নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিভাবকের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত এবং একজন ফেল করা ছাত্রের গল্প

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৩

একজন ফেল করা ছাত্রের গল্প শোনাই। ধরে নিলাম ছেলেটির নাম সবুজ। সবুজ প্রাইমারি থেকেই ভালো ছাত্র ছিল। মোটামুটি সব ক্লাসে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হত। গ্রামের ছেলে তাই কৈশোরের প্রতিটি মুহূর্ত সে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে। সে গ্রামের স্কুলের ভালো ছাত্র এবং এর বাইরে সে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতি বছর কবিতা আবৃত্তি ও একক অভিনয়ে ১ম পুরস্কার পায়। সে নম্র স্বভাবের হওয়ায় গ্রামের সবাই তাকে অনেক ভালোবাসে। সবুজের ছোট বেলা থেকেই শিল্প ও সাহিত্য চর্চার প্রতি এক অন্যরকম আকর্ষণ। বিশেষত সাহিত্য এবং ইতিহাসের প্রতি তার এক দুর্নিবার আকর্ষণ। যাই হোক সবুজ ক্লাস এইট পর্যন্ত ভালোই করতে থাকে। কিন্তু তার ভয়ের বিষয় হলো গণিত। গণিত দেখলে তার টেনশন বেড়ে যায়। অনেক চেষ্টা করে কিন্তু গণিতের বিষয়গুলো তার মাথায় ঢোকে না। এখন ক্লাস নাইনে ওঠার পর শুরু সবুজের দুঃখগাঁথা। সবুজের মাথায় গণিতের ভয়। অন্যদিকে সে ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়াতে তার বাবা-কাকা এবং শিক্ষকরা মিলে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করে দেয়। বাবা ভাবেন ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। অপরদিকে সবুজ ভাবতে থাকে সে গণিতের বৈতরণীই পার করতে হিমসিম খায় আর তার সাথে নতুন উপদ্রব হিসেবে আবির্ভূত হয় পদার্থ এবং রসায়নের মত কঠিন বিষয়। তার ওপর গ্রামের স্কুল। সিলেবাসে পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে অনেক কঠিন। স্যাররা যথেষ্ট চেষ্টা করেন কিন্তু সবুজ কিছুতেই তার মন থেকে বিজ্ঞান ভীতি তাড়াতে পারে না। পরীক্ষার আগে মানবিকের ছেলেরা ইংরেজি নিয়ে ভয়ে অস্থির কিন্তু সবুজের ইংরেজি নিয়ে কোন ভয় নেই। সে ইংরেজিতে অনেক ভালো আর পড়তেও ভালো লাগে।
যাই হোক সবুজ দুরু দুরু বুকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিল। যেহেতু সে স্কুলের ফার্স্ট বয় তাই সবাই আশা করে আছে সবুজ অনেক ভালো করবে। পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্ন অনেক কঠিন হল। সবুজ টেনেটুনে ১৫ নম্বরের উত্তর দিল। ১২ নম্বর পেলে পাশ।এবার রেজাল্টের পালা। সবুজের একটু ভয় ভয় লাগে কিন্তু ও ভাবতে থাকে পদার্থ বিজ্ঞানে পাশ করে যাবে। রেজাল্ট আনতে সবুজ সেন্টারে যায়। ও বাবার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেয়। ভালো রেজাল্ট করলে বন্ধুদের মিষ্টি খাওয়াতে হবে। হেড স্যার কেন্দ্র থেকে রেজাল্ট শিট নিয়ে বের আসেন কিন্তু তার মুখটি গোমড়া। উনি রোল অনুযায়ী সবার রেজাল্ট ঘোষণা করতে থাকেন কিন্তু সবুজের রোল বলেন না। সবুজ ভাবতে থাকে ওর রেজাল্টের কি হল! অবশেষে সবার রেজাল্ট বলার পর হেড স্যার সবুজকে কাছে ডেকে নিয়ে দুঃসংবাদটি দেন। সবুজের রোল আসেনি অর্থ্যাৎ সে ফেল করেছে। কেউ এটা বিশ্বাস করতে পারছে না। সবুজের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সে অবিরাম কাঁদতে থাকে। এক পর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। অবশেষে জ্ঞান ফিরলে স্যার ও বন্ধুরা মিলে সবুজকে বাড়ি নিয়ে আসে। কয়েক দিনের তীব্র যন্ত্রণার পর সবুজ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ওরা বন্ধুরা সাইকেলে চড়ে কলেজে যায় আর ও দীর্ঘশ্বাস বাড়তে থাকে। তাকে আবার নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। অনেক কষ্ট করে সবুজ পরের বার আবার এসএসসি পরীক্ষা দিল এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলো ।
