নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানের খুঁজে... জগত মাঝে। যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি..। https://www.facebook.com/getAhsaan/

সোহাগ আহসান

যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি..।

সোহাগ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানব জাতির জন্য একটি সতর্ক বার্তা

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:৩৩


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মানব জাতির জন্য একটি সতর্ক বার্তা

দুচোখ মেলে আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখছি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ৷ এই আকাশ-বাতাস, মাঠ-প্রান্তর, নদী-সমুদ্র, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, সর্বোপরি পৃথিবীর ভিতরে ও বাইরে যা কিছু আমরা দেখি বা না দেখি সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ৷ তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এক বিন্দু জমাট রক্ত থেকে যাকে ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় শুক্রাণু ও ডিম্বানু মিলনের ফলে সৃষ্ট ভ্রূণ ৷ এই ভ্রূণকে আল্লাহ তাআলা মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ধ্বংস করতে পারতেন ৷ তাহলে আমরা দুনিয়ার মুখ দেখতে পেতাম না ৷ আল্লাহ ইচ্ছা করলে মাতৃগর্ভেই আমাদেরকে অন্ধ, বোবা, কালা, খোড়া বা কোন অঙ্গহানি করে দুনিয়ায় পাঠাতে পারতেন ৷ কিন্তু আমাদেরকে তিনি তা করেননি৷ দুনিয়ায় পাঠিয়ে তিনি আমাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন৷ তার নিয়ামত পানি, বাতাস বিনা পয়সায় অহরহ পাচ্ছি ৷ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তিনি জমিনে ফসল উৎপন্ন করেন ৷ পৃথিবীর তাপমাত্রাকে মানুষের বসবাসের জন্য তিনি স্বাভাবিক রেখেছেন- এর চেয়ে বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা কোনটাই আমরা সহ্য করতে পারি না ৷ তিনি ইচ্ছা করলে পানি, বাতাস সব বন্ধ করে দিতে পারেন, প্রচন্ড তাপ দিয়ে পৃথিবীর সব মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারেন, প্রচন্ড ঠান্ডায় বরফ বানাতে পারেন, ভুমিকম্প দিয়ে জমিনকে ওলটপালট করে দিতে পারেন, জলোচ্ছাস দিয়ে জনপদকে ভাসিয়ে দিতে পারেন, ঘুর্ণিঝড় দিয়ে সব ধ্বংস করে দিতে পারেন৷ এসবের নমুনা আমরা মাঝে মাঝে দেখি ৷ আমাদেরকে তিনি এসব বিপদ থেকে মুক্ত রেখেছেন ৷ তিনি আমাদের পরীক্ষা করতে চান, কে তার প্রতি কৃতজ্ঞ- আর কে অকৃতজ্ঞ, কে তার হুকুম পালন করে- আর কে করে না, কে আল্লাহর একক মতে বিশ্বাসী আর কে তার সাথে শরীক করে, কে অদৃশ্যে বিশ্বাস করে আর কে কুফরী করে, কে তার প্রতি অনুগত আর কে সীমালংঘন করে ৷ তিনি আমাদেরকে সময় বেঁধে দিয়েছেন মৃতু্যর আগ পর্যন্ত৷ কিন্তু কেউ জানে না কখন তার মৃত্যু হবে ৷ আমাদের সামনেই অনেক নজির আছে- হঠাৎ স্ট্রোক করে মৃত্যু, সাপের কামড়ে মৃত্যু, হঠাৎ দুর্ঘটনায় মৃত্যু, গোলাগুলিতে মৃত্যু, ঝড়ে গাছ চাপায় মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু, জলোচ্ছাসে মৃত্যু, আগুনে পুড়ে মৃত্যু, পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু ইত্যাদি ৷ আমাদের অনেকেই ভাবেন বৃদ্ধ বয়সে সাংসারিক ঝামেলা মিটিয়ে আল্লাহর ইবাদতে কাটাবো ৷ কিন্তু সেই সময় আপনি পাবেন- তার কোন নিশ্চয়তা আছে কী? দুনিয়ায় আপনি যেটুকু সময় যেভাবে কাটাবেন তার উপর ভিত্তি করে আপনাকে মৃত্যুর পর অনন্ত জীবন কাটাতে হবে ৷ দুনিয়ায় বেঁচে থাকা অবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে তার হুকুম পালন করলে আপনি মৃত্যুর পর বাস করবেন চিরসুখের জান্নাতে- সেখানে থাকবে না কোন অভাব, কোন দুঃখ ৷ থাকবে কেবল অনাবিল শান্তি- এমন শান্তি যা আপনি কখনও কল্পনাও করতে পারেন না ৷ বেহেশতে এমন খাদ্য ও পানীয় আপনাকে পরিবেশন করা হবে যার অপূর্ব স্বাদ আপনাকে মুগ্ধ করবে, এমন রাজকীয় বাড়িতে আপনাকে বাস করতে দেওয়া হবে যা আপনি কখনও চোখে দেখেননি, এমন সুন্দরী তরুনীরা আপনার সেবা করবে যাদের অপরূপ সৌন্দর্য দুনিয়ার মানুষ কখনও কল্পনাও করেনি ৷ আপনার সকল ইচ্ছা সেখানে পূর্ণ করা হবে ৷

পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ থেকে তার হুকুম না মানলে মৃত্যুর পর আপনাকে দেয়া হবে কঠিন শাস্তি- জ্বলতে হবে দোজখের ভয়ংকর আগুনে, তাতে চামড়া পুড়ে ছাই হয়ে যাবে- আবার নতুন চামড়া গজাবে, প্রচন্ড পিপাসায় আপনাকে পান করতে দেয়া হবে দুর্গন্ধ পুজ, রক্ত ও কাটাযুক্ত গরম পানি, মারাত্মক বিষধর সাপ আপনাকে দংশন করতে থাকবে ৷ এছাড়া আরও নানা রকম শাস্তি আপনাকে বার বার দেয়া হবে ৷ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কাফেররা বলে উঠবে, হায়! আমি যদি মাটি হতে পারতাম তাহলে আমাকে এমন যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না ৷

সুতরাং প্রত্যেক মানুষের উচিত সকল সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তার হুকুম পালন করা ৷ তিনি মানুষ এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য ৷ আল্লাহ মানুষের কাছে কোন টাকা পয়সা চান না, কোন খাদ্য-পানীয় চান না ৷ তিনি কেবল চান- মানুষ তাকে স্রষ্টা হিসেবে মানুক, তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুক, তার আদেশ পালন করুক ৷

কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, তার হুকুম পালন করতে হবে তা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ যুগে যুগে বিভিন্ন নবী রাসুল পাঠিয়েছেন ৷ এভাবে পাঠাতে পাঠাতে সর্বশেষে পাঠিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ৷ মুহাম্মাদ (সাঃ) কে আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন সারা বিশ্বের মানুষকে সত্য পথ দেখানোর জন্য, জীবনে চলার সঠিক পথ-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য, আল্লাহর ইবাদত করার প্রণালী শিখিয়ে দেওয়ার জন্য, পৃথিবীর সকল অন্যায়-অত্যাচার, কুসংষ্কার, অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞতা, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি দূর করে সারা বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য, মানুষের পারলৌকিক মুক্তি লাভের পথ দেখানোর জন্য, আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দানের জন্য৷ আল্লাহ তাআলা মহানবী (সাঃ)-এর উপর মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাজিল করে এসব বিষয়ে বিস্তারিত শিক্ষা দিয়েছেন ৷

মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সর্বশেষ রাসুল মনোনিত করে আল্লাহ তাআলা যে জীবন ব্যবস্থা দান করেছেন তার নাম ইসলাম ৷ ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মত কোন সাধারণ ধর্ম নয় ৷ এটা একটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ৷ মানুষের জীবনে চলার সকল দিক সম্পর্কে ইসলামে সঠিক দিক-নির্দেশনা আছে ৷ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ কিভাবে চলবে, কিভাবে খাবে, কিভাবে পান করবে, কিভাবে ঘুমাবে, কিভাবে গোসল করবে, কিভাবে পরিশ্রম করবে, কিভাবে ব্যবসা করবে, কেমন পোশাক পরবে, কিভাবে বিবাহ করবে, কিভাবে স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা, আত্মীয়, প্রতিবেশী, এতীম-মিসকীনদের হক আদায় করবে ও তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে, কিভাবে সম্পদ বন্টন করবে, কিভাবে ন্যায় বিচার করবে, কিভাবে শাস্তি দেবে, কিভাবে অসহায় ও অভাবগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াবে, কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কিভাবে যুদ্ধ করবে/অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, অন্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে, আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলো (নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত প্রভৃতি) কিভাবে সম্পন্ন করবে ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা রয়েছে এই ইসলাম ধর্মে ৷ তাই ইসলাম, প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের মত কোন ধর্ম নয় ৷ ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ৷ কেউ এই জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে তাকে কলেমা পড়ে ইসলামে প্রবেশ করতে হয় ৷ ইসলামের প্রথম কলেমা হচ্ছে-

কলেমা তৈয়্যেবাঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ৷

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু (যিনি ইবাদতের যোগ্য) নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল

তাৎপর্যঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু বা সৃষ্টিকে প্রভু মানে ৷ যেমন- কেউ যিশুকে (ঈসা আঃ) প্রভু মানে, কেউ মরিয়মকে, কেউ বিভিন্ন দেবতাকে, কেউ সূর্য, পাহাড়, সমুদ্র, বটগাছ, গরু, হাতী, হনুমান, সাপ প্রভৃতি প্রাণীকে ৷ কিন্তু ইসলাম বলে- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয় বা প্রভু নয় ৷ দ্বিতীয় অংশে মোহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহর রাসুল হিসাবে স্বীকার করতে বলা হয়েছে অর্থাৎ ইবাদত করতে হবে বা জীবনের পথ চলতে হবে রাসুলের দেখানো রীতি বা পদ্ধতি অনুযায়ী ৷ এটাই মূলত কলেমা তৈয়্যেবার মূল কথা ৷

এই কলেমা পাঠের পর আপনাকে কলেমা শাহাদাত পড়ে এভাবে সাক্ষ দিতে হবেঃ

কলেমা শাহাদাতঃ

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাাল্লাহু ওহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদুআন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ৷

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রভু নেই, তিনি এক, তার কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল ৷

তাৎপর্যঃ কলেমার এই অংশে মূলত মুশরিকদের থেকে মুসলমানদের আলাদা করা হয়েছে ৷ মুশরিকরা একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করলেও ঐ স্রষ্টার সহকারী বা স্রষ্টার সন্তান বা স্ত্রী হিসেবে বা অন্য প্রানীর রূপ ধরে স্রষ্টার পৃথিবীতে আগমন মনে করে একাধিক স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে ৷ কিন্তু কলেমা শাহাদাতে বলা হচ্ছে- আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়, তিনি এক (স্রষ্টা একাধিক নয়), স্রষ্টার কোন শরীক নেই (তার কোন সহকারী, স্ত্রী বা সন্তান সন্ততি নেই), মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল (মুহাম্মাদ সাঃ একজন মানুষ মাত্র, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ- অন্যান্য মানুষের মত তিনিও আল্লাহর বান্দা, কোন মানুষ মুহাম্মাদ সাঃ এর ইবাদত করবে না, তাকে প্রভু মানবে না ৷ তিনি কেবল আল্লাহর বানী প্রচারক ৷ অথচ কোন কোন ধর্মের মানুষ তাদের অবতারের পুজা করে ৷ কিন্তু মুসলমানরা কখনও মোহাম্মাদ সাঃ এর পুজা বা ইবাদত করতে পারবে না ৷ কেবল তাঁকে আল্লাহর রাসুল হিসেবে শ্রদ্ধা করবে, তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করবে, তাঁর অনুগত হবে, তাঁর রুহের শান্তি কামনা করবে- কিন্তু তাকে সিজদা করবে না ৷)

