারও ইচ্ছে করে (‘আমারো ইচ্ছে করে’ – সঠিক নয়)।
• জোর দেওয়ার জন্য যখন ‘ই’ উচ্চারণ করবেন, তখন শব্দে সেটা ‘ই’ হিসেবেই লিখবেন, ‘ি’ দিয়ে নয়। যেমনঃ চলো আজই যাই (‘চলো আজি যাই’ – সঠিক নয়)।
• ‘কোন’ শব্দটির উচ্চারণ যখন ‘কোনো’-এর মতো হয়, তখন তাকে ‘কোন’ বা ‘কোনো’ দুটোই লেখা যায়। একইভাবে আরও অনেক শব্দ, যেগুলোর শেষের অ-ধ্বনির উচ্চারণ ও-ধ্বনির মতো হয়, তাদের শেষে ো দিয়েও লেখা যায়, ো ছাড়াও লেখা যায়। যেমনঃ নামানো, চালানো, দেখানো বা নামান, চালান, দেখান। যখন আপনি ো ব্যবহার করবেন না, তখন বাক্যের ভাব অনুযায়ী পাঠকের বুঝে নিতে হবে যে, এখানে শব্দটির উচ্চারণ বদ্ধ নাকি খোলা।
• ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় শব্দের শুরুতে ো দেওয়া যায়। যেমনঃ এই কাজটা তুমি আগামীকাল কোরো।

৫) অন্যান্যঃ
• বানানে হসন্ত (্‌)-এর ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে বলা হয়েছে। যেমনঃ তছ্‌নছ্‌, ফট্‌ফট্‌ না হয়ে তছনছ, ফটফট হবে। তবে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য হসন্ত ব্যবহার করা যাবে। যেমনঃ বাহ্‌, উহ্‌।
• ঊর্ধ্ব কমা (’)-এর ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে বলা হয়েছে। যেমনঃ দু’জন, দু’দিন না হয়ে দুজন, দুদিন হবে।
• শব্দের মাঝে বিসর্গ (ঃ) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও শব্দের শেষে বিসর্গ ব্যবহারের নিয়মটি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমনঃ এখন আর প্রায়শঃ বা মূলতঃ হবে না, হবে প্রায়শ এবং মূলত।

৬) এছাড়াঃ
• কখন বানানে ং (অনুস্বার) আর কখন ঙ বসবে, সেটার নিয়ম আছে।
• কখন এ/অ্যা, কখন খ/ক্ষ বসবে, সেটার নিয়ম আছে।
• কোন কোন শব্দে চন্দ্রবিন্দু (ঁ) বসবে, সেটা ঝাড়া মুখস্ত করা ছাড়া উপায় নেই।

কিছু কথাঃ
আমরা ছোটবেলা থেকে যেসব বানান শিখে এসেছি, সেসব বানানের মধ্যে অনেকগুলোরই পরিবর্তন ঘটতে দেখলাম “প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” বইটির সংশোধিত সংস্করণে। যেমন এখানে ঠাণ্ডা, মূলা, পূজা, বাঙালী, রঙ, ক্ষিদে, ক্ষেত, ক্ষ্যাপা, অঘ্রাণ, রাণী, ঝর্ণা ইত্যাদি শব্দের বানান দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ঠান্ডা, মুলা, পুজা, বাঙালি, রং, খিদে, খেত, খ্যাপা, অঘ্রান, রানি, ঝর্না এভাবে। কারণটাও দেওয়া আছে সাথে। মাত্র উনিশ পৃষ্ঠার এই পিডিএফ ফাইলটি সকলেরই সংগ্রহে রাখা দরকার।

আমি বাংলা বানানে বা ব্যাকরণে একশত ভাগ নির্ভুল নই। তবে চেষ্টা করি বানান সঠিক রাখতে, সঠিক নিয়মে যতি চিহ্ন ব্যবহার করতে। এই লেখাটিতেও ভুল ভ্রান্তি থাকার সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত আশা করছি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৫

শামছুল ইসলাম বলেছেন:
//যতি চিহ্নের বংশ ধ্বংস করা হয়।// - সহমত !!!!

খবই প্রয়োজনীয় পোস্ট প্রিয়তে নিলাম।

ভাল থাকুন। সবসময়।



২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: খুব ভালো ,কাজের পোস্ট।ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭

নীল_অপরাজিতা বলেছেন: বাংলা বানানরীতি ঠিক রেখে লেখার চেষ্টা করতে হবে, একদম ঠিক কথা। প্রয়োজনে অভিধান দেখে সংশোধন করা যেতে পারে। একটু কষ্ট করলেই ব্লকগুলো শুদ্ধ বাংলা লেখায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। নিজের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাও একটা উপায়। খুব ভাল লেখা।

৪| ২৬ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:২৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: B-))

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.