নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংক্রান্তির সলতে। লেখক সম্পাদক ওয়েব প্রকাশক

শ্রীশুভ্র

ফ্রীল্যান্স লেখক

শ্রীশুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রায়শ্চিত্ত

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩



ট্রেনটা আবার ধীরে ধীরে স্পীড কমালো! সামনে কোনো স্টেশন আসছে বোধহয়! নাতাশা জাহিরের কথাগুলোই ভাবছিল! তাকিয়ে দেখল জাহিরের দৃষ্টি জানলার বাইরে! লাইনের দুপাশে ঘন সবুজের সারি! মাঝেমাঝে ফাঁক দিয়ে দুচারটে কুঁড়েঘর উকিঁ দিয়ে যাচ্ছে! একটু পরেই গাছের সারি পাতলা হয়ে এল! বেশকিছু দোকানপাট বাড়িঘর! বোঝা যাচ্ছে সামনেই স্টেশন! ওরা বসে ছিল মুখোমুখি জানলার পাশে! নাতাশা জাহিরের দিকে দৃষ্টি ফেরালো! সুদর্শন ছিপ ছিপে লম্বা একহারা নির্মেদ চেহারা! বয়স ওরই মত হয়ত! কথবার্ত্তা সপ্রতিভ! কিন্তু দুচোখের গভীরে যেন অন্তরভেদী দৃষ্টি! সেটাই নাতাশাকে আকর্ষণ করল খুব! জাহির ঘাড় ফেরাতেই চোখাচোখি হল!
জাহির বুঝল নাতাশা ওর কথাই ভাবছিল!

জাহির তাকাতেই নাতাশা বলে উঠল, -তারপর? শেষটা..!
জাহিরের চোখে সামান্য হাসির ঝিলিক নাতাশার দৃষ্টি এড়ায় না! সেখানে বিষাদের একটা সূক্ষ্ম রূপটান লেগে আছে যেন! আশেপাশে আরও কজন যাত্রীরও উৎসুক দৃষ্টি জাহিরের উপর! ফলে জাহিরকেও ফিরতে হল বছর বারো আগের সেই সন্ধ্যায়!

-নীলেশদের বাড়ি থেকে রমেনবাবু যখন বেরোলেন, শীতের সন্ধ্যায় তখনই বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে! রমেনবাবুর মানবিক আচরণে নীলেশের বাবা মা পুত্রশোকের মাঝেও অভিভূত হয়েছিলেন খুব! তাঁদেরই কোনো এক আত্মীয় রমেনবাবুকে স্টেশন অব্দি এগিয়ে দিয়ে যান!

ট্রেনটা থামায় যাত্রীদের ওঠানামায় একটু সময় নেয় জাহির! নাতাশার দিকে চেয়ে সামান্য হাসে! এবার পাশের যাত্রীটি বললেন, তারপর?

-মোটামুটি ভাবে রমেনবাবুকে সেই শেষ দেখা যায়!

চমকে ওঠে নাতাশা! কি হল রমেনবাবুর! জাহির দেখতে পেল, কাছাকাছি আরও কজনের উৎসুক দৃষ্টি জাহিরের উপর!

-ঠিক তাই, আবার বলতে শুরু করে জাহির; ওনাকে জীবন্ত অবস্থায় আর বোধহয় কেউই দেখেনি!

অনেকের মুখেই বিস্ময়সূচক শব্দ! নাতাশা শুধু অপলক চোখে জাহিরের দিকে তাকিয়ে! ট্রেন আবার ফুল স্পীডে ছুঠছে তখন!

-বুঝতেই পারছেন, জাহির নাতাশাকেই উদ্দেশ্য করে বলে! শীতের সন্ধ্যা! ছোট মফস্বল শহর! স্টেশনের আশেপাশে কিছু লোক চলাচল, তারপরেই লোকালয় শেষ! লাইনের দুধারে গাছের সারি! দিগন্ত বিস্তৃত শষ্যক্ষেতের বুকচিরে! তাই ওনাকে আর না দেখতে পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক! বিশেষ করে ডেডবডিটা যেখানে পাওয়া যায়, সেটা স্টেশন থেকে বেশ খানিকটা দূরে, ডাউনলাইনের উপর!

