নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্রসন্ন

সপ্রসন্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালি লোকাচারের কথা

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৫

কিছুদিন আগের কথা। ভাইয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে পিঠা এসেছে। নারকেলের পুর দেয়া পিঠা, ডালের বানানো নকশি পিঠা, তেলে ভাজা পিঠা- এরকম অনেক পিঠাই ছিল। কিন্তু প্রতি বাক্সেই পিঠার সাথে আরো যেগুলো ছিল তা দেখলে অবাক হতে হয়। বস্তুত পিঠার সাথে ঐসব জিনিসের উপস্থিতি দেখে অনেক শহুরে মানুষজন ভেবে বসতে পারে যত্তসব গেরাইম্যা কাজকারবার!


ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সেসব পিঠার সাথে ছিল শুকনো মরিচ আর রসুন।

তাহলে পিঠার মত মিষ্টি জিনিসের সাথে ঝালওয়ালা মরিচ বা ঝাঁজ ওয়ালা রসুনের কি সম্পর্ক! এক বন্ধু নিতান্তই সহজ সরল। তাকে জানাতেই সে বলল, রসুন মরিচ খাওয়ার জন্য দিছে কারণ এগুলা খাবার জিনিসই তো। উত্তম কথা বটে! আরেক বন্ধু হল রসিক তুমি কোনজনা কিসিমের! সে বলে, পিঠা অনেক মিষ্টি তাই তা কমানোর ব্যবস্থা হিসেবে মরিচের আগমন। কিন্তু রসুনের ব্যাপারখানা কি! অন্য একজন বন্ধু তা বোঝাতে একটু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এল। সে বলে, পিঁপড়ার চলাচল রোধ বা পিঠা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য রসুন দেয়া হয়েছে।

বস্তুত, গ্রামে এখনো চালু আছে অনেক লোকাচার বা Folk Belief, Ritual. পিঠার সাথে এই রসুন মরিচ দেয়া সেই লোকাচারেরই অংশ। পিঠার সাথে যাতে বাতাস না লাগে সেজন্য এই ব্যবস্থা। বাতাস লাগা মানে কি? এর মানে হচ্ছে কোন খারাপ জ্বিন বা ভূতদের হঠাৎ আক্রমণ। গ্রাম্য আচার অনুসারে, রসুনের গন্ধ হল Evil Spirit বা শয়তান জ্বিন ভূত তাড়ানোর উপায়। আর মরিচের রহস্য হচ্ছে, জ্বিনেরা মিষ্টি পছন্দ করে তাই পাল্টা ব্যবস্থা হল মরিচ দেয়া। যাতে পিঠার সাথে কোন বদজ্বিন না আসে।

লোকাচার ব্যাপারগুলো সাধারণত সিরিয়াস টাইপ হয়। এতে মজা বা ফান ব্যাপারটা কমই থাকে। কেননা এগুলো মানুষের অনেক দিনের মানসিক বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। এসকল মানসিক বিশ্বাসই মূলত যাবতীয় লোকাচার প্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর সকল লোকাচার বা লোকসংস্কারের মূলে মানুষের অমঙ্গল চিন্তা প্রসূত ভাবনাই বেশি কাজ করে।
সম্প্রতি আমরা সবাই বাংলা নতুন বছরের আনন্দ উপভোগ করেছি। এই নববর্ষ ঘিরেও আমরা দেখি নানা রকম লোকাচার। মূলত নববর্ষ হল নতুনের দিনের আবাহন। অনাগত নতুন দিনগুলো যাতে কল্যাণকর হয় সে কামনা সকল মানুষেরই। এরকম কামনা থেকেই মানুষ এই নববর্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন লোকাচার গড়ে তুলেছে। যদিও এখনকার শহুরে জীবনযাত্রায় সব লোকাচার পান্তা ইলিশে সীমাবদ্ধ। কিন্তু গ্রামে গেলে এখনো চোখে পড়ে অনেক লোকাচার। তারই কয়েকটা।

