নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারি চাকরি হল বিসিএস ক্যাডার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর অধিকাংশ শিক্ষারর্থীর ইচ্ছা থাকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। আমার মনেও সুপ্ত ইচ্ছাটা জেগে ওঠে। বিসিএস ক্যাডার হব, অনেক সম্মান-মর্যাদা পাব। আমার পরিবারের মুখ উজ্জ্বল হবে। আর সুন্দর সম্মানের একটা জীবন হবে। যাই হোক বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পূর্বেই হৃদি-মাঝে অনেক অধরা স্বপ্ন তার আপন মর্জিতে জাল বুনতে থাকে। পুলকিত হৃদয় আর চমকিত মন এসে এক মোহনায় মিলিত হয় যেদিন ৩১ তম বিসিএস ( শিক্ষা ক্যাডারে) যোগদান করি। এর আগে অগ্রণী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ব্যাংক ছেড়ে বিসিএস ক্যাডারে যোগ দিতেই মাসের আয় চার হাজার টাকা কমে গেল। কারণ এখানে লাঞ্চ ভাতা নেই। যাই হোক হাসি মুখে মেনে নিলাম এই আর্থিক ক্ষতি। বিসিএস ক্যাডার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ভালোই চলতে থাকল চাকরি জীবন। কিন্তু বিপত্তি এসে গেল অন্যদিক থেকে।
আমার বাবা বেসরকারি হাইস্কুলে চাকরি করতেন। আমার চাকরি হওয়ার কিছুদিন পর উনি অবসরে চলে যান। এখন বেসরকারি স্কুলের চাকরিতে অবসরে গেলে অবসরের পরের মাস থেকে শিক্ষকরা কোনো টাকা পান না। উনারা এককালীন কিছু টাকা পান কিন্তু সেই টাকা পেতে গেলে দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মজার ব্যাপার হলো আমি চাকরিতে যোগদান করে বেকারত্ব ঘুচালাম আর আমার বাবার বৃদ্ধ বয়সের বেকারত্ব শুরু হল। এখন সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে। এরসাথে আমার ছোটভাই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। ফলে খরচের খাত আরও একটা বৃদ্ধি পেল। এখন ছেলে বিসিএস ক্যাডার। তাই বাড়িতে অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসে। মেয়ের বাবারা ভাবেন ছেলে বি্সিএস ক্যাডার, অনেক বড় সরকারি চাকরি করে। ছেলের বোধহয় অনেক টাকা। কিন্তু আসল পরিস্থিতি ভিন্ন। নামে তাল পুকুর ঘটি ডোবেনা এরকম একটা অবস্থা। এমতাবস্থায় নানা ছল-চাতুরি করে বিয়ের ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হচ্ছে অনেক দিন ধরে।
মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিলেন, জানুয়ারিতে নতুন পে-স্কেল হবে তখন মনে আবার বসন্তের বাতাস এসে দোলা দিয়ে গেল। স্বপ্নবাজ মনটা আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করল…বিয়ে হবে, সানাই বাজবে…সংসার নামক সাগর থেকে মুক্তো-মাণিক্য খুঁজে ফিরব….কিন্তু না…আমার স্বপ্নের ডানা ঠিকমতো মেলার পূর্বেই বাস্তবতার দেয়ালে এসে ধাক্কা খেল। আমাদের মহামান্য অর্থমন্ত্রী মহোদয় সম্প্রতি বলে ফেললেন, পে-স্কেল হবে জুলাইতে। আবার পত্রিকায় দেখলাম পে-স্কেল বাস্তবায়িত হবে তিন ধাপে।
এবার একটা সহজ হিসাব উপস্থাপন করি। দুইটা ইনক্রিমেন্ট (একটা এ্যাডভান্স ইনক্রিমেন্ট)ও ২০ ভাগ মহার্ঘ ভাতাসহ বেতন পাই ১৯৮৭৬ টাকা। তার আবার ১০ ভাগ প্রভিটেন্ট ফান্ডে কাটানো লাগে। এখন হাতে থাকল ১৮৭৭৬ টাকা। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদের ওষুধ পত্র সহ মাসিক খরচ পাঠাই ৬০০০ টাকা। ছোট ভাইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ে। তাকে পাঠাই ৪০০০ টাকা। এখন আমার হাতে থাকল ৮৮৭৬ টাকা। আত্মীয় স্বজন সহ বন্ধু-বান্ধব, শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে যে আপ্তবাক্যটি প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে সেটি হলো, বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। এখন বিয়ে করব কবে? কি বলব সহজ কোনো উত্তর দিতে পারি না। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলে বুঝিয়ে দিতে হয় আর কিছুদিন পর…..
কি করব …জেলা শহরে থাকি…বিয়ে করলে একটা বাসা নিয়ে থাকতে হবে। মোটামুটি মানের একটা বাসা নিলে চার হাজার টাকা লাগবে। হাতে থাকল ৪,৭৭৬ টাকা। এখন বাসা ভাড়ার পর থাকার অন্যান্য খরচের পালা…১ টি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১৪০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৫০০ টাকা, হাতে থাকল ২৮৭৬ টাকা। এখন আমাকে এই ২৮৭৬ টাকা দিয়ে এক মাসের চাল, ডাল, তেল, মাছ তরকারি কিনতে হবে। এক কেজি মাঝারি মানের চালের দাম ৪৫ টাকা, সাধারণ মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকার নিচে কেজিতে পাওয়া যায় না। সাথে আছে মোবাইল বিল, ইন্টারনেট বিল, পোশাক-পরিচ্ছদ কেনা ( কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম একটা ভালো পোশাক চাই)। আমার হাতে থাকা ২৮৭৬ টাকা দিয়ে আমি কিভাবে সংসার চালাব আর বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরেও কিভাবে বিয়ে করে একটি নূন্যতম সুন্দর সুখী সংসার এই ধরণির এক কোনে আপন মনে গড়ে তুলব তা ভেবে পাই না…..
২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
নিষ্কর্মা বলেছেন: বিসিএস ক্যাডারদের তো অনেক আয় রুজির পথ আছে। আপনে লাইনে নতুন তো, তাই খুজে পাচ্ছেন না। কিছুদিন পরে আপ্নারই নিউইয়র্কে ফ্ল্যাট হবে, মালয়েশিয়ায় যাবেন ঈদের ছুটি কাটাতে। এখন এতো হায় হায় করবেন না। শুধু মাত্র বিসিএস ক্যাডার হবার কারণে অনেক বড়লোক শ্বশুর পাবেন। সো, টেইক ইট ইজি।
আমার কথায় আবার মাইন্ড খাইয়েন না দাদা। সত্য কথা তিতাই লাগে
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৮
রাষ্ট্রপ্রধান বলেছেন: