নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি চঞ্চল, হে আমি সুদূরের পিয়াসি.......

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১১



ঘরে স্থির হয়ে বসে থাকতে কোন অসুবিধা নাই কিন্তু মাঝে মাঝে মন বড় চঞ্চল হয়ে উঠে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। পায়ের পাতা নিশপিস করে হৃদয় উচাটন হয়ে য়ায়। একদম কোথাও যাওয়া হচ্ছে না এমন নয়। সপ্তাহে দু তিন, দিন দূরের পথে যাওয়া হয় আমার। কিন্তু ফিরে আসা হয় যত রাতই হোক বাড়িতে। কিন্তু অনেকবার বা দু একবার যাওয়া হয়েছে এমন জায়গা আমাকে আর তেমন টানে না। আমি ঘুরতে চাই, ধীর স্থির হয়ে, সময় নিয়ে। অনেক দিন ধরে পথে থাকতে চাই। মাঝে মাঝেই মাসখানেক অথবা তারও চেয়ে বেশী সময়ের জন্য, আমি শুধু ঘোরার জন্য বেড়িয়ে পরি। এমন বেড়িয়ে পরা অনেকদিন ধরে হচ্ছে না। বড় ভ্রমণের জন্য বড় আয়োজন আর বড় সময়ের প্রয়োজন। অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় আছি; তেমন বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য। সময়টা একটা যন্ত্রনা। জীবনে এতো কিছুর টানাপুড়েন সময়ের সাথে। একছকের চকমিলানো ঘূর্ণি চলা, প্রতিদিন প্রতি মূহুর্ত; মানুষ যে কেমনে মানিয়ে নিয়ে চলে কে জানে। আমার তো দম বন্ধ হয়ে আসে। প্রতি দুদিন যদি এক রকম কাটাতে হয় তাহলেই।

ঘর বেঁধে যে কেনো মানুষ থাকার সিদ্ধান্ত নিল? বেদুইন বা যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়ানো বাদ দিয়ে। যখন যেখানে যেতে ইচ্ছে করবে মানুষের আর যতদিন থাকতে ইচ্ছে হবে আপনমনে কাটিয়ে দিবে সেই স্থানে। অথচ পৃথিবীর পথে বেড়িয়ে পরতে কত বাধা পেরুতে হয় মানুষের। জন্ম হয়েছে এক জায়গায় তাই অন্য জায়গায় যেতে, বাধা নিষেধের পাহাড় পেরুতে হয়। ইচ্ছে হলেই যাওয়া যায়না যেখানে যখন খুশি ! অথচ পৃথিবীটা মানুষের জীবন যাপনের ঘর।

দেশের আনাচকানাচ তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ ঘুরে ঘুরে প্রাণের মাঝে ফুলের মালা গেঁথে নেয়ার পর পা বাড়ালাম দেশের বাইরে। ঘরের কাছে প্রতিবেশীর কাছেই যাওয়া হলো প্রথমে।

খুব ইচ্ছে ছিল কয়েকপা হেঁটে আসাম ঘুরতে যাবো। অথচ উলফার ব্যস্ত সময়ে, পাওয়া গেল না কোন শান্ত সময় ঘুরে বেড়ানোর জন্য। চেরাপুঞ্জীর মেঘের ভেলায় ভাসা হলো না। চোখ মেলেই যা দেখা যায় ছূঁয়া হলো না সে মেঘের রেশমী ওড়না।

দিল্লী, মাদ্রাজ, উটি, নৈনিতাল হিমালয়, ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেলেও যাওয়া গেলো না ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে, যার বিশেষ আকষর্ণ মনের মাঝে জেগে থাকে, দেখার আগ্রহে । যুদ্ধ চলছে সেখানে। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দর্শনার্থির যাওয়া নিষিদ্ধ। লাখনৌর ঘুঙ্গুরের তালে মাতাল হয়ে, রাজস্থানের লাল মাটি রঙে হৃদয় রাঙিয়ে নিয়েও, বরফ শীতল কাশ্মীরের আকর্ষণ হৃদয়ের কোনে, চুপচাপ বসে আছে। কবে যে হৃদয়ের স্বপ্ন সাধ বাস্তবের সাথে এক বিন্দুতে মিলবে?

