নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্ভাণা

নির্ভাণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই বসন্তে-৪

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৭

আজকের ছুটির দিনটা শুরু হয়েছে, তেল মশলার ঘ্রাণ আর ফার্নিচারের ধুলো ঝাড়ার ন্যাকরা হাতে। আজ লন্ডন থেকে আলেয়ার বড় বোন লায়লা আসবে দীর্ঘ দশ বছর পর। আলেয়া সম্ভবত পণ করেছে, তার বড় বোনের বর্ণাঢ্য জীবন বৃত্তান্ত আজ বাসার সকলকে মুখস্থ করিয়ে ছাড়বে, তাই কাল থেকে টিয়ে পাখির শিখানো বুলির মতো আওরাচ্ছে, ‘সেই সময়, বড় আপা লন্ডন থেকে ডিগ্রী নিয়ে আসছে’, ‘বয়সকালে আপা ছিলো, ঢাকা ভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর’, ‘শিক্ষাদীক্ষায় আপা আমাদের পরিবারে এক নাম্বার’.........

সাজপোশাকে লায়লা বেশ রুচিশীল, হেসে হেসে অনর্গল কথা বলতে পারে। আয়োজন অনুপাতে, দুপুরে খুব সামান্য খেয়ে বিশ্রাম নিতে গেলো। যাওয়ার আগে বলে গেলো, ‘আলেয়া, বিকালে কিন্তু ঘন দুধের চা চাই।‘

বিকেলের জমজমাট নাস্তার টেবিলে হা হা হি হি-র রোল পড়েছে। চায়ের সাথে আরও ভাজা ভুজি কত কি। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লায়লা ডাকলো, ‘এই যে বউ মা সাদিয়া, বসো বসো, তোমার সাথে তো কথাই হলো না।’

সাদিয়া বসলো, লায়লা গাল ভরে হেসে বলল, ‘আলেয়া, তোর ছেলের বউ তো খুব সুন্দর, আর বোন টোন আছে নাকি, আমদের সাইফের জন্যে দেখতাম।‘

আলেয়া টেপ রেকর্ডারের মতো সকলকে যেভাবে বলে, তেমনই বলল, ‘না ও একাই, কোন ভাই বোন নাই। ওর মায়ের দুইটা বাচ্চা পেটেই নষ্ট হয়ে গেসে, এর পর আর বাচ্চা হয় নাই।‘ বাচ্চা না হওয়া আর বাচ্চা না চাওয়ার মধ্যে যে একটা তফাৎ আছে, সেটা আলেয়া আজ অব্দি বুঝে উঠতে পারেনি।

লায়লা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশ লম্বা একটা টান দিয়ে বললেন, ‘ওওও... তাইলে তোমার আম্মা ডিফেক্টিভ। এই কারণে তাইলে তোমার বাচ্চা হয় না।’

সাদিয়ার কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠে, তথাকথিত শিক্ষিত অভদ্র এই প্রাণীটাকে, তার দুই চোখ আর সহ্য করতে পারছে না। সাদিয়া সটান করে দাড়িয়ে, দ্রুত পায়ে রুমে চলে গেলো। খানিক বাদে, একটা ল্যাগেজ আর হাতে কিছু কাগজ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।
আজ আর সাদিয়ার মাথা নিচু নেই, মাথা উঁচু করে চোখ তুলে, সে বলে চলল, ‘ডিফেক্টিভ শব্দটার অর্থ আজ নতুন করে জানলাম মা। এই নতুন অর্থ অনুযায়ী আজ তবে সত্যি কথাটা শুনে নিন, সমস্যা আমার নয়, আপনার ছেলের, অতএব আপনার ছেলে ডিফেক্টিভ।’

আলেয়া খেঁকিয়ে উঠে, ‘চুপ করো, কতো বড় সাহস তোমার, সমস্যা আমার ছেলের? আদর যত্ন, খাওয়া-দাওয়ায় কোন কমতি ছিল না, এতো ভাল স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যা আমার ছেলের?’

সাদিয়া দৃঢ় স্বরে বলল, ‘আদরের একমাত্র ছেলেকে দুধ, কলা, ডিম খাইয়ে স্বাস্থ্য বাড়ালেই সক্ষমতা আসে না মা। আপনার ছেলে অক্ষম, তাই বিয়ের চার বছর পরেও আমি কুমারী রয়ে গেছি। বিশ্বাস না হয় রিপোর্ট গুলো দেখুন।‘

রিপোর্ট গুলো টেবিলে ছুড়ে দিয়ে, নাঈমের দিকে তাকিয়ে, সাদিয়া বলল, ‘অক্ষম কাপুরুষ না হয়ে, অক্ষম সুপুরুষ হলেও তোমার সাথে সারা জীবন পার করে দিতাম। যথা সময় ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে আশা করি।‘

সাদিয়া আর পিছনে তাকায়নি, পা বাড়িয়েছে নতুন পথে।

চলবে……...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক---
প্রথম থেকেই আছি। চলুক।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: সমাজের অন্ধকার রূপে, আলোর রেখা।

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: তারপর ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.