নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচিত্র বন বনান্ত

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:২৭



মাঠ পেরুতেই একটা বন। অনেক সবুজের মায়া জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক গাছ। ঝরাপাতার ন্যাড়াবেল সময় শেষ। জাগছে কচি কোমল পাতা। অদ্ভুত নরম স্নিগ্ধতা ছেয়ে আছে চারপাশে। শুভ্র ধবল জগৎ শ্যমল সবুজের মায়ায় বাঁধছে।



মায়াবতীর দিকে দেখতে দেখত চোখ গেলো গাছের নীচে। সাদা সাদা অদ্ভুত ফুলে ছেয়ে আছে বিস্তীর্ণ বনভূমি,বন আলো করা রূপসি। মুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে চলে গেলাম ঝোপ ঝাড় পেড়িয়ে বনের ভিতর। গ্রীষ্মের এই সময়ে আগে কখনও এখানে ঢুকি নাই। ঘন পাতায় ছাওয়া জায়গাটা ভয়াবহ গভীর জঙ্গল মনে হয়। কি জানি গভীরে কি আছে। শরতের ঝরাপাতা সময়ে বা বসন্তের ঘুম থেকে জেগে উঠার আগের সময়ে কয়েক বার হেঁটেছি এই বনভূমির ভিতর। দেখেছি ফার্ন আর রঙ বেরঙের মাসরুমের বাহার।



চুপচাপ বসে থেকে দেখেছি নানা রকম বন্য জন্তুর আনাগোনা আর কান পেতে শুনেছি বনের শব্দ। কিন্তু ঘন পাতায় ছাওয়া গাছের আড়ালে বনের গভীরে ঢুকা হয়নি কখনও। ফুলের আকর্ষনে চলে গেলাম ভিতরে। এমন ফুল আগে কখনও দেখি নাই একটি গাছে তিনটি পাতা তার মাথায় তিনটি পাপড়ির একটি করে ফুল। একটা গাছ একটা ফুল কোন শাখা প্রশাখা নেই। ছোটছোট অসংখ্য গাছ ফুল মাথায় নিয়ে হাসছে, দুলেছে বাতাসে। যেন মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কথা বলছে অবিরাম। কেউ কেউ আবার অবাক চোখ মেলে শুনছে যেন একটু দূরে যারা, যেখানে বাতাসের ঝাপটা পৌঁছাচ্ছে না। ভালো করে দেখার পর বুঝলাম, এই প্রভিন্সের প্রতীক ফুল এইগুলো। বন আলো করে ফুটে আছে। সাদার মাঝে কিছু হালকা বেগুনি রঙও আছে।







ভীষণ সংবেদনশীল ফুলগুলো একটু রোদের আলোয় নিস্তেজ হয়ে যায়। বড় বড় গাছের আড়ালে ছায়ায় ফুটতে ভালোবাসে। প্রচুর বাতাস ছিল আর ফুলের পাপড়ি উল্টে যাচ্ছিল বাতাসে। ছবি তোলার জন্য বাতাসের সাথে রীতি মতন যুদ্ধে নামতে হলো। অবশ্যই যুদ্ধে আমি জয়ি হয়েছিলাম। একদিকে বাতাস উল্টে দিচ্ছে পাপড়ি অন্যদিকে নানান গাছের শাখা খুঁচাচ্ছে আমাকে নানাদিক থেকে। আবার গাছের পাতার ছায়ায় ঢেকে দিচ্ছে আমার নিদৃষ্ট স্থান। উড়ছে আমার চুল, ঢুকে যাচ্ছে মুখে আটকে যাচ্ছে গাছে। অনেকক্ষণের প্রচেষ্টায় কাছ থেকে একটা শট নিতে পারলাম্।



শুধু ওরা নয় সাথে আরো কত নীল, সবুজ, কমলা, হলুদ রঙ আকৃতি প্রকৃতি। পাতা কেমন ফুল হয়ে ফুটে আছে দেখলাম আর মুগ্ধ হলাম। বৈচিত্র কত চোখের আড়ালে বন আলো করে নিজের জীবন যাপন করে ।