শুধু এই কলেমা পড়ে বসে থাকলেই চলবে না ৷ এই কলেমা আল্লাহর সাথে একটা চুক্তি ৷ এবার চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার পালা ৷ এই কলেমা পড়ার পর একজন মুসলমানের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্যের প্রমাণ হিসাবে নামাজ আদায় করা ৷ নামাজের মাধ্যমে প্রমাণ হবে বান্দা আল্লাহর প্রতি কতটুকু অনুগত, আল্লাহর রাসুলকে স্বীকার করে কিনা ৷ রাসুল (সাঃ) এর উপর যে কুরআন নাযিল হয়েছে তাতে নামাজের আদেশ যত স্থানে দেওয়া হয়েছে অন্য কোন ইবাদতের আদেশ তত স্থানে নেই ৷ কুরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন ৷ এমনকি কোন কোন নবীকে শুধুমাত্র নামাজ কায়েম ও সৎকাজের আদেশ দানের জন্য পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল ৷ নামাজের মাধ্যমে যতবেশি আল্লাহর গুনগান করা হয় অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে তা সম্ভব নয় ৷ নামাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার দেহ, মন, অর্থ, সময় সবই আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করেন ৷

পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ

ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ ৷ একজন ব্যক্তি কলেমা পাঠ করে মুসলমান হবার পর আল্লাহর হুকুম পালনের বাস্তব প্রমাণ রাখতে হয় নামাজের মাধ্যমে ৷ একজন মুসলমানের জন্য কোন অবস্থাতেই নামাজ ত্যাগ করার কোন সুযোগ নেই ৷ নামাজ ত্যাগের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ৷ যদি আপনি গরীব হন আর কোন টাকা পয়সা না থাকে তবে যাকাত না দিলে কোন শাস্তি নেই, যদি হজ্জ্বে যাওয়ার কোন সামর্থ্য না থাকে তবে কোন শাস্তি নে ৷ কিন্তু নামাজ ত্যাগ করলে কঠিন শাস্তি- দোজখের আগুন ৷

হাদিসে আছে “বিশ্বাসী (ঈমানদার) এবং অবিশ্বাসীর (কাফের) মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ তরক করা৷”

সুতরাং নামাজ ত্যাগ করার পক্ষে কোন মতলব বা ওজুহাত নেই ৷ অসুস্থ্য থাকলেও নামাজ পড়তে হবে, অর্থ না থাকলেও নামাজ পড়তে হবে ৷ দাড়িয়ে পড়তে না পারলে বসে পড়তে হবে, বসে পড়তে না পারলে শুয়ে পড়তে হবে, শুয়ে পড়তে না পারলে চোখ দিয়ে ইশারায় পড়তে হবে ৷

আল্লাহ তাআলা মহানবী (সাঃ) কে প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দিয়েছিলেন ৷ তার অর্থ দাড়ায় একটানা আল্লাহর ইবাদত করতে হবে ৷ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেনঃ

“আমি মানুষ এবং জ্বীনকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি৷” (৫১ঃ৫৬)

যাহোক আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দিলেও দয়া করে তা কমিয়ে ৫ ওয়াক্তে আনা হয় ৷ কিন্তু এই ৫ ওয়াক্ত নামাজই মিজানের পাল্লায় ৫০ ওয়াক্তের সমান হবে ৷ যদি আমরা এই ৫ ওয়াক্ত নামাজই সঠিক নিয়মে আনুগত্যের সহিত আদায় করতে পারি তবে সেই নামাজ ৫০ ওয়াক্তের সমান হবে ৷

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

“মোত্তাকী তারা, যারা গায়েবে ঈমান রাখে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রুজী দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে৷” (সুরা বাকারা, ৩ নং আয়াত)

“আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং সালাতে অবনত হও তাদের সঙ্গে যারা অবনত হয়৷”

