নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডুব সাঁতার : তিন

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:২৭


পর্ব:তিন

নীলার ভাই নিপু ভাই খুব ভালো মানুষ। বোন অন্ত প্রাণ । আমাকেও অনেক ভালোবাসেন। নীলার যে কোন আব্দার রাখার জন্য বাচ্চাদের জিদ ধরেন। বোনকে খুশি করেই শান্তি। উনার স্ত্রী মলি ভাবিও খুব ভালো মানুষ। নীলার জন্য ভাইয়ের আদর উনি বুঝতে পারেন। কিন্তু কখনো নীলার জন্য উনার নিজের কাজে বাঁধা পরলেও স্বামীকে বলে, কোন সুবিধা পাননি মলি ভাবি। বরং নীলাকে প্রাধান্য দিতে হবে সবার আগে এটা বুঝে গেছেন। মাস ছয় আগের ঘটনায়, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভীষণ রকম ঝগড়া লেগে গিয়েছিল নীলাকে কেন্দ্র করে। সামান্য ঘটনা কেন্দ্র করে, ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় প্রায় দুজনের।
অনেক দিনের পরিকল্পনা ছিল দুজন কোথাও বেড়াতে যাবেন। হোটেল বুক করা ছিল। প্লেনের টিকেট কাটা হয়ে গেছে। কিন্তু হুট করে নীলা ওদের বাসায় হাজির হয়। ভাইকে দেখার জন্য ওর প্রাণ অস্থির লাগছিল। ক'দিন ভাইয়ের কাছে থাকবে। নীলা ওদের প্রোগরামের খবর না জেনেই চলে গিয়েছিল।
ভাই নিজেদের সব প্রোগ্রাম বাতিল করে নীলার সাথে কাটাতে রাজী হয়ে যান। একবার বলেনও না ওদের বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল।
ভাবি বলেছিলেন, নীলাকে বলো পরে এসে থাকতে, আমরা তো কাল সিঙ্গাপুর যাবো।
না এসব বলা চলবে না। বোন এসেছে তাকে যত্ন করো রাখো। ভাইয়ার সাফ কথা।
ভাবি রাগ করে চলে গেলেন। ভাই আর সম্পর্ক রাখবেন না ভাবির সাথে এমন অবস্থা হয়ে গেল। পরে নীলাই বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে, ভাবিকে। ভাইকে শান্ত করেছে। সেই একবারই নীলা আমার কথা শুনে ভাইকে বলেছিল, ভাবিকে ফিরিয়ে আনতে।
এরপর অনেক দিন আর ওদের বাড়ি মুখো হয়নি।
আজ ভাইয়ের বাড়ি গেল আবার। আমার ভিতরটা কেন যেন কেঁপে উঠল।
নিপু ভাই একমাত্র মানুষ ওদের পরিবারের যিনি আমার সাথে নীলার বিয়ে নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। রূপার খবরটা শেষ মূহুর্তে জেনেছিলেন। যখন বিয়ের দিন তারিখ পাকা হয়ে গেছে।
নীলার আমাকে পছন্দ। আর নীলার মা বাবাও পছন্দ করেছিলেন আমাকে। আমার কিছু বলার সুযোগ হওয়ার আগেই ওরা সব পাকাপাকি করে ফেলেছিলেন।
শেষ মূহুর্তে নিপু ভাই, রূপার খবর কোথাও শুনে এসে বিয়েতে খুব অপত্তি করলেও, শেষে নীলার কারণেই আমাকে মেনে নিয়েছিলেন। নীলা কোন বান্ধবীর বিয়ের সময় আমাকে দেখে পছন্দ করেছিল। মাকে জানিয়ে ছিল। নিজেরাই তারা, ঐ বান্ধবীর বর, যে আমার অফিসের কলিগ তার থেকে আমার খোঁজ খবর নিয়েছিল। ভাল চাকরি করি একা ঢাকায় থাকি কোন ঝামেলা নেই এসব জেনে তাদের আপত্তি হয়নি। নীলা পছন্দ করেছে আমাকে তাই নিপু ভাই মেনে নিয়েছিলেন আমাকে। আর বোনের স্বামী বলে ভালোও বাসেন।
আমার অনেক খবর অনেকে জানে না। আমিও কাউকে কিছু বলি না। রূপার মৃত্যুর পর, আগের কাজটা ছেড়ে নতুন কাজে যোগ দিয়ে নতুনদের সাথে চলি। শহরের অন্য দিকে এখন কাজ। আগের কোন কিছুই দেখতে আমার ভালোলাগে না। পুরানোদের সাথে যোগাযোগ তেমন নেই।
আমি তখনও বিয়ে করার মতন মন স্থির করে উঠতে পারিনি। রূপার স্মৃতির সাথেই বসবাস করি। নিজের মধ্যে নিজে একটা ঘোরের মধ্যে থাকি। খুব বিষন্ন এবং একাকী একটা জীবন আমার।
অথচ নীলাদের বাড়ির নিয়ম মতন, সব কিছু ঝটপট করে ফেলানোর জন্য অনেকটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যেন আমি নীলার সাথে সংসার শুরু করে দিলাম ওদের ইচ্ছে মতন।
কিছু ভাবার বলার সুযোগ পেলাম না। তার আগেই সব হয়ে গেল।

