নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞানের খুঁজে... জগত মাঝে। যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি..। https://www.facebook.com/getAhsaan/

সোহাগ আহসান

যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি..।

সোহাগ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'ভাগ্য বনাম স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি- স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত?\'

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০০

বেশ লোভনীয় শিরোনাম।শারীরিক ক্লান্তি ভুলেই আমি ঘটনাটির প্রথম থেকে পড়া শুরু করলাম।ঘটনাটি সাজিদের ডায়েরিতে যেভাবে লেখা, ঠিক সেভাবেই আমি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি-
'কয়েকদিন আগে ক্লাশের থার্ড পিরিয়ডে মফিজুর রহমান স্যার এসে আমাকে দাঁড় করালেন।বললেন,- 'তুমি ভাগ্যে,আই মিন তাকদিরে বিশ্বাস করো?'
আমি আচমকা অবাক হলাম। আসলে এই আলাপগুলো হলো ধর্মীয় আলাপ। মাইক্রোবায়োলজির একজন শিক্ষক যখন ক্লাশে এসে এসব জিজ্ঞেস করেন, তখন খানিকটা বিব্রত বোধ করাই স্বাভাবিক। স্যার আমার উত্তরের আশায় আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন।
আমি বললাম,- 'জ্বি, স্যার।এ্যাজ এ্যা মুসলিম, আমি তাকদিরে বিশ্বাস করি।এটি আমার ঈমানের মূল সাতটি বিষয়ের মধ্যে একটি।'
স্যার বললেন,- 'তুমি কি বিশ্বাস করো যে, মানুষ জীবনে যা যা করবে তার সবকিছুই তার জন্মের অনেক অনেক বছর আগে তার তাকদিরে লিখে দেওয়া হয়েছে?'
- 'জ্বি স্যার'- আমি উত্তর দিলাম।
- 'বলা হয়, স্রষ্টার ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি ক্ষুদ্র পাতাও নড়েনা, তাই না?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'ধরো, আজ সকালে আমি একজন লোককে খুন করলাম। এটা কি আমার তাকদিরে পূর্ব নির্ধারিত ছিলো না?'
- 'জ্বি, ছিলো।'
- 'আমার তাকদির যখন লেখা হচ্ছিলো, তখন কি আমি জীবিত ছিলাম?'
- 'না, ছিলেন না।'
- 'আমার তাকদির কে লিখেছে? বা, কার নির্দেশে লিখিত হয়েছে?'
- 'স্রষ্টার।'
- 'তাহলে, সোজা এবং সরল লজিক এটাই বলে- 'আজ সকালে যে খুনটি আমি করেছি, সেটি মূলত আমি করি নি।আমি এখানে একটি রোবট মাত্র।আমার ভেতরে একটি প্রোগ্রাম সেট করে দিয়েছেন স্রষ্টা।সেই প্রোগ্রামে লেখা ছিলো যে, আজ সকালে আমি একজন লোককে খুন করবো।সুতরাং, আমি ঠিক তাই-ই করেছি, যা আমার জন্য স্রষ্টা পূর্বে ঠিক করে রেখেছেন।এতে আমার কোন হাত নেই।ডু ইউ এগ্রি,সাজিদ?'
- 'কিছুটা'- আমি উত্তর দিলাম।
স্যার এবার হাসলেন।হেসে বললেন,- 'আমি জানতাম তুমি কিছুটাই একমত হবে,পুরোটা নয়।এখন তুমি আমাকে নিশ্চই যুক্তি দেখিয়ে বলবে,- স্যার, স্রষ্টা আমাদের একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন।আমরা এটা দিয়ে ভালো-মন্দ বিচার করে চলি,রাইট?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'কিন্তু সাজিদ, এটা খুবই লেইম লজিক,ইউ নো? ধরো, আমি তোমার হাতে বাজারের একটি লিষ্ট দিলাম।লিষ্টে যা যা কিনতে হবে, তার সবকিছু লেখা আছে।এখন তুমি বাজার করে ফিরলে।তুমি ঠিক তাই তাই কিনলে যা আমি লিষ্টে লিখে দিয়েছি।এবং তুমি এটা করতে বাধ্য।'
এতটুকু বলে স্যার আমার কাছে জানতে চাইলেন,- 'বুঝতে পারছো?'
আমি বললাম,- 'জ্বি স্যার।'
- 'ভেরি গুড! ধরো, তুমি বাজার করে আসার পর, একজন জিজ্ঞেস করলো, সাজিদ কি কি বাজার করেছো? তখন আমি উত্তর দিলাম,- 'ওর যা যা খেতে মন চেয়েছে, তা-ই তা-ই কিনেছে। বলতো, আমি সত্য বলেছি কিনা?'
আমি বললাম,- 'নাহ, আপনি মিথ্যা বলেছেন।'
স্যার চিৎকার করে বলে উঠলেন,- 'এক্সাক্টলি। ইউ হ্যাভ গট দ্য পয়েণ্ট,মাই ডিয়ার।আমি মিথ্যা বলেছি।আমি লিষ্টে বলেই দিয়েছি তোমাকে কি কি কিনতে হবে।তুমি ঠিক তা-ই তা-ই কিনেছো যা আমি কিনতে বলেছি।যা কিনেছো সব আমার পছন্দের জিনিস। এখন আমি যদি বলি,- 'ওর যা যা খেতে মন চেয়েছে,সে তা-ই তা-ই কিনেছে', তাহলে এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা,না?'
- 'জ্বি,স্যার।'
- 'ঠিক স্রষ্টাও এভাবে মিথ্যা বলেছেন।দুই নাম্বারি করেছেন। তিনি অনেক আগে আমাদের তাকদির লিখে তা আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন।এখন আমরা সেটাই করি, যা স্রষ্টা সেখানে লিখে রেখেছেন।আবার, এ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য ডে, এই কাজের জন্য কেউ জান্নাতে যাচ্ছে, কেউ জাহান্নামে।কিন্তু কেনো? এখানে মানুষের তো কোন হাত নেই।ম্যানুয়ালটা স্রষ্টার তৈরি। আমরা তো জাষ্ট পারফর্মার।স্ক্রিপ্ট রাইটার তো স্রষ্টা।স্রষ্টা এরজন্য আমাদের কাউকে জান্নাত,কাউকে জাহান্নাম দিতে পারেন না। যুক্তি তাই বলে,ঠিক?'
আমি চুপ করে রইলাম। পুরো ক্লাশে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে তখন।
স্যার বললেন,- 'হ্যাভ ইউ এ্যানি প্রপার লজিক অন দ্যাট টিপিক্যাল কোয়েশ্চান,ডিয়ার?'
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম।
স্যার মুচকি হাসলেন। মনে হলো- উনি ধরেই নিয়েছেন যে, উনি আমাকে এবার সত্যি সত্যিই কুপোকাত করে দিয়েছেন।বিজয়ীর হাসি।
আমাকে যারা চিনে তারা জানে, আমি কখনো কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নিই না।আজকে যেহেতু তার ব্যতিক্রম ঘটলো, আমার বন্ধুরা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব চোখ করে তাকালো।তাদের চাহনি দেখে মনে হচ্ছিলো, এই সাজিদকে তারা চিনেই না।কোনদিন দেখে নি।
আর, ক্লাশে আমার বিরুদ্ধ মতের যারা আছে, তাদের চেহারা তখন মূহুর্তেই উজ্জ্বল বর্ণ ধারন করলো।তারা হয়তো মনে মনে বলতে লাগলো,- 'মোল্লার দৌঁড় অই মসজিদ পর্যন্তই।হা হা হা'।
আমি মুখ তুলে স্যারের দিকে তাকালাম।মুচকি হাসিটা স্যারের মুখে তখনও বিরাজমান।
আমি বললাম,- 'স্যার, এই ক্লাশে কার সম্পর্কে আপনার কি অভিমত?'
স্যার ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন। স্যার জিজ্ঞেস করেছেন কি আর আমি বলছি কি।
স্যার বললেন,- 'বুঝলাম না।'