(সুরা বাকারা, ৪৩ নং আয়াত)

“তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে ৷ ..” (সুরা বাকারা, ৪৫ নং আয়াত)

“তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও ৷ তোমরা নিজেদের জন্য উত্তম কাজের যা কিছু আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে ৷ তোমরা যা কর নিশ্চই আল্লাহ তার সব কিছুই দেখেন ৷” (সুরা বাকারা, ১১০ নং আয়াত)

“তোমরা সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষ করে মধ্যবর্তি নামাজের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে একান্ত বিনীতভাবে দাঁড়াবে ৷” (সুরা বাকারা, ২৩৮ নং আয়াত)

“আর আমার বান্দারা আমার ব্যাপারে যখন তোমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তো আছি নিকটেই ৷ আমি সাড়া দেই প্রার্থনাকারীর ডাকে যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে ৷ সুতরাং তারাও আমার হুকুম মান্য করুক এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে ৷” (সুরা বাকারা, ১৮৬ নং আয়াত)

“নিশ্চই যারা ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে, নামাজ কায়েম করেছে এবং যাকাত দিয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে ৷ তাদের নেই কোন ভয় এবং তারা দুঃখিতও হবে না ৷” (সুরা বাকারা, ২৭৭ নং আয়াত)

“কিন্তু তাদের (আহলে কিতাব/ইহুদী) মধ্যে যারা জ্ঞানে সুগভীর এবং যারা ঈমানদার তারা ঈমান আনে আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাতেও; এবং যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি; বস্তুত এরূপ লোকদেরই আমি সুমহান পুরস্কার প্রদান করবো ৷” (সুরা নিসা, ১৬২ নং আয়াত)

“(৫৫) তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং যারা ঈমান এনেছে তারা যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয়, এ অবস্থায় যে তারা বিনত বিনম্র ৷ (৫৬) আর যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই আল্লাহর দল, তারাই বিজয়ী হবে৷ (সুরা মায়েদা, ৫৫-৫৬ নং আয়াত)

(৭১ শেষাংশ)- “বলে দিনঃ নিশ্চই আল্লাহর পথই প্রকৃত সুপথ ৷ আর আমরা আদিষ্ট হয়েছি বিশ্বজগতের পালনকর্তার কাছে আত্মসমর্পন করতে৷ (৭২)এবং নামাজ পড়তে ও তাকে ভয় করতে ৷ তাঁরই কাছে তোমাদের একত্র করা হবে ৷ (সুরা আনআম, ৭১-৭২ নং আয়াত)

“আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ সারাজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য ৷ (সুরা আনআম, ১৬২ নং আয়াত)

“(৩) তারা (মুমিনরা) নামাজ কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদের দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে ৷

(৪) এরাই প্রকৃত মুমিন; তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা ৷” (সুরা আনফাল, ৩-৪ নং আয়াত)

“.. অতঃপর যদি তারা (যুদ্ধের সময় চুক্তিভঙ্গকারী বন্দী মুশরিক) তওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও ৷ নিশ্চই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷) (সুরা তওবা, ৫ নং আয়াত)

“মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু ৷ তারা ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আনুগত্য করে আল্লাহ ও রাসুলের ৷ এদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষন করবেন ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রবল প্রতাপশালী, হেকমতওয়ালা ৷” (সুরা তওবা, ৭১ নং আয়াত)

“হে আমার রব! করুন আমাকে (ইব্রাহিম আঃ) নামাজ কায়েমকারী এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও! হে আমার রব! আর কবুল করুন আমার দোয়া ৷” (সুরা ইব্রাহিম, ৪০ নং আয়াত)

“আর আমি (ইব্রাহিম আঃ) যেখানে থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন; তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে ৷” (সুরা মরিয়াম, ৩১ নং আয়াত)