-রেললাইনে? নাতাশার গলা দিয়ে অদ্ভূত শব্দ বেরল একটা!

-হ্যাঁ মাথা আর দেহ - দুখণ্ড!

-আশ্চর্য! ভদ্রলোক সুইসাইড করলেন শেষে? নাতাশার ডানদিকে বসা টাকমাথা বয়স্ক ভদ্রলোক বলে উঠলেন!

-হ্যাঁ! আর আরও আশ্চর্য্য কি জানেন, জাহির বলে চলে, ঠিক সেই ছটা বাহান্নর ডাউন তিস্তামেলের চাকার তলায়, ঠিক এক সপ্তাহ আগে যেখানে নীলেশ আত্মহত্যা করেছিল!

শীতের হেলে পড়া দুপুর! ফুলস্পীডে ছুটে চলা ট্রেনের শব্দ ছাপিয়ে একটা অদ্ভূত স্তম্ভিত নীরবতা গ্রাস করল শ্রোতাদের!

জাহিরের কথায় সম্বিত ফেরে সকলের! -এক সপ্তাহ আগে যে রমেনবাবু ড্রাইভার হয়েও বাঁচাতে পারেননি নীলেশকে!

-সেই ডাউন তিস্তামেলের ড্রাইভার রমেনবাবুও সেই ডাউন লাইনেই নিজেকে শেষ করলেন!

কামরার অন্য প্রান্তের জানলার ধারে বসা মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা ‘হায় হায়’ করে উঠলেন! ততক্ষণে অনেকেই উৎকর্ণ হয়ে জাহিরের গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন! নাতাশার অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই! নাতাশা রমেনবাবুর কথাই ভাবছিল! মানুষ এতটাও সংবেদনশীল হয়? রেল লাইনে আত্মহত্যা করতে আসা একটি ছেলেকে ইঞ্জিনের ব্রেক কষে বাঁচাতে না পারার যন্ত্রণা কতটা তীব্র হলে মানুষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়! নিতে পারে!

-না না, এ হয় না! মাথা নাড়তে থাকেন কোট প্যান্ট পড়া কেতাদুরস্ত অন্য এক যাত্রী! ভদ্রলোকের নিশ্চয়ই মাথার গণ্ডগোল ছিল!

জাহির ভদ্রলোককে নিরস্ত করে, -না তা নয়!

জাহিরের ঠিক বাঁপাশে বসা শীর্ণকায় ছেলেটি এতক্ষণ চুপচাপ ছিল, হয়ত কম কথার মানুষ! কিন্তু সেও এবার জাহিরকে উদ্দেশ্য বলে উঠল, -আপনি তাহলে এটাই বিশ্বাস করছেন যে, একটি আত্মহত্যা না আটকাতে পারার অনুশোচনায়, একজন নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিল?

কেতাদুরস্ত ভদ্রলোক সামান্য হেসে আবারও প্রতিবাদ করলেন! -রেললাইনে আত্মহত্যা ঠেকানো ট্রেনের ড্রাইভারের কাজ নয়!

-তাছাড়া স্পীডের মুখে হঠাৎ ব্রেক কষলে ট্রেন একসিডেন্ট অবধারিত!
পাশের আর এক যাত্রী তাঁর মত জানিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন জাহিরের দিকেই!

-ট্রেন তখন সত্তরের উপরে ছুটছিল, শান্ত কণ্ঠে বলল জাহির!

-তবেই দেখুন এটা আত্মহত্যা নয় হয়ত! যোগ করলেন টাক মাথার মানুষটি!

ওনার মন্তব্যে একটু চাপা হাসিতে বলল জাহির, -আপনিই কিন্তু প্রথমে আত্মহত্যার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন!

