নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কঠিন কিন্তু অস্বাভাবিক নয়

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

দুই বছরের একমাত্র ছেলেটি মারা গেলে মা যখন কঠিন শোকে নিমজ্জিত। সেই সময় আরো কঠিন একটি সিদ্ধান্ত মা নেন। আদরের বাচ্চাটির অর্গান চিকিৎসার জন্য দান করার সিদ্ধান্ত। অনেক শিশু হাসপাতালে শুয়ে আছে একটি অর্গান পেলে হয়তো সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবে। হাসপাতালের বিছানা ছেড়ে হয় তো, খেলার মাঠে নামতেও পারে। চেষ্টাটা করতে হবে। যে শিশুটি মারা গেছে। তার শরীর তো মিশে যাবে মাটির সাথে অল্প কিছু দিনেই। কিন্তু যদি শরীরের এক একটা অংশ সংযোজন করে অন্য একটি শিশু ভালো হয়, বেঁচে থাকবে শিশুটি তাদের মাঝে। এই সিদ্ধান্তে মা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন বাচ্চাটার অর্গান দান করার।

রক্তদানটি খুব সহজ। অনেকেই মহানুবতির প্রকাশ ঘটিয়ে রক্তদান করেন। বিদেশে অনেকে নিয়মিত তিনমাস পরপর রক্ত দানের নিয়মিত সদস্য। যাদের রক্ত বাঁচিয়ে রাখে কত জীবন। যে রক্ত নেয় সে হয়তো জানেও না। কার রক্তে শক্তি সঞ্চিত হলো তার শরীরে।

দেশে অনেকে নিয়মিত রক্ত দান করেন। কিন্তু তারা রক্ত দান করেন প্রয়োজনের জন্য। নিজের শরীরের রক্ত বিক্রি করেন অর্থের প্রয়োজনে। তিন মাস নয় তিন সপ্তাহে হয়তো তারা রক্ত বিক্রি করেন। যা তার নিজের শরীরের জন্য ক্ষতিকর সাথে তার রক্তে যথেষ্ট উপাদান সমৃদ্ধ হয়না। পুষ্টিহীন একটি মানুষ যদি নেশা ভাঙ্গে মত্ত থাকে তার রক্তে পুষ্টিগুণের চেয়ে রোগীর গায়ে যদি বয়ে আনে আরো রোগ তা মোটেই আশ্চর্য হবার নয়।

অসেচতনতা এবং নিরুপায় অবস্থার মাধ্যমে এভাবেই চলে আসছে রক্তদান প্রথা। ব্লাড ব্যাংক সমৃদ্ধ হচ্ছে।এছাড়া কিছু রক্ত সংগৃহত হয় স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে। তবে আগ্রহী রক্তদাতা নিজের স্বাস্থ সম্পর্কে কতটা সচেতন, সেটা খুব জরুরী জানা প্রয়োজন। রক্তদাতার এবং রক্ত সংগ্রহকারী উভয়ের। আমাদের দেশে বিশেষ করে রক্ত গ্রহণের পর তা রোগিকে পুষ করার আগে কতটা পরীক্ষা করা হয়, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় নানা রকম রোগ এইডসসহ। হতে পারে নানা রকম প্রতিক্রিয়া সঠিক ভাবে রক্তপ্রদান না করলে।

হলে থাকা কালিন সময়ে, একদিন রেডক্রস এলো রক্ত সংগ্রহ করতে। মহা উৎসাহে আমিও এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে দিলাম। অনেকেই রক্ত দিয়ে সুন্দর হেঁটে চলে যাচ্ছে সেখানে আমি রক্তদানের পর অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কিছুটা সেবা শুশ্রুষা পেয়ে, বেশ খানিক পর জ্ঞান ফিরে পেলাম। বেশ কিছুদিন তারপর দূর্বলতার ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক হলাম। অনেক পরে জেনেছি, আমার নিজেরই রক্ত স্বল্পতার খবর এবং তার সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে। বিশেষ অসুস্থতায় আমাকেই সবল হতে হয় অন্যের রক্তধারন করে। অনেক সময় রক্ত স্বল্পতা মানেই আয়রন খাওয়ার চিকিৎসা দেয়া হয়, যা পুরাই ভুল। যতদিন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে না পেরেছি আমার অতি উৎসাহে প্রদান করা রক্ত কারো শরীরে কোন ক্ষতি করবে না। ততদিন পর্যন্ত নিজের মনে অপরাধ বোধে ভূগেছি। রক্তদান জরুরী কিন্তু সচেতন হয়ে দেয়া দরকার।