“আর তিনি (ইসমাঈল আঃ) নিজের পরিবারের লোকদের আদেশ করতেন সালাতের ও যাকাতের এবং তিনি স্বীয় রবের কাছে পছন্দনীয় ছিলেন ৷” (সুরা মরিয়াম, ৫৫ নং আয়াত)

” আর আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এতে অবিচল থাকুন ৷ আমি আপনার কাছে কোন রিজিক চাই না ৷ রিজিক তো আমিই আপনাকে দেই ৷ আর শুভ পরিনাম তো তাকওয়ার জন্য ৷ ” (সুরা ত্বাহা, ১৩২ নং আয়াত)

“(সুসংবাদ ঐ সব বিনীত বান্দাদের জন্য) আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয়, যারা তাদের উপর আপতিত বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে ৷” (সুরা হজ্জ্ব, ৩৫ নং আয়াত)

“তারা এমন লোক, যদি আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি তবে তারা নামাজ কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং নেক কাজের পরিনাম তো আল্লাহরই হাতে ৷ ” (সুরা হজ্জ্ব, ৪১ নং আয়াত)

“হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা রুকু কর, সিজদা কর এবং তোমাদের রবের ইবাদত কর, আর নেক কাজ করতে থাক, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার ৷” (সুরা হজ্জ্ব, ৭৭ নং আয়াত)

” (আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে) এমন লোকেরা, যাদেরকে ভুলাতে পারে না ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, এবং নামাজ কায়েম করা থেকে ও যাকাত প্রদান করা থেকে, তারা ভয় করে সেদিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে ৷” (সুরা নূর ৩৭ নং আয়াত)

“তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর, যেন তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও ৷” (সুরা নূর ৫৬ নং আয়াত)

” (আল কুরআন সেই সব) মুমিনদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ ৷ যারা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দেয়, আর তারা আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে৷ (সুরা নমল ২-৩ নং আয়াত)

“আপনার প্রতি কিতাব থেকে যা প্রত্যাদেশ করা হয়েছে তা আবৃত্তি করুন এবং সালাত কায়েম করুন ৷ নিশ্চই অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে সালাত বিরত রাখে ৷ আর আল্লাহর স্মরণই শ্রেষ্ঠতর ৷ তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন ৷” (সুরা আনকাবুত, ৪৫ নং আয়াত)

” নিজেকে দ্বীনে কায়েম রাখ বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহ অভিমুখী হয়ে এবং তাঁকে ভয় কর, নামাজ কায়েম কর এবং মুশরিকদের দলভূক্ত হয়ো না ৷ (সুরা রূম, ৩১ নং আয়াত)

“(৪) যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে;

(৫) তারাই স্বীয় রবের তরফ থেকে আগত হেদায়েতের উপর আছে এবং তারাই প্রকৃত সফলকাম ৷ ” (সুরা লুকমান, ৪-৫ নং আয়াত)

“যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, রীতিমত নামাজ কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসায়ের আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না ৷” (সুরা ফাতির, ২৯ নং আয়াত)

“আর যারা তাদের রবের ডাকে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে পারস্পরিক কর্ম সম্পাদন করে এবং যে রিজিক আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে; (তাদের জন্য পরকালে আছে উত্কৃষ্ট ও স্থায়ী পুরস্কার)৷” (সুরা শুরা, ৩৮ নং আয়াত)

“(কিয়ামতের দিন) তাদের দৃষ্টি নিম্নমুখী হয়ে থাকবে এবং তারা লাঞ্চনাগ্রস্থ হবে ৷ অথচ যখন তারা সুস্থ সবল ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহবান জানানো হত (কিন্তু তারা সাড়া দিত না)৷” (সুরা কালাম, ৪৩ নং আয়াত)

“(৪) অতএব দারুন দূর্ভোগ ঐসব নামাজীর জন্য, (৫) যারা নিজেদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন ৷ (৬) যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে (৭) এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিস অন্যকে দিতে বিরত থাকে ৷ ” (সুরা মাউন, ৪-৭ নং আয়াত)