পৃথিবীটা বদলে যাচ্ছে কত কিছু ধ্বংস হয়ে গেলো দেখার আগে, কিছু মানুষের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়। জাপানে গিয়ে হিরোশিমা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দূর আর সময়ের হিসাব করতে করতে সব সময় পার করে দিল। আসলে বেরুতে হয় আপন মনে ইবনেবতুতা হয়ে। কারো সাথে নয়। করো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়। আবার সুযোগ পেলে নিজের মতন ঘুরতে বেরুব। যেমন ঘুরে বেড়িয়েছি বিশাল একটা দেশ আপন মনে একা। গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোর একট মজা আছে। যখন যেখানে ইচ্ছা থেমে যাওয়া যায়। আনন্দ মতন উপভোগ করা য়ায় নিজের পছন্দের জায়গা। সময়ের হিসাব না করতে হলে আরো মজা। আপন মনে এদিক সেদিক যেদিক খুশি। কত রাত বন জঙ্গল পার্কে, পার্কিং লটে কাটিয়ে দিয়েছি। সে জায়গাটা হয়ত আর খুঁজে পাবো না।

ইস এখন কত মজা রাস্তা ঘাট বাড়ি নাম্বার সব আকাশ থেকে হাতের মুঠো ফোনে বা জিপিএসে এসে যাচ্ছে। রাস্তা না দেখে জিপিএসে চোখ রেখে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যায়। আমি যখন ঘুরলাম তখন জিপিএসের পাত্তা ছিলনা। রাস্তার মানচিত্র বইয়ে দেখে, বড় রাস্তার সীমানা খুঁজে পথ চলা। কতবার হারিয়ে গেছি। এক পথে যেতে অন্য কোথাও চলে গেছি। সেও এক মজা যেন ভুল করে এক বাড়ির দাওয়াতে না গিয়ে অন্য বাড়িত ঢুকে পরা। হারিয়ে গিয়ে খুঁজে পেয়েছি বিশাল রত্ন ভাণ্ডার হাতের মুঠোয়।

ঘুরে বেড়ানোর আরেকটা মজা হলো জীবনযাপনের যত ভাবনা চিন্তা পিছনে, বাড়িতে তালা বন্দি করে রেখে যাওয়া। শুধুই পথচলা আর শুধুই এগিয়ে যাওয়া ভ্রমণকে সঙ্গী করে। পরিপাটি রুমে রাত যাপনের জন্য ঢুকে পরা আর সকালে নাস্তা বানানোর চিন্তা না করেই, রাশি রাশি বানানো খাবার থেকে পছন্দের খাবার বেছে খাওয়া। ঘরদোর পরিপাটির কোন চিন্তা নাই। অথচ দিন শেষে একটি সাজানো ঘর, নিজের করে পাওয়া।