নিপু ভাই যখন খবর জানালেন, আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। আমার স্ত্রীর নাম রূপা। নীলাকে বুঝালেন আমাকে বিয়ে না করতে। উনার বোনের আগে বিয়ে হয়নি তবে কেন বিয়ে হওয়া লোককে সে বিয়ে করবে।
এসব শুনে নীলা খুব কষ্ট পেলেও হতাস হলো না। আমার সাথে দেখা করার জন্য ওয়েস্টইন হোটেলে আসল। কফি পান করতে করতে রূপা এবং আমার গল্প শুনল। রূপার প্রতি আমার ভালোবাসা আমি অনেক বাড়িয়ে বলললাম। গল্প শুনে ওর চোখও ভিজে উঠল রূপার মৃত্যুর খবর জেনে।
তারপর সব চুকে বুকে গেছে নীলা আর আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না। এমন একটা ভাব করে আমি যখন উঠতে যাবো। নীলা তখন আমার হাত চেপে ধরল। ফুপিয়ে কেঁদে বলল। তোমার জন্য এখন আমার আরো বেশি মায়া লাগছে। আমি তোমাকেই বিয়ে করব। মানুষের জীবনেই তো এমন ঘটনা ঘটে।
রূপা আর নেই তোমার জীবনে। রূপার দুঃখে তুমি শেষ হয়ে যাচ্ছো আমি তোমাকে দুঃখ থেকে বের করে আনব। সুখের জীবন দিব।
ফিরে গিয়ে নিপু ভাইকে বুঝাল, ওর বিয়ে হয়েছিল কিন্তু বউ মারা গেছে, ওর জীবনটা কি তাই বলে শেষ হয়ে যাবে ভাইয়া। ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে ভাইয়া, আমি ওকেই বিয়ে করব।
বোনের পছন্দ হয়েছে আর কোন কথা চলে না। ভাই রাজি হয়ে গেলেন। আমাকে ডেকে নিয়ে বোনকে তিনি কত ভালোবাসেন বলেন, বোনের মন রক্ষার জন্য আমার মতন একটা হতভাগার কাছে বোনের বিয়ে দিচ্ছেন এসব বললেন। বোনের যেন কোন অমর্যাদা না হয়। কখনোই তাকে অখুশি করা চলবে না। অনেকগুলো বিষয় খুব ভালো করে জানিয়ে দিলেন। বিয়ের আগে একদিন সারাদিন তিনি আমার সাথে কাটালেন। এবং বোনের প্রতি উনার ভালোবাসার সাথে আমাকে সতর্ক করে চিনিয়ে দিলেন, বোনের সাথে কেমন করে চলব।
আমি একবার বলে ফেলেছিলাম। ভাইয়া আপনার বোনকে, বিয়ে করা ঠিক হবে না আমার।
এমন জোড়ে ধমকে উঠলেন। শাট আপ বলে। চমকে উঠেছিলাম ভীষণ ভাবে। আমার বোন তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে, তার সুখের জন্য তুমি উৎসর্গ হয়ে যাবে। নিজেকে বলি করে দিবে। এসব কথা শুনে, সেই থেকে আমি শাট আপ হয়েই আছি। নীলার ভালোবাসার জন্য বলি হয়ে গেছি।
ভাই বোনকে ভালোবাসবে, এটা খুব ভালো কথা। বোনের ভালোর জন্য হবু স্বামীকে কিছু শর্ত মানতে বলবেন, বোনের ভালোর জন্য এসব শুনে আমার বেশ ভালো লাগল। প্রতি ঘরে বোনদের এমন ভাই থাকা খুব জরুরী। তা হলে কোন বোন অত্যাচারিত হবে না, স্বামীর ঘরে।
বিয়েটা আমার হচ্ছে কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতি নেই নাই। মনটা তো এখনও রূপার মাঝে মগ্ন এমন অবস্থায় কেন আমার বিয়ে হচ্ছে ভাবি। আবার নিপু ভাইয়ের বোন আমাকে পছন্দ করেছে। সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমার সাথে বিয়ে না হলে সে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পরে। সে যখন চাইছে তখন আমার বলার কিছু নেই, সব মেনে আমাকে বিয়ে করতে হবে নীলাকে।
নীলা নিজের মতন আমাকে ভালোবেসে সংসার করে। আমার খুব বেশি কিছু করতে হয় না ওর জন্য। ওর বেঁধে দেয়া নিয়মের টানা, লাইন ধরে চললে দিনগুলি বেশ সুন্দর হয়। আমার মনের খবর নীলা কখনোই জানতে চায় না বা চেষ্টাও করে না। আমার কোন মতামত থাকতে পারে ও ভাবতেও পারে না। ও আমার সব দায়িত্ব নিয়েছে আমাকে খুশি করার।
সেই খুশি যে কি ভাবে হয় আমি জানি না, নীলাও জানে না। আমি শুধু মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরও ওকে রাগিয়ে ফেলি।
তবে ওর রেগে উঠার কারণ আমি কিছুতেই ধরতে পারি না। আজ যোগ করি, কোন সমস্যা না হওয়ার জন্য। পরে দেখি আসলে যোগ নয়, ভাগ করতে হতো। তা হলে নীলা রাগ হতো না। আবার ভাগ করে ফেললে দেখি সেদিনও ভুল হলো, আসলে গুণ করতে হতো।