“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদেও ধন-সম্পদ এবং তোমাদেরও সন্তান সন্ততি যেন তোমাদেরকে যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে, আর যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্থ লোক ৷” (সুরা মুনাফিকুন, ৯ নং আয়াত)

কিয়ামতের কঠিন দিনে বেনামাজীদের অবস্থা সম্পর্কে সুরা কিয়ামার ৪২-৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন-

“(জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদের অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করবে) (৪২) কি কারণে তোমারেকে আগুনে ফেলে দেয়া হয়েছে? (৪৩) তারা বলবে, আমরা মুসল্লীদের দলভূক্ত ছিলাম না ৷ (৪৩) আর আমরা মিসকিনদেরও খাদ্য দান করতাম না ৷ (৪৪) আর আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনায় মত্ত থাকতাম ৷ (৪৪) এবং আমরা কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করতাম ৷

বিভিন্ন অবস্থায় কিভাবে নামাজ পড়তে হবেঃ

সুরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেছেন-

“হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নেশায় মত্ত অবস্থায় নামাযের কাছেও যেও না যতক্ষন না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার; আর অপবিত্র অবস্থায় নয় যতক্ষন পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর, তবে মুসাফির অবস্থার কথা আলাদা ৷ আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও – মছেহ করবে স্বীয় মুখমন্ডল ও হাত ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ হলেন অতিশয় মার্জনাকারী ও পরম ক্ষমাশীল ৷”

যুদ্ধকালীন নামাজ সম্পর্কে সুরা নিসার ১০২ ও ১০৩ নং আয়াতে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে-

“(১০২) আর আপনি (মহানবী সাঃ) যখন তাদের মধ্যে থাকেন এবং তাদের নামাজ পড়াতে চান, তখন যেন তাদের একদল আপনার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা যেন নিজেদের অস্ত্র সাথে রাখে ৷ তার পর যখন তারা সিজদা সম্পন্ন করবে তখন যেন তারা তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়, আর অন্য দল যারা নামাজ পড়েনি তারা যেন আপনার সাথে নামাজ পড়ে নেয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে .. .. .. ..৷”

“(১০৩) আর যখন তোমরা নামাজ সমাপ্ত করবে, তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করবে ৷ তারপর যখন তোমরা বিপদমুক্ত হবে তখন যথাযথভাবে নামাজ পড়বে ৷ নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময় মুমিনদের উপর নামাজ পড়া ফরজ ৷”

সফরকালে কিভাবে নামাজ পড়তে হবে সে সম্পর্কে সুরা বাকারার ৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেছেন-

“আর যখন তোমরা পৃথিবীতে সফর করবে, তখন তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তোমরা নামাজ সংক্ষিপ্ত কর, এ আশংকায় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে ৷ নিশ্চয়ই কাফেররা হল তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৷”

সহিহ হাদিসে নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে যা বলা হয়েছেঃ

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে এক জুমআর নামাজ থেকে অপর জুমআর নামাজ পর্যন্ত সময়ে যত ছোট ছোট গুনাহ করা হয় তা নামাজের মাধ্যমে মুছে যায় যদি কোন বড় গুনাহর কাজ না করা হয়৷ -সহিহ মুসলিম৷

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি, যদি তোমাদের কোন ব্যক্তির বাড়ির দরজার পাশে একটি নদী থাকে এবং সে ঐ নদীতে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে তাহলে কি তোমরা তার গায়ে কোন ময়লা দেখতে পাবে? সাহাবীরা বললেন, তার গায়ে কোন ময়লার চিহ্ন থাকতে পারে না৷ মহানবী (সাঃ) বললেন, এটাই হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ যার মাধ্যমে আল্লাহ সকল পাপকে (ছোট ছোট) সাফ করে দেন ৷ -সহিহ বুখারী৷

