নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেসরকারি স্কুল-কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাপা আর্তনাদ

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৪

আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত উক্তি হচ্ছে “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন দেশ গড়ার কারিগর”। কথাটি শুনতে খুব ভালোই লাগে। বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুল-কলেজ একটি বড় ভূমিকা পালন করে। মোটা দাগে ৯০ ভাগের অধিক শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুল-কলেজে অধ্যয়ন করে। এবং কয়েক লক্ষ্ শিক্ষক এখানে পাঠদানে রত আছেন। এই শিক্ষকদের বেতন ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে আসে কিন্তু সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সাথে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য অনেক বেশি। যা হোক আমি যে জায়গাটিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাচ্ছি সেটি হলো অবসর পরবর্তী সময়ে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের দুঃখ-গাঁথা। একজন শিক্ষক সারা জীবন ধরে তিল তিল করে তার অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। আর এক পর্যায়ে তার অবসরের সময় এগিয়ে আসে। তো একজন বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক যখন অবসরে যান তখন তাকে নির্মম বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তাদের নেই কোনো এলপিআর সিস্টেম, পেনশন সিস্টেম। ফলে একজন শিক্ষক যখন অবসরে যান তখন অবসরের পরের মাস থেকে তার আর কোনো আয়ের উৎস থাকে না। বেতন বন্ধ, অবসরের (এককালীন)টাকা পাওয়ার আশায় দিন গুনতে থাকেন। কিন্তু সেই অপেক্ষার অবসান সহজে হতে চায় না। উনারা দুই কিস্তিতে অবসরের টাকা পান। একটা হলো অবসরের ২ বছর পর চার ভাগের এক ভাগ টাকা পান, আর মোটামুটি চার বছর পর বাকি অংশ। তো এবার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আমার গ্রামের বেসরকারি হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত বাংলা স্যারের করুণ দুর্দশা দেখে আমার চোখের জল আটকাতে পারিনি। স্যার আমাদেরকে ক্লাসে কি সুন্দর করে বাংলা গল্প-কবিতাগুলো পড়াতেন। তাঁর ঘরে অভাব লেগে ছিল কিন্তু তাঁর মুখটা কখনো ম্লান হতে দেখিনি। সারাক্ষণ হাসি-হাসি মুখ নিয়ে খুব মজা করে আমাদেরকে পড়াতেন। কিন্তু এবার গিয়ে দেখি তার সেই হাসিমুখে রাজ্যের হতাশা, অভাবের চিহ্ন তার চেখে-মুখে, বেশ-ভূষায়।উনি আজ প্রায় দুই বছর হলো অবসরে গেছেন কিন্তু এখনও একটি টাকাও পাননি। উনার দুই ছেলে। বড় ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর ছোট ছেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ছে। উনার সামান্য জমিতে যে আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে দুই ছেলের কাছে টাকা পাঠানোর পর হাতে যা অবশ্ষ্টি থাকে তা দিয়ে দুই জনের সংসারে কোনো মতে দুটো ডাল ভাত খেতে পারেন। স্যারের পরনের কাপড় দেখে বুঝেছি দীনতা কাকে বলে! উনার কাপড়ের অবস্থা দেখে আমি আর উনার কাছে ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি।

দেশের পাবলিক পরীক্ষার পর টিভি, পত্রিকা খুললেই দেখি মাননীয় কর্তাব্যক্তিরা বলছেন দেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে এ প্লাস, গোল্ডেন এ প্লাস পাচ্ছে আর খুশিতে সবার চোখে-মুখে ঝিলিক দিচ্ছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বলছেন শিক্ষার মান উন্নয়ন ঘটছে আর আগামীতে আরও ঘটবে। তো একজন শিক্ষক যদি অবসরের পর তাঁর সামান্য আব্রুটুকু ঢাকতে হিমসিম খান, তবে উনি কিভাবে তার অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করতে উৎসাহী হবেন? আর কোন আশায় নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে আমার জানা নেই। সত্যি আজব এক দেশ এই বাংলাদেশ। এই দেশে একজন মাত্র দুর্বত্ত এসে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেওয়ার পরও তার তেমন কিছু হয় না আর ৩২ হাজার অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক তাদের ন্যায্য পাওনা না পেয়ে ( মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা হলেই সমস্যার সমাধান হয়) ছেড়া বস্ত্র পরিধান করে শেষ বয়সে তাদের আব্রু ঢাকার নিরন্তর চেষ্টা করতে করতে পরপারে পাড়ি দেওয়ার দিন গুনতে থাকেন…

অথচ আমাদের দেশে ঘটা করে আড়াই লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। এ্ং বছরের শেষভাগে দেখা যায় এডপির টাকা খরচ করা যাচ্ছেনা। আবার যা খরচ করা হয় তার একটা বড় অংশ দুবৃত্তদের পকেটস্থ হয়। বিশাল বড় এডিপির জন্য লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন অথচ অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ শিক্ষকদের জন্য মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দিতে গেলে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর লক্ষ্ণীর ভান্ডারে টান ধরে যায়। সত্যি সেলুকাস বিচিত্র এই দেশ!!!!!!!! আমার সেই স্যারের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো সৎ সাহস আমার নেই…আমার সেই প্রিয় স্যারর ম্লান মুখ সত্যি আমাকে অপরাধী করে দেয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.