নীলা কে আমি বুঝে উঠতে পারি না। ও আমাকে বোঝে কিনা সেটাও বুঝি না। মনে মনে ওর সাথে সম্পর্কের, সুসম্পর্ক রাখার জন্য, আমি যোগ বিয়োগ পূরণ ভাগ করে ওর সাথে কথা বলতে থাকি। কিন্তু প্রায় সময় শেষ রক্ষা হয় না।
নীল বাসা ছেড়ে গেলে সব ডিরেকশন দিয়ে যায় আমাকে কি করতে হবে না করতে হবে। আজ কোন নির্দেশনা নাই, এখন আমি কি করি। রাগ হয়ে গেছে এটা বুঝতে পারছি কিন্তু রাগের কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

আমার এসব জটিল বিষয় ভাবতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে হচ্ছে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যেতে একা, সবুজ পাতার গাছে ঢাকা কোন রাস্তা দিয়ে। আমার শরীর কাঁপতে থাকবে ঠাণ্ডা লেগে। আমি কোন গাছের বাঁধানো বেদিতে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকব। এক সময় বৃষ্টি থামবে হালকা বাতাস হবে প্রচণ্ড রোদ উঠবে। রোদের আলো আমার শরীর পুরো তাতিয়ে দিবে। আমি শীতের প্রকোপ থেকে বেরিয়ে হাত পা মেলে দিব আরামে।
আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আমি কি ঘুমিয়ে পরব এখন। যার বউ হারিয়ে গেছে তার কি ঘুমিয়ে পরা চলে এভাবে। না বউ হারায়নি, বউ রাগ করে চলে গেছে। নিজের ভুলটাকে কারেক্ট করি।
কিন্তু আমি এখন করবটা কি? নীলাকে ফোন দিলে, ও কি খুশি হবে নাকি রাগ হবে।
তার চেয়ে নিপু ভাইকে ফোন দেই। কিন্তু নিপু ভাইর কথা মনে আসতেই আমার ভয় লাগল। এমন দূর্বল শরীরে নিপু ভাই ধমক দিলে হার্ট ফেল হয়ে যেতে পারে।
আম্মার সাথেই পরামর্শ করি তা হলে। কিন্তু আম্মার সাথে কথা শুরু করব, তেতুলিয়ায় পৌঁছে যাব টেকনাফে। শেষে কিছুই মনে থাকবে না, পরামর্শ কি করলাম।
তার চেয়ে বরং ঘুমিয়ে থাকি । ঘুম দিয়ে জেগে উঠলে মাথাটা ভালো চিন্তা করতে পারবে । আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম। ফ্যানটা বন্ধ করে রেখে এয়ারকন্ডিশন চালিয়ে দিলাম। আষাঢ় মাষের ভ্যাপসা গরমে শীতল, আরাম দায়ক হয়ে উঠতে থাকল ঘরটা। নীলা এয়ারকণ্ডিশান না চালিয়ে ফ্যান চালাবে। এয়ারকণ্ডিশন ওর সহ্য হয় না। আর ফ্যানের শব্দটা আমার অসহ্য লাগে।
আরামে ঘুম ভাব এসে গেল অথচ লাফ দিয়ে উঠে বসলাম অস্বস্থি নিয়ে, নীলা যদি এসে পরে তবে খুব রাগ হবে এয়ারকণ্ডিশন চালানো দেখে।
আমি একটু বাইরে গেছি ওমনি সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে সংসারে। বাহ এ সংসারে আমার আর কি দরকার।
উঠে বসে এয়ারকণ্ডিশন বন্ধ করে দিলাম। নীলা কি রওনা হয়েছে আসার জন্য ফোন করে দেখি বরং। কিন্তু কার সাথে কথা বলব।
মলি ভাবিকে ফোন করি। অনেক ভেবে মনে হলো মলি ভাবির সাথেই কথা বলা যায়।
ফোনটা কয়েকবার বাজার পর মলি ভাবি ফোন ধরলেন। ফিসফিস করে বললেন, কেমন আছেন ভাই?
খুবই নাটকিও ভাবে বললাম, কেমনে ভালো থাকি ভাবি। আপনার ননদ নাই ঘরে, মন উদাশ হয়ে আছে। শরীরটা এখনো ভালো হয়নি। ও কাছে থাকলে ভালোলাগত।
ভাইয়া আপনাদের কি হয়েছে বলেন তো?
কিছু তো হয়নি ভাবি।
আপনার বউ তো সকালে এসে ভীষণ কান্না কাটি করছে। আর আমার স্বামীর মেজাজ কোথায় চড়েছে বুঝতে পারছেন তো।
কেন ভাবি? ও কি বলছে। আমি তো কিছুই মনে করতে পারছি না। ওর সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেছি বলে।
ভাই আপনাদের মাঝে আমার কথা না বলাই মনে হয় ভালো। আমি তো নিজের সংসার নিয়ে শংকিত।
ভাবি আমি আপনাকে বিপদে ফেলতে চাই না। আপনার অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার তো জানা দরকার। ওর অভিযোগ কি আমার বিরুদ্ধে।
ভাই আপনাদের বিয়ের বয়স হয়েছে কত দিন?
প্রায় চার বছর, আগামি মাসে, পাঁচ আগষ্ট চার বছর হবে ।

এত দিনেও আপনি আপনার মরে যাওয়া বউকে ভুলতে পারলেন না। নীলা, এত ভালোবাসল আপনাকে তারপরও। আমার মনে হয় আপনার সমস্যা বেশ জটিল। ভাই আমাকে আর কিছু জিগাইবেন না। আমি কিছুতে জড়াতে চাই না।