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সেই সমস্ত লোক শহীদ হিসাবে গন্য হবে যারা ডুবে, প্লেগে, পেটের পীড়ায় অথবা দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেছে ৷ তার পর তিনি আরও বললেন, যদি মানুষ প্রথম ওয়াক্তে জোহর নামাজ আদায়ের পুরস্কারের কথা জানত, তাহলে তারা এর জন্য দৌড়ে আসত ৷ যদি তারা ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায়ের পুরস্কারের কথা জানত, তাহলে তারা প্রয়োজনে এর জন্য হামাগুড়ি দিয়ে আসত ৷ যদি তারা প্রথম কাতারে শরীক হওয়ার পুরষ্কারের কথা জানত, তবে তারা এর জন্য যথেষ্ট প্রতিযোগিতা করত ৷ -সহিহ বুখারী৷

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে (জামাতের জন্য) মসজিদে যায় আল্লাহ তার জন্য বেহেশতের মধ্যে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান তৈরী করে রাখবেন যেখানে প্রতি সকালে ও বিকালে উত্তম আতিথেয়তা প্রদান করা হবে ৷ -সহিহ বুখারী ৷

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মুনাফিকদের কাছে ফজর ও ইশার নামাজের চেয়ে কোন নামাজই কষ্টকর মনে হয় না আর তারা যদি এই নামাজগুলো ওয়াক্তমত আদায়ের পুরষ্কার সম্পর্কে জানত তবে তারা অবশ্যই হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাজে শরীক হত ৷ মহানবী আরও বলেন, আমি অবশ্যই ইচ্ছা করি মুয়াজ্জিনকে ইকামতের আদেশ দেই, একজন ব্যক্তিকে নামাজ পড়ানোর আদেশ দেই এবং একটি জলন্ত অগ্নিশিখা নিয়ে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেই যারা তখনও পর্যন্ত বাড়িঘর ছেড়ে নামাজে আসেনি ৷ -সহিহ বুখারী ৷

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেহ যতন জায়নামাজে থাকে এবং বায়ু নিঃসরণ না করে ততণ পর্যন্ত ফেরেস্তারা নামাজীর জন্য আল্লাহর কাছে মা প্রার্থনা করতে থাকে৷ তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ তাকে মা কর, তার প্রতি সদয় হও৷ -সহিহ বুখারী৷

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন বান্দার প্রথমে যে জিনিসটির হিসাব নেওয়া হবে তা হচ্ছে নামাজ ৷ যদি তার নামাজ ভাল হয় তবে তার অবশিষ্ট কাজও ভাল হবে; আর যদি তার নামাজ খারাপ হয় তবে তার অবশিষ্ট কাজও খারাপ হবে ৷ -আল তাবারানি, সহিহ আল জামি ৷

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে নামাজ আদায় করা ৷ তাই যে ব্যক্তি নামাজকে পরিত্যাগ করে সে হয়ে যায় অবিশ্বাসী (কাফের) ৷ – আহমদ, তিরমিযী ও নাসায়ী হতে সমর্থিত ৷

অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ঈমানদার ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা ৷ – মুসলিম, আবু দাউদ এবং নাসায়ী হতে সমর্থিত৷

পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসের উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে যে,

> ঈমানের সাথে কলেমা পড়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিতে হবে, তবেই পারলৌকিক মুক্তি মিলবে ৷

> ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে ওয়াক্তমত জামাতে নামাজ আদায় করা৷

> দূর্যোগ বা অসুস্থ্য অবস্থায়ও নামাজ ত্যাগ করা যাবে না৷

> নিজে নামাজ পড়ার সাথে সাথে অন্যকেও নামাজের দিকে আহবান করতে হবে৷

> ইসলাম ধর্মের অন্যান্য নির্দেশগুলি যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করা৷

> ইসলামকে জীবনে পরিপূর্ণভবে অনুশীলনের মাধ্যমে জান্নাতের আশা করা যায়৷

দয়াময় আল্লাহ্ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন- আমিন৷

ইসলামের অন্যান্য আবশ্যকীয় দিক নিয়ে পরবর্তিতে তথ্যবহুল লেখা প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ – লেখক ৷

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.