নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্রসন্ন

সপ্রসন্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা এবং একটি ময়লা শার্টের গল্প

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৬

আজকে অসিত এসেছে তার ময়লা শার্ট পরে। ইচ্ছাকরেই, বিশেষ এক উদ্দেশ্যে। তার প্লান শুনে আমরা থতমত। মারহাবা অসিত। একদম ইনোভেটিভ আইডিয়া!
আমরা চার বন্ধু, আমি, অসিত, প্রসূন, ফয়সাল। বসে আছি সঙ্গীবিহীন। এজন্য বলা, কারণ আজ ভালোবাসা দিবস। আজকের দিনে সিংগেল বাদে কারো সঙ্গী ছাড়া থাকবার কথা নয়। হতভাগা আমরা কতিপয় মানুষ তাই আফসোস মিশ্রিত আনন্দগল্পে মগ্ন।
ক্লাসের মাঝের বিরতি। এই ফাঁকে টিএসসির চত্বরে বসে আছি। ভালবাসার লাল ছাড়া কিছুই দেখছি না। যদিও ভালোবাসার মানুষও নেই। এছাড়া বাসন্তী সাজ সর্বত্র। বসন্তের দ্বিতীয় দিবস কিনা, তার ছোঁয়া লেগে আছে। মেয়েদের চুলে মুকুটের মত শোভিত পুষ্পবলয়। লাল টিপ আর লাল শাড়ি তো আছেই। যদিও ন্যাচারাল সাজ বাদে আটাময়দার সাজই বেশি। মোশারফ করিম আজ থাকলে নিশ্চিত বলতেন, ফিরিয়ে দাও। আমার এই আটাময়দা, ফিরিয়ে দাও।
লালপেড়ে শাড়িপরিহিতা একদল মহিলা হেটে গেল। তাদের সবার শাড়ি একই, সাজপোশাক অভিন্ন। কিছুটা বয়স হলেও তাদের মনে পাক ধরেনি, সাজগোজেই স্পষ্ট।
যুগলেরা কেউ হাটছে, প্রেমময় সেলফি তুলছে। টিভি চ্যানেলের এক রিপোর্টারকেও দেখি। চুলের ববকাটের চেহারায় কালো ফ্রমের চশমা যে চমৎকার মানায়, জানা ছিল না। তার রিপোর্টের বিষয়ও ভালবাসা।
সবচেয়ে রমরমা অবস্থা মনে হয় ফুলবিক্রেতাদের। ছোট ছোট পিচ্চিদের হাতেও দেখি বালতিভর্তি ফুল। মৌসুমি ব্যবসা। একদিনেই লাভ সারা মাসের। ভিড়ের কমতি নেই। লোকজনের অসীম আগ্রহ। দেখে মনে হয়, ফুলকপির টুকরো বেচলেও বিক্রি হয়ে যাবে ধুমসে!
অসিত তার ময়লা শার্টটা খুলল। ভেতরে টিশার্ট। এরপর তা রাখল বারান্দার মেঝেতে। আরো ময়লা হোক! যত ময়লা হবে ততই নাকি মেয়েরা আকৃষ্ট হবে। এটাই তার প্লান। কোন এক সুন্দরীতমা আজ হাটতে হাটতে থমকে দাঁড়াবে। চলার পথে এলোমেলো বিছানো এই শার্ট দেখে । ময়লা শার্টটায় করুণ দৃষ্টি দিয়ে বলবে, ওমা আপনার শার্ট বুঝি! একি অবস্থা করেছেন।
ফয়সাল বলে, "এরপর তুই কি দিবি জবাব?"
অসিত বলে, "এরপর আর কিছু বলা লাগবে না! একটা মেয়ে এসে যদি আমাকে কিছু বলে এটাই তো অনেক বড় ব্যাপার!" তা বৈকি! সিংগেল পুরুষদের জন্য রমণীয় রমণীকণ্ঠ শোনাও অমৃতসম।
আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে তে এই প্ল্যান করছে তাহলে! দেড় হাজার বছর আগে পাদ্রি ভ্যালেন্টাইন মৃত্যুদণ্ড পাবার আগে প্রিয়তমাকে পাঠিয়েছিল শেষ চিঠি। একটা বাক্যই ছিল তাতে। লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন। আজ অসিত সেরকম প্ল্যানই যেন করেছে। চিঠি নয়, সরাসরি। ময়লা শার্ট ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন!
আমি বলি, "ময়লা শার্ট দেখে মেয়ে আসবে না, কাজের বুয়া আসবে। তারপর তোর ময়লা শার্টটা ধুয়ে দিবে। মজুরি হিসেবে তুই টাকাও দিতে পারিস, কিংবা অন্যকিছু!"
অসিত শান্তই থাকে। বলে, "আজকের দিনে কাজের বুয়ারাও সেজে আসবে, চিন্তা নাই। তুই চিনতেই পারবি না কাজের বুয়া নাকি সুন্দরী মেয়ে।"
ফয়সাল কথার সমর্থনে বাসার বুয়ার কাহিনি শুনাল। গতকাল পহেলা ফাল্গুনে বুয়া বাসন্তী শাড়ি পরে এসেছিল। তা দেখে ফয়সাল বলেছিল, কি খালা আপনার মনে দেখি রঙ লাগছে।
হুম বাবা, এইটা আর এমন কি। আগের সাজ তো আপনে দেখেন নাই।
তাই নাকি! কি সাজতেন আপনি?
আগে আমরা বান্দুবিরা এই দিনে ঘুরতাম। একসাথে। মাথায় থাকত ফুল। আর কি যে বেলেন্তাইন্স দে-টে আছে না? ওইদিন যাইতাম আমার বিএফ এর সাথে!
আমরা বলি, বাহ, বুয়ার আবার বিএফ। খালা তো বেশ রসিক মানুষ!
আমি আবার শার্টের কথায় ফিরে আসি। শার্টটা নেড়েচেড়ে বলি, “ভয়াবহ নোংরা রে! আধোয়া শার্টটা বহুদিন পানির তলে যায় নাই! কয়দিন না ধুইয়া শার্টটারে কষ্ট দিছস!”
অসিত কবিমানুষ। ছন্দে ছন্দে সে বলে,
“শার্ট টার কষ্ট যাবে মুছে,
যদি এক সুন্দরী এসে পুছে,
তোমার শার্ট দেব কেচে!”
ফয়সাল বলে, "তোর শার্ট যে ধুবে তাকে আলতোভাবে ধুতে বলিস নাহলে শার্ট ছিড়ে যেতে পারে!"
প্রসূন বলে, "আরে শার্ট ছিঁড়বে না। বরং ঐ মেয়ের হাতের কোমল স্পর্শে শার্টটা আরো মসৃণ হয়ে উঠবে। আমরা বলব, ভাবি শার্টটা ভালভাবে কেচেছেন তো?" অবশ্য কেচে এর ক তে সে ইউজ করছিল খ!
ব্যাপারটা আসলেই এমন মনে হতে লাগল। সামনে ময়লা শার্ট বিছিয়ে কয়েক যুবক বসে আছে ভিক্ষার জন্য । বিশেষ করে অসিতের ভঙ্গি। ফয়সাল বলে, "তুই এক কাজ কর। পরার টিশার্ট টাও ময়লা কর। এরপর মাথায় ধুলা লাগা। তারপর সামনে শার্ট রেখে ভিক্ষা করা শুরু কর।"
প্রসূন যোগ করে, “শার্টের ওপর কিছু ভাংতি টাকাও রাখতে পারিস। মেয়েরা সাইকোলজিক্যালি আট্রাক্ট হবে।” হা হা। ভিক্ষুকের প্রতি আকর্ষণ। ভিক্ষুক বটে। ভালোবাসার ভিক্ষুক।
এরকমভাবে কাছে অনেকেই আসছিল। কিন্তু আমাদের সামনে রাখা শার্টটার সামনে কোন মেয়ে আসছিল না।
অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। সুন্দরী, সুন্দরীশ্রেষ্ঠা আর সুন্দরীতমা। সবার দেখাই মিলছে। দূর থেকে দেখি আমরা। কাছের সুন্দরীর চেয়ে দূরের সুন্দরীদের বেশি রহস্যঘন মনে হয়। কবিগুরু ভুল বলেননি। দূর থেকে হিজাব পরা এক মেয়েকে লাগছিল অবিকল শেহরীন ম্যামের মত। আমাদের ক্লাসের সুন্দরী ম্যাম। আমজনতার ক্রাশ। কিন্তু কাছে আসতেই ভ্রম ভাঙে!
হঠাৎ একটি সুন্দরী মেয়েকে আমাদের দিকে আসতে দেখা যায়। তার পাশে সমবয়সী একজন। বান্ধবী হয়তোবা। আমরা উত্তেজনা বোধ করি। কিছু একটা কি হবে নাকি হবে না। মেয়েটা কথা বলবে নাকি হেটে চলে যাবে!
অসিত অজান্তে বিড়বিড় করে বলে, " দিয়া যাও দিয়া যাও। দুইটা ভিক্ষা দিয়া যাও।” কি-টা ভিক্ষা চাইবে বুঝা যায় না অবশ্য।
কিন্তু মেয়েটি কাছাকাছি এসেও এক জায়গায় বসে পড়ে। আমাদের সামনে দিয়ে হেটে যায় না। আমরা দেখি, সুন্দরী মেয়েটির হাতে ফুল নেই। কিন্তু পাশেরজনের হাতে ফুল। তারা কথা বলছে আর হাসছে।
আমাদের উত্তেজনা প্রশমিত। আমি বলি, "ধুর কখন থেকে এই নাটক চলতেছে। চল উঠে পড়ি। ক্লাস আছে একটু পর। "
অসিত বলে, ‘নাহ এর চেয়েও বড় নাটক এখন হতে দেখবি।’ তাকে অবিচল দেখায়।
মানে??
‘মানে ওই পাশের মেয়েটার হাতে যে ফুল আছে তার থেকে ফুল নিব। এরপর ফুলটা সুন্দরী মেয়েটাকে দেব।’
ফুল দেওয়া আর এমন কি। আমরাও দিতে পারি। ফুল দিয়ে হাসিমুখে বলব, আপু আপনাকে বাসন্তী শুভেচ্ছা। ভ্যালেন্টাইন ডের শুভেচ্ছা বললে আবার রেগে যায় কিনা! আমরা জানাই, এটা বেশ সহজ কাজ।
অসিত বলে, ‘আচ্ছা তাহলে আমি ঐ মেয়েটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলব। অপরিচিত মেয়ে হলেও কথা বলব পাক্কা এক-দেড় মিনিট।”
হুম, কথা চালিয়ে যাওয়া অপেক্ষাকৃত কঠিন কাজ। আমরা রাজি হলাম। কর তুই এই কাজ।
অসিত আবার শর্ত দেয়। এই কাজ শর্ত ছাড়া করবে নিজে থেকেই, এটা আশাও করি নি। সে বলে, যদি মেয়েটা কথা বলে, তাহলে ময়লা শার্টটা আমি স্যাক্রিফাইস করব। তোরা এই শার্ট নিয়ে যাবি। যদি কথা না বলে, তাহলে আর কি! শার্টটা আমার কাছেই থাকল। আবার নাহয় এমন করে আরেক মেয়ের অপেক্ষায় থাকব।
কিন্তু ময়লা শার্ট নিয়া আমরা কি করব!
আচ্ছা তাহলে তোরা যেকোন একজন গিয়েই কথা বল। যদি কথা চালিয়ে যেতে পারিস তাহলে উপহার দেব। আমার ময়লা শার্টটা!
কথা বলতে বলতেই ঘটনা বেশিদূর আগায় না। অসিত প্রস্তুতি নেবার কিছু পরেই ওই দুই মেয়ের কাছে দুইটা ছেলে এসে উপস্থিত। আমরা দুঃখিত বোধ করি কিন্তু অবাক হই না। আজকের ভ্যালেন্টাইনস ডে তে ঐ দুই সুন্দরীর একলা একলা থাকাটাই বরং বিস্ময়কর।
আমরা উঠে পড়ি। অনেক আড্ডা হয়েছে আজ। চার বন্ধু এখন যাব ক্লাসে। ময়লা শার্টটা অসিতের হাতেই পড়ে থাকে। হাসি ঠাট্টায় পার হয় সময়।