এবার কলেজে ভর্তি হওয়ার পালা।সবুজ আর বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চায় না। সে মানবিক বিভাগে পড়তে চায়। কারণ বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো তার মাথায় ঢোকে না। কিন্তু বাদ সাধে সবুজের বাবা এবং কাকা। তারা দু’জনে মিলে সবুজকে এক প্রকার জোর করে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করিয়ে দেন। তারা ছেলেকে হয় ডাক্তার না হয় ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। সবুজের আবার শুরু হলো ভালোবাসাহীন পড়ালেখার পথ চলা। ভয় জাগানিয়া দিনগুলির সাখে বসবাস। এবার সে কেমেস্ট্রি দেখলেই ভয় পায়। জটিল সব সমীকরণ সবুজের মাথায় ঢোকে না। সে সবসময় ভয়ে থাকে। আবার বুঝি ফেল না হয়ে যায়। অবশেষে সবুজের আশংকাই সত্যি হলো। এবার সে কেমেস্ট্রিতে ফেল করলো। বাবা-কাকার মুখে রাজ্যের হতাশা। ছেলেকে আর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানো হলো না। সবুজ আবার চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল তার বন্ধুদের সাফল্য। বন্ধুরা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর এসে গর্ব ভরে সেই মধুর জীবনের গল্প বলতে থাকে আর সবুজের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলতে থাকে। সবুজ হতাশা কাটিয়ে আবার পরীক্ষা বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্যে পথচলা শুরু করল।
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভার্সিটি এডমিশনের পালা। তার বাবা-কাকা তাকে বলে বিজ্ঞানের যে কোন বিষয়ে অনার্স পড়তে তাহলে অন্তত বেসরকারি হাইস্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পাবে। কারণ ওখানে বিজ্ঞানের শিক্ষকের খুব অভাব আর তাই পড়াশুনা শেষে সে সহজেই চাকরিটি পেয়ে যাবে। কিন্তু এবার সবুজ নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিল। সে তার বাবা-কাকাকে জানিয়ে দিল হয় সে মানবিকে পড়বে না হয় পড়াশুনাই ছেড়ে দিবে। হুমকিতে কাজ হলো। সবুজের বাবা মানবিক শাখার কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দিল। সবুজ এবার যেন পড়ার মাঝে প্রাণ খুঁজে পেল। বিজ্ঞানের জটিল সমীকরণ এখন আর তাঁকে ধাওয়া করে না।সবুজ মন দিয়ে পড়তে থাকে এবং সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল। এখন তাঁর পড়তে অনেক ভালো লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সে মনের মত করে উপভোগ করতে থাকে। সবুজ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়। সপ্তাহে দুই দিন দুটি করে বই নিয়ে নিমেষেই পড়ে ফেলে। পাঠক ফোরামের সাথে যুক্ত হয়, দেয়াল পত্রিকা বের করে। রেজাল্টও যথেষ্ট ভালো হতে থাকে। সে সবসময় প্রথম চার-পাঁচ জনের মধ্যে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হওয়ার পর এবার চাকরির পড়াশুনা। সবুজ খুব মন দিয়ে চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকে। সে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পড়াশুনা করতে থাকে। অবশেষে সে সফলতার মুখ দেখে। সে সরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসারের চাকরি পেয়ে যায়। কিন্তু শিক্ষক হতে চায়। আর তাই খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং বিসিএস শিক্ষক ক্যাডারে যোগদান করে। পূর্ণ হয় তার স্বপ্ন।
এখন আমি সবাইকে বিশেষত অভিভাবকদের বলছি ওপরের ঘটনাটি একবারে বাস্তব। আপনার ছেলে কিংবা মেয়ের ওপর কোনেকিছু চাপিয়ে দিবেন না। আগে ওদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের করুন। ওর সবলতা দুর্বলতাকে উপলব্ধি করবেন। আর অবশ্যই ও কি হতে চায় সেটা জানবেন। ও কোনদিকে নিজেকে বিকশিত করতে চায় সেটার দিকে নজর রাখুন আর ওর পছন্দের ওপর গুরুত্ব দিন। ওপরের সবুজ যদি এইচএসসির পর নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত না নিত, ওর ভালো লাগার বিষয়ে পড়তে না পারত তাহলে হয়তো সে আজ কোন কানাগলিতে পড়ে থাকত। সমাজে তথাকথিত ব্যর্থদের দলে নাম লেখাত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১৩