ভাবির কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল যেন। কোন রকমে বললাম, একি বলেন, রূপার কথা আমি মনে রাখব কেন?
ভাই আপনার বউ তো বলল, গত কয়দিন ধরে আপনি ক্রমাগত রূপার কথা বলেছেন। ওর সাথে হাসছেন, গল্প করছেন, কথা বলছেন। এতো ভালোবাসা দিয়েও আপনার মন থেকে রূপাকে সরাতে পারেনি নীলা। এই দুঃখ যখন করছিল আপানার ভাইয়ের চোখে আমি আগুন দেখেছি।
আচ্ছা ভাই রাখি এখন। ভাবি ফোন কেটে দেন। আমার সব শক্তি রহিত হয়ে গেছে। আমি ভাবতে পারছি না আর কিছু। নিজের গালে কয়েকটা চড় লাগাতে ইচ্ছা করছে। এত ভালোবাসে আমাকে মেয়েটা তাকে কষ্ট দিয়েছি। আমি এমন পাষণ্ড। আমাকে কত যত্নে নীলা খাইয়ে দিয়েছে। ওষুধ দিয়েছে, গা মুছিয়ে দিয়েছে, রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। আর আমি রূপার কথা বলেছি। হোক জ্বরের ঘোরে। এসব করা ঠিক হয় নাই।
কেমনে সহ্য হবে নীলার। আমার নিজেরই তো সহ্য হচ্ছে না। নিপু ভাই তো আমাকে আগেই সাবধান করে দিয়েছেন বোনকে যেন কষ্ট না দেই। তার আদরের বোনকে আমি এ ভাবে কষ্ট দিলাম। আমার তো ওর সামনে যাওয়ার মুখই রইল না। আমি এখন নীলার কষ্ট কি ভাবে কমাব। কি করি । রূপাকে মেরে ফেলি। দূর কি ভাবছি। রূপা তো মরেই গেছে।
নীলার কষ্ট কেমনে কমাব। ও নীলা আসো তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার কিছু মনে নাই। ভুল করে কখন কি বলে ফেলেছি। মাফ করে দাও। নীলার পা ধরে বসে থাকা দরকার আমার।
নীলা মায়াবতী, নীলা মাফ করে দিবে আমাকে।
আজ যাবো, না আজ থাক কাল যাবো। কাল ওর কষ্টটা একটু কম থাকবে।
ঠিক কি করলে নীলার দুঃখ কমবে আমাকে মাফ করে দিবে এই ভাবনায় র্জজরিত হতে হতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নাই। ঘুম ভাঙ্গল, কলিং বেলের শব্দে। কে বেল বাজায় নীলা কি তবে আসল। নাহ নীলার কাছে চাবি আছে।
