নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমালোচনা

জামিউল আলম

সমালোচনা

জামিউল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাটাহাটির বিড়ম্বনা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৫৮

টিউশনি না থাকলে সন্ধ্যের পরে হাঠতে বের হই। কখনও ৩০-৪০ মিনিট শুধু বাসার আশেপাশে হেটেই ফিরে আসি। আবার কখনও মন মেজাজ ভালো থাকলে এমনটাও হয় যে এই হাটা থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ১০.৩০-১১ টা বাজে। এই সময়টুকু হেটে পার করতে খুব একটা বেশী সময় লাগতো নাহ, যদি হাতের আঙ্গুলের মাঝের ফাকা স্থানগুলো পূর্ন করার মতো কাউকে পেতাম।

তবে একা হেটেও ভীষণ মজা আছে। রাস্তা দিয়ে হাটার সময়টুকুই ভাবনার জন্য প্রকৃত স্বাধীন সময়। যা ইচ্ছা হবে সেটাই ভাবতে পারবেন। ভাবনায় জর্জরিত মুখ দেখে এখানে শাসন করার মতো কেউ নেই। ভাবনাপ্রিয় মানুষেরা এই স্বাধীনতাটা বাসায় বসে আর শুয়ে থাকলে উপলব্ধি করতে পারে নাহ।



হাটার অভিজ্ঞতা আরও ভিন্নমাত্রা খুজে পাবে যদি রাস্তাটা হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং লোকশুন্য। আপনার যদি অন্ধকার নিয়ে ফোবিয়া থাকে তাহোলে প্রতিটা মুহুর্তে একরকম শিহরণ কাজ করবে আপনার শরীরে। অদৃশ্য অস্তিত্বের কথা নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু দৃশ্যমান ঠেকবাজ মামাদের জন্য যে ভয় সেটা অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। আমি এদের ব্যাপারে রাস্তায় নামার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি। অস্ত্র ধরার আগেই যা আছে সব দিয়ে দিবো। চলচ্চিত্র নায়কের মতো সাহস দেখানোর ইচ্ছে নেই। শুধু মানি ব্যাগের মধ্যে রাখা আইডি কার্ডটা ফেরত চাইলেও চাইতে পারি।

তবে সেটা পরিস্থিতি বুঝে। পরিস্থিতি ভালো হলে বলতে পারি,"স্লামালিকুম মামা, আইডি কার্ডটা কি ফেরত দেয়া যায়? ভার্সিটির কার্ড ওটা। এই অধমের ছবি লাগানো আছে। আশা করি আপনাদের কাজে আসবে নাহ।"

আমার মুখে মামা ডাক শোনার পরে তাদের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে হবে। এরা সাধারনত মামা ডাকটা পছন্দ করে নাহ।



এইগুলো ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচেনা এক রাস্তার মোড়ে ছোলা নিয়ে দাড়িয়ে থাকা লোকটা একবার ডাক দিলো,"মামা, দিবো নাকি?"

ওর ছোলার চেহারা খারাপ। উত্তর পাবার যোগ্য নাহ। তাই ভ্রূক্ষেপ না করেই সামনে পা বাড়ালাম। কিছুদূর এগোতেই রাস্তার পাশে কারখানার বিশাল চিমনিটা চোখে পড়লো। অন্যান্য গুলোর চেয়ে এটা যথেষ্ট ব্যাতিক্রম। একবার দেখলেই মনে থাকার মতো। চিমনির বায়ের রাস্তাটা ধরে ঘন্টাখানিক হাটার পরেই বুঝলাম রাস্তা হারিয়েছি।

অচেনা এলাকা, বাড়িঘর খুবই কম। আশে-পাশে শুধু কারখানা। এইখানে কাউকে রাস্তার হদিশ জিজ্ঞাসা করাটা খুব একটা সুবিধের না। ভাবলাম রিকশা নিবো। কিন্তু সম্বল বলতে পকেটে আছে একটা ১০০০ টাকার নোট, আর একটা ২ টাকার নোট। কি চকচকে নোট। এই সেদিন স্টুডেন্টের মা ১০০০ টাকার কয়েকটা নতুন নোট দিলো। বেছে বেছে যেটা একটু পুরাণ মনে হয়েছিলো সেটাই মানিব্যাগে ভরেছি। কিন্তু এই মুহুর্তে এইটার জন্য এতো মায়ার উদয় হচ্ছে কোথা থেকে বুঝতে পারছি নাহ!!

খুশির খবর হলো যে এটার ভাংতি পাওয়াটাও খুবই দুষ্কর। বিধাতা এই যাত্রায় টাকা ভাংতির কঠিন বাস্তবতা দিয়ে এই অধমকে বাঁচিয়ে দিলো।



হাটছি আর ঘড়ি দেখছি। হায় হায় ৯.৩০ বেজে গেছে!! আজ কি তাহোলে ভাবুক হতে গিয়ে ধরা খেয়ে বসলাম। বাসা থেকে ফোন আসছে। টানা কয়েকবার রিসিভ করলাম নাহ। আমি নিশ্চিত এতে আমার মায়ের টেনশনটা আরও দশগুন বেড়ে গেলো। ধ্যাত্তরি, মায়ের টেনশনের কথা ভেবেই কল ব্যাক করে বললাম, "বন্ধুর বাসায়।"

ওপাশ থেকে, "কোন বন্ধু?"

ভাবছি কোনটার নাম বলবো। বাসার পাশেরটার নাম বলা যাবে নাহ। এই মহুর্তে ওইটার বাসায়ই বসে আছে নাকি কে জানে। একবার এমন হয়েছিলো বটে। সেদিন থেকে দীক্ষা নিয়েছি।

আজ তাই এমন এক বন্ধুর নাম বললাম যেটার বাসা কোথায় আমি নিজেও জানি নাহ। মায়ের সাথে এইরকম জলজ্যান্ত মিথ্যাটা বলে একটু ছোটই মনে হচ্ছে নিজেকে। তবে কি আর করবো। বলেছিতো মায়ের ভালোর জন্যই। এতে তার টেনশন কমবে। অতঃপর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে। এই............আবার ডাক্তারি ভাবনা চলে আসতে শুরু করেছে।

যাহোক,মা শুধু সাবধানে আসতে বললো।



কিছুক্ষণের মধ্যেই সুউচ্চ সেই চিমনিটা চোখে পড়লো যেটা আসার পথে দেখেছি। নাহ, কোন ভুল হচ্ছে নাহ। এই সেই চিমনি। পাশের দেয়ালে নির্বাচনি পোস্টারের প্রার্থীর মুখটাও জেনো মুচকি হেসে রাস্তা ফিরে পাবার আনন্দ ব্যাক্ত করছে। এবার বাসার পথে আমি। আজ রাতের জন্য ভাবনা এখানেই বন্ধ রাখতে চাই। যথেষ্ট হয়েছে আজ। এরপর থেকে প্রস্তুতি নিয়ে হাঠতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.