মানুষের জীবনের সাথে রোগের ওতপ্রোত সম্পর্ক। কোন মানুষ ইচ্ছা করলেই তা এড়াতে পারে না। কেউ জন্ম নেয় বংশের উত্তরাধীকারি সূত্রে পাওয়া নানা রোগের ধারক হয়ে। যেখানে ধারন করা ছাড়া আর কিছু করার নাই। আবার অনেকে আক্রান্ত হয়ে যায় নানা রকম ছূঁয়াচে রোগে নিজের অজান্তে। পাশের মানুষটির সাথে ভালোবাসার মানুষটির সাথে কত কিছুই শেয়ার করা হয়। ভালোবেসে এক পাতে খাওয়া বা এক গ্লাসে বা কাপে চুমুক দেয়ার মাধ্যম্যে পেয়ে যেতে পারে বড় ধরনের কোন অসুখ। আরো একান্ত নিবিড় ভালোবাসায় আসতে পারে অনেক বড় রোগ।

তাই সচেতনতা খুব জরুরী। অনেক সময় মনে হতে পারে বাড়াবাড়ি কিন্তু কেউ যদি নিজের পানির বোতল ছাড়া পানি পান না করেন, বা খাবার শেয়ার করতে না চান। তাকে দোষ না দিয়ে বরং তার অনুরাগী হন, অনুসরন করুন।

একবার একটা ঘটনা পড়েছিলাম পত্রিকায়। আনন্দভ্রমনে একটি পরিবার বোটে করে সমুদ্রে কাটাতে যায় হঠাৎ করে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পরে। ভীষণ রকম অসুস্থতার কোন কুলকিনারা করতে পারেনা ডাক্তাররা। অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষার পর আবিষ্কার হয় পান করা কোকের ক্যানে ইঁদুরের বর্জ্য লেগেছিল। তা থেকেই মহিলার এমন অসুস্থতা।

কয়েকদিন আগে দেখলাম, সুন্দর স্বাস্থবান এক যুবক যে বাস্কেটবল খেলত। ভয়াবহ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। যে এখন ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। জলেরধারে খালি পায়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় এক ধরনের র্জাম তার শরীরে ঢুকে যায়। যা একটু একটু করে সারা শরীরে ছড়িয়ে তার ব্রেন প্যারালাইসিস করে দিচ্ছে।

মানুষের অসুস্থতা আর তাদের সুস্থ করার জন্য লড়ে যাচ্ছে আরেক দল মানুষ। অনেক সময় তারাও আক্রান্ত হযে যায়। ২০০৩ এ চায়না থেকে একজন টরন্টো আসে প্রচণ্ড জ্বর গায়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই জ্বর স্বাভাবিক ছিল না। নতুন এক ভাইরাস, র্সাস ছড়িয়ে পরে শহরে। প্রচণ্ড রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় শহর জুড়ে। রোগীদের কাছে যারা যেত তাদের পরতে হতো নিরাপত্তা পোষাক। আত্মিয়দের ঘরের বাইরে থেকে কথা বলতে হতো তাদের সাথে। অথবা টেলিফোনে। নিরাপত্তার জন্য কাছে যেতে দেওয়া হযনি। যে র্নাসটি প্রথম রোগটি ধরতে পেরেছিল, যে ডাক্তার অনেক রোগীর সেবা করে ভালো করে তুলেছিলেন। ছোঁয়াচে রোগের ছূঁয়ায় তাদের মৃত্যু হয়।

আর্টিস্ট মিকেল এঞ্জেল, কবর থেকে মৃতদেহ তুলে এনে পরীক্ষা করতেন মানুষের শরীর। তখন তাকে আইনের আওতায় পরতে হয়েছিল এই বে আইনি এবং ধর্ম বিরোধী কাজ করার জন্য। কিন্তু তার কৌতুহল মানুষের শরীরের ভিতরের অংশ জানার উৎসাহ, দমাতে পারেনি তাকে বেআইনি কাজ থেকে। তার ধর্ম বিরোধী আবিষ্কার সহায়ক হযেছে মানব কল্যাণের।

