নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি চলচ্চিত্র... একটি বই...... কিছু এলোমেলো অনুভূতিতে

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১২

লেখাটি শুরু করার আগে অনেক বার ভেবেছি, লেখাটি কে আসলে কোন ছকে ফেলব, পাঠ প্রতিক্রিয়া নাকি চলচ্চিত্র পর্যালোচনা নাকি এই দুই-এর মিশেলে আমার নিজস্ব কিছু অনুভূতি।

প্রথমে না হয় চলচ্চিত্র প্রসঙ্গেই আসি। আজ থেকে আনুমানিক ১০ বছর আগের কথা, গ্রন্থ কীট পদবী তো দুরস্থান, জীবনে কোন উপন্যাস ও ধরে দেখিনি। ‘জি ক্লাসিক’ নামক একটি চ্যানেলে হঠাৎ একদিন চোখ আটকালো, তেরো চোদ্দ বছরের এক কিশোরী, নাকে নথ, কানে ঝুমকো, টিকলি, গলায় হার, হাতে কয়েক গোছা চুরি আর জড়ি পারের শাড়ি পরে, আলতা রাঙ্গা পা দোলাচ্ছে আর পান চিবাচ্ছে। তার পাশেই বসা, সতেরো আঠারো বছরের এক কিশোর মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটির ঠোঁট বেঁয়ে পানের পিক গড়িয়ে পরা দেখছে। দেখার ভঙ্গিটা ছিল খুব নিষ্পাপ যার মাঝে কোন অশালীনতা নেই, বুঝাই যাচ্ছে এরা সদ্য বিবাহিত। অনেকেই হয়ত এখনও ধারণা করতে পারছেন না এটা কোন চলচ্চিত্র???

অমিত কুমারের কণ্ঠে, রাহুল দেব বর্মণ রচিত ‘বারে আচ্ছে লাগতে হায়’ গানটি নিশ্চয়ই অনেকেই শুনেছেন, দেখেছেনও হয়তো। তরুণ মজুমদার পরিচালিত, বিমল কর-এর উপন্যাস অবলম্বনে ‘বালিকা বধূ’ সিনেমাটির কথাই বলছি। যার শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন, অমল চরিত্রে শচিন, রজনী চরিত্রে রজনী শার্মা, শরৎ চরিত্রে গোবিন্দ আস্রানি ও আরও অনেকে।
সিনেমাটি কত বার দেখেছি আমি হিসেব করে বলতে পারবোনা, টি ভি-র চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে, যখন, যেখানে, যেই সময়ই দেখিয়েছে এমন কি নির্ধারনি সময়ে, সময় বের করেও অসংখ্যবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখেছি সিনেমাটি। গল্পের প্রেক্ষাপটি বলা যেতে পারে উন্নিশও শতকের প্রথম দিক। পারিবারিক ভাবে নির্দিষ্ট করা বিয়ের চলটাই তখন নিয়ম, তাই শুভ দৃশটি তেই অমল আর রজনীর প্রথম দেখা হয়েছিল। যদিও বর আসার পর পর, খুটিয়ে খুটিয়ে রজনী আগেই জেনে নিয়েছিল বরের চেহারা বৃত্তান্ত। এর পর বিয়ের তত্ত্ব, কড়ি খেলা, ধাঁধার আসরে টিপ্পুনি কেটে কেটে বরকে নাজেহাল করা, যার মাঝে রজনী ছিল নিশ্চুপ সক্রিয় ভূমিকায়। তাই তো মালা বদলের সময়েই রজনী অমলের কানে চিমটি কেটেছিল।

শ্বশুরালয় তথা অমলের সাথে রজনী সাক্ষাতে আসত ক্ষণিকের জন্য। ক্ষণিকের ওই সাক্ষাৎটুকুর জন্য, অমলের দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকা মন, কখন বিরহে, কখন অভিমানে, কখন বা ভালবাসায় আবেগপ্রবণ হয়ে উঠত। সেই সময়, স্ত্রীর জন্য মন উথাল পাথাল করছে জাতীয় কথা গুলো বলাতো দূরের কথা, হাবে ভাবে প্রকাশ করাটাও যেন দৃষ্টিকটু। তাই বারো মাসে সাত মাস-ই, মনের সমস্ত আবেগ অমলকে একাই শামলাতে হতো। সেই সাথে অমলের পিঠোপিঠি ভগ্নি চন্দ্রা এবং ভগ্নীপতি শরৎ-এর, প্রায়শয়ই সাক্ষাৎ, অমলের নাম করে চিঠি আদান প্রদান, সবটাই যেন অমলের কাটা মনে নুনের ছিটা ছিলো।
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া চটপটে রজনী যেন একেবারে নিয়ম কানুনের জাহাজ, এটা করলে পাপ হবে, তো ওটা করলে পাপ লাগবে। অমলের প্রতি ছোট ছোট টিপ্পুনি, খুনসুটি আর শ্রদ্ধাবোধে, কেমন যেন একটা বিজ্ঞ ভাব নিয়ে চলত রজনী। অমল সযত্নে তার বালিকা বধূটিকে ঘুরে ফিরে দেখত। রজনীর নিয়ম-কানুন, টিপ্পুনি, খুনসুটি আর অবশ্যই শ্রদ্ধাবোধে, সবটাই যেন অমলের প্রতি রজনীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। অমল সেটা অনুভব করত বৈকি......
গল্পটির উল্লেখ যোগ্য একটি পর্ব ছিলো, জ্যোৎস্না খচিত এক রাতে অমল এবং রজনীর চুপি চুপি অভিসার। চন্দ্রা এবং শরত-এর সাহায্যেই, বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে তারা পালিয়েছিলো এই অভিসারে।