একবার কাউকে কিছু না বলে হুট করে মাঝ দুপুরে রওনা হয়ে ছিলাম মাধবকুণ্ডের পথে। যেতে যেতে পথ ফুরায় না। অথচ পথে যাাকে জিজ্ঞেস করা হয়, কতদূর? এমন ভারে পথ দেখায়, মনে হয় এই তো পাঁচ মিনিটের পথ। অথচ চলতে চলতে ঘণ্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। মনে আছে একটা পথ চলছে আকাশের সীমানা বরাবর যত দূর দৃষ্টি যায়। দুপাশে ধান ক্ষেত। মাঝে মাঝে শংকিত হয়ে উঠছে মন এত দূর গিয়ে পাওয়া যাবে কি কাঙ্খিত জলপ্রপাতের দেখা? এমন কোন নিদৃষ্ট জায়গা নেই যেখানে জানা যাবে পথের দিশা। আর তেপান্তরের মাঠের মতন পথ পেরুতে আশেপাশে কোন জনমানবের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। রূপকথার পাথর হয়ে যাওয়া প্রান্তর যেন পারি দিচ্ছি পথের শেষ দেখার আগ্রহে চলছি। তবে পথের শেষে পাওয়া গেল সে সুন্দরের দেখা। সাথের জনগন সব ঝুপঝাপ পানিতে নেমে গেলো। বাচ্চা, যে সাঁতার জানে না সেও জলে হাঁটছে আর ঝর্ণার কাছে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাকছে অন্যদের। প্রকৃতির কাছে যাওয়ার উন্মাদনা এমনই। কারো কোন হিসাব থাকল না কাপড় ভিজিয়ে অসময়ে স্নানে নামতে, যখন চলার কথা ঢাকার পথে। অপূর্ব এক বিকাল আনন্দে কাটিয়ে, সন্ধ্যা নাগাদ রওনা হওয়া হলো আবার ঢাকার পথে। দুটো পথের খবর পাওয়া গেলো ফিরতি পথের। একটা অনেক লম্বা ঘোরা পথ তবে ভালো রাস্তা ঢাকা যাওয়ার হাইওয়ের সাথে মিশেছে । অন্যটা নির্জন পাহাড়ি, সর্টকাট। সর্টকাট ধরা হলো তাড়াতাড়ি যেতে। আহা সে রাস্তার অভূতপূর্ব সৌন্দর্য এখনও মাঝে মাঝে হাতছানী দিয়ে ডাকে আবার তার কাছে যেতে। সাথে সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে অজানা অচেনা ভীতি, সামনে কোন বিপদ নেই তো! ঠিক পথে চলছি তো! আর পাহাড়ের চিকন রাস্তায় অচেনা গাছগাছালীর মায়া, অপার্থিব সৌন্দর্য। এক পাশে আঁধার একপাশে আলোর খেলা। সন্ধ্যায় ফিরে আসার কথা ঢাকায় অথচ ফেরা হলো রাত বারোটায়। উৎকণ্ঠিত বাড়ির মানুষ। আনন্দ মাটি করার জন্য ব্যস্ত হলো। তখন তো এমন মোবাইল ফোনের যুগছিল না যে হঠাৎ নেয়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিব। এমন হুটহাট সিদ্ধান্তে বেড়িয়ে পরার মজাই আলাদা। হয়ত ওমন করে না গেলে এপর্যন্ত যাওয়া হতোনা।

গতবছরও তিনটা বড় শহর ঘুরা হলো আত্মিয় বন্ধুদের সাথে দু বার, সপ্তাহ জুড়ে। কিন্তু এসব আমার অনেকবার দেখা হয়েছে। পথে চলতে প্রচণ্ড ঝড়ের মুখোমুখি হলাম একবার, মনে হচ্ছিল গাড়ি বুঝি উড়িয়ে নিবে বাতাস। অতিরিক্ত শক্তিতে ধরে রাখতে হচ্ছিল স্টিয়ারিং। প্রস্তুতি নিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার কথা ছিল। সারাদিনের ঘোরাফেরার পর অন্য শহরে গিয়ে। ঝড়ের দাপটে সব সময় চলে গেলো ঝড়ের পেটে। আস্তে চলে পাড়ি দিতে হলো এক শহর থেকে অন্য শহর, তিন ঘণ্টার পথ আরো বেশী সময় ধরে। শেষে সারাদিনের এলোমেলো অবস্থায় হাজির হলাম সব। সারাদিনের ঘোরাফেরা আর পথ চলার পর দারুণ খাওয়া হয়েছিল। রান্নাছিল অসাধারণ। সেদিন বুঝি গত বছরের রোজার প্রথমদিন ছিল। অদ্ভুত বৃষ্টির দেখা পেলাম একদিন। উহ্! হঠাৎ কোন প্রস্তুতি না দিয়েই ঝরঝর বড় বড় বৃষ্টির ফোটা ঢেকে দিল চোখের সামনে সব কিছু। হাইওয়েতে যেখানে একশর উপরে স্পিডে চলছি, সে সময় চোখের সামনে যেন এক সাদা পর্দা ঝুলিয়ে দিল বৃষ্টি। এমন অদ্ভুত বৃষ্টি আর কখনও দেখি নাই। ঝাঁকে ঝাঁকে গাড়ি রাস্তায় সার ধরে দাঁড়িয়ে গেছে। তাদেরও দেখা যাচ্ছে না পিছনের সতর্কি করণ লাল বাতিও চোখে পরছে না। ভয়াবহ অবস্থা খানিক সময়। তবে জরুরী অবস্থা খুব অল্প সময়ে শেষ হয়েছিল।

