নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।

মৌতাত গোস্বামী শন্তু

মানুষ বলে ভুল করলেও নিজেকে মানুষই বলব আমি।

মৌতাত গোস্বামী শন্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূর্যসেন: বিস্মৃতপ্রায় এক মহাবিপ্লবী

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২৭



অমিতাভ বিশ্বাসের লেখা:
আমরা আসলে পরীক্ষার প্রস্তুতির সাধারণ জ্ঞান অংশেই জানি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন -- মাষ্টার দা সুর্যসেন। ব্যাস এই পর্যন্তই।
আজ তাকে ফাঁসি দিয়েছিলো তৎকালীন বৃটিশ সরকার ৷ বলা ভুল হলো বোধহয়, তাকে নয় তার মৃতদেহ কে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো আজ ৷ মৃত্যু তার আগেই হয়েছিলো জেলের ভিতর অকথ্য অত্যাচারে ৷ শুধু লোক দেখানো ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো তার প্রাণহীন দেহকে ৷ অনেকে অবশ্য বলেন তাকে অচেতন অবস্থায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিলো ৷
মৃত্যুর আগে কি করা হয়েছিলো তার সাথে ? পিটিয়ে শরীরের সমস্ত হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো ৷ ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো তার সব কটা দাঁত ৷ উপড়ে ফেলা হয়েছিলো হাত ও পা এর সমস্ত নখ ৷ তৎকালীন বৃটিশ সরকার এমনই বর্বর আচরণ করেছিলো তাঁর সাথে ৷ এমন কি মৃত্যুর পর তার দেহ তুলে দেওয়া হয়নি পরিজনদের হাতে৷ ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো সমুদ্রের বুকে, ঠিক যেভাবে আমরা ছুঁড়ে ফেলি কোনো আবর্জনা কে ডাস্টবিনে, তেমনভাবে ৷ চট্টগ্রাম সশস্ত্র বিপ্লবের এই নেতা যিনি আজীবন স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন ভারতের, যিনি প্রাণের মায়া না করে যুদ্ধ চালিয়েছিলেন অপরাজেয় বৃটিশদের সাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ৷ যিনি সাধারণ একজন স্কুল শিক্ষক হয়ে দেশ এর জন্য লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন অগণিত ছাত্রদের, তিনি কোনোদিনই ধরা পড়তেন না হয়তো ! কিন্তু সবই অদৃষ্ট ! অর্থ, পুরস্কার, উপাধি এসবের লোভে তার বিশ্বাসভাজন অনুচর নেত্র সেন বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন ৷ সেই নেত্র সেন এর অবশ্য বেশীদিন আর ধরাধামে থাকা সম্ভব হয়নি এবং অর্থ, পুরস্কার কিছুই পাওয়া সম্ভব হয়নি কারণ মাস্টারদার অনুগামী এক বিপ্লবী যার নাম আজও আমরা জানিনা তাঁর দ্বারা নেত্র সেন খুন হয় কিছুদিন পরেই ৷ সেই বিপ্লবীর নাম জানতেন একমাত্র নেত্র সেন এর স্ত্রী, যিনি কোনোদিন সেই নাম প্রকাশ করেননি, কেন জানেন! কারণ তিনি মাস্টারদার আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন ৷ বিশ্বাস করতেন দেশ প্রেমের কাছে বাকি সব তুচ্ছ ৷

[সংযুক্তি* - শুনেছিলাম বিশ্বাসঘাতকটা সম্পর্কে সূর্যসেনের ভাগ্নে। ভাতের থালে কইমাছের মুন্ডুর বদলে ওর কাটামুন্ডু গড়াগড়ি খেয়েছিল।]





জুলিয়াস সিজারের লেখা:

