নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তথাকথিত ব্যর্থদের বলছি

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

এবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই দেশে মনে হচ্ছে একটা গভীর সংকট দেখা দিয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ছিল স্বপ্নের ফেরিওয়ালা তাঁরা শুধুমাত্র এক ঘণ্টার একটা ভর্তি পরীক্ষার পর যেন হয়ে উঠেছে স্বপ্ন ভঙ্গের এক এক জন প্রতিমূর্তি। ওদের প্রতি কারো মায়া-মমতা নেই। যারা কিছুদিন আগে ওদেরকে মাথায় তুলে নিয়েছিল তারাই আজ ধপ করে ওদেরকে নিচে ফেলে দিচ্ছে। আর একটা অবাক করা ব্যাপার হলো ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারলে সেই ছেলে কিংবা মেয়েটিকে আমরা সবাই এমন ভাবে ট্রিট করছি যেন ওর জীবনটাই বৃথা। ওর মধ্যে আর কোনো স্বপ্ন নেই, ভবিষ্যৎ নেই, জীবনের কোনো মূল্য নেই! আসলেই কি তাই? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারা মানে কি স্বপ্নের অপমৃত্যু? জীবনের সব রং ফিকে হয়ে যাওয়া! এই সব তথাকথিত ব্যার্থদের বলছি..বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া জীবনের একটা অংশ মাত্র। আর এটাকে সেই অর্থে ব্যর্থতা বলা ঠিক হবে না। একটা ব্যর্থতা মানুষের জীবনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনা কারন জীবন অনেক বড়, জীবনের পরিসর অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর একটা ব্যর্থতা নুতন সাফল্যের দিগন্ত উন্মোচিত করে। জন এফ কেনেডি বলেছেন ‘‘চীনারা সংকট শব্দটিকে লিখতে দুটি তুলির দাগ দেয়। একটির অর্থ হলো বিপদ, আরেকটি সুযোগ। সংকটের সময় বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকুন, কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন’’।

আমাদেরকে কাঙ্খিত সাফল্য পেতে হলে স্বপ্ন দেখার সাহস হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। এ পি জে আব্দুল কালাম তার ইগনাইটেড মাইন্ডস বইতে স্বপ্ন নিয়ে বলছেন..
`Dream, Dream, Dream.
Dream transform in to thoughts
Thoughts result in action’

যেখানে কোনো স্বপ্ন নেই, সেখানে বৈপ্লবিক কোনো চেতনাও নেই। আর যেখানে কোনো চেতনা নেই, সেখানে কোনো ভালো কাজ সংঘটিত হতে পারে না। তাই আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে। এখন কেমন হবে সেই স্বপ্ন? হেরোক্লিটাস বলেছিলেন, ছাগলেরা যদি তাদের ঈশ্বরের ছবি আঁকতে পারত, তাহলে তারা একটা বড় আকারের ছাগলই আঁকত। যে মানুষ যেমন তার স্বপ্নও তেমন। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলছেন, ‘‘আকাশের তারা দেখো, পায়ের আঙুল দেখোনা। এই পৃথিবীতে তোমার বেঁচে থাকার পেছেনে নিশ্চই কোনো উদ্দেশ্য আছে, সেই উদ্দেশ্যটিকে খুঁজে বের করো এবং সেটি পাওয়ার জন্য জান লড়িয়ে দাও’’। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে আমরা অনেক স্বপ্নদ্রষ্টাদের দেখেছি যেমন কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। তারা কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন ভাবে শিক্ষত ছিলেন না তার পরও তারা তাদের শাণিত মেধার দীপ্তি দ্বারা আমদেরকে অনুপ্রাণিত করে গিয়েছেন। আসলে আমাদের সবার মাঝে লুকিয়ে আছে এক একটি জিনিয়াস। আর নিজেকে মেলে ধরার জন্য দরকার তোমার স্বীয় প্রতিভাকে খুঁজে বের করে তাকে ঠিকভাবে লালন পালন করা ।

আর এর জন্য দরকার অনুপ্রেরণা। তোমরা তোমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাদা মনের মানুষদের মধ্য থেকে সেই অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারো। পতজ্ঞলি বলছেন, ‘‘তুমি যখন কোনো মহৎ উদ্দেশ্যের দ্বারা অনুপ্রানিত, তখন তোমার সব ভাবনার বাঁধ ভেঙে যায়: তোমার মন সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যায়, সবদিকে প্রসারিত হয় তোমার চেতনা, আর তুমি নিজেকে খুঁজে পাও এক নতুন, বিশাল বিস্ময়কর বিশ্বে। ধীশক্তি আর প্রতিভা জীবন্ত হয়ে ওঠে, এবং তুমি স্বপ্নে নিজেকে যতটা বড় বলে ভাব তার চেয়েও বেশি বড় দেখতে পাও নিজেকে’’। আসলে বড় কিছুর জন্য মানুষের কোনো স্বপ্নই মিথ্যা নয়। আমি মনে করি মানুষ যা ভাবতে, স্বপ্ন দেখতে পারে, তা সে করতেও পারে। আর এর জন্য তোমাদের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে উপভোগ করতে হবে, প্রাপ্ত সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে।

পরিশেষে বলি আমাদের জীবনের অন্যতম লক্ষ কিন্তু নিজে সুখী হওয়া এবং অপরকে সুখী করা। আমার ধারণা তুমি সেদিনই সুখী হবে হবে যেদিন নিজে তুমি বলতে পারবে-আমি সুখী। যেদিন এই দেশের গরীব দুঃখী অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের দিকে তাকিয়ে তুমি ভাবতে পারবে কোথায় আমার টানাটানি? এদেশের কত মানুষের কত রকমের দুঃখ। তাদের চেয়ে আমি কত সুখী। তাদের চেয়ে কত বেশি পেয়েছি। কিন্তু তুমি যদি চারপাশের দুঃখীদের দিকে না তাকিয়ে গুটিকতক বিত্তবান মানুষের দিকে তাকিয়ে-যাদের অধিকাংশ দুর্নিতীবাজ আর দস্যু-বুক চাপড়াও আর বলো, ওদের মতো এত কিছু আমার নেই কেন, তবে তোমার দুঃখ ঠেকাবে কে?

আর তাই তোমাদেরকে বলি তোমারা যখন বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করবে তখন অবশ্যই সততার সহিত কাজ করবে কারণ এই দুঃখী দেশে বড় মানুষ নয় কিছু ভালো মানুষের প্রয়োজন, গালভরা কথার লোক নয় কিছু সৎ মানুষের প্রয়োজন। তামিল ভাষার কবি আওয়াইয়ারের লেখা একটি কবিতায় কন্ঠ মিলিয়ে বলি-

মানুষ হয়ে জন্মানোটা দুঃসাধ্য বটে
খুঁতহীন জন্ম নিয়েও নিখুঁত মানুষ
কজন হতে পারে?
অঢেল জ্ঞান আর শিক্ষা পেয়েও কজন
মানুষ শিক্ষিত আর জ্ঞানী?
সবার চেয়ে কঠিন কাজ
সত্যিকারের পুজো আর সত্যি আরাধনা
এ কাজ যারা করতে পারে
অথবা পেরেছিল
তাদের জন্য স্বর্গদুয়ার চিরকালই খোলা
স্বর্গে তারা চিরকালই মহান অতিথি।

তথ্যসূত্র: আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ,স্বপ্নের সমান বড়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.