- 'মানে, আমাদের ক্লাশের কার মেধা কি রকম, সে বিষয়ে আপনার কি ধারনা?'
- 'ভালো ধারনা। ছাত্রদের সম্পর্কে একজন শিক্ষকেরই তো সবচেয়ে ভালো জ্ঞান থাকে।'
আমি বললাম,- 'স্যার, আপনি বলুন তো, এই ক্লাশের কারা কারা ফাষ্ট ক্লাশ আর কারা কারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে?'
স্যার কিছুটা বিস্মিত হলেন। বললেন,- 'আমি তোমাকে অন্য বিষয়ে প্রশ্ন করেছি।তুমি 'আউট অফ কনটেক্সট' এ গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করছো,সাজিদ।'
- 'না স্যার, আমি কনটেক্সটেই আছি। আপনি উত্তর দিন।'
স্যার বললেন,- 'এই ক্লাশ থেকে রায়হান, মমতাজ, ফারহানা, সজীব, ওয়ারেশ, ইফতি, সুমন,জাবেদ এবং তুমি ফাষ্ট ক্লাশ পাবে। আর বাকিরা সেকেন্ড ক্লাশ।'
স্যার যাদের নাম বলেছেন, তারা সবাই ক্লাশের ব্রিলিয়্যাণ্ট ষ্টুডেণ্ট।সুতরাং, স্যারের অনুমান খুব একটা ভুল না।
আমি বললাম,- 'স্যার, আপনি এটা লিখে দিতে পারেন?'
- 'Why not'- স্যার বললেন।
এই বলে তিনি খচখচ করে একটা কাগজের একপাশে যারা ফাষ্ট ক্লাশ পাবে তাদের নাম, অন্যপাশে যারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে,তাদের নাম লিখে আমার হাতে দিলেন।
আমি বললাম,- 'স্যার, ধরে নিলাম যে আপনার ভবিষ্যৎবাণী সম্পূর্ণ সত্য হয়েছে।মানে, আপনি ফাষ্ট ক্লাশ পাবে বলে যাদের নাম লিখেছেন,তারা সবাই ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে,আর যারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে লিখেছেন, তাদের সবাই সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে।'
- 'হুম, তো?'
- 'এখন, স্যার বলুন তো, যারা ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে, আপনি এই কাগজে তাদের নাম লিখেছেন বলেই কি তারা ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে?'
- 'নাহ তো।'
- 'যারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে, তারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে বলে আপনি এই কাগজে লিখেছেন বলেই কি তারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে?'
স্যার বললেন,- 'একদম না।'
- 'তাহলে মূল ব্যাপারটি কি স্যার?'
স্যার বললেন,- 'মূল ব্যাপার হলো, আমি তোমাদের শিক্ষক।আমি খুব ভালো জানি পড়াশুনায় তোমাদের কে কেমন।আমি খুব ভালো করেই জানি, কার কেমন মেধা। সুতরাং, আমি চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারি কে কেমন রেজাল্ট করবে।'
আমি হাসলাম। বললাম,- 'স্যার, যারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে, তারা যদি আপনাকে দোষ দেয়? যদি বলে, আপনি 'সেকেন্ড ক্লাশ' ক্যাটাগরিতে তাদের নাম লিখেছেন বলেই তারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে?'
স্যার কপালের ভাঁজ লম্বা করে বললেন,- 'ইট উড বি টোট্যালি বুলশিট! আমি কেন এর জন্য দায়ী হবো? এটা তো সম্পূর্ণ তাদের দায়। আমি শুধু তাদের মেধা,যোগ্যতা সম্পর্কে ধারনা রাখি বলেই অগ্রিম বলে দিতে পেরেছি যে কে কেমন রেজাল্ট করবে।'