মাস্টার দা সূর্যসেনের প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি রাতে মাস্টার দা এবং সহযোদ্ধা বিপ্লবী তারেকশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের পর এই দুই বিপ্লবীর লাশ ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাঁটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারপর ব্রিটিশদের 'The Renown' ক্রুজে করে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগর সংলগ্ন কোনো জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।
মৃত্যুর পূর্বে জেলখানায় এক মেথরের মাধ্যমে বিপ্লবী কালিকিন্নর দে'র কাছে পাঠানো এক চিঠিতে মাস্টার দা লিখেছিলেন;-
"আমার শেষ বাণী- আদর্শ ও একতা।"
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের মাধ্যমে তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান করেন। এর চারদিন পর ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে বৃটিশদের সাথে বিপ্লবীদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন এবং বৃটিশ সেনাবাহিনীর ৭০-১০০ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই যুদ্ধে সাময়িকের জন্য হলেও বৃটিশ সেনাবাহিনী পিছু হটে যা অনেকের মতে এদেশের মানুষের কাছে ইংরেজ বাহিনীর প্রথম সুস্পষ্ট পরাজয়। সূর্যসেনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সেসময় বৃটিশ সরকার দশ হাজার টাকা অর্থমূল্য ঘোষণা করেছিলো।
এই মহান বিপ্লবীর প্রয়াণ দিবসে বলিভিয়া থেকে কিউবাতে বিপ্লবের শ্রাদ্ধ করা এই দেশের বিপ্লবীদের একটা শব্দ ব্যয় করতে দেখা যায় নি। হাভানার চুরুটে যে বিপ্লবী জোশের দেখা মিলে দেশী সূর্যসেনের নামে সেটা পাওয়া সম্ভব নয়! তার উপর আবার ধূতি-পাঞ্জাবি পরা বিপ্লবী!
সমালোচকেরা বলেন, সেই সময় মাস্টার দা'র আন্দোলন আর অভ্যুত্থান বাস্তবে কোনো ফল বয়ে আনছিলো। এটা বরং ইংরেজদের আরো অত্যাচারি ভূমিকায় ঠেলে দিয়েছিলো।
সত্য হচ্ছে, পৃথিবী বিজয়ীদের। মাস্টার দা'র বিপ্লবী দল চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করলে অবশ্যই ইতিহাসও অন্যভাবেই লেখা হতো। আর আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে ভারতীয়রা অসহযোগ 'ব্রহ্মচর্য' পালনের নিরামিষ আন্দোলন না করে আগে থেকেই রক্ত দিলে উপমহাদেশের মানুষ আরো আগে স্বাধীনতা পেতো। স্বাধীনতা আর মুক্তি এভাবেই আসে এবং যথারীতি বাংলাদেশের ইতিহাসেও সূর্য সেন'দের অবদান অনুল্লেখিত রয়ে গেছে। বখতিয়ার খিলজিদের কাটাকাটি আর সুলতান মাহমুদের ডাকাতি তার অনেক গুরুত্ব পায়। বিপ্রদাশ বড়ুয়ার 'মংডুর পথে' বাদ দিয়ে 'মদিনার পথে' যে দেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই দেশের পাঠ্যপুস্তকে সূর্য সেনদের উপস্থিতি আশা না করাই ভালো।


শত্রুঘ্ন অর্পিত -এর লেখা:

মাস্টারদা সূর্যসেনের স্ত্রী পুষ্প যখন মৃত্যুশয্যায়, মানুষটা তখন মুম্বাইয়ের রত্নগিরি জেলে বন্দী। জেলখানায় নির্যাতনে শরীর ভেঙে পড়েছিলো। স্ত্রীর অবস্থার কথা জেনে জামিনের জন্য দরখাস্ত করেন। একসময় অনুমতি পান। কড়া পুলিশি পাহারায় চট্টগ্রামে আনা হয়। স্ত্রী পুষ্প তখন অনেক দূরে চলে গিয়েছেন। যেখান থেকে ফেরা যায়না।
বিয়ের তিনদিনের মাথায় স্ত্রী কে ছেড়ে চলে আসেন। পুষ্প দত্ত কখনো স্বামীর সংস্পর্শ তো দূর, চোখের দেখাই পাননি! স্বামীর সাথে নিজেও যেতে চেয়েছিলেন বিপ্লবে। সেটা সম্ভব না হলেও দেশসেরা বিপ্লবীর স্ত্রী হিসেবে গর্ববোধ করতেন। মৃত্যুর আগেও মুখে ছিলো তাই প্রশান্তির ছাপ।
জালালাবাদ যুদ্ধের দায়ে ফাঁসির আদেশ হয়েছিলো মাস্টারদার। সাথে বিনোদবিহারী চৌধুরী আর কল্পনা দত্তেরও। এই বিনোদবিহারীই ছিলেন ব্রিটিশ দের ত্রাস, বিখ্যাত 'বাঘা বিনোদ'!
গ্রেপ্তারের পর প্রায় প্রতি রাতেই টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হতো মাস্টারদা আর বিনোদবিহারীকে। রাতের পর রাত চলতো অকথ্য নির্যাতন।
অবশেষে '৩৪ এর ১২ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর হয়। ব্রিটিশরা হাতুড়ি দিয়ে মেরে মাস্টারদার মুখ রক্তাক্ত করে, ভেঙে ফেলে পাঁজড়ের হার। এবং পরিশেষে অর্ধমৃত সূর্যসেনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। সাথে ছিলেন আরেক বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার
ফাঁসির পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown” এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়। সনাতন শাস্ত্রমতে দাহ করারও সুযোগ দেয়া হয়নি মৃতদেহ দুটোকে। এহেন শত শত বিপ্লবীর রক্তভেজা পথ বেয়েই এসেছিলো ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। তবে সবচেয়ে বড় আফসোস হলো, যে মাস্টারদা হতে পারতেন বাংলাদেশের গর্ব, সেখানে দেশের জাতীয় হিরো হয়ে যায় ধর্মান্ধ পশুরা, হিংস্র জঙ্গীরা। সূর্যসেন- বিনোদবিহারীরা চলে যান বাতিলের খাতায়।

