নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্যাভিভানের গল্প

০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ ভোর ৫:৩০


অনেকগুলো ভাইবোনের সাথে গা ঘেষাঘেষি করে সারাক্ষণ থাকা। ঘুমানো লম্বালম্বি ভাবে ছোট একটা বিছানায় । গায়ের সাথে গা লাগানো। দেয়ালের সাথে যে শোয় তার মনে হয় ঢুকে পরছে পাশের জনের চাপে দেয়ালের ভিতর।পায়ের দিকেও শুয়ে থাকে একজন যার জন্য পা লম্বা করায়ও অসুবিধা। বিছানার খোলা দিকে যে শোয় মাঝে মধ্যে পরেও গেছে ঘুমের মাঝে নিচে। পাশের ঘরে মা বাবা থাকত। দুখানা ঘরের ভিতর গুটিশুটি জীবন।
খাওয়ার সময় মায়ের হাড়ি থেকে যা বের হয়, এক হাতা বা আধ হাতা স্যুপ বা পরিজ, জাউ ভাত খানিকটা সবজি সিদ্ধ। ঘুরে ঘুরে সবার পাতে দেয়ার পর মায়ের জন্য কিছুই থাকে না তেমন। চামুচে একটুখানী মুখে তুলে তুলে অনেকবার খায় মাত্র তিন চার চামুচ খাবার। খাওয়া শেষ করে ফেলতে হয় চামুচ আর থালা চেটে চেটে অনেকক্ষণ ধরে। তারপর পানি খেয়েই পেট ভরে ফেলা। খিদের কুমির হা করে নাচতে থাকে পেটের ভিতর। মাঝে মাঝে ঘরঘর শব্দ তুলে, মনে হয় গাড়ি চলছে।
অভাবের সংসারে তবু কিভাবে যেন বেড়ে উঠে তারা ছয়টি সন্তান । মানুষের মতনই দেখতে লিকলিকে হাত পা শরীর, নিয়ে। টলমল করে চলে। ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে হয় মা বাবা যখন কাজে যায়। একটা দুটো বিস্কুট ফল মুখে দেয় কান্না করতে থাকলে। এক সময় কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পরে।
এভাবে ছয় সাত বছর হলেই একজন একজন করে কাজে লেগে যায় মা বাবার সাথে। বাজারে দোকানে মা কাজ করে সেখানে বসে বাসন ধোয়। কখনো জিনিস এগিয়ে দেয়। এভাবেই মেয়েটাও একদিন কাজে লেগে যায়। সে ছিল তিন নাম্বারে বড় দুই বোনের পরে ও তিন নাম্বারে তারপর ভাই দুজন । সবার ছোট আরো একটা বোন।
বাবা নানা রকম কাজ করে যখন যেটা পায়। কখনো দূরে চলে যায় বাড়ি থেকে। কয়েকদিন পরে আসে। এভাবেই দিনগুলো পার হচ্ছিল।
বড় বোন দুটো একসময় বেশ ভালো কামাই করতে শুরু করে। প্রায় সময় দু হাত ভরে খাবার নিয়ে আসে। ছোট শিশু গুলো খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। মা বাবার চেয়ে বোনগুলোকে বেশি ভালোবাসে শুধু পেট ভরে খেতে পারার জন্য।
ওর বয়স পনের এখন বুঝতে পারে বড় বোনগুলোর কাজ গুলো আসলে অন্য রকম। এই কাজ করে তারা বেশি আয় করতে পারে। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় বাড়ির বাইরে কাটায়।
ওদের মতন পরিবারের সবার গল্পগুলোই একরকম। নিজের শরীর বিক্রি করা কিশোরী বয়স থেকেই স্বীকৃত তাদের সমাজে। যতদিন পারে মেয়েরা শরীর বিক্রি করে পরিবারে সাহায্য করে। তারপর এক সময় বিয়ে করে নিজেদের ঘর সংসার করে। স্বামী চাইলে তখনও তারা শরীর বিক্রি করতে পারে।
তাদের দেশে বহু বিদেশি লোক আসে শুধু মেয়েদের সাথে সময় কাটাতে। এরা অনেক টাকা দেয়। আসলে টাকাটা অনেক না। কিন্তু ডলারের হিসাবের টাকা ওদের দেশের হিসাবে অনেক বেশি মনে হয় তাদের কাছে। অন্যদিকে তাদের ক্রেতাদের কাছে এই ডলার খুব কম। নিজের দেশের একটা মেয়ের সাথে সময় কাটাতে তাদের অনেক বেশি খরচ করতে হয়।