বেলটা কর্কশ স্বরে আবারো বেজে জ্বলেছে। আমি উঠলাম। মাথাটা দুলে উঠল। আবার একটু বসে সেন্ডেলে পা গলিয়ে দরজার দিকে হাঁটা দিলাম।
দরজা খুলে দেখি মশল্লা মালাই রেস্টেুরেন্টের টিপু, দাঁড়িয়ে আছে, কিরে কি হইছে? আমি তো ওর্ডার করি নাই কিছু।
সেই জন্যই তো আইলাম খাইবেন না কিছু? সকালে নাস্তা করেন নাই। এখন দুফুরের টাইম পার হয়ে গেছে।
তাই নাকি? কয়টা বাজে?
তিনটা বাজে স্যার।
সকালে নাস্তা দিয়ে গেলি না।
স্যার কি কন হেতো কাইল দিছিলাম।
সে কি! আচ্ছা যা ভাত মাছ ডাল আর সবজি নিয়ে আয় দুই বেলার জন্য দিস। আর কালকে সকালে নাস্তা নিয়ে আসিস। তুই না খাওইলে না খেয়েই মরে যাবো।
ছেলেটা চলে যাচ্ছে ওকে ডেকে আবার বলালাম। ফ্ল্যাক্সটা নিয়ে যা। চা নিয়ে আসিস ভর্তি করে। একটু ভালো করে ধুয়ে নিস বাবা।
জ্বে স্যার।
ছেলেটা চলে গেল।
টের পেলাম পেটের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা। আর মাথার ভিতর শূন্যতা।

গিজার অন করে ভালো করে দাঁত ব্রাস করলাম, দাড়ি কাটলাম। নিজের দিকে তাকাতে বেশ নোংরা লাগছে। ভালো একটা গোসল দিয়ে বের হয়ে লুঙ্গি আর স্যাণ্ড গেঞ্জি পরে বসলাম অনেকদিন পর। আহা! খুব আরাম লাগছে। গত চার বছরে একবারও লুঙ্গি পরি নাই। খালি গেঞ্জি পরে থাকও বারন ছিল। নীলার নাকি কেমন বিশ্রী লাগে দেখতে। ওদের বাড়িতে কেউ লুঙ্গি পরে না কখনও।পাজামা, ট্রাক স্যুট, হাফ প্যাণ্ট পরে।
সোম মঙ্গল বুধ কবে কখন কোন কাপড় পরব। সব সাজানো থাকত বাথরুমে। ঘরে ঢুকেই বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বদলিয়ে আসতে হতো। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠেও রাতের কাপড় ছেড়ে অফিসের কাপড় পরে পরিপাটি হয়ে বের হতে হতো বাথরুম থেকে।

টিপু খাবার নিয়ে এসেছে।
টেবিলে রাখে যা।
এখন খেয়ে নেই কাল সকালে সব টাকা শোধ দিব, হবে না?
জ্বী স্যার। সকালে কি নাস্তা আনব?
নেহারি আর নান দিস।

