নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আমির হুসাইন

আমি শঙ্খনীল কারাগার

ভালো চিন্তাগুলো যখন মনের আঙ্গিনায় ভিড় করে, দুচোখ জুড়ে তখন ঘুমের বারতা। খারাপের মাঝে কাটাই আমি ঘুমহীন অসংখ্য রাত।

আমি শঙ্খনীল কারাগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক কিশোরের খবর বলে গেলাম।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩২

সুমনের বয়স সতেরো। এখনও কিশোর। প্রায় ৮ বছর আগে বাবা পলাশ মারা যান। পরের বছর মা লাইলী বেগম মারা যান। শিশু বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম সুমন কাকরাইল সাহাবুদ্দিনের হোটেলে সাত বছর ধরে কাজ করছে। সেখানে ঘুমায়। এই ফাঁকে কয়েক মাস আগে পরিচয় হয় ওই এলাকার পান-সিগারেট বিক্রেতা রনির সঙ্গে। সে তাকে রবিবার দুপুরে ককটেলটি দিয়েছে প্রধান বিচারপতি বাসভবনের সামনে ফাটানোর জন্য। এ জন্য মাত্র ৫শ’ টাকা পায়ও সে। রনির এক বড় ভাই বিএনপি নেতা এটি তাকে দেয়ার জন্য বলেছে। হরতালের সমর্থনে বিচারপতির বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে নিজের হাতে তা বিস্ফোরিত হয়। এতে তার ডান হাত রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হয়। ভুঁড়ি বের হয়ে যাচ্ছিল। এমন কথা বলে সুমন বার বার বলছিল, পুলিশ ভাই আমাকে বাঁচান। প্রচ- ব্যথা। কষ্ট লাগছে। আমি আর কারও কথায় বোমা ফুটাব না। রবিবার দুপুর ২টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়ে সুমন এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ডান হাত ক্ষতবিক্ষত। পেটের নাড়িভুঁড়ি বের হওয়া, সারা স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত সুমন কষ্ট ও যন্ত্রণায় হাসপাতাল বেডে ছটফট করছে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে রবিবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে বিচারপতির বাসভবনে সামনে সুমন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা চালায়। একটি ককটেল হাতে নিয়েছিল সে। কিন্তু ককটেলটি দূরে বিচারপতি বাসভবনে ছোড়ার আগেই তার হাতে বিস্ফোরিত হয়। এতে তার ডান হাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। স্পিøন্টার বিদ্ধ হয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। রক্তাক্ত ও গুরুতর জখম হয় সে। খবর পেয়ে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম তাকে সারা শরীরের স্পিøন্টার বিদ্ধ হয়ে সুমনকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে সুমনের নিজের হাতে বিস্ফোরিত হয়ে তার সারা শরীর রক্তাক্ত হয়েছে। পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। বর্তমানে সুমন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা চলছে। তার শরীরের স্যালাইন দেয়া হয়েছে। গুরুতর আহত সুমন জানায়, ৮ বছর ধরে কাকরাইল সাহাবুদ্দিনের হোটেলের বয় হিসেবে কাজ করে। তার বাড়ি ঝালকাঠি জেলা সদরের সাধুর বটতলা গ্রামে। বাবা পলাশ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরই শোকে মা লাইলী বেগম শোকে মারা যায়। শিশু বয়সে সৎ মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ঢাকা আসতে হয়। এরপর ওই হোটেলে চাকরি ও ঘুমায়। সেখানে কয়েক মাস আগে পরিচয় হয় রনি নামে এক পান সিগারেটের দোকানির সঙ্গে। তার এক বড় ভাই সব সময় রনিকে টাকা দিয়ে মিছিল ও বোমা দিয়ে যেত। তাদের সঙ্গে মিছিলমিটিং ও ককটেল বহন করতে হতো। এ জন্য কোনদিন ২শ’, ৩শ’ ও ৫শ’ টাকা দিত। কষ্ট ও বেদনায় রনি জানান, বাবা মাকে হারিয়ে শিশু বয়সে কাজ করেছি। বড় ভাই শান্ত গাড়িরচালক। কিন্তু কোনদিন তার খোঁজ নেয়নি। পেটের তাগিদে টাকা পেয়ে সে হরতালে সর্মথনকারীর পক্ষ নিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়েছিল। আমি আর ওদের (বিএনপির এক নেতা) কথা শুনব না। এই কান ধরেছি। পুলিশ ভাই আমাকে বাঁচান। পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ঘৃণ্য রাজনৈতিক শিকার কিশোর সুমন। তার মতো কত সুমন প্রতিদিন রাজপথে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে আছে। তার আশঙ্কা সুমন হয়ত বেঁচে থাকলেও পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকবে। টাকার বিনিময়ে একটি রাজনৈতিক অপশক্তি তার পকেটে ককটেল দিয়ে বিচারপতির বাসভবনে সামনে ফাটানোর জন্য। সুমন কি জানত এটি তার কাল হবে, এই ককটেলটি তার হাতে বিস্ফোরিত হবে। কিন্তু ভাগ্যাহত সুমনই ককটেল বহন করতে গিয়ে আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। হয়ত সে ভাল হয়ে যেতে পারে। নয়ত পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে সারাজীবন বেঁচে থাকবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:০২

ডরোথী সুমী বলেছেন: এই নেতারা কবে অসহায় শিশুদের রেহাই দেবে! বোধহয় কখনোই না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.