সকাল হাসান বলেছেন: বাবা-মা তো চাপাবেই! তাদেরও একটা আশা ভরসা আছে! সন্তান হিসেবে তো আমাদেরই দায়িত্ব সেই আশাটা মেটানোর! চাপ থাকবেই, তাই বলে পিছিয়ে পড়ে হাল ছেড়ে দিলে তো হবে না!

তবে অতি চাপটা খারাপ হবে অবশ্যই!

আর সায়েন্সের কথাটা বললেন তো, ওটা তো বুঝেই পড়তে হবে! পড়ালেখা করে কিছু শিখতে চাইলে বুঝতেই হবে! না বুঝে পড়লে সার্টিফিকেট আসবে কিন্তু জ্ঞান আসবে না!

এইক্ষেত্রে আমি এইটাকে সন্তানের অক্ষমতাই বলব! বাবা-মায়ের চাপানোটাকে দোষ দিব না!

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৭

সুব্রত মল্লিক বলেছেন: গণিত হলো বিজ্ঞানের প্রাণ আর যে ছেলেটি গণিতে ভয় পায় এবং সেই বিষয়ের প্রতি তার কোনো আকর্ষণ নেই তাহলে সে কিভাবে ভালো করবে??????? এখন ধরুন আপনি রাতের অন্ধকারে একা চলতে ভয় পান কিন্তু আপনাকে যদি জোর করে রাতের অন্ধকারে চলতে বলা হয় আপনি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবেন? আমি সেই জায়গাটিতেই ফোকাস করতে চেয়েছি যে যার যেদিকে ঝোঁক আছে,এবং যে বিষয়টিতে পারঙ্গম সেখানেই তাকে যেতে দেওয়া উচিৎ। থ্রি ইডিয়টস সিনেমায় আমির খান একটা সুন্দর কথা বলে যদি লতা মঙ্গেশকরের বাবা বলতেন যে তুমি ফাস্ট বোলার হও আর শচীন টেন্ডুলকারের বাবা বলতেন তুমি গায়ক হও তাহলে তারা আ দু’জন কোথায় থাকতেন!!!!!!!

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৮

ভীণদেশী তাঁরা বলেছেন: আর সায়েন্সের কথাটা বললেন তো, ওটা তো বুঝেই পড়তে হবে! পড়ালেখা করে কিছু শিখতে চাইলে বুঝতেই হবে! না বুঝে পড়লে সার্টিফিকেট আসবে কিন্তু জ্ঞান আসবে না!

এইক্ষেত্রে আমি এইটাকে সন্তানের অক্ষমতাই বলব! বাবা-মায়ের চাপানোটাকে দোষ দিব না

সহমত।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২৬

সুব্রত মল্লিক বলেছেন: একজন ভালো গল্প লিখতে পারে এখন তাকে বলা হলো স্টিফেন হকিংয়ের বই পড়ে বুঝে তার উপর রিভিউ লিখতে তার দ্বারা কি সম্ভব? কিন্তু তাকে যদি বলেন লিও টলস্টয়ের বই পড়ে তার রিভিউ লিখতে সে অবশ্যই পারবে কারণ এই জায়গাটিতে সে পারঙ্গম.যার যেদিকে প্রতিভা আছে সেদিকের কাজ করতে দিলে কোন কাজই মনে হয় না আর যার যেদিকে প্রতিভা নেই সেই কাজ করতে দিলে বোঝা মনে হয়.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.