আরো পেয়েছিলাম প্রজাপতির জীবন শুরু হওয়ার সময়। বলা যায় প্রজাপতির আতুর ঘর।



ছবি তোলা শেষে বেরিয়ে এসে পিছন ফিরে দেখে ভয় লাগল একটু, হয়ত বা ঘন পাতার আড়ালে সাপ থাকতে পারত।অথবা কোন রেকুন বা কায়টি এসে কামড়ে দিতে পারত।কিন্তু যখনই আশ্চর্য হই ভালোলাগায় কোন বিপদ টিপদের কথা মনে পড়ে না। শেষে সাবধান হওয়া ভালো। আগে সাবধান হলে তে মজাটা উপভোগ হতো না।দেখা হতো না নতুন নতুন কত কিছু।প্রকৃতি ভালোবাসা মানুষকে প্রকৃতি কখনও আক্রমণ করে না আসলে।



গাছের কত বৈচিত্র! একটা ডালে সবুজের মাঝে ছোট ছোট লাল লাল দুটো পাপড়ি ফুল নয় অথচ মনে হচ্ছে ফুল। অনেক গুলো এক সাথে মনে হয় যেন অকির্ড। আবার কিছু এমন জড়িয়ে পেঁচিয়ে জেগেছে এক একটা ফুল যেন ওরা।



খুব ছোট বেলায় দেখতাম বড় বড় গাছে অন্য কিছু গাছ জেগে উঠছে। তখন থেকেই আগ্রহ তাদের প্রতি আমার। আমগাছে জেগে উঠা পরগাছা গাছগুলোতে বেগুনী রঙের কি অদ্ভুত ফুল ফুটত। অনেক পরে জানা হলো ওগুলো অর্কিড। কত ভিন্ন প্রজাতির অর্কিড জড়ো করেছিলাম বাড়িতে এক সময়। সিলেটের চা বাগান থেকে পেরে এনেছিলাম কতগুলো।



স্বর্নলতা নামের শিকড় বিহীন লতা জড়িয়ে থাকত কিছু গাছের মাথায়। সে লতা মাথায় দিলে নাকি চুল ভালো হয়। পেরে এনে পিষে কত মাথায় লাগিয়ে রেখেছি সেই লতার ভর্তা।জবাফুলের রস মুখে লাগানো। নিমের পাতাসিদ্ধ জলে স্নান। তুলসি পাতার রস খাওয়া। গাছ লতাপাতার সাথে এভাবেই জড়িয়ে আছে জীবন, ভালোলাগায়, আয়ুর্বেদুতে ভালোবাসায়। অনেকদিন আমার প্রিয়ফুল দোলনচাপা দেখিনা। ভাবছি কিছু শাপলার বাগান করলে কেমন হয়।



