নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত চিন্তার প্রকাশ...

সকাল সন্ধি

চিন্তার স্বাধীনতা চাই। প্রচলিত কুসংস্কার ভেঙ্গে দিতে চাই। সম্পর্কে অবৈধ বলে কিছু নেই...

সকাল সন্ধি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গী হয়ে ওঠার পথ বন্ধ করতে হবে- আমিনুল ইসলাম সুজন

১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫


একজন মানুষের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে তারুণ্য। যুব বয়সের এ সময়টায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার স্পৃহা, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বেশি থাকে। এ বয়সটাই নিজেকে বিকশিত করার উপযুক্ত সময়। নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।এরা প্রত্যেকেই যুব বয়সেই নিজেদের বিকশিত করেছিলেন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন কিংবা পাকিস্তান আমলে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ যুব সম্প্রদায়ের অবদান সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্তদের নানাভাবে সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ আর্তমানবতার সেবায় সক্রিয় ভূমিকা, ফুটবল-ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ক্রীড়া মাধ্যমে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি ও মানুষকে বিনোদন দান, ছাত্র রাজনীতি, বিএনসিসি, গার্লস গাইড, স্কাউটসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই যুব সম্প্রদায়ের ইতিবাচক অংশগ্রহণ রয়েছে।

কিন্তু সেই যুব সম্প্রদায়ের একটি অংশ বর্তমানে বিপদগ্রস্ত। যুবদের একটি ধুমপানের মাধ্যমে নেশার জগতে প্রবেশ করে মাদকাসক্ত হয়ে সমাজ ও পরিবারে নানা সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটি ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে জঙ্গী তথা আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে।

জঙ্গীবাদের ভয়াবহতা গুলশান ২ এলাকায় হলি আর্টিজান নামক রেস্টুরেন্টে দেখেছি। কূটনীতিক পাড়া হিসাবে পরিচিত গুলশানে স্মরণকালের ভয়াবহ জঙ্গী হামলার ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যারা এ হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, এরা সবাই যুববয়সী। যুবদের ধ্বংসাত্মক এ অবস্থা দেশকে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। জঙ্গী মোকাবেলা ও সর্বসাধারণের নিরাপত্তায় রাষ্ট্রকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে।

জঙ্গীবাদের কারণে সাধারণ ও নিরীহ যুবকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব যুবককেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। যারা বাবা-মায়ের পরিশ্রমের অর্থে কষ্ট করে ঢাকায় লেখাপড়া করতে আসে, শহরে তাদের বাসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। নানাভাবে তাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

জঙ্গীবাদ নিয়ে দেশের সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু জঙ্গীবাদ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। কি কারণে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি, সে কারণ খুঁজে বের করা ও যুবকদের জঙ্গী হয়ে উঠার সব প্রবেশ পথ বন্ধ করা না গেলে সঙ্কট বাড়বে।

জঙ্গীবাদের আতঙ্ক নিয়েই আজ, ১২ আগষ্ট সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক যুব দিবস। যুব সমাজের ইতিবাচক বিকাশ ও উন্নয়নে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০০০ সাল থেকে দিবসটি সমগ্র পৃথিবীতে উদযাপিত হচ্ছে, যা ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহিত হয়।

জাতিসংঘের ১৫ বছরের (২০১৬-২০৩০) চলমান বৈশ্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’(এসডিজি) অর্জনে যুবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ বছর বিশ্ব যুব দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘দি রোড টু ২০৩০: ইরাডিকেটিং প্রোভার্টি অ্যান্ড অ্যাচিভিং সাসটেইনেবল কনজাম্পশন অ্যান্ড প্রোডাকশন’।

বৈশ্বিক পর্যায়ে যুবদের কাজের তত্ত্বাবধান করে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (ইউএনডিইএসএ)-এর অধীনস্থ ডিভিশন ফর সোশ্যাল পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ডিএসপিডি)। সংস্থাটি এ বছর যুব দিবসে স্লোগান নির্ধারণ করেছে ‘যুব সমাজের নেতৃত্বেই টেকসই উন্নয়ন’।

আগামী প্রজন্মের চাহিদা সুরক্ষা করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য বিদ্যমান পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করাকে টেকসই ব্যবহার ও সেবন বুঝানো হয়েছে। এতে, ন্যায়সঙ্গত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব পণ্য ও সেবার পরিবেশবান্ধব সর্বোচ্চ ব্যবহার, অপচয় ও দূষণ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এসডিজি’র ১২ নং লক্ষ্যমাত্রা ‘সম্পদের উৎপাদন এবং সেবন/ব্যবহারকে টেকসই করা’এর আলোকে এ বছর যুব দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভূমিকায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান সীমিত সম্পদ ও শক্তির দক্ষ ব্যবহার, টেকসই অবকাঠামো, মৌলিক সেবার সুযোগ সৃষ্টি, সবুজ ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং সবার জন্য একটি উন্নত জীবনের জন্য টেকসই উৎপাদন ও সেবন গুরুত্বপূর্ণ। এর কার্যকর বাস্তবায়ন সার্বিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি ও দারিদ্র দমনে সহায়ক।