আমি আবার জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। পুরো ক্লাশ আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
আমি থামলাম।বললাম,- 'স্যার, তাকদির তথা ভাগ্যটাও ঠিক এরকম। আপনি যেমন আমাদের মেধা, যোগ্যতা,ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখেন, স্রষ্টাও তেমনি তার সৃষ্টি সম্পর্কে ধারনা রাখেন।আপনার ধারনা মাঝে মাঝে ভুল হতে পারে, কিন্তু স্রষ্টার ধারনায় কোন ভুল নেই।স্রষ্টা হলেন আলিমুল গায়েব।তিনি ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব জানেন।
আপনি যেরকম আমাদের সম্পর্কে পূর্বানুমান করে লিখে দিয়েছেন যে, আমাদের মধ্যে কারা কারা ফাষ্ট ক্লাশ পাবে, আর কারা সেকেন্ড ক্লাশ।এর মানে কিন্তু এই না যে, আপনি বলেছেন বলে আমাদের কেউ ফাষ্ট ক্লাশ পাচ্ছি, কেউ সেকেন্ড ক্লাশ।
স্রষ্টাও সেরকম পূর্বানুমান করে আমাদের তাকদির লিখে রেখেছেন।তাতে লেখা আছে দুনিয়ায় আমরা কে কি করবো।এর মানেও কিন্তু এই না যে, তিনি লিখে দিয়েছেন বলেই আমরা কাজগুলো করছি।বরং, এর মানে হলো এই- তিনি জানেন যে, আমরা দুনিয়ায় এই এই কাজগুলো করবো।তাই তিনি তা অগ্রিম লিখে রেখেছেন তাকদির হিসেবে।
আমাদের মধ্যে কেউ ফাষ্ট ক্লাশ আর কেউ সেকেন্ড ক্লাশ পাবার জন্য যেমন কোনভাবেই আপনি দায়ী নন, ঠিক সেভাবে, মানুষের মধ্যে কেউ ভালো কাজ করে জান্নাতে, আর কেউ খারাপ কাজ করে জাহান্নামে যাবার জন্যও স্রষ্টা দায়ী নন।স্রষ্টা জানেন যে, আপনি আজ সকালে একজনকে খুন করবেন।তাই তিনি সেটা আগেই আপনার তাকদিরে লিখে রেখেছেন।এটার মানে এই না যে- স্রষ্টা লিখে রেখেছে বলেই আপনি খুনটি করেছেন।এর মানে হলো- স্রষ্টা জানেন যে,আপনি আজ খুনটি করবেন।তাই সেটা অগ্রিম লিখে রেখেছেন আপনার তাকদির হিসেবে।
স্যার, ব্যাপারটা কি এখন পরিষ্কার?
স্যারের চেহারাটা কিছুটা ফ্যাকাশে মনে হলো। তিনি বললেন,- 'হুম।'
এরপর স্যার কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।তারপর বললেন,- 'আমি শুনেছিলাম তুমি ক'দিন আগেও নাস্তিক ছিলে।তুমি আবার আস্তিক হলে কবে?'
আমি হা হা হা করে হাসলাম। বললাম,- 'এই প্রশ্নটা কিন্তু স্যার আউট অফ কনটেক্সট।'
এটা শুনে পুরো ক্লাশ হাসিতে ফেঁটে পড়লো।
পিরিওডের একদম শেষদিকে, স্যার আবার আমাকে দাঁড় করালেন।বললেন,- 'বুঝলাম স্রষ্টা আগে থেকে জানেন বলেই লিখে রেখেছেন।তিনি যেহেতু আগে থেকেই জানেন কে ভালো কাজ করবে আর কে খারাপ কাজ করবে, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার কি দরকার? যারা জান্নাতে যাওয়ার তাদের জান্নাতে, যারা জাহান্নামে যাওয়ার তাদের জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেই তো হতো,তাই না?'
আমি আবার হাসলাম। আমার হাতে স্যারের লিখে দেওয়া কাগজটি তখনও ধরা ছিলো।আমি সেটা স্যারকে দেখিয়ে বললাম,- 'স্যার, এই কাগজে কারা কারা ফাষ্ট ক্লাশ পাবে, আর কারা কারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে, তাদের নাম লেখা আছে। তাহলে এই কাগজটির ভিত্তিতেই রেজাল্ট দিয়ে দিন।বাড়তি করে পরীক্ষা নিচ্ছেন কেনো?'