গাছ গাছালীর ঘন ছায়ায় বেড়ে উঠা জীবন,সব সময়ই আমার ভালোলাগে গাছের বৈচিত্র পরখ করতে। আমাদের বাড়ির সুরম্য দালানটা এখন যেখানে, এক সময় সে জায়গা ভর্তি কত গাছ ছিল । ছোটবেলা ঘন অন্ধকারের ঐ জায়গায় যেতে ভয় লাগত। দালান করার পরও আশে পাশে অনেক গাছ ছিল। একসময় প্রতি গ্রীষ্মে হলুদ রঙের উপর কারুকাজ করা লোমহীন শরীরের এক প্রকার বিছা জন্মাতে লাগল কয়েকটা গাছে্। সারিবদ্ধ ভাবে তারা হাঁটতে থাকে আমাদের ঘরের ভিতর। দেখলেই মেরে ফেলা হয়। কিন্তু কখন কোথায় লুকিয়ে থাকে। গায়ে লেগে কি যন্ত্রনা। আর চুপিচুপি বলি, আমার মায়ের দারুণ ভয়। ভয়ে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। আহা মা কেন যে তুমি গাছ কেটে ফেললে। আর বিছা গুলো থেকে প্রজাপতির জন্ম হতে দিলেনা। জানো, একটা প্রভিন্স আছে সাসকাচুয়ান শীতের সময় একটু খানি জায়গাতে জীবন যাপনের জন্য সেখানে, হাজার হাজার গার্ডেন স্নেক জমা হয় । তারা পাড়ি দেয় লাইন দিয়ে হাইওয়ে, শীতের আবাস স্থলে যাওয়ার জন্য। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সাপদের রাস্তা পার হতে দেয়া হয় আগে। তাদের কেউ মেরে ফেলে না। তারাও কারো ক্ষতি করে না বিছাগুলোও হয়ত বাসা বাঁধতে যেতো। বিছার ভয়ের কথা বলতে আরো একটা কাহিণী মনে পরে গেলো। আমার মা তো ভীতু। নানী আরো ভীতু। একবার নানী এসেছেন আমাদের বাড়ি। বড় নাতি কাঠির আগায় কালো কুচকুচে একটা বিছা নিয়ে চুপচাপ এসে নানীর পাশে দাঁড়িয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা থেকে ধাম করে নানী এক্কেবারে সটান মাটিতে পরে গেলেন, দাঁত লেগে অজ্ঞান। নানীর সাথে মজা করে একটু ভয় দেখাতে গিয়ে কিশোরের তখন যাচ্ছে তাই অবস্থা। নিজে তো সাপের লেজ ধরে ঘুরাত তাই নানী যে এত ভয় পাবেন সেটা বুঝে উঠতে পারেনি। আমার মা ও নানীর ভয় বিছা অথচ আমাদেরদেশেই কিছু মানুষ আছে তারা হাঁটতে চলতে বিছা পেলে ধরে একটু খানী আগুনে পুড়ে টপ করে মুখে দিয়ে মজা করে চানাচুর ভাজার মতন খায়। পাথর্ক্য কত্তো মানুষে মানুষে!



ছেঁড়াফাটা জীর্ণ একখানা বইয়ে অনেক গাছের কথা পড়তাম শৈশবে। কখন যে বইটা কোথায় কেমনে হারাল জানিনা। তবে স্মৃতিতে রয়ে গেছে তার গল্পগুলো। আফ্রিকার জঙ্গলে যে রাক্ষস গাছ আছে তার কথা জেনেছিলাম সেই বইয়ে। মনে মনে ঘুরতে যেতাম আফ্রিকার জঙ্গলে আর রাক্ষস গাছ অসংখ্য হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিচ্ছে আমাকে তার পেটের ভিতর, এমন ভাবনায় কতবার দিবা স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে নিজেকে ঠিকঠাক পেয়েছি।



আরো পেলাম মাঠ ব্যাপী বুনো স্ট্রবেরীর ফুলে সাদা হয়ে থাকতে দেখলাম চারপাশ। কাটবেড়ালি, পাখিরা এসে খেয়ে যাবে। আপন মনে জেগে উঠা ফলগুলো। প্রকৃতি কি সামঞ্জস্য বজায় রেখে একে অপরের জন্য জেগে উঠে অদ্ভুত। এশুধু উপলব্ধি করা যায়, ছবিতে ধরা যায় না। যায়না প্রকাশ করা অনুভবের মতন।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৫৯

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: মন্ত্রমুগ্ধের মত কিছুক্ষণের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম!! পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর সম্বিত ফিরে পেলাম!!! আমি যদি আপনার মত এত সুন্দর করে লিখতে পারতাম!!!!

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলেন জেনে প্রীত হলাম। অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে!

শুভকামনা থাকল

২| ১২ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগা রইলো।

১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানবেন।
একটা সমস্যা জানিয়ে ছিলাম আগের পোষ্টে দেখবেন। যদি সমাধান দিতে পারেন বেশ হয়।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


মনে হলো যেন অরণ্য থেকে ঘুরে এলাম।

১৫ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: অরণ্যের কাছে নিয়ে যেতে পারলাম বলে আমারও ভালোলাগছে। কিছুটা নিবিড় সবুজের কাছাকাছি থাকা হলো।
শুভেচ্ছা কান্ডারি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.