নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা আমাদের উপসনালয়কে কি সেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনা!

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৮

আজ আমার স্নেহময়ী জননীকে নাটোরের মিশন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখানোর জন্য। বিদেশী ডাক্তার এসে রুগী দেখেন। সপ্তাহে তিন দিন নাক-কান-গলার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন খুব কম খরচে। ডাক্তার মহাশয় খুব যত্ন করে রুগীদের সেবা দিয়ে থাকেন।অত্যন্ত কম খরচ, সেবার মান অনেক ভালো হওয়া এবং মিশনের স্টাফদের আন্তরিক ব্যবহারের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মূলত মধ্যবিত্ত ও গরীব মানুষেরা সেবা নিতে আসেন এখানে। শেষ রাত থেকে মানুষ এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন একটি টিকিট পাওয়ার প্রত্যাশায়। এখানে একটি টিকিট মানে সোনার হরিণ কারণ ডাক্তার মহাশয় প্রতিদিন ৩০০ জন রুগী দেখেন। আমি সকাল ৬ টার সময় গিয়ে দেখি কয়েকশ লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর বেলা বাড়ার সাথে সাথে লাইনের আকারও বাড়তে থাকে। যাই হোক আমি যে জায়গাটিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাচ্ছি সেটি হল, লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলোকে দেখে আমার মধ্যে একটা ভাবনা উঁকি দিয়ে গেল। লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলো মুলত হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এখন যদি কোন হিন্দু ভদ্রলোককে খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন তার কাছ থেকে নেতিবাচক উত্তরই পাবেন। খ্রিস্টান ধর্ম একটি স্লেচ্চ ধর্ম, ওরা সবকিছু খায়, ওদের মিশন চালানোর মধ্যে অন্য একটি উদ্দেশ্য নিহিত আছে আর সেটি হলো গরীব ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুদেরকে লোভ দেখিয়ে ধর্মাত্মর করে ইত্যাদি ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’ উপন্যাসে দেখেছি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদু প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর বেলগাছিয়ার ভিলা বাড়িতে রাতের বেলা খ্রিস্টান বন্ধুদের নিয়ে মদপান ও মাংস আহার করা এবং একসাথে হই হুল্লোড় করার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুমা দিগম্বরী দেবী দ্বারকানাথের সাথে এক বিছানায় রাত্রি যাপন করা থেকে বিরত ছিলেন। আর তিনি পুরোহিত ডেকে কিভাবে স্বামীর অপকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রেখে তাঁর নিজ ধর্ম পালন করবেন তার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে দিনগুলি অতিবাহিত করেন এবং এই স্লেচ্চদের কাছ থেকে তার শুচিতা করতে গিয়ে অচিরেই তার প্রাণ বিসর্জন দেন।
এখন যদি একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারীকেও খিৃস্টান ধর্ম সম্পর্কে বলা হয় তিনিও ঠিক নেতিবাচক উত্তরই দিবেন। তিনি বলবেন খ্রিস্ট ধর্ম হলো ইসলামের শত্রু ওরা ইসলামের ঈসা নবীকে ছিনতাই করে নিয়ে ওদের পয়গম্বর বানিয়েছেন। খ্রিস্টান ধর্মের সাথে ইসলাম ধর্মের যে ক্রুসেড হয়েছিল সেখানে অসংখ্য মুসলিম শহীদ হয়েছেন। আর বর্তমানে খিৃস্টান ধর্মের অনুসারী আমেরিকা হচ্ছে ইসলামের বড় শত্রু । ওদের সাথে বন্ধুত্ব করা একেবারেই সাজে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এই হলো খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের একটি বড় অংশের মানুষের সাধারণ ধারণা।
আমার ধর্ম সম্পর্কে অতটা জানশোনা নেই বা আমি কোন ধর্ম বিশারদ নই । ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি আমার অনেক ভালো লাগে। বিশেষত এই অনুষ্ঠানগুলি মানুষের মনে এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়। খ্রিস্টান ধর্মের সেবার দিকটি সত্যি অসাধারণ। অনেকেই হয়তো বলবেন ওরা সেবার আড়ালে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে। সেটি একটি দিক হতে পারে কিন্তু এর বাইরে যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সেটি হলো খ্রিস্টান মিশনগুলোতে সেবার উদার মানসিকতা। খ্রিস্টান পাদ্রীরা ধর্ম প্রচার করতে আসেন ঠিকই কিন্তু চার্চগুলোকে উনারা প্রার্থনার পাশাপাশি একটি অসাধারণ সেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এটি মনে হয় চার্চের একটি মানবিক সাফল্য।
আমাদের দেশে হাজার হাজার সুদৃশ্য মন্দির ও মসজিদ আছে। এবং দিন দিন এগুলোর সংখ্যা বাড়ছে। এই মন্দির ও মসজিদ গুলোকে কি আমরা সেবাধর্মী কাজে ব্যবহার করতে পারি না! না হয় এগুলোর বাইরের দৃশ্য একটু কম আকর্ষনীয় হলো। প্রত্যেক উপজেলায় আমরা যদি একটি মন্দির ও একটি মসজিদকে প্রার্থনালয়ের পাশাপাশি সেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি তাহলে এই গরীব দুঃখী, আর্ত পীড়িত মানুষগুলো একটু ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা পাবেন। তাদের আর্ত চিৎকারে ভারী হয়ে উঠবে না আকাশ বাতাস। বরংচ তাদের হাসিমাখা দীপ্তিময় সরল মুখগুলো দেখে স্বয়ং বিধাতাও আত্মতৃপ্ত হবেন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:১২

