নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংবর্ত

আমি এই ব্লগের নীতিমালা মেনে আমার সৃজনশীলতা বিকাশের চেষ্টা করব

সুব্রত মল্লিক

আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..

সুব্রত মল্লিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐ মানুষগুলোকে অপমান করেই আমাদের যত তৃপ্তি

১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:১৯

আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রয়োজনের সময় তাদের হাতটি বাড়িয়ে দেন, তাদের কায়িক শ্রম দিয়ে আমাদেরকে অনেক উপকার করেন। অথচ এই মানুষগুলোকে আমরা নূন্যতম সম্মান দিই না, তাদের কাজকে স্বীকৃতি দিই না। তাদেরকে ছোট করে ট্রিট করাতেই আমাদের যত আনন্দ। এই যে আপনি আমি রিকশায় চড়ি। একেবারে ভর দুপুরে রাস্তায় বের হলাম। চারদিকে কোনো যানবাহন নেই। অথচ আমাকে যাওয়াই লাগবে। চারদিকে তাকাচ্ছি হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এসে হাজির। এই মানুষটি সেই প্রয়োজেনর মুহুর্তে আমার পাশে দেবদূতের মতো হাজির হলেন। ভর দুপুরে মানুষটি ঘর্মাক্ত শরীরে আমাকে নিয়ে টেনে চলেছেন। একটু ধীরে রিকশা চালালে আমি ধমক দিয়ে উঠি এই মামা এত ধীরে চালান কেন? দ্রুত চালাতে পারেন না? হয়তো মানুষটি অভুক্ত তখনো তার পেটে দানপানি পড়েনি, তার শরীর আর সাড়া দিচ্ছে না। তারপরও রিকশার চাকা ঘোরাতে হবে কারণ রিকশার চাকা না ঘুরলে তার সংসারের চাকাটাও ঘুরবে না। হয়তো ঘরে বউটা অসুস্থ্য, ছেলেটি কেমন বখাটে হয়ে গেছে, কথা শোনে না, নেশা করে। বাবার কাছে সবসময় টাকা চায়, দিতে না পারলে ঝগড়াঝাটি করে। বিবাহযোগ্য মেয়েটি ঘরে পড়ে আছে। যৌতুকের টাকা যোগাড় করা যাচ্ছে না বলে বিয়ে দিতে পারছেন না। তাই শরীর না কুলালেও সাধ্যের বাইরে গিয়ে রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে থাকে। এভাবে ভর দুপুরে আমাকে কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে দেয়ার পর আমার কাছে ১৫ টাকার জায়গায় ২০ টাকা চাইলে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে মানুষটাকে যাচ্ছেতাই ভাবে গালাগালি শুরু করি। এরপর সে যদি প্রতিউত্তর দেয় তখন আমার সব শক্তি নিয়ে মানুষটাকে মারতে উদ্যত হই। পারলে বুড়ো মানুষটার গালে একটা চড় ও বসিয়ে দিই। অথচ এই আমি সকালে হয়তো কোনো অফিসে গিয়ে বড় কর্তাকে কয়েক হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আমার কাজ উদ্ধার করে এসেছি। শপিং মলে গিয়ে ব্রান্ডের শার্ট কিনে বিদেশী কোম্পানিকে আরো বড় হওয়ার রসদ যুগিয়ে এসেছি। বাসার রান্না বাদ দিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে চাইনিজ খেয়ে একটা বড় অংকের টাকা খরচ করে এসেছি। অথবা কোনো দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়ে দরদাম করে জিনিস কিনেও পাঁচশত টাকা ঠকে এসেছি। এই আর্থিক ক্ষতিগুলো আমাদেরকে ততটা কষ্ট দেয় না কারণ যারা সুকৌশলে আমার পকেট কেটেছে ঐ মানুষগুলো ছেড়া জামা পরিহিত না। ওরা ভদ্রলোক তাই ওরা পকেট কাটলেও আমার রাগ চড়ে না। আমার রাগ চড়ে তখনই যখন একজন রিকশাওয়ালা ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা চান্। এই মানুষটি আমাকে প্রয়োজনের সময় যে সেবা দিচ্ছেন তার জন্য তাকে আমরা নূন্যতম একটা ধন্যবাদও দিই না অথচ সেই মুহুর্তে ঐ মানুষটি না থাকলে আমার কষ্টের সীমা থাকত না।আমি নিজে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে দোকানে যেতে পারতাম না, বাজার করে জিনিসগুলো নিয়ে সহজে বাসায় ফিরতে পরতাম না ইত্যাদি ইত্যাদি। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘ একটা মানুষকে চেনার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সেই মানুষটি তার নিচের স্তরের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করে।’ আমরা স্যুটেড-বুটেড হয়ে রাস্তায় বরে হয়ে কুলি, রিকশাওয়ালা, অটোওয়ালা কিংবা দারোয়ানের সাথে যে ব্যবহার করি তাতেই বোঝা যায় আমরা মানুষ হিসেবে কেমন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.