স্বীকার করলেন ভদ্রলোক!
-কিন্তু কার্যকারণটা বাস্তব জীবনের সূত্রে মেলাতে পারছি না যে!

কিছুক্ষণ যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল নাতাশা! ভদ্রলোকের শেষ কথাটা কানে যেতেই সম্বিত ফিরতে একই কথা মনে হল ওরও।

পরপর দৃশ্য গেল যেন ভেসে উঠল! নীলেশকে বাঁচাতে না পারাটা রমেন বাবু কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি!
কিন্তু তবু একটি অচেনা ছেলের জন্যে... কোথায় যেন একটা খটকা রয়েই যাচ্ছে! সেটাই ভাবছিল নাতাশা!

-সেই, মানুষের মন যে কত বিচিত্র...নতুন আসা এক যাত্রীর কথায় এক বাক্যে সায় দিয়ে ওঠেন সকলেই!

নাতাশাও সায় দিল মাথা নেড়ে!


উল্টোদিকের জানলার ধারে বসা সেই ভদ্রমহিলার স্বামী বলে উঠলেন, না এক্ষেত্রে
আত্মহত্যা অসম্ভবও নয় হয়ত, যদি ছেলেটিকে ভদ্রলোক আগে থেকে চিনতেন!

-তা কি করে সম্ভব? প্রতিবাদ করেন বয়স্ক টাকমাথা ভদ্রলোক! রমেনবাবু তো খবরের কাগজেই নীলেশের ছবি দেখেন প্রথম! সেখানই সব কথা ডিটেলেসে জানতে পারেন ....

ভদ্রলোকের কথার মাঝখানে জাহির হঠাৎ বলে ওঠে,
-নীলেশ রমেনবাবুর অচেনাও নয়!

এবার অবাক হওয়ার পালা সকলের! নাতাশা দুচোখ বিস্ময় নিয়ে জাহিরকে লক্ষ্য করে!

-মানে? মুখ খোলে শীর্ণকায় ছেলেটি!

সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে জাহির বলে, -আপনারা ভুলে যাচ্ছেন, নীলেশের সুইসাইড নোটের কথাটা!
নাতাশা যেন হঠাৎ একটা তীব্র ঝাঁকুনি খেয়ে ওঠে!

নাতাশার পাশে বসা টাকমাথা বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, -কেন ভুলব কেন? নীলেশের সুইসাইডনোটেই তো লেখাছিল, বাবার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চল্লাম!

জাহির বলে, -ঠিক!

আগের স্টেশনে ওঠা নতুন একজন যাত্রী বিস্মিত হন, - কিন্তু নীলেশের বাবা কি পাপ করেছিল? আর তার সাথে ডাইন তিস্তামেলের ড্রাইভার রমেনবাবুর আত্মহত্যারই বা কি সম্পর্ক?

নাতাশার পাশে বসা সেই বয়স্ক ভদ্রলোকই উত্তর দেন, - হ্যাঁ আপনি তো প্রথম থেকে শোনেননি বোধহয়! নীলেশ একদিন হঠাৎই ওর মায়ের অনেকদিন আগেকার একটি পুরোনো ডায়েরী দেখতে পায়! যেখানে জানতে পারে এতদিন যাকে বাবা বলে জেনে এসেছে, তিনি ওর নিজের বাবা নন!

-সেকি, নতুন ওঠা অনেকেই প্রায় সমস্বরে বলে ওঠেন!



পশ্চিমের আকাশে সূর্যের রঙ কিছুটা লাল হয়ে এসেছে! ফুলস্পীডে ছুটে চলা ট্রেনের একটানা শব্দ ছাপিয়েও নীলেশের গল্প শ্রোতাদের বিভর করে রেখেছে! নাতাশার চোখের সামনে জাহিরের গল্পের পর্বগুলি একের পর এক ভেসে উঠতে থাকল! মার সেই পুরোনো ডায়েরী থেকেই নীলেশ তার জন্ম ইতিহাস জানতে পারে! নীলেশের মায়ের বিবাহের মাস তিনেক আগের কথা! বিবাহের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেছে ততদিন! দূর্ঘটনাটা ঘটে সেই সময়তেই! ওনার বাপের বাড়ির পাড়ায় একটি মেসে মাসখানেক হল এসে উঠেছে ডাকাবুকো একটি ছেলে! যাতায়াতের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই দেখা হয়! কিন্তু তার চোখের চাহনীতে এমন কিছু ছিল যাতে নীলেশের মা ভয়ে ভয়েই চলাফেরা করতেন! সেদিন কোনো এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন!

