নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবার যদি লিচু চোর হতে পারতাম!

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৬

অনেকদিন পর বাড়িতে আসলাম। প্রচন্ড গরমে সন্ধ্যা হতেই বিদ্যুৎ মহাশয় লুকোচুরি খেলা আরম্ভ করেছেন। তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে উঠোনে মাদুর পেতে শুয়ে আছি। মাঝে মাঝে ঝিরি-ঝিরি দখিনা বাতাস এসে শরীর-মন জুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মাথার ওপরে অসীম আকাশে তারাগুলি মিটিমিটি জ্বলছে। মিটিমিটি জ্বলতে থাকা তারাগুলো হঠাৎ করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সেই ছোট বেলার বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের দুরন্ত দিনগুলিতে। কি অসাধারণ স্বপ্নময় ছিল একেকটা দিন। বৈশাখের শুরুতে গাছের আমগুলো একটু একটু করে বড় হতে থাকত। নিজের ছুরি ছিল না, তাই ঝিনুক কুড়িয়ে সেটি টিউবয়লের শক্ত শানে ঘষে ঘষে পেছন পাশ ছিদ্র করে কাঁচা আম কাটার উপযোগী করে তুলতাম। এরপর থেকে পুরো বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য জুড়ে ইংলিশ হাফ প্যান্টের পকেটে একছত্র আধিপত্য থাকত সেই ঝিনুকের। সেই সময় বৈশাখ আসতেই স্কুল শুরু হতো ভোরে এবং সকাল ১২ টার মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে যেত। স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগটি কোনোমতে বারান্দায় রেখে, রান্না ঘর থেকে কাঁচা লবণ কাগজে মুড়িয়ে নিয়ে ছুটে যেতাম আম বাগানে। দল বেঁধে বাগানে ঘুরে ঘুরে আম কুড়াতাম আর ঝিনুক দিয়ে কেটে গলাধকরণ করতাম। আমাদের বাগানে একটা গাছের আম মিষ্টি ছিল। সেই গাছের আম পেড়ে সেটি কেটে খেতে খেতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় সামনে দুই তিন জন সমবয়সী হাজির। এখন ওদেরকে আমের ভাগ যাতে না দিতে হয় এজন্য আম মুখে নিয়ে এমন টকের ভাব করলাম যে, ওরা বলেই ফেলল তোর এই টক আম খাবো না, যাই মিষ্টি আম কুড়িয়ে নিয়ে আসি। আম খেতে খেতে চলে যেতাম আমাদের বড় পুকুর পাড়ে। পুকুর পাড়ে গিয়ে অনেকসময় কাঁচা মরিচ যোগাড় করে সেটি দিয়ে আম মাখিয়ে খেতাম। আম খাওয়ার পর স্নানের পালা। দল বেঁধে পুকুরে নেমে পড়তাম। যে যত জল ঘোলা করতে পারবে তার স্নান ততটাই মধুর। এর সাথে ছিল ঘোলা জলে স্নান করতে করতে মুখের ওপরে কাদা লেপটে গোপ হয়ে যাওয়া। এভাবে স্নান সেরে চোখ লাল করে বাড়িতে হাজির। মায়ের মধুমাখা ব্যবহার সাথে নিয়ে দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুমানোর পালা। মা ঘুম পাড়িয়ে রেখে যেতেন আর আমি ঘুমের ভান করতাম। মা পাশ থেকে চলে যেতেই ভো দৌড় আম বাগানে।আম বাগান ঘুরে বিকেলের দিকে উঠে যেতাম তাল গাছের রস খেতে। তালের রস খেলে খুব ঘুম আসে তাই সন্ধ্যা বেলা পড়তে বসলেই ঘুম বাবাজির আগমন। আর সাথে মায়ের হাতের পিঠে পড়া ধুমধাম আওয়াজ।জৈষ্ঠ্য মাসে আম পাকার সময় আসলে সন্ধ্যায় উঠোনে পড়তে বসেলও কানটা খাড়া থাকত। আম পড়ার শব্দ হলেই একসাথে তিন-চারজন লাইট নিয়ে ভৌ দৌড়। পাকা আম যে কুড়িয়ে পেত তার মুখে রাজ্যের হাসি। আবার ভোরবেলা উঠে আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা। আর ঐ সময় গ্রীষ্মকালীন অবকাশ থাকায়, অনেকগুলো কাজিন চলে আসত আমাদের বাড়ি। ফলে প্রত্যেকটা দিন নতুনের আবাহন নিয়ে হাজির হতো। গাছ পাকা কাঠাল খেতে হবে কিন্তু কাঠাল আর পাকে না। অগত্যা গাছে উঠে কাঠাল মুচড়িয়ে রেখে আসতাম এবং কয়েকদিন পরে ঠিকই পেকে যেত। পাকলেই গাছ থেকে পেড়ে উদরপূর্তি সারা। আমাদের কয়েকটা লিচু গাছ ছিল। লিচু রক্ষার জন্য আমার সেজ কাকা গাছের গোড়ায় কাটা দিয়ে রাখত এবং গাছের ওপরে মাচা করে ঘুমাতো। একদিন সন্ধ্যাবেলা কাকা বাজারে আমরা ঠিক করলাম লিচু চুরি করব। লিচু মোটামুটি পাড়া শেষের পথে। এমন সময় দেখি কাকা আসছে লাইট নিয়ে। গাছ থেকে নেমেই দৌড় অন্য দিকে। দূরে গিয়ে লিচু খেয়ে বাড়িতে এসেছি। খুব খুশি, কারণ কাকা লিচু চোর ধরতে পারে নি। কিন্তু বিপত্তি ঘটল পরের দিন। সকাল বেলা কাকা লিচু গাছের নিচে একজোড়া স্যান্ডেল খুঁজে পেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল স্যান্ডেল জোড়া আমার। এই খবর শোনার পর ভয়ে বাড়ি আসি না কারণ কাকার মারের খুব ভয় পাই। অবশেষে বিকেলে পাকড়াও হলাম, শুরু হলো উত্যম মধ্যম। চুরি করে নিজেদের গাছের লিচু খাওয়ার ভাবনা চিরতরে উধাও। এখন যখন উঠোনে বসে লিখছি আমার কাকা পাশে বসে আছেন। লিখছি আর ভাবছি, আবার যদি সেই দিনগুলি ফিরে পেতাম, আবার যদি লিচু চুরির দায়ে কাকার হাতের মার খেতে পারতাম! কিন্তু তা আর হবে না, কারণ কাকার ভাইপো এখন বড় হয়ে গেছে, সে এখন চাকরি করে…সত্যি কি বড় হয়ে গেছি!


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.