নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমালোচনা

জামিউল আলম

সমালোচনা

জামিউল আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

রেললাইনে একদিন

০৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩

রেইল লাইন দিয়ে হাটছি। আমার ডানে আর বামে দু পাশেই রেলের স্লিপার থেকে হাত দশেক দূরে লম্বা বস্তি। বস্তিতে বিদ্যুৎ নেই। বস্তির ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলো রেলের পাশে গোল হয়ে বসে গান গাইছে। একজন একজন করে।

ঘড়িতে একটু নজর দিয়েই কৌতূহল বসত ওদের পাশে গিয়ে বসলাম গান শোনার জন্য। তবে আফসোস, আমাকে দেখে গান বন্ধ করে দিয়েছে সামনের শিল্পী। অন্ধকারে চেহারা দেখতে পাচ্ছি নাহ কারোই। তাই মোবাইলের টর্চটা শিল্পীর দিকে তাক করে বললাম "গাও মামোনী, খুব সুন্দর হচ্ছে।"



অন্ধকারে সবগুলো চোখ একসাথে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। আর একে অন্যকে বলছে "কত বড় সামবাদিক(সাংবাদিক)"

বুঝতে পারলাম তারা লজ্জায় গান থামিয়ে দিয়েছে। আমাকেও হয়তো সাংবাদিক ভাবছে। তাদের উৎসাহ দিয়ে বললাম, "যার গান ভালো লাগবে তাকে ১০ টাকা পুরস্কার দিবো"



এবার পড়লাম আরেক বিপদে। তিন-চারজন একসাথে গান গাইতে চাইছে। একজনের আগে আরেকজন। একজন আবার উপস্থাপিকার দায়িত্বও পালন করছে। একটা ছোট গাছের ডাল মাইক বানিয়ে সে সবার গান শুরু করার পূর্বে বলছে, "এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করবে মিস্টার.........(যদিও গান শুধু বালিকারাই গেয়েছিলো)"

আস্তে আস্তে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে। ৬-৭ টা ছোট ছোট মেয়ের কন্ঠে একে একে, আমি বাংলার মমতাজ, অন্তর দিলাম বিছাইয়া ইত্যাদি গান শুনলাম যেইগুলোর শিল্পী মূলত কে তা আমার জানা নেই।

কেউ কেউ একবার গেয়েও সন্তুষ্ট নয়। দ্বিতীয়বার গাইতে চাইছে।



বিপদটা হলো পুরস্কার দিতে গিয়ে। একজনকে দিতে চাইলে অন্যরা চেচানো শুরু করে। কিন্তু সবাইকে তো আর পুরস্কারের মর্যাদা দেয়া সম্ভব নয় আজ। কারন পকেটে ছিলো শুধু দশ টাকা। এইটা ভাঙিয়ে দশজনকে একটাকা করে দেয়াটাও কঠিন। তাই সবাইকে আশ্বাস দিলাম আমি আগামীকাল একই সময়ে আবার আসবো। কাল আর একজনকে নয়, যতজন গান গাইবে সবাইকে দশটাকা করে পুরস্কার দেয়া হবে। আজকের দশটাকা শুধু আরিফা পাবে। আরিফার গান খুব ভালো হয়েছে। সে গেয়েছে জাতীয় সংগীত। আশা করি দেশপ্রেম সর্বদা তার অন্তরে গেঁথে থাকুক।



চলে আসার সময়ে সবাই মিলে আমার হাত টেনে ধরে বললো, "এইবার আপনে একটা গান"

আমি গান গাইতে পাড়ি না। চেষ্টাও করি নাহ তেমন একটা। শুধু শুনি। আর কন্ঠও খুব বাজে। তবে চারিদিকে চেয়ে দেখলাম ছোট ছেলেমেয়েরা ছাড়া আর কেউই নেই। তাই রাজি হলাম।

উপস্থাপিকা সামনে গিয়ে বলতে লাগলো "এখন আপনাদের মাঝে গান পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট শিল্পী............"

নাম বলতে গিয়ে থেমে গেছে। আমাকে নাম জিগ্যেস করাতে বললাম অ্যানোনিমাস।



যাহোক, এই মাসুম বাচ্চাগুলোর সামনে Dimmu Borgir এর The Serpentine Offering গানটা একটু গাইতে চেষ্টা করলাম-

My descent is the story of everyman

I am hatred, darkness and despair

My descent is the story of everyman

I am hatred, darkness and despair

Evoked and entertained through centuries

Wrathful and sullen dormant still



গান শেষে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বলাবলি শুরু করলো, "খেইপ্পা গেসে রে। টেকাডা ফেরত দিয়া দে হেরে।"

আরিফা দশটাকার নোটটা আমাকে দিয়ে দিতে আসলো। ওদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম ওইটাও একধরনের গান। তবে বুঝতে চাইছে নাহ। অনেক কষ্ট হয়েছে এই ভুলটা ভাঙাতে।



তবে ওরা সুন্দর গান শুনতে চায়। তাই আশার সময় Bob Dylan এর একটা গান শব্দবিকৃত করে দুই লাইন গাইলাম।



Yes, how many ears must one woman have

Before she can hear people cry?

Yes, how many times can a woman turn his head

Pretending she just doesn't see?

The answer my friend is blowin' in the wind

The answer is blowin' in the wind.



অতঃপর, আল্লাহ হাফেজ। B-)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.