নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐশী’র ঘটনা: বর্তমান বাস্তবতা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৮

যাযাবর বলেছিলেন, ‘বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’। আজ এই একুশ শতকের ঊষালগ্নে আমাদের জীবন ছুটে চলেছে সুপারসনিক গতিতে। যেখানে পেছনে ফিরে তাকাবার কোনো উপায় নেই, কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে Life is a race, and if you don’t run fast someone will surpass you. কিন্তু তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা থমকে দাঁড়াই, বলা ভালো কিছু কিছু ঘটনা আমাদেরকে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে। ঠিক তেমনি থমকে দেওয়ার মতো একটি ঘটনা হলো ঐশীর ঘটনা। ঐশীর নামটি বড়ই প্রীতিকর, যার আভিধানিক অর্থ Divine বা Heavenly. যে মা তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম উপহারটিকে যক্ষের ধনের মতো বুকের মাঝে আগলে রাখতেন অষ্টপ্রহর, যে মা সব সময় ভাবতেন: I will be there when you need me. অনুমান করি যে ঐশীর জন্মদিনে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু-বান্ধবী সবাই একজোট হয়ে গ্রিক কোরাসের ভঙ্গিতে ১৮৯৩ সালে কেন্টাকির জনৈক টিচার এবং পিয়ানোবাদক মিলড্রেড হিল রচিত অসামান্য Birth Day Lyrics টি Happy Birth Day to you, Happy Birth Day to you, Happy Birth Day to you বলে ঐশীকে করে তুলত তুলনাহীনা এবং সেই নিবিড় আনন্দঘন পরিবেশে ঢাউস আকারের কেকটি কেটে এক ঐন্দ্রজালিক পরিবেশ সৃষ্টি করত এবং এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আনন্দটাকে নিয়ে যেত এক অন্য মাত্রায়। হায়রে! সেই ঐশীই কি না...ভাবতে গেলে বুক ফেটে যায়। কেন এমন হয়?



ঐশীর এই ঘটনা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে দিল, আমাদের চোখের সামনে এক বাস্তব সত্যকে অতি নির্মম ভাবে তুলে ধরল। আমরা সব সময় প্রগতির কথা বলি, আমরা বলি আধুনিকায়নের কথা, আমরা বলি উন্নয়নের কথা, আমরা বলি বিশ্বায়নের কথা। আমরা এখন কর্পোরেট জগতের রঙিন দুনিয়ায় নিজেকে পরখ করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছি..একটানা বর্ষিত হওয়া বোমার মতো বিজ্ঞাপনগুলো কি আমাদেরকে অপরাধী হতে ডাক দিচ্ছে না? এই বোমা বর্ষণের শব্দে কোটি কোটি বেকার বা সামান্য মজুরি পাওয়া তরুণরা বা উঠতি মধ্যবিত্ত কিংবা যারা উচ্চবিত্ত তারা আর কিছু শুনতে পায় না। তাদের শেখানো হয় এই মিথ্যা যে, ‘‘কিছু একটা হওয়া=কিছু একটা পাওয়া’’। শেখায় গাড়ি বা ব্র্যান্ডের জুতার মালিক হওয়াই জীবনের একমাত্র মানে। তারা বলতে থাকে কেন, কেন, কেন না কিনলে তুমি কিছুই না। তাই কি? মানুষ মানে কি তাহলে জুতা, গাড়ি, ব্র্যান্ড, আমি নিজে কি তাহলে কিছুই না! নাথিং?

এখানেই প্রশ্নটা অবধারিতভাবে এসে যাচ্ছে আমারা যে আধুনিক নগর সভ্যতার সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে হাজার বছরের লালিত ঐতিহ্য, প্রথাগত মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে নিজেদেরকে পশ্চিমা সংস্কৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ করতে চাচ্ছি তার পরিনামটা কি? আমরা বলি ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধের কথা, আমরা বলি লক্ষণ রেখা পেরোনোর কথা! এই প্রচলিত গন্ডি ভাঙার নাম করে আমরা ঝুঁকে পড়ছি অনু পরিবারের দিকে। প্রসন্নতায় ভরা, হাসি-খুশি প্রাণ চাঞ্চল্যে মুখরিত সেই ঐতিহ্যবাহী যৌথ পরিবারগুলো আজ ভেঙ্গে গেছে বা যাওয়ার অপেক্ষায়। একান্নবর্তী পরিবারের গন্ডি ডিঙিয়ে আমরা আধুনিক নগরবাসীরা ক্যারিয়ার নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে ভুলে যাচ্ছি আমাদের পরিবারের কথা, আমাদের মায়ের কথা, প্রিয়ার কথা, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কথা, যারা বাবা-মায়ের একটু আদর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়ে। এর ফলে সবচেয়ে আদরের যক্ষের ধনটি যে বিপদগামী হয়ে পড়ছে তার কী হবে?



এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশের বিশিষ্ট জনৈক চিকিৎসকের মতে, যেসব ছেলে-মেয়ে মা-বাবার পর্যাপ্ত আদর-যত্ন পায় না, তারা প্রায়ই কুসঙ্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয় এবং এর জন্য তিনি তিনটি কারন চিহ্নিত করেছেন: Friend, Fun ও Frustration. আসলে সন্তান ‘রেইজিং’ বা লালন-পালন খুবই কঠিন একটি কাজ। টিনএজাররা খুবই আবেগপ্রবণ এবং তাদের সমস্যাবলী বেশির ভাগই মা-বাবার অজানা থাকে। এর ফলে তাদের Wonder age এবং মা-বাবার Real world এর মাঝে সৃষ্টি হয় বিস্তর ব্যবধান এবং গড়ে ওঠে অদৃশ্য এক দেয়াল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা নাসরিন প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, ‘ ঐশী রহমানের ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করল, দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সমাজের সঙ্গে মধ্যবিত্ত সমাজ খাপ খাওয়াতে পারছে না। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে, বিভিন্ন সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকগুলোর অনুপ্রবেশ ঘটছে বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতিতে। অভিভাবকেরা সন্তানদের ভাষা বুঝতে পারছেন না। তাঁরা অনেক সময় সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করছেন না, আলাপ-আলোচনায় সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না। সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকদের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। খোলা মাঠে আর শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটছে না। শিশুরা বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। তারা কাদের সঙ্গে মিশছে, অভিভাবকেরা জানতে পারছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে গ্রামে বা শহরে শিশু-কিশোররা কী করছে, সে সম্পর্কে পাড়া-প্রতিবেশী খবর রাখতেন। এখন সব বিষয় ব্যক্তিগত। সবকিছু পরিবার, সমাজ, সম্প্রদায় থেকে আলাদা। সবাই রাজনীতি নিয়ে আলাপ করছে, সমাজটার কথা কেউ ভাবেছ না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ শিশুরা অতি আদর বা অনাদরে বখে যেতে পারে। মনে হয়েছে, মায়ের প্রতি ঐশীর প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। বাবাকে ছুরি দিয়ে দু’বার আঘাত করলেও মাকে ১১ টি আঘাত করেছে। বাবা-মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকাটা খুবই জরুরি।



আমার সামনে এই যে কচি, উন্মুখ, স্পর্শকাতর মুখগুলো বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে বলতে ইচ্ছা হয়...এদের অন্তরলোকে যে সলতেটি জ্বলার অপেক্ষার প্রহর গুনছে সেই সলতেকে প্রজ্বলতি করার দায়টি-তো আমাদের শিক্ষক সমাজের ওপরই বেশি করে বর্তায়। কারণ পরিবারের বাইরে সবচেয়ে বেশি সময়তো এরা আমাদের সাথেই অতিবাহিত করে। আমরা ওদের মনে স্বপ্নের বীজটা যদি বুনে দিতে পারি...তবে সে স্বপ্নটাকে বাস্তবে পূরণ করার জন্য ওরা নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিবে। আমরা ক্লাসরুমে ওদের সাথে যদি সবসময় ইতিবাচক ব্যবহার করি তাহলে ওরা আমাদেরকে ওদের খুব কাছের একজন হিসেবে ভাবতে পারবে...ওদের অবচেতন মন বলে উঠবে আমি কোন কিছু ভয় পাই না কারন আমার পাশে সবসময় ছায়ার মতো বিচরণ করেছেন অমুক স্যার। বলা হয়ে থাকে একজন সুশিক্ষকের সৎগুণ ছাত্র-ছাত্রীর অন্তরে স্বর্গীয় জ্যোতির মতোই বিকিরণ করে চলে আজীবন। শাশ্বত মূল্যবোধ যেমন-সহানুভূতি, সহমর্মিতা, স্নেহ-ভালোবাসা, সহিষ্ণুতা, করুণার আলোড়ন, সংবেদনশীলতা, ঔদার্য, ইনটিগ্রিটি, দয়া, ক্ষমা, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাত্যাভিমান প্রভৃতি একজন হৃদয়বান শিক্ষক কোমলমতি বিদ্যার্থীদের হৃদয়ে গভীরভাবে গ্রোথিত করে দেন তার সহজাত কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চালচলন ও উদাহরণের মাধ্যমে। আর তাই তোমদেরকে বলি তোমাদের কোনো ভয় নে্ই...আমরা আছি তোমাদের পাশে সবসময়...তোমরা এগিয়ে যাও তোমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে। সপ্তম সিম্ফনির সুরের একত্র উল্লাসে মত্ত হয়ে উদিত রবিকে লজ্জায় ফেলে তোমরা এগিয়ে যাও মুঠোয় আলো ধরার প্রত্যয় নিয়ে। তোমদেরকে অনুরোধ করি, মাদক থেকে দূরে থাকো...আর জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ কর। মহাকবি কালীদাসের ভাষায়, ‘আজকের জীবনই সবকিছু, এতেই রয়েছে পরিপূর্ণতা। কারণ গতকাল-তো ছিল শুধু স্বপ্ন আর আগামীকাল সে তো কল্পনা, শুধু আজকের মধ্যেই রয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ। আজ ভালো করে বেঁচে থাকলে তবেই গতকাল সুখস্বপ্ন হয়ে ওঠে আর আগামীকাল হয় আশায় ভরপুর। তাই আজকের দিনকেই সানন্দে গ্রহন কর। এই হোক প্রভাত বন্দনা।’

তথ্যসূত্র:

১. প্রথম আলো

২. ইন্টারনেট

রাণী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজের সেমিনারে উপস্থাপিত পেপার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০১

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৬

সুব্রত মল্লিক বলেছেন: ধনযবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.