আরাম করে খেয়ে বারান্দায় বসে ভাবছি। কিন্তু কিছুই পরিস্কার ভাবতে পারছি না। ঠিক কি ভাবব তাও ঠিক করতে পারছি না। একটা সিগারেট ধরাব নাকি? শুনেছি সিগারেট খেলে বেশ ভাবা যায় । কিন্তু সিগারেট নেই। আমি কখনোই সিগারেট খাই নাই। ফোনটা বেজে উঠল। মাকসুদ সাহেব ফোন দিয়েছেন।
স্যার কেমন আছেন এখন?
আছি ভালো।
-অফিসে কি আসবেন দু এক দিনের মধ্যে।
খুব জরুরী কিছু?
-জ্বি স্যার কয়েকজন ক্ল্যায়েন্টের কাজ আটকে আছে, আপনার সিগনেচারের জন্য।
আমি মরে গেলে কি হবে?
কি বলেন স্যার এসব। আচ্ছা আর কয়টা দিন রেস্ট নেন। আমি কি আপনাকে দেখতে আসব স্যার?
না আসা লাগবে না। আমি আগামী সপ্তাহে আসব অফিসে।
প্রায় পনের দিন পর অফিসে গেলাম। সারা দিন সবার কাছে, শরীর কেমন এই খবর বলাতেই কাজের দিন পার হয়ে গেল। যেন বিদেশ ভ্রমণ সেরে ফিরেছি। কুশল বার্তা জানার জন্য সব কলিগরা উদগ্রীব। শুধু দরজায় দাঁড়ানো পিয়ন সালাম দেয়া ছাড়া কিছু জিজ্ঞেস করল না। মেজাজটা খারাপ হলো বেটার উপর। তুই দুই পয়সার পিয়ন, তোর এতো দেমাক কেন রে। সবাই যখন অস্থির হয়ে খবর জানছে তুই একবারও জিজ্ঞেস করলি না।
মশল্লা মালাই রেস্টেুরেন্টের টিপু প্রতিদিন নতুন ধরনের খাবার দেয়। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে থেকেছি, মন্দ লাগে নাই। অফিস থেকে বেরিয়ে মনে হলো, খুব ক্ষিদা লেগেছে। টিপুকে খাবার নিয়ে আসার কথা বললাম। বাসায় ফিরেই খেতে বসব।
বাড়িতে ফিরে পেলাম চিঠি। মোটা একটা খয়েরি রঙের খাম।
খাবার পর খামটা নিয়ে বারান্দায় বসলাম।
নীলা, যে আমাকে এত ভালোবাসে । সে আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছে।
চলবে......

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:৫৫

শেহজাদী১৯ বলেছেন: ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েই ভালো করেছে।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ শেহজাদী১৯
সাথে থাকুন

প্রথম পর্ব পেয়েছিলেন?

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




প্রথম প্রেম কেও ভুলতে পারেনা যদি সেটা সত্যিকারের প্রেম হয়ে থাকে।
কোন কারণে প্রথম জন হারিয়ে গেলে তার প্রেম থেকে যায় মনের নিভৃত কোণে ।
চেতন কিংবা অবচেতন মনে সে প্রেমের খুটিনাটি মনের চিপাগলি দিয়ে বেরিয়ে
আসে । তার পরে কারো জীবনে নব প্রেমের জোয়ার আসতেও পারে ।
পুরাতন প্রেমিক যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে সে আর কোন কালেই
ফিরে আসবেনা কারো জীবনে । বিষয়গুলি নিলার ভাল করে জানার
কথা । নীলা তার পতির মনে পুরান প্রেমের আনাগুনা দেখলে
কিছুটা মনক্ষুন্ন হতেই পারে বিবিধ কারণে। তবে সে জানে
রূপা আর কোন কালে স্বশড়িরে ফিরে আসবেনা, তাকে
নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা তার থাকার কথা নয় একেবারে ।
তবে হ্যাঁ, তার মনে হতে পারে সে তার প্রিয়জনকে
একান্ত নীজের করে পায়নি নীজের কাছে , তার কাছে
জীবন অপুর্ণ মনে হতেই পারে। এখন পর্যন্ত দেখা যায়
জীবনটা তাদের অসয্য হয়ে যায়নি একেবারে
কিংবা এখনো চলে যায়নি নীলার নিয়ন্ত্রনের বাইরে ।
তাই নীলার ডিভোর্স লেটার পাঠানোর সময়
এখনো হয়নি বলে মনে বাজে । তাছাড়া যাদের
দাম্পত্য জীবনের কোন ঘটনা ( ছোট বড়
যেমনিই হোক ) তা যদি তৃতীয় কোন মানুষের
( মলি ভাবী কিংবা অন্য যে কেও সে যতই
আস্থাশীল হোক না কেন) কানে যায় । তবে
তাদের দাম্পত্য জীবন কখনো সুখের হয়না ,
দুদিন আগে পরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেই
ঘটে। এরকম অনেক ঘটনা ঘটতে দেখেছি
আমি জীবনে ।

তাই, পরিচিত কোন কাপল যদি তাদের
দাম্পত্য জীবনের কোন বাদ বিসম্বাদ, মান
অভিমানর কথা আমার কাছে বলতে আসে,
তাদেরকে আমি প্রথমে্ই হলফ করে বলে দেই
তৃতীয় ব্যক্তির কাছে যখন বলতে এসেসিস
তোদের দাম্পত্য জীবনের চাওয়া না
পাওয়ার গোপন কথা, তখন জেনে রাখিছ
তোদের জীবনে কোনদিনই মিল হওয়ার
সম্ভাবনা নেই। উপাই একটাই, নীজেদের
গোপন কথা কারো কাছে ফাঁস না করে
নীজেরা নীজেরা খোলামেলা আলাপ
আলোচনা করে মিটমাট করে সুখের
সংসার করা । নীলা ও তার পতির
জন্যও রইল একই পরামর্শ ।

যাহোক, আমার ভাবনা কিংবা কথায়
কি আসে যায়, গল্প চলুক আপন গতিতে,
নীলা ও তার পতিধন করুক যা তাদের মনে
চায় । আমরা তৃতীয় ব্যক্তিরা আয়েশ করে
উপভোগ করব তাদের স্বাদের প্রেম পিড়িতি ,
ছাড়াছাড়ি আর মিল মহব্বতের কথা ।

গল্প ভাল লেগেছে ।

শুভেচ্ছা রইল ।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৩৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন বরাবরের মতনই।
আসলে জীবনের মতন গল্প একদম হয় না। গল্প চলে গল্পের স্রোতে। আমার উপলব্দি।

গল্পের বাইরে গল্পের সুত্রধরে ,এই বিষয় ভিত্তিক আলোচনা আমরা করতেই পারি।
ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। উপাই একটাই, নীজেদের
গোপন কথা কারো কাছে ফাঁস না করে
নীজেরা নীজেরা খোলামেলা আলাপ
আলোচনা করে মিটমাট করে সুখের
সংসার করা ।

আমিও আপনার এই পরামর্শের সাথে শতভাগ একমত।
কিন্তু মানুষের স্বভাব নিজেদের সমস্যা নিজে না মিটিয়ে অন্য মানুষকে জড়িত করা। আবার অনেক সুখি পরিবার অন্যদের বেশি দেখ ভালের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। আর সব চেয়ে প্রয়োজনীয়, খোলামেলা আলাপ কেউ কখনও করে না। রাগ অভিমান যাই হোক, কথা বলা বন্ধ সবার আগে। তারপরের ধাপ দূরে চলে যাওয়া।
সমস্যার সমাধানের পথ নষ্ট হয়ে যায়।
সাথে থাকুন পরের পর্ব দ্রুত দিয়ে দিব।
শুভেচ্ছা রইল

৩| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: ডুব সাঁতার এর প্রতিটা পর্বের লেখা গুলো খুব ভালো হয়েছে। বুঝা যায় খুব মন দিয়ে লিখেছেন।

০৮ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:৫১

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর প্রতিটা পর্ব মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
শুভেচ্ছা রইল

৪| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ইন্নালিল্লাহ সামনে কী হবে কে জানে

ভালো লাগলো আপি

৫| ০৮ ই মে, ২০২১ দুপুর ১২:৫৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: আহা হা হা মজা পাইলাম। মন্তব্যে। সত্যি কি হবে তারপর।
ভালোলাগল সময় নিয়ে পড়ছেন দেখে।
ধন্যবাদ সেজন্য কাজী ফাতেমা ছবি ।

শুভেচ্ছা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.