যে ব্যাপারটি আমাকে সবচে অভিভূত করেছিল, তা হলো, অমল আর রজনীর সম্পর্কের রসায়ন। বৈবাহিক জীবনে, শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও, ভালোবাসার যে একটি ব্যাপকতা আছে সেটা ছবিটির পরিচালক এবং বিমল কর তার মূল উপন্যাসটিতে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই লেখক তার উপন্যাসটির একটি পর্যায় লিখেছেন, ‘কৈশোর বয়েসে......... স্বাভাবিক একটি উদারতা ও ভক্তি শ্রদ্ধা বর্তমান থাকে...... দুই চারিটা কিলচর যেমন চলিবে, তেমন একে অন্যের কন্ঠবেষ্টন করিয়া দুঃখে সান্ত্বনা দিবে। এই ভাবে যেই আন্তরিক সম্পর্কটা গড়িয়া উঠিবে, তাহা যৌবনকালে যথার্থ প্রেমের হইয়া উঠিবে, দেহের তাড়না হৃদয়টাকে মূল্যহীন করিতে পারিবে না। কৈশোর ও যৌবনের তহবিলে যা গচ্ছিত থাকিবে, তাহার যোগফলে প্রবীণ অবস্থাটা দিব্য কাটিয়া যাইবে।‘

উপন্যাস ছাপিয়ে, সিনেমাটিতে বাড়তি দুটি সংযোজনের একটি ছিল, তৎকালীন স্বদেশী আন্দোলনের সামান্য কিছু রেশ এবং রজনীর পরিবারের সাথে রজনীর তীর্থ যাত্রার একটি পর্যায়, কনার্কের মন্দিরের দেয়াল চিত্র, যা দেখে রজনী প্রথম বারের জন্য লজ্জায় মুখ ঢেকে বুঝেছিল, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে নিয়ম-কানন, টিপ্পুনি, খুনসুটি আর শ্রদ্ধাবোধে ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আছে।

রজনী পাকাপোক্ত ভাবে শ্বশুরালয় ফিরল, কিন্তু অমলকে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যেতে হলো কোলকাতায়। আরও একটি লম্বা বিচ্ছেদ, এ যেন আর শেষ হবার নয় !!!!
অবশেষে কিন্তু শেষ হয়েছিলো অমল-রজনীর বিচ্ছেদ। দীর্ঘ চল্লিশ বছর সংসার করার পরেও, চওড়া সিঁথির, কাঁচা পাকা চুলের, চশমা পরা রজনী, অমলের চোখে যেন বালিকা বধূটিই রয়ে গেলো, যার অবদান অমলের জীবনে অসামান্য।

এখনকার আধুনিক সমাজ আর সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী, আমার বিয়ে হয়েছিল অপেক্ষাকৃত কম বয়সে এবং সারা জীবনের তরে যেই মুহতারাম আমার হাত ধরেছিলেন তার সাথে আমার বয়সের তফাৎটাও অপেক্ষাকৃত খানিক বেশি, তাই নিজেকে রজনী ভাবতে খুব ভাল লাগতো। দীর্ঘ চল্লিশ বছর না হলেও, আট বছরের মাথায় এসে, মুহতারামকে জিজ্ঞাস করি, ‘আমাকে কি এখন আপনার ছোট্ট বউ মনে হয় ???’

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: আচ্ছা ধরেন, আপনি চাকরী করেন না। আপনার নিজের কোম্পানী আছে। তাহলেতো আপনার বিপদ আরেক মাত্রা বেশী। অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা ষ্টিভ-জবসকেই কিন্তু তার কোম্পানীর সবাই ভোট দিয়ে বের করে দিয়েছিলো। পরে তিনি পিক্সার নামক একটি অ্যানিমেশন ষ্টুডিও দেন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই আবার নিজের প্রতিষ্ঠিত অ্যাপেলে ফেরত আসেন। এবং iPhone, iPad, iPod এর মত জনপ্রিয় প্রোডাক্টগুলো তৈরী করেন।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৯

নির্ভাণা বলেছেন: অনেক বার চিন্তা করেও আমার লেখাটার সাথে আপনার মন্তব্য়ের কোন সম্পর্ক খুঁজে পাইনি। আমার মনে হয় আপনি ভুল জাগায় মন্তব্য করেছেন।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৫

নজসু বলেছেন: বালিকা বধু ছবিটা দেখা হয়নি।
আপনার পোষ্ট পাঠে দেখার ইচ্ছা জেগেছে।
দেখবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.