অদ্ভুত অন্যরকম বৃষ্টির দেখা পেয়েছিলাম কক্সবাজারে একবার। বাস থেকে নামতেই শুরু হলো বৃষ্টি। মজা হলো বৃষ্টি এক জায়গায় পরছে, সেখান থেকে দু পা এগিয়ে গেলে ওখানে বৃষ্টি পরছে না। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে কোন বৃষ্টি নাই্, অথচঅআমার চারপাশ ঘিরে বৃষ্টি পরছে। এমন ফাঁকা ফাঁকা বৃষ্টি পরতে আর কোথাও দেখিনি।

আজ বেশী বৃষ্টির কথা হয়ে যাচ্ছে কারণ ঝলমলে রোদের দিনটা হঠাৎ কালো আঁধার হলো বাদল বরষণ একটু পর পর ভিজিয়ে দিচ্ছি। খানিক আমি ভিজেও এলাম।

এবছর এখনও কোথাও বড় ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা করি নাই তবে হয়তবা বেড়িয়ে পরব কখনও অপরিকল্পনায় কোথাও। সকাল, দুপুর বিকালের হিসাব না করে চলতে আমার খুব ভালোলাগে। দুই ডানা মেলে ভেসে যাই ইচ্ছে সঙ্গীর সাথে আপনমনে যখন তখন। রাতদুপুর কি ভোর সকালের হিসাব না করে চলায় যে কী আনন্দ আহা। জীবনটাই তো এক আশ্চর্য ভ্রমণ। প্রতি মূহুর্ত প্রতি ক্ষণ তিলতিল বয়ে যাওয়া স্রোতস্বনীর মতন নানা ঝংকারের আবহে। আর সঞ্চয় করে নেয়া রত্ন ভাণ্ডার জীবনের ঝুলি ভরে।



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুভ জন্মদিন।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শুভজন্মদিন সুপ্রিয় ব্লগার। শুভকামনা নিরন্তর ।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ..............শুভ থাকুন আপনিও বরাবর

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

সুমন কর বলেছেন: শুভ জন্মদিন !! !:#P !:#P !:#P


ব্লগে নিয়মিত না হয়েও, আপনার অধিকাংশ পোস্ট নির্বাচিত হয়। মডুদের প্রশ্ন করাই উচিত !
আপনার পোস্ট নিয়ে নয়, আমি মডুদের নিয়ে বললাম।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৩৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ।
ওহ...... তাই নাকি!!!!

তো প্রশ্নটা তাদের পাইজে করুন আমার এখানে কেনো?

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৬

মামুন রশিদ বলেছেন: শুভ জন্মদিন! চঞ্চলা হয়েই থাকুন । শুভ কামনা ।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩১

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
চঞ্চলতার অপর নামই জীবন সে জীবনেই থাকতে চাই।

শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.