নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন-জীবিকার সন্ধিক্ষণে

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৬

জীবনের জন্য নয়, জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় ব্যাংকের চাকরির পরী দিতে আসা। চাকরির পরীক্ষা দিতে আসলেই বোঝা যায় দেশে বেকারত্বের বাস্তব চিত্র। হাজার-হাজার ছেলে-মেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে শত প্রতিকূলতাকে ঊপেক্ষা করে ছুটে এসেছে পরীক্ষা দিতে। পদ হয়তো দুশো, পরীক্ষার্থী ত্রিশ হাজার; তবুও থেমে নেই জীবিকার প্রয়োজনে ছুটে চলা। আমার মতো অনেকেই হয়তো ব্যাংকের চাকরি পছন্দ করেনা, তবুও সবাই ছুটে এসেছে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে। চুলোয় যাক সৃজনশীলতার বাতাবরণ-পছন্দের কর্মক্ষেত্র। অবস্থা এমন সঙ্গীন যে, যেকোন একটা চাকরি জোটাতে পারলেই হয়তো অনেকগুলো অধরা স্বপ্নকে বাস্তবতার মোড়কে আবদ্ধ করা যাবে...পরিবারের দৈন্য ঘোচানো, বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানো, বোনের আবদার মেটানো, ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ যোগানো...বিয়ে...ছোট্ট একটা সাজানো সংসার, সাধ্য অনুযায়ী মানুষের কল্যাণে ব্রতী হওয়া...আর...।



পরীক্ষা শেষ হতেই পড়িমরি করে ছুটলাম সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের দিকে। ঢাকার চিরচেনা যানজটকে সাথে নিয়ে বিকেল চারটের সময় মাওয়া ফেরিঘাটে এসে হাজির হলাম। লঞ্চের ছাদে বসে আছি আমরা কয়েক বন্ধু। পদ্মার অপরূপ রূপের মাধুরীর বর্ণচ্ছটায় আমরা সবাই শিহরিত। এতদিন বইয়ের চোখ দিয়ে আমার মানসলোকে পদ্মার শ্বাশ্বত প্রতিচিত্র অংকন করেছি নিজের মতো করে এবং তাতে চিত্রকর হিসেবে শ্রমটুকু দান করেছে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘‘পদ্মা নদীর মাঝি’’ কিংবা কবিগুরুর ‘‘সোনার তরী’’। আর আজ নয়ন সম্মুখে আলো-আধাঁরের মায়াবী উপস্থিতিতে সদা বহমান পদ্মার বুকে অবিরত উন্মোচিত হয়ে চলেছে ধ্বংস আর আর সৃষ্টির পরাবাস্তব দৃশ্যকাব্য!



গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা গিরি-শিখর হিমালয়ের বুকে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এসে অবিরত জল বর্ষণ করে চলেছে এই শ্যামল বাংলায়। আর এই একটানা জল বর্ষণ যেন পদ্মার বুকে নব প্রাণ সঞ্চার করেছে। নব প্রাণের ঊচ্ছ্বাসে সে আজ দিশেহারা। মৃদুমন্দ বাতাসের দোলায় চারদিক থেকে ছুটে আসা ছোট-বড় ঢেউয়ের এক বিন্দুতে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘‘ সৃষ্টিশীল পদ্মা’’ ঐক্যের শক্তির জয়গান গেয়ে চলেছে অবিরত। পদ্মার তীর ঘেঁষে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ গাছগুলোর দিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দুই ধরণের দৃশ্যপট চোখের সামনে মায়ঞ্জণ মাখিয়ে ধরা দিতে সদা উন্মুখ...সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ গাছগুলির পদতলে অবাধ জলরাশির সরব উপস্থিতি সগর্বে ঘোষণা করে চলেছে এক অলিখিত মেলবন্ধনের শুভবারতা। আবার দূর থেকে গাছগুলোর ওপর দিকে তাকালে অবলোকন করা যায় মেঘমালার এক ধরণের আপাত সঞ্চারণশীলতা, কিন্তু তার মধ্য থেকেই উন্মোচিত হয়ে চলেছে এক অসাধারণ দৃশ্যকাব্য। তিন থেকে চার রঙের নরম পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ছুটে এসে এক বিন্দুতে মিলিত হচ্ছে আবার পরক্ষণেই একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে... সেখান থেকে কিছুটা দূরে আবার অন্য দৃশ্যের অবতারনা। জলবতী মেঘ তার জলের ভার সইতে না পেরে পদ্মার কাছে যেন জলের ভার বইবার গুরু দায়িত্ব অর্পন করে সে উধাও হয়ে যাচ্ছে। পদ্মার বুকজুড়ে বয়ে চলা পলি মিশ্রিত ঘোলা জলের সাথে ওপর থেকে অঝোরে ঝরে পড়া মেঘের জলের কান্না-হাসির অবাধ উপস্থিতি যে অপরূপ রূপের মাধুরী উন্মোচন করে চলেছে, তা কেবল পদ্মার বুকে আশ্রয় নিয়েই অবলোকন করা সম্ভব। ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসা আলোর দীপ্তিকে সাথে নিয়ে পদ্মার আরেক পাশে চোখ ফেরাতেই মনটা যেন গাড় সবুজের সমারোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। পদ্মার তীর ঘেঁষে প্রকৃতির পরম মমতায় বেড়ে ওঠা সবুজ মখমলের মতো ঘাসের সাথে তীব্র ঢেউয়ের মেলবন্ধন এত কাছ থেকে অবলোকন না করলে অধরাই থেকে যেত শ্যামল বাংলার একান্ত নিজস্ব রূপের বর্ণিল উপস্থিতি।



জেলেগুলোর কি অসীম সাহস! এই প্রমত্ত পদ্মার ঢেউকে বশ মানিয়ে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে ওরা মেতে উঠেছে মাছ ধরার অনাবিল আনন্দে (আনন্দ নাকি পেটের তাড়না-মহাজনের/এনজিওর কিস্তি শোধের কড়া তাগিদ)। আচ্ছা পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে যারা বসতি গড়েছে, এই ভরা বর্ষায় ওদের কি হবে? কি আর হবে-ওরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতেই যেন জন্ম নিয়েছে। ওদের দেখার কেউ নেই। ওই যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এই অঁজ পাড়াগায়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। সত্যিই এদের ঈশ্বর অনেকটাই কৃপণ। তাঁর হাতে নাকি অসীম ক্ষমতা কিন্তু এই অসহায় মানুষগুলোকে কৃপা করতে গেলেই তাঁর অসীম হাতে কাঁপুনি ধরে যায়।



এরাও অবশ্য কম যায়না, পদ্মার বুকে জল জেড়ে চলেছে, বসতবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে, তার পরও দেখলাম বিয়ের বাদ্য বাজছে। দুঃখের মাঝে সুখের বসতি। আজ রাতে জল আরও বেড়ে গেলে হয়তো ঐ আশ্রয় কেন্দ্রেই সমবেত সকলের মাঝে একটু আড়াল খুঁজে নিয়ে নবদম্পতি ভাগাভাগি করে নেবে নব পরিনয়ের নব আনন্দটুকু একটু অন্যভাবে। আর এভাবেই হয়তো একদিন এরা প্রকৃতিকে জয় করে ঘরে তুলবে সোনালী দিনের সোনালী ফসল। গড়ে তুলবে নব সভ্যতা নব আঙ্গিকে; সেখানে থাকবেনা কোন পঙ্কিলতা, ইট-কাঠের দম বন্ধ করা পরিবেশ আর স্বার্থের অবিরাম দ্বন্দ্ব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.