নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আকাশের চিঠি; চৌত্রিশ

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৩

৩৪

২৫ মে ২০১১

আমি সারাদিন ঘর বার করছি। একবার ব্যালকুনিতে দাঁড়াচ্ছি একবার ঘরে ঢুকে ঝাড় পোছ করছি। আমার ঘর তো গোছানই থাকে সব সময়। কে উল্টা পাল্টা করবে, কে আছে করার। এতদিনে যে সব উল্টা পাল্টা করে নিজের একটা ঘর নিয়ে জাকিয়ে বসত, রাজত্ব করত, তার জন্য আমরা দুজনে মনে মনে তৈরী হচ্ছিলাম। তাকে পাওয়ার সময় কি এক আশংকায় কেটে গেলো,দমবন্ধ অবস্থায়।

আর ছিলে তুমি নীল, এখানের জিনিস ওখানে করে সারাক্ষণ খুঁজে পেতে না। হৃদয়, হৃ..দয়... বলে বাড়ি তোলপাড় করতে। সে তুমিও নেই আজ কতদিন।

আর আমার যে স্বভাব ছিল এখানের জিনিস ওখানে করে ঘরের সাজসজ্জা উল্টাপাল্টা করার, প্রতিদিন নতুন রূপে সাজাবার। সে উৎসাহ আগ্রহ কোথায় হারিয়ে গেছে। ঘরে ঢুকে তুমি বলতে, ঠিক বাড়িতে এলাম তো! দেখি বউটা আবার অন্যরকম বদলে গেছে নাকি?

কী বলো আবোল তাবোল, বউ আবার বদলে যায় কী ভাবে?

কী জানি বলা যায় না দেখি কাছে আসো, ভালো করে দেখি সব ঠিক আছে কিনা। শুরু হতো তোমার দুষ্টুমি।

এমন পাগল পারা খুনসুটি, ভালোবাসা আর পাগলামিতেই কাটলবেলা আমাদের। আনন্দ আর ভালোবাসায় সময় বয়ে গেলো ঝগড়া বা মন খারাপ করার কোন সুযোগ হলো না। অথচ এখন এক কান্নার ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র হয়ে গেলো চোখের জলের।

কোন রকমে দিন পার হয়ে যাচ্ছে, কতদিন দেখি না যেন নিজের ঘর ভালো করে কোথায় কী আছে ভুলে গেছি যেনো।

ঘর সংসারের যে নিজস্ব একটা নিয়ম আছে সে নিয়মটা আমি যেন ভুলে গেছি। রান্না খাওয়া, ঘর দোড় গোছান। দাওয়াত, লোকজন হৈ হুল্লোর এ সবের বাইরে আমি কতদিন। আজ অনেক কিছু করতে গিয়ে কোন কিছুর তাল পাচ্ছি না । টালমাটাল তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে সব কিছু।

রান্না করব না ঘর গোছাব। বাইরে অনেক বরফের বল উড়ছে কী যে অদ্ভুত লাগছে, শেষ শীতের এই হঠাৎ বরফ পাত। ধূসর পৃথিবীর কোন প্রান্তে তুমি নীল?

আজ বহুদিন বাদে আমার ঘরে টিভি চলছে। কিসব বলছে ভালোলাগছে না আমার। কোন চ্যানেলে কি দেখায় সব ভুলে বসে আছি আমি খুঁজছি খবর, তোমার খবর।

একটা ওড়াং ওটাং টাইপের নাচের সাথে গান হচ্ছে তার নীচে ব্রাকিং নিউজ দেখাচ্ছে। লেখাগুলো বড় তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে পড়ে উঠতে পারছি না।

আর গানের নাচের ফ্রিকোয়েন্স বড্ড বিরক্তি কর।

তুমি এখন এয়ারপোর্টে। তাই কি দেখাল ঠিক দেখলাম কি?

কী আশ্চর্য মানুষের জীবন মরণ নিয়ে টানাটানি এটা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর নয় কেন। কোথাও লাইভ বিষয়টা দেখাচ্ছে না কেন? অস্থির লাগছে আমার । তোমাকে চেনা যাচ্ছে না। আমি মি. জোন্স হারভারের চেহারাটা দেখে আঁচ করলাম তুমি কি পাশেছিলে? তোমারই তো তার সাথে থাকার কথা। তিনি তোমাকে নিয়ে আসবেন এমনই বলে গেছেন মি. জোন্স হারভার।

টেলিভিশনের নোব ঘুরিয়ে খবর খুঁজি আমি, তোমার খবর।

কয়েকটা চ্যানেল ঘুরে বন্ধ করে রেখেছি ঐ বিরক্তিকর যন্ত্রটা। যা দেখাচ্ছে তা আমাকে কোন ভালোলাগা দিতে পারছে না বরঞ্চ বিরক্ত করছে।

ঠিক কী করব বুঝতে পারছি না। অস্থিরতায় ঠিক মতন বসতেও পারছি না। দু লাইন করে লিখছি আর বাইরে ব্যালকুনিতে দাঁড়াচ্ছি। টিভি টা আর চালাব না। ঠিকঠাক মতন কিছু বলছে না, দেখাচ্ছে না।

বাড়িতে অনেকে এসেছে। মামনি, বড় ভাইয়া, ভাবী, সাবাব, মিতি, সুলতানা, সাবাবের নতুন বউটা যার সাথে তোমার দেখা হয়নি এখনও। পরিবারের নতুন সদস্য। মেয়েটা খুব ভালো, মায়াবতি। আমার সাথে তেমন পরিচয় না হলেও ওর আগ্রহ ভরা মায়াময় ব্যবহার মুগ্ধ করছে। এই প্রথম আমার বাড়িতে এসেছে কিন্তু কী অনায়াসে বড় ভাবীর সাথে ঘরের সব কাজ করছে।

আমাকে কিচ্ছু ছুতে দিচ্ছে না। আর আমি যে কি করব না করব; মাথাটা ঠিক মতন কাজ করছে না।

ওরা আসবে বলে রান্না করতে গিয়ে সব পুড়িয়ে, ভর্তা বানিয়ে একাকার করেছিলাম জানো। সেই আমাদের প্রথম সংসার করার মতন। ভর্তা ভাত অথবা পুড়া তরকারী সাজাতাম টেবিলে, গলদঘর্ম হয়ে। তাই দেখে তুমি কী সোনা মুখ করে খেয়ে উঠতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে। পরে যখন আমি সত্যি রান্না শিখলাম তখন দুজনে মিলে কত না হেসেছি সেই সব দিনগুলো মনে করে। তোমার একটা জিনিস কী ভালোলাগে জানো। তুমি বলতে, তুমি তো তাও একটা কিছু সাজিয়েছো টেবিলে খাবার জন্য আমি তো তাও পারতাম না। তোমার চেষ্টাটা অনবদ্য তাকে সম্মান করতেই হয়।

শেষ মুহুর্তে তাড়াহুড়া করে পিজ্জা ওর্ডার করলাম। কেউ অবশ্য কিছু মনে করেনি। অথবা কিছু বলেনি আমাকে।

আমাকে আবার নতুন করে ঘর সংসার করা শিখতে হবে মনে হচ্ছে।

কতগুলো বছর অপেক্ষার প্রহর বয়ে গেল বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি নীল। তুমি এলে আমি শুধু ঘুমাবো কিছু দিন। তোমাকে দেখব আর ঘুমাবো। তোমারও নিশ্চয়ই অনেক ঘুমের প্রয়োজন। কত দিন খাওয়া, ঘুম, আরাম, বিশ্রাম নেই তোমার উৎকণ্ঠা আর উদ্বিগ্নতায় কাটিয়েছো যন্ত্রনার সময়।

এই শেষ মূহুর্তেও অপেক্ষা বড় দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। সবাই এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় আমাকে নিতে চাইল সাথে।কিন্তু আমার যে কী হলো ভীড়ের মাঝে তোমার সাথে দেখা করার ইচ্ছে হলো না এতটুকু। ইচ্ছে হলো র্নিজনে একান্তে একাকী প্রিয় তোমাকে কাছে পাওয়ার। তোমার খবরটা তো এখন বিশ্ব ব্যাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের জার্নালিস্টরা তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ক্যামেরা মাইক হাতে। লাইভ চলে যাবে তোমার খবর পৃথিবী ব্যাপী। এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে চাই না আমি।