গ্রামে বৈশাখের প্রথমদিন খইভাজা করা হয়। এরপর সেই ভাজা খই ছড়িয়ে দেয়া হয় সারা ঘরে ঘরে। প্রচলিত ধারণা অনুসারে খই হল প্রাচুর্যতার প্রতীক। আজকের দিনের মত সারা ঘরে যেমন খইয়ের অভাব নেই তেমনি আগামী সারা বছর কোন রকম খাদ্যের অভাব থাকবে না।
কিংবা বছরের প্রথমদিন ছোট বাচ্চাদের গোসল করানো হয় নিমপাতা দিয়ে। নিমপাতা দিয়ে গোসল করলে শরীর রোগজীবাণুমুক্ত থাকে। এটা অবশ্য বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে নিমপাতা ভেজানো পানিতে গোসল উপকারি।
আবার কোন কোন ঘরে শুধুমাত্র সবজির ব্যঞ্জন রাঁধা হয়। সাথে থাকে তিতা করলা বা চিরতার রসও। মানুষের ধারণা, বছরের প্রথম খাওয়া উচিত নিরামিষ এবং তিতাযুক্ত। কারণ এতে খাদ্য হজম সহজ হয় এবং তা একই সাথে স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল।

বস্তুত প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মধ্যে এরকম বিভিন্ন সংস্কার ছিল। এসবেরই সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হাজার বছর আগের অস্ট্রিক, ভেড্ডিড ইত্যাদি আদিম নৃগোষ্ঠীদের আচরণ থেকে আগত। “সৃষ্টির যুগযুগান্তরের ইতিহাসের বিপুল ধারা আজ মানুষের মধ্যে এসে মিলেছে। মানুষের নিজের মনুষ্যত্যের মধ্যে জড়ের ইতিহাস, জীবের ইতিহাস, পশুর ইতিহাস সমস্তই একক বহন করছে। প্রকৃতির লক্ষ কোটি বছরের সংস্কারের ভার তাকে আশ্রয় করেছে।” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই বাণী মানব লোকাচারের অন্তর্গত বাঙালি লোকাচারের জন্যও চিরন্তন।
এখনো অনেক শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও এসব আচরণ অজান্তেই বিদ্যমান রয়েছে। এক বিবাহ নিয়েই বাঙালি সমাজে আছে নানা রকম লোকাচার। জসীম উদদিনের ‘বোবা কাহিনি’ উপন্যাসেও এর পরিচয় পাওয়া যায়। ফরিদপুরের পটভূমিতে কয়েক দশক আগের লেখায় আমরা পাইঃ ‘নওশা’ বা বর সেজে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়ি যাওয়া, উপহার হিসেবে মিষ্টির সাথে পানসুপারির আবশ্যিক উপস্থিতি, কনের বাড়িতে গেট তৈরি করে ‘দারোয়ানীধরা’ আর বকশিস দিলে গেট ছেড়ে দেয়া- এসব আমাদের জীবনে এখনো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যার সবই বাঙালি লোকাচারের অন্তর্ভুক্ত।

“সকল কালের সকল দেশের
সকল মানুষ আসি
এক মোহনায় দাড়াইয়া শোন
এক মিলনের বাঁশি।”

বিপুলা পৃথিবীর এই মায়াময় অংশের ছায়ায় বেড়ে ওঠা কোমল বাঙালিরা তাদের চিরায়ত লোকাচার দিয়ে মানুষের প্রাচীন সেই বাঁশির মনোরম সুরই বাজিয়ে চলেছে হাজার বছর ধরে ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

বিজন রয় বলেছেন: “সকল কালের সকল দেশের
সকল মানুষ আসি
এক মোহনায় দাড়াইয়া শোন
এক মিলনের বাঁশি।”

বাংলাদেশে আর সম্ভব না।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬

সপ্রসন্ন বলেছেন: এখনকার অবস্থা দেখে তাই মনে হয় দাদা :( তবে আমি সুন্দরের অপেক্ষায় আছি।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: গ্রামীন লোকাচারের অনেককিছুই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত, তবে সবকিছুর ঊর্ধে থাকে পরস্পরের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

সপ্রসন্ন বলেছেন: ভাল বলেছেন ভাই হাসান। :) একে অন্যের প্রতি মায়ামমতাই শহুরে একাকী সমাজ থেকে গ্রামীণ একান্নবর্তী সমাজকে আলাদা করেছে।

৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভাবীও গ্রাম থেকে নিশ্চয়, দেখেন উনি কি কি করেন!

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:০১

সপ্রসন্ন বলেছেন: না উনি খুশি আছেন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.