বিদেশে শরীরের নানা যন্ত্রপাতি মৃত্যুর পর জনকল্যানে উৎসর্গ করার আহ্বান করা হয় সব সময়। অনেকেই সেই আহ্বানে সারা দিয়ে নিজেদের দেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় দান করে দেন। আরো একটি মানুষ যদি সুস্থ হয়ে উঠে সেই কল্যাণ কামনায়। আমাদের দেশে হয়ত চোখের কর্ণিয়া দানের আহ্বান কিছুটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রায় সময় দেখা যায় একধরনের সঙ্গবদ্ধ লোক গরিব মানুষদের, অনিচ্ছায় অনেকের কিডনি নিয়ে যাচ্ছে চুরি করে। সুস্থ এবং সচেতন ব্যবস্থা থাকলে অনেকে হয়ত ইচ্ছা করে দান এবং অর্থ পেতে পারতেন এই সহায়তা করে, অবৈধ চক্রের হাতে না পরে।

সহজ কাজটি সহজ ভাবে না হয়ে অবৈধ ভাবে কিন্তু অহরোহ হচ্ছে। উন্নত দেশের হাসপাতালগুলোতে, অসংখ্য অর্গানের প্রয়োজনের মানুষ অপেক্ষা করতে করতে মারা যাচ্ছে। অবার উন্নত দেশ থেকে কিছু মানুষ চলে যাচ্ছে অনুন্নত দেশে অর্গান পাওয়ার জন্য। অবৈধ ভাবে যেখানে অর্গান সংগ্রহ করা হয়।

একজন মৃত মানুষের অর্গান ব্যবহার করা যেতে পারে আটজন অসুস্থ মানুষের শরীরে। সুস্থ করতে পারে আটজন অসুস্থকে

নিজের শরীরটা মাটিতে মিশিয়ে বা আগুনে ছাই হতে না দিয়ে বরং অন্যের শরীরে জড়িয়ে বেঁচে থাকার চিন্তাটা সমৃদ্ধ হোক।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০১

আহমেদ জী এস বলেছেন: রোকসানা লেইস ,



সচেতনতা মাখা পোষ্ট ।

হ্যা, কাজটি কঠিন নয় বটে তবে সদিচ্ছা আর তেমোন মানসিকতা থাকতে হবে ।

ধন্যবাদান্তে .....

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১১

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস। অনেকে এড়িয়ে গেছেন লেখাটা আপনি করেননি। গুরুত্বটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
কিন্তু বিষয়টা সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টা খুব বেশী সংবেদনশীল, এমন বিষয়ে কথা বলা অনেকের ভালোলাগেনা। কিন্তু প্রতিটি পরিবারে মানুষ কিন্তু নানা রোগের মোকাবেলা করছে । অথচ ভাবনাটা থেকে যায় আমি নই অন্য কেউ করবে।


৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪২

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: চমৎকার একটি পোষ্ট।

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:৫০

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ অনন্য দ্বায়িত্বশীল আমি, লেখাটা আপনার মনোযোগ আকর্ষন করেছে দেখে ভালোলাগল অনেক।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: রক্তদান এখন আমাদের দেশেও স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অনেকেই করে থাকেন। আমিও দিই। মরণোত্তর অঙ্গদানের ব্যাপারটি সেভাবে চালু হয়নি। এটা নিয়ে লেখালেখি এবং সচেতনতা প্রয়োজন। আপনার লেখাটি যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে।

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: মানব কল্যাণের কাজগুলো করতে হয় উজান ঠেলে। মানব কল্যাণের কাজের জন্য বাধা আসে পরিবার, সমাজ, ধর্ম নানা দিক থেকে। তারপরও কিছু মানুষ ঠিক এগিয়ে যান সব বাধা অতিক্রম করে।

বিদেশে বাস করা অনেক বাঙালী ডোনেট করে রেখেছেন অর্গান, সিস্টেম আছে বলে। দেশে তো হৈ চৈ পরে যাবে। আহমদ শরীফের পর আর কেউ অর্গান ডোনেট করেছেন বলে শুনিনি। প্রচলনটা করা দরকার। সাময়িক বির্মষতা কাটিয়ে মানবতায় বিশাল হয়ে উঠুক চিন্তা।
ধন্যবাদ হাসান মাহবুব, গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টাকে গ্রহণ করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.