দুঃখজনক হলেও সত্যটা হল, বাস্তবতা থেকে পৃথিবী অনেক পিছিয়ে রয়েছে। খাদ্যের অভাবে এখনও অনেক দেশে মানুষ মারা যায়। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়। তবু পৃথিবীতে প্রতিবছর যত পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ (১৩০ কোটি টন), বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮০ লক্ষ কোটি টাকার (১ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার) খাদ্য অপচয় হচ্ছে। খাদ্যসহ সব সম্পদের প্রয়োজনীয় ও পরিমিত ব্যবহার এবং অপচয় রোধে মানুষকে উৎসাহী করতে যুব সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিতে হবে।

পৃথিবীতে যদি সাধারণ বাতি থেকে সাশ্রয়ী বাতি (এনার্জি বাল্ব) ব্যবহার করা হয়, তাহলে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। জ্বালানি ব্যবহারেও সাশ্রয়ী ও ইতিবাচক মানসিকতা দরকার। বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান, সেজন্য বন ও পরিবেশ ধ্বংস করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সমাধান বয়ে আনবে কিনা, সেটা ভাবতে হবে।

বরং, কিভাবে সীমিত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, সে ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উন্নত দেশগুলো কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপালে কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যদিও সরকার বলছে, এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। কিন্তু ক্ষতি হলে তার দায়ভার কে নেবে? যুব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে গণশুনানি ও গণভোট করা যেত।

পানি প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। পৃথিবীর মাত্র ৩ ভাগ পানি পানযোগ্য হলেও মাত্র ‘দশমিক ৫ ভাগ’ পানির উপর নির্ভরশীল ৭০০ কোটির অধিক মানুষ। এখনও ১০০ কোটির বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানিবঞ্চিত। কিন্তু মানুষ যে হারে বিশুদ্ধ পানির আধারগুলোকে (নদ-নদী, খাল, বিল, লেক, পুকুর, হাওড়-বাওড় ইত্যাদি) দখল ও দূষিত করছে, তাতে এ হার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পানি প্রকৃতির দান হলেও এর সরবরাহ করতে যে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হয়, তা ব্যয়সাপেক্ষ। তাই পানির পরিমিত ব্যবহার, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৫ এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫ থেকে ৬৪ বছর) ১০ কোটি ৫৬ লক্ষ’র অধিক, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৬ ভাগ।

প্রতিবছর অনেক যুব পুরুষ ও যুব মহিলার কর্মসংস্থান হচ্ছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশিসংখ্যক যুব পুরুষ ও যুব মহিলা বেকার থাকছে, সে তথ্য পাওয়া যায় না। মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। কোন খাতে কি পরিমাণ জনশক্তি দরকার, সে অনুযায়ী যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। এছাড়া জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, সেটাও উপেক্ষিত। যে কারণে অনেক দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকরা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হয়।

এর একটি বড় অংশ যুব সম্প্রদায়। কিন্তু যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। যে কারণে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে না। একটি দেশের জাতীয় উৎপাদন থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নতির জন্য মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত দেশ হলেও অধিকাংশ কর্মক্ষম মানুষ ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কারণ, প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক উন্নয়নপ্রত্যাশী। যার সুফল পাচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকার।

সম্প্রতি শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকের একটি প্রতিবেদন নজরে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বিসিএস এর মাধ্যমে যুবদের একটি গুরত্বপূর্ণ সময় ধ্বংস করছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। সিদ্ধান্ত নিতে নীতি নির্ধারকদের অযথা সময়ক্ষেপন সম্ভাবনায় অনেক তরুণকে হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ধরণের নেতিবাচক প্রবণতা বন্ধ করা দরকার।

যুব সম্প্রদায়কে ইতিবাচক মানসিকতায় গড়ে তুলতে শৈশবকে প্রাধান্য দিতে হবে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, শিশুদের খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান রাখার কথা বলেছেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন দীর্ঘদিন শিশুদের মাঠ-পার্কের কথা বলে আসছে।

কিন্তু শহরগুলোতে পর্যাপ্ত মাঠ নেই। উপরন্তু যেসব শিশু পার্ক ছিল, তার অনেকগুলো (পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড পার্ক, মোহাম্মদপুর টাউন হল পার্ক ইত্যাদি) বিলুপ্ত ও বেদখল হয়ে গেছে। তবু শহরের অধিকাংশ শিশুকে চার দেয়ালের মধ্যে একাকী বড় হতে হচ্ছে। এ একাকীত্ব ও বন্দী শৈশব ধ্বংসাত্মক।

বড় হয়েই এদের অনেকে মাদক বা জঙ্গীবাদের মত নেতিবাচক কার্যকলাপে যুক্ত হচ্ছে। যুব সমাজের নেতিবাচক এ ধ্বংসলীল ঠেকাতে পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জোরালো করা দরকার। শিশু-কিশোর-তরুণদের ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার।

দেশের প্রতিটি যুব পুরুষ ও মহিলা জনসম্পদ হোক, এটাই হোক বিশ্ব যুব দিবসের প্রত্যয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:



মোটামুটি মোটা মাথার বড় চিন্তা

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:১৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



প্রধানমন্ত্রী সবই বলেন ভালো, একটাও করেন না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.