নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মা

০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১৫

আমার মা অসাধারণ রুপবতী কোনো নারী নন। একসময় হয়তো কিছুটা রুপবতী ছিলেন কিন্তু বিয়ের পর থেকে সংসারের ঘানি টানতে টানতে সেই রুপের লাবন্য বিদায় নিয়েছে, লাবন্যের পরিবর্তে মুখপল্লবে যোগ হয়েছে মেস্তার দাগ। মায়ের মুখে এই মেস্তার দাগ দেখি আর ভাবি এই যে ধীরে ধীরে মায়ের মুখের কমনীয়তা একটু একটু করে কমতে কমতে ধীরে ধীরে মেস্তা এসে জায়গা দখল করে নিয়েছে সেটা আমাদের চার ভাই-বোনের প্রতিদানের ফসল। চারটি ছেলে-মেয়ে মানুষ করতে গিয়ে এই ছোট-খাট গড়নের মানুষটির ওপর দিয়ে কি ঝড়টাই না গেছে! খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে উঠোন ঝাড় দিয়ে, গোয়ালঘর পরিস্কার করে, স্নান সেরে মানুষটি রান্না ঘরে ঢোকেন। শহুরে মায়েদের মতো গ্যাসের সুবিধা নেই। চুলাতে কাঠ আর গোবরের লাকড়ি দিয়েই চলে রান্নার কাজ। আমার কে কি খেতে পছন্দ করি তা মানুষটির নখদর্পণে। সবার পছন্দের রান্না শেষ করে মানুষটি যান পূজার ঘরে। আমার মা অতটা শিক্ষিত না মোটামুটি পড়তে জানেন। ধর্মগ্রন্থ গীতা, মহাভারত, রামায়ন কোনোদিন পড়েছেন কিনা মনে করতে পারছি না। পূজার সময় কি কি মন্ত্র পাঠ করা লাগে সেটিও ভালো করে জানেন কিনা সন্দেহ। তাহলে পূজার ঘরে ঢুকে ঠাকুরের সামনে বসে কি করেন? কি আর করবেন-প্রসাদ সাজান, প্রদীপ জ্বালান, প্রার্থনা করেন বসে বসে। কাদের জন্য প্রার্থনা করেন-নিজের জন্য একটুও না। আমরা চারটি ভাই-বোন যেন সুখে থাকি এই প্রার্থনাই করেন বসে বসে। পূজা শেষ করে দুটো সকালের খাবার খেয়ে আবার কাজে লেগে যান। এভাবে কাজ করতে করতে মানুষটির সারাদিন কেটে যায়। আামার মা অসাধারণ জ্ঞানী মানুষ নন। কিন্তু মানুষটির মধ্যে মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা বিদ্যমান। আমাদের বাড়িতে যে ছেলেটি কাজ করে তার নাম জিয়া। আমাদের বাড়ি বড় মাছ রান্না হলে আামার মা কখনো আমাদের চার ভাই-বোনকে মাছের মাথা খেতে দেন না। ওটা জিয়ার জন্য বরাদ্ধ থাকে। আমরা যখন বলি, মা তুমি মাছের মাথা আমাদেরকে না দিয়ে জিয়ার জন্য বরাদ্ধ রাখো কেন? আমার মা বলেন, ওরা গরীব মানুষ এতবড় মাছ কিনে খাওয়ার সামর্থ নেই , তোরা তো পরে লেখাপড়া শিখে বড় হলে নিজেরা কিনে খেতে পারবি। আমার মা খুবই সাধারণ একটা মানুষ। একবার আমার লাগানো গাছে প্রথম আম ধরল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, পরীক্ষা থাকার কারণে বাড়ি আসতে পারি না, আমার মা গাছের প্রথম পাকা আম আমাকে না খাইয়ে কাউকে খেতে দিবেন না। এদিকে আম আর রাখার মতো নেই। আমার মা ঘনঘোর বর্ষা উপেক্ষা করে চলে এসেছেন আমার হলে। এসে কেয়ারটেকারকে বলে আমাকে খবর দিয়েছেন। আমি গেস্টরুমে গিয়ে দেখি আমার মা ভিজে জবুথবু অবস্থায় বসে আছেন। ক্যান্টিন থেকে ছুরি আনলাম, আমার মা নিজ হাতে আম কেটে আমাকে খাওয়ালেন তারপর পরিতৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। এবার বাড়িতে গেছি। রাত দশটায় খেতে বসেছি। দুপুরে রান্না করা ভাত নরম হয়ে গেছে। আমি নরম ভাত খেতে পারি না। মা কাকাদের বাড়ি গেলেন গরম ভাত আছে কিনা দেখতে। কারো বাড়ি গরম ভাত পেলেন না। অগত্যা সেই রাত দশটায় চুলা জ্বালিয়ে গরম ভাত রান্না করে আমাকে খাইয়ে তারপর ঘুমোতে গেলেন। আমি দূরে থাকি। বাড়ি যেতে একটু দেরি হলে মা বলেন, ‘ তুই কবে বাড়ি আসবি? আমার খুব পরান ( প্রাণ) পুড়ছে।’ আমি বলি পরান আবার পোড়ে কিভাবে? মা বলেন, সন্তানের জন্য মায়ের নাড়ির টান তুই কিভাবে বুঝবি? তোর কি নাড়ি কাটা গেছে। সত্যি আমাদেরতো নাড়ি কাটা যায়নি তাই তোমার অন্তরের প্রদোষে সদা জাজ্বল্যমান আলোর বিভা আমরা ঠিকঠাক অনুভব করতে পারি না। তাইতো তোমার মতো টান অনুভব করতে পারি না, পরাণ অতটা পোড়ে না। সূর্যের দেদীপ্যমান আলোর কাছে মোমবাতির মিটমিটে আলোর কি কোনো তুলনা হয়? হয় না। আমার লক্ষ্ণী মা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.