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: খ্রিস্টান পাদ্রীরা ধর্ম প্রচার করতে আসেন ঠিকই কিন্তু চার্চগুলোকে উনারা প্রার্থনার পাশাপাশি একটি অসাধারণ সেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এটি মনে হয় চার্চের একটি মানবিক সাফল্য।

ইসলাম ধর্মে এমন কিছু যে নাই, তা নয়। কিন্তু আমাদের ধর্ম ব্যবসায়ীদের ঠাপের জ্বালায় তা আর হবার নয়!

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪৪

খেলাঘর বলেছেন:

না, সেবার সাথে কোন কিছুকে মেশানো যাবে না।

৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫২

নেবুলাস বলেছেন: "তিনি বলবেন খ্রিস্ট ধর্ম হলো ইসলামের শত্রু ওরা ইসলামের ঈসা নবীকে ছিনতাই করে নিয়ে ওদের পয়গম্বর বানিয়েছেন।"
-- ব্যাপারটি এমন নয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন ঈসা (আ.) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। আর খ্রিষ্টানরা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে (নাউযুবিল্লাহ)। মোটা দাগে বলতে গেলে এইটুকু।

"এই মন্দির ও মসজিদ গুলোকে কি আমরা সেবাধর্মী কাজে ব্যবহার করতে পারি না!"
-- আপনি কি ধরনের সেবার কথা বলছেন? বাংলাদেশে অনেক মসজিদে মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার রয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট বাচ্চাদের কোরআন হাদিস শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা আছে।
কিছু কিছু মসজিদে জামাত বসে। যারা তরুন যুবকদের দুনিয়াবী খারাপ কাজ থেকে বাঁচার জন্য বয়ান বা আলোচনা করে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন (জুম্মাবারে) মসজিদের ইমাম এলাকার লোকদের সমাজের ভালো মন্দ নিয়ে খুৎবা দেন। যাতে করে তরুন, মধ্য বয়স্ক, ব্যবসায়ী প্রত্যেককে কিছুটা হলেও সচেতন করে বলে আমি মনে করি।
--এছাড়া ইসলামে যাকাতের কথা বলা হয়েছে। যা একটা সমাজে পুরোপুরি চালু করলে সমাজের চেহারাটাই বদলে যেতে। আর সুদকে হারাম করেছন। ফলে যে কেউ সুদ ছাড়া টাকা ধার করতে পারতো। এগুলো ঠিক মতো বাস্তবায়ন হলে মানুষের আর উপসানালয় থেকে সেবা পাওয়ার ব্যাপারে কোন প্র্রশ্ন উঠতো না। কিন্তু এগুলো বলে আর কি হবে। বাংলাদেশতো আর মুসলিম দেশ নয়। শুধু মুসলমানের সংখ্যা বেশি এই আরকি।

৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩০

সুব্রত মল্লিক বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব নেবুলাস।আমি মূলত চিকিৎসা সেবার ওপর দৃষ্টিি আকর্ষণ করেছি.আমাদের দেশে একটি বড় অংশের মানুষ দরিদ্র এবং চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এখন আমরা যদি আমাদের প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে নির্দিষ্ট ধর্মের উপাসনালয়ে ধর্মীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারি সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার ডাক্তারদেরকে একদিন করে ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করতে উৎসাহিত করে তাদেরকে সংযুক্ত করা যাবে কারণ ধর্মীয় আবেগ জড়িত থাকে বলে ডাক্তারদেরকে সহজে উৎসাহিত করা যাবে। আর যদি ফ্রি সেবা দেওয়া যায় তাহলে ভেবে দেখুনতো উভয়দিক থেকেই ধর্মীয় মাধুর্যকে আরও সুন্দরভাবে আমাদের সমাজ জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে.

৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫২

নেবুলাস বলেছেন: ভাই আপনার নিয়ত চমৎকার তাতে কোন সন্দেহ নাই। মন্দির বা গির্জার কথা জানিনা। মসজিদে যদি এই সেবা দেয়া হয় তাহলে সেখানে নামাজ আদায় করাতে বিঘ্ন ঘটবে। কারন আপনার উপরের লেখা অনুযায়ী প্রচুর মানুষের ভিড় হবে আর মুসলিমদের দিনে পাঁচবার নামাজ আদায় করতে হয় তখন মুসল্লি এবং রুগী দুইজনেরই সমস্যা হবে। আমাদের মসজিদ গুলো যদি সপ্তাহে একবার নামাজ পড়া হতো তাহলে হয়তো সেটা করা যেতো। কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয় এবং সম্ভব নয় সঙ্গত কারনেই। সুতরাং এধরণের সেবা দেয়ার উপযুক্ত স্থান হচ্ছে স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ। কারন এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে অন্তত একদিন বন্ধ থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.