আমি থাকতে চাই আড়ালে। মানুষের সম্মুখে যেতে চাই না। আমার অনুভব জানাতে।

সাংবাদিকের একশ একটা প্রশ্নের উত্তর কেন আমি দিব বলো। আমার কষ্ট সময়গুলো আমি জানি কী দুঃসহ ছিল। কে তখন আমাকে বুঝেছে, খবর নিয়েছে। কেউ যদি কিছু আমার জন্য করে থাকে সে অচেনা মি. জোন্স। তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজে অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। সে আমার অনুভব সম্পর্ক ভাই। যে আমাকে অনুভব করেছে অন্তর দিয়ে।

আমার কী ইচ্ছে করছে জানো? এবার থেকে মি. জোন্সের সাথে তার মতন মানবতার জন্য কাজ করতে। পৃথিবীর কোথাও কোন একজন মানুষ যদি উপকৃত হয় আমার জন্য তা হলে আমার ভাইয়ের ঋণ শোধ হয় একটুখানী। এছাড়া আর কোন উপায় নেই তার জন্য কিছু করার।

ফোনে কথা বলে এলাম। তোমার ছোট শ্যালিকা ফোন করেছিল। ওর খুব মন খারাপ ছিল। আসতে পারেনি বলে। খুব ইচ্ছে ছিল ওর আসার। কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে বছর দুই হলো। বাচ্চা হবে দু একদিনের মধ্যে তাই আসতে পারেনি। এখন ফোন করে জানাল, ও আজ ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছে, পেইন শুরু হয়েছে, কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল ওর। তবু বলল, তুমি আসার সাথে সাথে যেন আমি তোমার সাথে কথা বলিয়ে দেই। পাগল মেয়ে ডাক্তারের তদারকিতে কী অবস্থায় থাকবে তখন কে জানে। ঠিক আছে আমি ফোন লাগিয়ে দিব ওর মোবাইলে,তুমি আসার পর। ওর ডেলিভারি হওয়ার সময় তুমি কথা বলো শ্যালিকার সাথে।



সুলতানা খুব ইতস্থত করছিল আমাকে ছাড়া যেতে। ও থাকতে চেয়েছিল আমার সাথে। কিন্তু আমি জোড় করে পাঠিয়ে দিলাম ওকে।

একান্তে নিরালায় বসে, আজ এই বিরহ দিনের শেষ চিঠিটা তোমাকে লিখব বলে।

আচ্ছা আমি কী বাইরে যাবো কিছু ফুল কিনে আনব নীল তোমার জন্য? ক্যাণ্ডেলের আলোয় মোহময় করে তুলব ঘর?

নাহ্, কী ভাবছি আমি, কী ভয়ানক যন্ত্রনাময় শরীর আর মানষিক অবস্থা এখন তোমার ফুল আর মোমের আলোয় ঘর সাজাব এসময়ে এ কী মানায়? আজ কী আমার ফুলসজ্জা হবে নতুন করে। যদিও তোমার এই ফিরে আসা আমার নতুন জীবন পাওয়া, নতুন বাসর। তবু বাড়তি আড়ম্বর নয় আমার হৃদয়ের আলোয় আলোকিত করে তুলব তোমার চলার পথ। রঙধনুর বৈচিত্রে সাজাব অনুভব।

ব্যালকুনী থেকে ঘুরে এলাম। জোছনায় ভেসে যাচ্ছে পৃথিবী। মেঘ হীন আকাশে গোল একটি চাঁদ উজ্জ্বলতায় ভরপুর। চারপাশে সাদা স্ফটিক বরফে চাঁদের আলো পড়ে হীরের কণার মতন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। প্রকৃতি যেন আজ সৌন্দর্যের আগল খুলে দিয়েছে আমার জন্য। জোছনার বন্যায় ভাসছে আমাদের শোয়ার ঘর। সব ঘরের বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে চাঁদের আলো জ্বেলে দিয়েছি ঘরে। বয়ে যাচ্ছে বাতাসের মৃদু কলতান যেন শানাইয়ের সুর।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: তবে কি সত্যি নীল আসছে? শেষ হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর? পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম......

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০১

রোকসানা লেইস বলেছেন: অপেক্ষাটা অনুভব করছি।
অনেক ভালোবাসা সমুদ্রকন্যা

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:০৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমিও নীলের আগমনের অপেক্ষায় :)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০২

রোকসানা লেইস বলেছেন: সাথে থাকুন সেলিম আনোয়ার
শুভেচ্ছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.