নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

কতদিন কত মূহুর্ত কত সময় পেরিয়ে আবার সেই একই দিন। এক রাস্তা এক উৎসব। এক রকম সময়। সেদিন পরিবারের আর সবার সাথে আমার বাবা ছিলেন। সবাই শাহবাগের মোড়ে এসে হারিয়ে গিয়েছিল বাবা আর আমার কাছ থেকে। আমরা ওদের না পেয়ে ফিরে গেলাম শাহবাগ থেকে চানখারপুলের কাছে, ওরা ওদিকে গিয়েছে ভেবে। ওরা সেখানেও নেই। চারদিক থেকে রাস্তা বন্ধ, বই মেলায় যাওয়ার জন্য হাঁটতে হবে এবার। বাবা আর আমি হাঁটা দিলাম এবার রিকশা ছেড়ে। এক সময়, ম্যাডিকেল কলেজের ভিতরে ঢুকে পরলেন বাবা আমাকে নিয়ে। বাইরে ফালগুনের রোদের উত্তাপে শরীরে ঘাম ঝরতে শুরু করেছিল। বাবা আমাকে নিয়ে হাঁটছেন দালানের ভিতর দিয়ে সুশীতল করিডোর পেরিয়ে যাচ্ছি আমরা। ওলি গলি ঘোরপথ দালানের ভিতর, বাবার কাছে অনেক চেনা। এই দালানের ভিতর কেটেছে তার অগনিত সময়। চিরচেনা সময় ছাত্র অবস্থা থেকে এত বছরেও তেমন বদলে যায়নি কাঠামো। । এক সময় আমরা সম্মুখের দরজার কাছে পৌঁছালাম। একজন পাহারাওয়ালা দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে বেশ ভীড়। অনেকেই এ পথ দিয়ে পেরিয়ে যেতে চাইছে। পাহাড়াওলা সবাইকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। মনে মনে শংকিত হলাম এতটা পথ হাঁটা তবে বৃথা হলো।
বাবা আমার আঙ্গুল ধরে এগিয়ে গেলেন দরজার কাছে। পাহারাওয়ালা সম্ভ্রমে বাবার দিকে তাকাল আর দরজার একপাশে সরে গিয়ে আমাদের বেড়িয়ে যাওয়ার পথ করে দিল।
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম। এত বছর পরও দারোয়ান কি ভাবে বাবাকে দেখেই চিনতে পারল, যে এই লোকের অধিকার আছে এ পথ দিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার! ঘটনাটা আমাকে মাঝে মাঝে ভাবায়। লোকটা কিছুই না বলে আমাদের ছেড়ে দিল যখন অন্য সবাইকে আটকে দিচ্ছে। আমরা বেড়িয়ে গেলাম, শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে হেঁটে ফুলার রোড পেরিয়ে বাংলা একাডেমিতে পৌঁছালাম। সবাই আমাদের চেনা স্টলে বসে অপেক্ষ করছে আমাদের জন্য। অনেকটা সময় বাংলা একাডেমির চত্তরে কাটিয়ে, ঘুরে ফিরে আবার আমরা শহীদ মিনারে পৌঁছালাম। দেয়াল লিখনের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ১৯৫২ র ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা করে গেলেন বাবা। তিনি তখন ম্যাডিকেল কলেজের ছাত্র। এখন যেখানে শহীদ মিনার তখন তাদের হোস্টেল ছিল সেখানে। তার পাশে নার্সের হোস্টেল। সাবলীল বর্ণনায় চাক্ষুস তুলে আনছিলেন সব স্মৃতি থেকে সব ঘটনা ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন আমাদের মননে। সকাল বেলা বাবা কি করছিলেন সেদিন এবং কেমন করে ভাষার জন্য প্রাণ দিল, রফিক, সালাম জব্বার। কী ভাবে একের পর এক উত্জেনা পূর্ণ খবরগুলো পরিবর্তন করছিল তাদের প্রত্যহিক জীবন। আর শেষ মেশ হুলিয়া আসামি হয়ে বন্ধু অর্থনিতিবীদ আখলাকসহ নৌকা করে পালিয়ে ছিলেন ঢাকা থেকে। তার বর্ণনা দিলেন আমাদের সবাইকে সেই ঐতিহাসিক জায়গাতে দাঁড়িয়ে, আবারও নতুন করে। যদিও অনেকবার শুনেছি সে কাহিনি কিন্তু সেদিন একুশের দুপুরে শহীদ মিনারের পাশে ঘটনাস্থলে অবস্থান করে সে গল্প অভূতপূর্ব মনে হয়েছিল।