তখন সন্ধ্যা অনেকটাই গভীর! ফিরতি পথে ডিস্ট্রিক্ট স্কুলের পাশ দিয়ে শর্টকাটে আসার পথেই ছেলেটি পথ আটকায়! জায়গাটা খুবই নির্জন! আর সেই সুযোগটাই নেয় ছেলেটি! ভয়ে আতঙ্কে নীলেশের মা এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েন যে ন্যূনতম প্রতিরোধও করতে পারেননি!

গাড়ির ঝাঁকুনিতে চমক ভাঙ্গে নাতাশার! আবার বোধহয় সামনে কোনো স্টেশন আসছে, গাড়ি ধীরে ধীরে স্পীড কমাচ্ছে!

কামরার ভিতরে সবাই তখনো জাহিরের মুখে নীলেশের গল্প শুনছে নিবিষ্ট মনে!

একজন জিজ্ঞাসা করলেন! -লোক জানাজানি হয়নি?

-না! জাহিরের হয়ে উত্তর দিলেন নাতাশারই পাশে বসে ভদ্রলোক! যিনি প্রথম থেকেই ওদের কথায় কান পেতে ছিলেন; -নীলেশের মা নিজেই বাড়ি ফেরেন! কোনোরকমে!

কোটপ্যান্ট পড়া কেতাদুরস্ত ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, -থানা পুলিশ?

-না সেসব কিছুই হয়নি, কারণ তো বুঝতেই পারছেন! জাহিরই উত্তর দিল!

-শুধু হবু জামাইকেই মেয়ের বাড়ি থেকে গোটা ঘটনাটা জানানো হয়! টাকমাথা বয়স্ক ভদ্রলোক জাহিরের হয়ে বললেন!

অনেকেই বেশ একটু অবাক হয়ে উঠলেন! বলেন কি?

এবার জাহির নিজেই বলতে শুরু করে, -হ্যাঁ মেয়ের বাড়ির লোকজনও যেমন সৎ, হবু বরও তেমনি সজ্জন! তিনি বিষয়টিকে নিছকই দূর্ঘটনা বলে মেনে নিয়ে ওঁদের বলেন, আর কাউকেই না জানাতে! এবং সেটাই হয়! নীলেশের মৃত্যুর পরই সব জানাজানি হয়! খবরের কাগজেই বিস্তারিত বেরোয়!

-আর সেই শয়তানটা? হঠাৎই তীব্র ক্ষোভে জানতে চান উল্টো দিকের জানলার ধারে বসা ভদ্রমহিলা!

-তাকে আর পরের দিন থেকে কোনোদিনই দেখা যায়নি! দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল নাতাশা নিজে!

অনেকক্ষণ কারুর মুখেই কোনো কথা নেই! ইতিমধ্যে নতুন স্টেশন ছেড়ে গাড়ি আবার স্পীড তুলেছে! পশ্চিমে আকাশ লাল করে সূর্য ডুবছে, লাইনের দুপাশ দিয়ে সবুজ আবার ঘিরে ধরছে আলোতে ছায়াতে!

-আচ্ছা, নীলেশ ডায়েরীর কথা ওর মাকে জানিয়েছিল?
এক যাত্রীর কথায় জাহিরই উত্তর দিল, -হ্যাঁ, নীলেশ নিজেই তখন ওঁদের কাছে সবিস্তারে সব জানতে চায়!

-ওরা বললেন?

-উপায় কি?

-তারপর?

-তারপরের দিনই তো !