স্যার বললেন,- 'পরীক্ষা না নিলে কেউ হয়তো এই বলে অভিযোগ করতে পারে যে,- 'স্যার আমাকে ইচ্ছা করেই সেকেন্ড ক্লাশ দিয়েছে।পরীক্ষা দিলে আমি হয়তো ঠিকই ফাষ্ট ক্লাশ পেতাম।'
আমি বললাম,- 'একদম তাই,স্যার। স্রষ্টাও এইজন্য পরীক্ষা নিচ্ছেন,যাতে কেউ বলতে না পারে- দুনিয়ায় পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে আমি অবশ্যই আজকে জান্নাতে থাকতাম। স্রষ্টা ইচ্ছা করেই আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়েছে।'
ক্লাশের সবাই হাত তালি দিতে শুরু করলো। স্যার বললেন,- 'সাজিদ, আই হ্যাভ এ্যা লাষ্ট কোয়েশ্চান।'
- 'ডেফিনেইটলি, স্যার।'- আমি বললাম।
- 'আচ্ছা, যে মানুষ পুরো জীবনে খারাপ কাজ বেশি করে,সে অন্তত কিছু না কিছু ভালো কাজ তো করে,তাই না?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'তাহলে, এই ভালো কাজগুলোর জন্য হলেও তো তার জান্নাতে যাওয়া দরকার,তাই না?'
আমি বললাম,- 'স্যার, পানি কিভাবে তৈরি হয়?'
স্যার আবার অবাক হলেন। হয়তো বলতে যাচ্ছিলেন যে, এই প্রশ্নটাও আউট অফ কনটেক্সট, কিন্তু কি ভেবে যেন চুপসে গেলেন।বললেন,- 'দুই ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেনের সংমিশ্রণে।'
আমি বললাম,- 'আপনি এক ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেন দিয়ে পানি তৈরি করতে পারবেন?'
- 'কখনোই না।'
- 'ঠিক সেভাবে, এক ভাগ ভালো কাজ আর এক ভাগ মন্দ কাজে জান্নাত পাওয়া যায়না। জান্নাত পেতে হলে হয় তিন ভাগই ভালো কাজ হতে হবে, নতুবা দুই ভাগ ভালো কাজ, এক ভাগ মন্দ কাজ হতে হবে। অর্থাৎ, ভালো কাজের পাল্লা ভারি হওয়া আবশ্যক।'
সেদিন আর কোন প্রশ্ন স্যার আমাকে করেন নি।'
-
এক নিশ্বাঃসে পুরোটা পড়ে ফেললাম।কোথাও একটুও থামিনি। পড়া শেষে যেই মাত্র সাজিদের ডায়েরিটা বন্ধ করতে যাবো, অমনি দেখলাম, পেছন থেকে সাজিদ এসে আমার কান মলে ধরেছে।সে বললো,- 'তুই তো সাংঘাতিক লেভেলের চোর।'
আমি হেসে বললাম,- 'হা হা হা। স্যারকে তো ভালো জব্দ করেছিস ব্যাটা।'
কথাটা সে কানে নিলো বলে মনে হলো না।নিজের সম্পর্কে কোন কমপ্লিমেন্টই সে আমলে নেয় না। গামছায় মুখ মুছতে মুছতে সে খাটের উপর শুয়ে পড়লো।
আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম। বললাম,- 'সাজিদ......'
- 'হু'
- 'একটা কথা বলবো?'
- 'বল।'
- 'জানিস, একসময় যুবকেরা হিমু হতে চাইতো।হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে, মরুভূমিতে গর্ত খুঁড়ে জ্যোৎস্না দেখার স্বপ্ন দেখতো।দেখিস,এমন একদিন আসবে, যেদিন যুবকেরা সাজিদ হতে চাইবে। ঠিক তোর মতো......'
এই বলে আমি সাজিদের দিকে তাকালাম।দেখলাম, ততক্ষণে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। অঘোর ঘুম........
'তাকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা'- স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত?'/ আরিফ আজাদ