ক্লাস শেষ করবার পরের কথা।
বাস ধরব বলে দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশে বসার জায়গাও এখন নেই। সবই যুগলের দখলে। একটু পরেই দেখি এক বান্ধবীকে। আমার এই বান্ধবী পড়ে পলিটিকাল সায়েন্সে। আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ে সম্পূর্ণ অন্য বিষয়। দূরসম্পর্ক এর কাজিনের মতই দূরসম্পর্কের বান্ধবী। সেই ফার্স্ট ইয়ারে আরেক বন্ধুর বন্ধু হিসেবে তার সাথে পরিচয়। বলা যায়, অনেকদিন পর মৌরিকে দেখলাম। আজকে তো ভালই মেকআপ করেছে সে। যথারীতি ভালোবাসা দিবসের লাল শাড়ি। অপূর্ব লাগছে তাকে।
মৌরি প্রত্যেকবারই আমাকে আগে দেখে। তারপর ডাক দিয়ে কথা বলে। ডাকসুতে খাবার সময় দুতিনবার এমন হয়েছিল। এবার আমি ঠিক করলাম, আমিই নিজ থেকে বলব কথা। শেষ পর্যন্ত এই বান্ধবীর সাথে তার বলার আগেই আমি তার সাথে সেধে কথা বলব। ভাবতে ভালই লাগছিল।
আরে, আমাকে দেখেও দেখি চলে যাচ্ছে আজ সে। ডাক দিলাম, "মৌরি, কেমন আছ?" তাকে ব্যস্ত দেখা গেল কথা বলায়। তার পাশে এক ছেলে। তার সাথেই মৌরির আলাপ চলছে। ঈ আমি এতক্ষণে খেয়াল করলাম। ছেলেটা ইশারা করে মৌরিকে বলল, এরপর সে আমাকে দেখতে পেল। আমি হেসে বললাম, "কেমন আছ মৌরি?” একটু বোকা হয়ে গেল সে। আমাকে বলল, ‘কে আপনি। চিনতে পারছি না তো!’
এবার আমি বোকা হলাম। এ তাহলে মৌরি নয়! অবিকল যে তার মত চেহারা। স্পর্শিয়ার মত মৌরিরও এলোমেলো দাঁতের সারি। সেই একই ছোটখাট গড়ন। আমি বললাম, “তুমি মৌরি নও? পলিটিক্যাল সায়েন্সে পড় যে?”
“নাহ। আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে কোথাও।”
“সরি, আমারই ভুল হয়েছে। মাপ করবেন।’’
একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কথা বলে বসলাম। বোকার মত না চিনে, হুট করে। মনে পড়ল সকালের কথা। আজ একটা অচেনা মেয়ের সাথে কথা বললে অসিতের শার্ট দেবার কথা।
সেই সকালের আন্তরিক প্রেমনিবেদনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। ময়লা শার্ট।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: ময়লা শার্ট!!

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: শার্ট আর প্রেম।

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: গল্পে ভাললাগা ও ++

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০

সপ্রসন্ন বলেছেন: ধন্যবাদ বিজন রয় দাদা। আপনার ভাললাগা আমার মাঝেও সংক্রমিত হল। 
ভাল থাকবেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.