উল্টোদিকের জানলার ধারে বসা ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন, -ইস! ছেলেটি ওর নিজের মায়ের কথা একবারও ভাবল না?

টাকমাথা মাথা নাড়লেন, -কতবড়ো শক! মাত্র বাইশ বছরের ছেলে!



বেশ কিচ্ছুক্ষণ কারুর মুখেই কোনো কথা নেই! বাইরের আলো অনেকটাই কমে এসেছে! কামরার ভিতরে আলো জ্বলে উঠেছে ততক্ষণে! ট্রেনের চাকার শব্দে নীলেশের মৃত্যুর দৃশ্যটা নাতাশার কল্পনায় ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে উঠছে ! একটা অব্যক্ত কষ্ট মনের মধ্যে বাসা বাঁধছে! জাহিরের দৃষ্টি তখন জানলার বাইরে! আলো অন্ধকারে সন্ধ্যার আকাশে জাহিরের নিমগ্ন দৃষ্টিতে কি একটা আবছা ছবি নাতাশা যেন ধরি ধরি করেও ধরতে পারে না! যেন কত কাছে অথচ কত দূরে! সামান্য ঘেমে ওঠে ! টাক মাথা বয়স্ক ভদ্রলোক তখনো মাথা নাড়তে থাকেন ! এই বয়সটাই এমন ইমোশনাল ! এতবড় শক হজম করা শক্ত !

-ঠিক বলেছেন! পাশের থেকে এক যাত্রী সমর্থন করেন ওনাকে! কিন্তু রমেনবাবু ওনার কাণ্ডটা?

-ঠিক বলেছেন! নীলেশের মৃত্যু না হয় বোঝা গেল! কিন্তু রমেনবাবু যিনি কিনা একজন অভিজ্ঞ ড্রাইভার তার আত্মহননের কারণটা এখানে স্পষ্ট নয়! এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে সামান্য দম নেন, কোটপ্যান্ট পড়া কেতাদুরস্ত ভদ্রলোক!

- তাও আবার সেই ডাউন তিস্তামেলের তলাতেই? যোগ করে জাহিরের পাশ থেকে শীর্ণকায় ছেলেটি!

ওপাশের জানলার ধারে বসা ভদ্রমহিলার স্বামী গলা উচিঁয়ে জাহিরকেই জিজ্ঞাসা করলেন, -আচ্ছা আপনি যে বললেন রমেনবাবু নীলেশকে চিনতেন না, আবার বলছেন অচেনাও নয়! এটাই ঠিক বুঝলাম না!

নাতাশা দেখল, জাহিরের চোখে কিসের একটা ছায়া খেলে গেল হঠাৎ!

জাহির হাসল! মৃদু হাসি ! বলল - বুঝতে পারছেন না ?
নাতাশার সাথে দৃষ্টিবিনিময় হল হঠাৎ !

-রমেনবাবুকে আত্মহত্যা করতে হতো না বুঝলেন! সবার দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে জাহির বলে, কিন্তু নীলেশদের বাড়িতে গিয়ে ড্রয়ইং রুমের শোকেসে রাখা বিয়ের পরপরই তোলা নীলেশের মাবাবার বাঁধানো ফটোটা দেখার পর রমেনবাবুর আর কোনো উপায় থাকে না!

সন্ধ্যার অন্ধকার তখন শ্রোতাদের স্তম্ভিত বিস্ময়ে পুরোপুরি গাঢ় হয়ে উঠেছে, শুধু একজন আপন মনেই বলে ওঠেন, আশ্চর্য্য, নীলেশ তাহলে রমেনবাবুরই সন্তান!

সেই ছটা বাহান্নর ডাউন তিস্তা মেল! সাতদিন আগে পরে!

নাতাশা দেখে জাহির কোনো কথা বলে না! শুধু বাইরের জমাট অন্ধকারে ওর দৃষ্টি মেলে রাখে! ট্রেন তখন দুরন্ত গতিতে অন্ধকারের বুকচিরে ছুটে চলেছে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.