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:১৪

হানিফঢাকা বলেছেন: ল অফ রিকেশিয়াল - এই সম্পর্কে একটু পড়ালেখা করলে ব্যাপারটা বোধগম্য হবে।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:২৩

শেয়াল বলেছেন: চরম বিতর্ক পড়া গেল । B-)

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪

মহা সমন্বয় বলেছেন: আসলে সবই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের লীলা খেলা।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: এই টপিকটাই কিন্তু এখন আউট অফ কনটেক্সট।কারণ আশা করি ভালো করেই জানেন।
পোষ্ট চমৎকার।

৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭

সালমা শারমিন বলেছেন: পোস্ট ভাল হয়েছে। শুভ কামনা

৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬

শহিদুল বলেছেন: জাকির নায়েকের ভুল যুক্তিটাকে গল্প আকারে সাজাইছে।

৭| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

সেলিম৮৩ বলেছেন: সোহাগ অাহসান,
অাপনার পুরা লেখাটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।
অাপনি কোরঅান-হাদিসের বানীগুলোকে একটা লজিক্যাল বিন্যাসে প্রকাশ করেছেন। খুব চমৎকার।
একটা বিষয় অামাদের জানতে হবে, অাল্লাহর নিকট অজানা বিষয় এবং অতীত, বর্তমান , ভবিষৎ বলে কিছু নেই।
তার ইলম কোন শব্দ/বাক্যের সীমারেখা দ্বারা মাপা যাবেনা।
অামরা তার সৃষ্ট জীব এটাই মনে রাখতে হবে।
অাল্লাহপাকের নিকট অনুমান বলে কিছু নেই। তিনি জানেননা, ভবিষৎতে জানবেন-এরকম বাক্য তার ক্ষেত্রে প্রয়োগ অসম্ভব।
সুতরাং যারা বলে অাল্লাহপাকের বিনা হুকুমে গাছের পাতা পড়েনা।
তিনি সমস্ত ভাগ্য লিখে রেখেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা ইসলাম সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান রাখেন। লিংকটি দেখতে পারেন।
একটি প্রশ্ন এবং অজ্ঞতা থেকে অবিশ্বাস
http://www.somewhereinblog.net/blog/selim83/30141033

৮| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪

কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: শহিদুল বলেছেন: জাকির নায়েকের ভুল যুক্তিটাকে গল্প আকারে সাজাইছে। - তাহলে সঠিক যুক্তিটা কি?

৯| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯

কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আল্লাহ ইচ্ছা না করলে তারা যে কোন অন্যায় করত না এই দাবি অপরাধীরা শেষ বিচারের দানও করবে যা আল্লাহ কোরআনে বলে দিয়েছেন।

" মুশরিকরা বললঃ যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমরা তাঁকে ছাড়া কারও এবাদত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষেরাও করত না এবং তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোন বস্তুই আমরা হারাম করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছে। রাসূলের দায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌছিয়ে দেয়া।(১৬:৩৫) "

"এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। (৬:১৪৮)"

তাদের এই যুক্তির জবাবে আল্লাহ বলেছেন যে তাদের কাছে এ'ব্যাপারে কোন প্রমান নাই। এটা তারা কেবলমাত্র আন্দাজেই বলছে। তাদের পুর্ববর্তীরাও এভাবেই বলত কিন্তু তাদের সেই যুক্তি গ্রহন করা হয় নাই বরং তাদেরকেও কঠীন সাস্তি দেয়া হয়েছে। কারণ তারা যখন অন্যায় করত তখন আল্লাহর ইবাদত হিসেবে করত না বা আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন সেই বিশ্বাসে করত না বরং নিজের স্বার্থেই করত।

যদি তাদের দাবি সঠিক হয়, অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশে বা ইচ্ছায় যদি তারা অন্যায় করে থাকে তাহলে আল্লাহতো ভাল নির্দেশও বহু দিয়েছেন, ভাল ইচ্ছাও করেছেন, অনেত ভাল কাজের অনুভুতি তাদের মাঝে জাগিয়েছেন - তাহলে তারা সেগুলি করল না কেন? বেছে বেছে কেবল অন্যায় গুলিই কেন করল?

আর চুড়ান্ত কথা - যদি তারা আল্লাহর ইচ্ছায় মন্দ কাজ করে থাকতে পারে (তখন যদি মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার চেস্টা না করে থাকে) তাহলে আজকে আল্লাহর ইচ্ছায় জাহান্নামে যেতেই বা তাদের আপত্তি কেন? আজকে কেন উল্টো যুক্তি দেখিয়ে জাহান্নাম থেকে বাচার চেস্টা করছে? যদি এই চেস্টাটাই তারা দুনিয়ায় থাকতে অন্যায় অপকর্ম থেকে বাঁচার জন্য করত তাহলেইতো আল্লাহ তাদের বাঁচিয়ে নিতেন। সুতরাং তাদের এই যুক্তির কোনই গ্রহনযোগ্যতা নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.