তারপরো আশায় থাকি
যে সূর্য ডুবে গিয়েছিলো
সেই সূর্য একদিন লক্ষ সূর্য হয়ে জ্বলবেই আবার!
আলোয় ভরিয়ে দিবে বাংলাদেশের আকাশ।


আরেকটু ইতিহাস*: জয়তু সূর্য সেন।
১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি। সন্ধাবেলা। চট্টগ্রাম জেলে বসে সূর্যসেন খুব সচেতনভাবেই ভাবছেন রাত ১২ টা ১ মিনিট বাজতে আর মাত্র পাচ ঘন্টা বাকী। এই সময়টুকুই পার হওয়ার সাথে সাথে তাঁর এবং তাঁর সহকর্মী তারকেশ্বর দস্তিদারের জীবন প্রদীপ নিবিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সিদান্ত পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাত ১২ টা ১ মিনিটে ফাঁসির রজ্জু তাকে এবং তার সহযোদ্ধা তারকেশ্বর দস্তিদারকে পড়তেই হবে। এটাই আইন। ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞ আইনজ্ঞ জর্জের আইন ও রায়। এই দুজনের অপরাধ “দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন ব্রিটিশ শাসন-শোষণ, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে”। এজন্য তাদেরকে মরতে হবে। অন্যদিকে সূর্যসেনের সহযোদ্ধারা ও ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীরা অশ্র“সিক্ত নয়নে দুজনের কথা ভাবছেন। অনেক সহযোদ্ধার মনে নেতার সাথে তাদের লড়াই-সংগ্রামের অসংখ্য স্মৃতির কথা ভেসে উঠছে। রাত ১২ টা ১ মিনিটে তারা তাদের প্রিয় নেতাদ্বয়কে রেড স্যালুটের মাধ্যমে বিদায় জানিয়ে স্বাধীনতার জন্য অগ্নি শপথ নিবেন। অনেকেই নেতার লাশ ছুয়ে স্বাধীনতার জন্য শপথ করার প্রতিজ্ঞা নিবেন বলে জেলগেটে অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তাদের লাশ দেয়নি। কারণ তারা ভেবেছিলেন, তাদের লাশ লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, তাই লাশ দুটিকে গুম করে ফেলে। পরে জানা যায়, লাশ দুটি লোহার খাচায় ভরে সমূদ্রে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

মন্তব্য*:
সূর্যসেন বাতিলের খাতায় চলে গেছেন, এমন ভাবেই যে বিসিএস গাইডে তার মৃত্যুকাল (বছর, মাস দুইই) ভুল থাকে।

(*) চিহ্নিত অংশটুকু সংকলকের।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫০

দরবেশমুসাফির বলেছেন: বখতিয়ার খিলজিদের কাটাকাটি আর সুলতান মাহমুদের ডাকাতি তার অনেক গুরুত্ব পায়।

বিপ্রদাশ বড়ুয়ার 'মংডুর পথে' বাদ দিয়ে 'মদিনার পথে' যে দেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই দেশের পাঠ্যপুস্তকে সূর্য সেনদের উপস্থিতি আশা না করাই ভালো।

হিন্দু আর মুসলমানদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন আবার মাস্টারদা সূর্যসেন এর আদর্শের কথা বলছেন। হিপক্রেসি জিনিসটা কিন্তু ব্রিটিশদেরই মজ্জাগত স্বভাব।

মাস্টারদা সূর্যসেন বিস্মৃত আর তিতুমির, ফকির মজনু শাহ, বাহাদুর শাহ জাফর এনারা কি খুবই আলোচিত???

হিন্দু আর মুসলমানদের ভেতর বিভেদ যারা ঘটাতে চায় ( অথবা হিন্দুত্ববাদকেই দেশপ্রেমের আখ্যা দেয় ) তারা ব্রিটিশ উপনিবেশিক চর জমিদারদের উত্তরাধিকারী ছাড়া আর কিছু নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.