দেশের বড় একটা আয়ের সোর্স মেয়েদের শরীর বিক্রির এই ইনকাম। সাথে পর্যটনের দেশ হিসাবে পরিচিত বিশ্বের কাছে তাদের দেশ।
মেয়েটার স্কুল শেষ হয়েছে বড় বোনরা প্রায় বলে তুই আমাদের সাথে চল, কাজে লাগিয়ে দেই। কিন্তু নিজের শরীর বিক্রির ঐসব কাজ করতে ভালোলাগে না। স্কুলে আয়ার কাজ করে। ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ করে। রান্না করা, ঘর পরিস্কারের কাজ করে। বোনদের মতন বিশাল অংকের আয় হয় না তবে কিছুটা আয় করতে পারে।
এই সময় ওর চেনা হয় একজন মহিলার সাথে সে জানায় সে বিদেশে ঘরের কাজ করার জন্য মেয়েদের পাঠায়। তবে তাদের ট্রেনিং নিতে হয় এবং ভালো কাজ পারতে হয় বাড়ি ঘর ঝকঝকে তকতকে রাখা শিখতে হয় বিদেশের সিস্টেমে। মনপ্রাণ দিয়ে ঘরের কাজ শেখার কাজে নিজেকে নিবেদিত করে।
দু বছর পরে যখন ওর বয়স আঠারো সে সময় ওর সুযোগ হয় বিদেশে আসার। ইহুদি এক দম্পতি তাদের বাচ্চা দেখা শোনার কাজের জন্য ওকে ক্যানাডায় নিজেদের কাছে নিয়ে আসতে পছন্দ করে।
ওরাই কাগজপত্র পাসপোর্ট বানানোর সমস্ত কাজ করে এবং খরচ পত্র দেয়। মাসের বেতন হিসাবে বিরাট অংকের টাকা পয়সাও ওকে দেয়। বাবা মা খুশি বোনরাও খুশি। ও নিজেও অনেক খুশি অন্তত্ শরীর বিক্রির কাজ করতে হবে না। যদিও এই কাজ করার জন্য ওদের সমাজে কেউ আঙ্গুল তুলে চিহ্নিত করে না। খারাপ কথা বলে না। তবু ওর নিজের কাছে কখনো ভালোলাগেনি।
মেয়েটির সাথে আমার যখন পরিচয় হয়েছিল। তখন তার বয়স পঁয়ত্রিশ বছর। সে একটা কোম্পনিতে সিপিং রিসিভিং ডেলিভারি দেখাশোনার কাজ করে।
শ্যাভিভান নিজের মুখে যখন বলছিল তার জীবনের গল্প অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কত রকম পরিবেশ থেকে মানুষ আসে কত রকমের, জীবনযাপন এই সংসারে মানুষের।
ইহুদি পরিবারে দশ বছর ছিল সে। ওদের পরিবারে থাকাকালীন সময়েও নিজের মতন স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা করতে পারত ও। প্রতিদিনের কাজের পর বাইরে যেতে পারত। দেশে ঘুরতে যেত প্রতি বছর। সব খরচ ঐ পরিবার থেকে দেওয়া হতো। ওদের আটটি বাচ্চার ছয়টিকে সে বড় করেছে আদর যত্ন করে। ছোট বাচ্চার যখন বারো বছর বয়স তখন ঐ পরিবারের লোকজন, ওকে কোম্পানির কাজ দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছে স্বাধীন জীবনে।
এর কয়েক বছর আগে থেকে একটা ছেলের সাথে ওর পরিচয় হয়েছিল। ছেলেটি ক্যাথলিক পরিবারের। ইউরোপিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে তার পরিবার। দুই ভাইবোনের ছোট ছেলে। ছেলেটির বাবা একটি অফিসে একাউনটেন্ট মা হাই স্কুল শিক্ষক । ছেলেটি ইঞ্জিনিয়ার।
তিনচার বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে তারা । দুটো বাচ্চা নিয়ে মহা সুখি জীবন তাদের। বছরে দুবার ঘুরতে যায় অন্য দেশে। একবার ছেলে মেয়েসহ যায় একবার শুধু স্বামী স্ত্রী মিলে যায় হানিমুন করতে।
থাইল্যাণ্ডের মেয়ে শ্যাভিভান এবং ক্যানাডার ছেলে ম্যাথুর সংসারে গিয়ে আমার খুব ভালোলেগেছে। শ্যাভিভানকে এখন কোন কাজ করতে হয় না। ওর স্বামী শ্যাভিভানকে ওদের পরিবার সম্রাজ্যের কুইন করে রেখেছে।



মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৭:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: শ্যাভিভানের জন্য শুভকামনা। অনেক সংগ্রামের পর সুন্দর একটা জীবন পেয়েছেন তিনি। উনাকে সৌভাগ্যবতী বলতে হয়। আসলে আত্মবিশ্বাস আর চেষ্টা থাকলে একদিন কাঙ্খিত ফল পাওয়া সম্ভব।
পোস্ট ভালো লেগেছে।
শুভেচ্ছা রইলো।

০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:০০

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ ইসিয়াক
দুঃখ শেষে সবাই যে এমন সুখ পায় তা নয়। তবে কেউ কেউ খুব সৌভাগ্যবান
শুভেচ্ছা থাকল

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৯:০৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক হলে জীবনও সঠিক পথেই সাধারণত চলে। শ্যাভিভানের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক ছিল। তার সৎ সাহস ছিল, পরিশ্রমী ছিল। ফলে পরিণামে সে জয়ী হয়েছে।

০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:০৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: মানুষ চেষ্টা করে নিজের মতন জীবন উন্নত করার। সবাই সঠিক পথ পায় না। অনেকের চেষ্টা বিফলেও যায়। যন্ত্রনার হয় জীবন।
শ্যাভিভান সেীভাগ্যবান
শুভেচ্ছা রইল

৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:১১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেস্টি ইজ দা বেস্ট পলিসি। সততাই সর্বোত্তম পন্থা।

০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:০৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: এটা ঠিক তবে সততার পথ অবলম্বন না করে অনেকে কোটিপতি হয়ে যায় কেমন তাদের আনন্দ জানতে ইচ্ছা হয়। :D

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:২৩

শায়মা বলেছেন: শ্যাভিভানের জয় হয়েছে। সে পেরেছে জয় করতে।

অনেক সুন্দর একটা গল্প আপু! :)

০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ ভোর ৪:২১

রোকসানা লেইস বলেছেন: জীবনের গল্প অনেক সুন্দর। যখন একটা পর্যায়ে মানুষ সফল হয় ।
শুভেচ্ছা শায়মা

৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৪৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



পৃথিবী অনেক অনেক বড়। আমাদের ছোট দেশেই এতো এতো সমাজ আছে এতো এতো পেশা আছে, যেই সকল পেশায় জড়িত মানুষের কথা শুনলে অবাক হতে হয়। তবে শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে এখন আর অবাক হই না। সবই পরিচিত।

ইরাক সিরিয়া লিবিয়া যুদ্ধের পর ইউরোপে আরব শরণার্থীদের জীবন যাপন দেখলে কষ্ট লাগে।

০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ ভোর ৪:২৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: নিজেদের জানা গল্পগুলো এক রকম। পৃথিবীর মানুষের গল্পগুলো অন্য রকম।
আমাদের সাধারন ধারনায়মনে হয় ইউরোপ আমেরিকার মানুষগুলো খুব ভালো থাকে। ওদের কোন দুঃখ নেই। আসলে সব জায়গায় মানুষের অনেক কষ্ট যন্ত্রনার গল্প আছে সাথে সুখের গল্পও আছে । যত গভীরে যাই তত অবাক হই।

শরণার্থী জীবন সব জায়গায় সব সময় কষ্টের।
আপনি কি শরণার্থী হয়েছিলেন নাকি দেশেই ছিলেন?
শুভেচ্ছা রইল

৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



শরণার্থী নিয়ে অল্প বিস্তর কাজ করেছি, সেই অভিজ্ঞতা ভয়ংকর ও ভয়াবহ করুণ। ব্লগে লেখার মতো না। তাছাড়া আইন ও প্রশাসন এই সকল বিষয়ে লেখার পারমিশান দেন না।

০৮ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ৯:৫৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: আসলে করুণ শরণার্থী জীবন, উচ্ছেদ হয়ে অন্য দেশে থাকা।
হ্যাঁ এটা ঠিক বলেছেন আইন প্রশাসন পারমিশন দেয় না।
কিন্তু আজকাল নতুন অনেক কর্মীদের দেখি অফিসের ভিতরের এমন সব ঘটনা লিখে ফেলেন নিয়ম কানুনের তোয়াক্ক না করে । হয়তো মনে করে, বাংলায় লিখছি কে আর বুঝবে।
আমাদের মানুষের মাঝে নীতির আকাল।
শুভেচ্ছা রইল

৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০২

করুণাধারা বলেছেন: ওহ্, থাইল্যান্ডের পর্যটনের এই দিকটা আমার জানা ছিল না।

ভালো লাগলো শ্যাভিভানের কাহিনী। উপস্থাপন ভালো হয়েছে।

০৮ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:০৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ করুণাধারা ।
থাইল্যান্ড পর্যটনের জন্য বিখ্যাত অনেক আগে থেকে এই বিষয়ের জন্যও পরিচিত থাইল্যাণ্ড।
শুভেচ্ছা রইল

৮| ০৬ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প।

০৮ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:০৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.