অনেক বছর পর একুশে ফেব্রুয়ারিতে দেশে স্মৃতি রোমন্থনের সাথে বাস্তবের মেল বন্ধন ঘটাতে ঘুরছিলাম প্রতিটি চেনা রাস্থায়। অনেক বছর পরে দেশের মাটিতে সেই ঐতহাসিক জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি। বাবাকে তীব্র ভাবে অনুভব করছি। তাঁর অনুপস্থিতি ভিষণ ভাবে পীড়া দিচ্ছে। সেই ছিল বাবার সাথে আমার শেষ বিচরণ। তার পর আমি চলে গেলাম দূরে আর বাবা চলে গেলেন আরো অনেক দূরে তিনটি বছরের ব্যবধানে বাইশে ফেব্রুয়ারি।
ফাল্গুনের আগুনের উত্তাপ, কোকিলের বুক বিদীর্ণ করা কুহুতান শূন্যতায় ভাসায়, ভরা জমজমাট সময়ে আমাকে শূন্য দিগন্ত।
হাড়কাঁপানো শীতের প্রোকপ ছেড়ে চনমনে উত্তাপের আলোয়ান গায়ে জড়িয়ে ঘুরতে ঘুরতে ভালোলাগায় ভাসার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কোথায় যেন শূন্যতা, ঠিক আগের মতন ছন্দের মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনেক ভীড় ভাট্টার ভিতর ঠিক কারা প্রকৃত পাঠক বই মেলায়। কারা লেখক কবি শিল্প সংস্কৃতির বোদ্ধা! দুচারজন পরিচিত মুখ ছাড়া আর সব বেমানান মনে হচ্ছিল। শহীদ মিনারে হাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো বা বুদবুদ ছড়ানো ফেরিওলার মতন অসংখ্য হকারের কারণে অহেতুক ভীড়ে ফকিরদের জীবিকা নির্বাহ বড় বেশী অবহেলিত মনে হলো সাহিত্য অঙ্গন। ঠিক কি কারণে কী হচ্ছে তা যেন কারো বোধগম্য নয়। শুধুই যাবার প্রয়োজনে যাওয়া শুধুই অকারণ হেঁটে বেড়ানো। আর ফাঁকা ফাঁকা বইয়ের দোকানে কাক চোখে অপেক্ষা পাঠকের জন্য। বড় বেশী ভীড় দেখলাম মুঠোফোনের ফর্ম ফিলাপের জন্য। সব কিছু মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে যেন। হাওয়াওয়ান স্টাইলে মাথায় ফুলের ঝাড় পরে ঘুরে বেড়ানো মেয়েদের সবচেয়ে বেশী দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে আমার কাছে এই পথ চলায়। আর অনেক টাকা ব্যয়ে করা লিফলেট গুলো হাতে নিয়ে ছূঁড়ে ঢেলতে দেখলাম মানুষদের চোখ না বুলিয়ে। কি কারণে হাত পেতে প্রতিটি কাগজ নেয়া আর খানিক দূরে গিয়ে চলার পথে আর্বজনার স্তুপ করে ফেলে দেয়া? বোধহীন এই সব কাজের জন্য কারো কোন মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হলো না। কিছু মানুষ ব্যস্ত টিভির ক্যামেরায় মুখ দেখাতে।

তবু প্রাণের তাগিদে ধূলোর বাতাস গায়ে মেখে প্রতি বিকেল সন্ধ্যা কাটিয়ে দিলাম বইমেলার অঙ্গনে। যেখানে রক্তাত হয়ে গেলো লেখক অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীর রক্তে হাজারো মানুষের ভীড়ে। সঠিক চিত্র আঁকিয়েদের সরিয়ে উদ্ভট পাঁচমিশেলের যোগান দাতারা কী করে যেন সফল হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য ইতিহাস। সংরক্ষণকারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: যথার্থ বলেছেন । দেশটা অবাক রাজার রাজত্ব হয়ে গেছে ।এর থেকে পরিত্রান জানা নেই ।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ। পরিত্রানের জন্য প্রয়োজন একজন সৎ নেতা, সঠিক চিন্তা। সুস্থ নিয়ম প্রবর্তন করা, সর্ব ক্ষেত্রে।
তা হলেই সম্ভব।
মানুষ নিজের প্রয়োজনে কাজ করে দশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর ক্ষমতার লোভে লোভী রাজনীতিবীদরা দেশকে পিছনে টানছে।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো লেখা।

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ :) মন খারাপের লেখা লিখলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.