নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খন্ডিত রুপকথা (৬ষ্ঠ অংশ)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৫


(৪)
রাজু চায়ের কাপে চুমুক দেয়।জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়।রাত কত ঠিক বোঝা যায়না।ঘড়ির কাঁটা অনড় হয়ে আছে।ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায়।সাল আর তারিখ নেই পাতায়।
-হ্যাঁ,যা বলছিলাম অপারেশন সার্চ লাইটের পর আমরা সুইপিং অপারেশন শুরু করি।এই অপারেশনের উদ্দেশ্য ছিল লুটপাট,ধর্ষণ,হত্যাকান্ড।সাথে ছিল মিলিটারী অপারেশন।আসলে মুক্তিরা তখন প্রতিরোধ শুরু করে দিয়েছিল।আমরা তোমাদের নারীদের যৌনদাসী করে রাখতাম।তুমি ব্যাপারটা বুঝবে আর কি।আমার সৈন্যদের মনোরঞ্জন দরকার ছিল।আমাদের পরিকল্পনার একটি অংশই ছিল, এই অঞ্চলের সকল হিন্দুদের উচ্ছেদ।আমরা হিন্দু মেয়েদের জোড় করে গর্ভবতী বানাতাম।আর হিন্দু পুরুষদের হত্যা করতাম।কারণ এই ধর্মগোষ্ঠীর লোকগুলি বড়ই ইতর শ্রেণীর আর মুজিবের সমর্থক ছিল।দেশ ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
রাজুর মুঠি আপনা-আপনি শক্ত হয়ে যায় জেনারেল নিয়াজীর কথা শুনে।তবুও নিজেকে শান্ত রাখে।
-আচ্ছা,নিয়াজী সাব আপনারা শান্তি কমিটি কেন করেছিলেন।
রাজুর প্রশ্ন শুনে নিয়াজী হো হো করে হেসে ওঠে ।
-আমি যতদূর জানি রাবণের ভাই ছিল বিভীষণ।বিভীষণ ভেতরের খবর না দিলে রাম কি লংকা জয় করতে পারতো? আমরা প্রোফেসর গোলাম আযম সাহেবকে দায়িত্ব দিই শান্তি কমিটি গড়ে তোলার জন্য।
-গোলাম আযমকে কেন?
-প্রোফেসর সাব ধর্মকে হাতিয়ার বানাতে পাড়তেন তাই।উনার সাথে আরও ছিলেন, এ কিউ এম সফিকুল ইসলাম, মওলানা সৈয়দ মাসুম। শান্তি কমিটির কনভেনার ছিলেন,খাজা খায়ের উদ্দিন।
-শান্তি কমিটি কি শুধু তথ্য প্রদান করতো?
-আরে রাজু সাব,আপনি বড্ড নাবালক আছেন দেখছি।
-উনারা যা করতেন তাতে উনাদেরই লাভ হতো।আমরা তো হিন্দুদের দেশ ছাড়া করতাম,সাথে আওয়ামীলীগ যারা করতো,যারা কিনা ছিল স্বাধীনতার সমর্থক তাদেরকেও উচ্ছেদ করতাম।আর এদের ফেলে যাওয়া সম্পদ শান্তি কমিটির লোকজন নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত।আমরা শুধু ওদের নারীদের চেখে দেখতাম।
রাজু নিয়াজীর সামনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রাখে।নিয়াজী পেপারখানা পড়ে দেখে।তারপর বলে।
-হ্যাঁ,ঠিকই লিখেছে শান্তি কমিটির লোকজনই রাজাকার নিয়োগ করতো।আর ওই সব রাজাকারদের অনেকেই পেশাদার অপরাধী ছিলো।আমাদের এই কথা বলছেন রাজু সাব?আপনারা এখনও এই কাজ করেন।
-কি বলেন নিয়াজী সাব?আমরা আবার কোথায় অপরাধী নিয়োগ করলাম?
-আপনি সাংবাদিক আছেন,আপনে না জানলে তো চলবেনা রাজু সাব।ওই যে, ২০১৩-২০১৫ সালে জামাত আর তার ছাত্র সংগঠন যে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল তাতে বহু পেশাদার অপরাধী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।আমি খুব খুশি হয়েছি ওদের কর্মে।ওরা আমাদের ’৭১ এর স্টাইলটা ভুলে যায়নি।বহুত খুব।বহুত খুব।
নিয়াজী প্রসন্ন মুখে জানালা দিয়ে অন্ধকার দেখে।
-চা খাবেন?
নিয়াজী মাথা দোলায়।চা শেষ করে আবার দু’জন গল্প শুরু করে।
-নিয়াজী সাব,আপনারা কেন নিজ দেশের লোকদের হত্যা করেছিলেন।ওরাও তো মুসলমানই ছিল।
-কারা?বাঙালীরা?ওরা কোন কালেই সহি মুসলমান ছিলনা।
-যারা আপনাদের সহযোগী ছিল তারা?
-কাদের কথা বলছেন?যারা জামাত-ই ইসলাম,মুসলিম লীগ আর নেজামী-ই ইসলাম করত তারা? ধূস কি যে বলেন।আমরা তো ওদের ব্যবহার করেছি।আমাদের দরকার ছিল এমন একদল লোক যারা রাজনীতিতে ইসলামকে ব্যবহার করতে পারতো।
-রাজাকার,আল-বদর,আল-শামস সম্পর্কে বলুন।
নিয়াজী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।পায়চারী শুরু করে।রাজু উঠে রান্না ঘরে যায়।আরও দু’কাপ চা বানিয়ে আনে।
-রাজু সাব আপনার চা বানানোর হাত বহুত খুব।আসলে রাজাকার তৈরি করার সময় আমরা কথা দিয়েছিলাম প্রথম চালানে ২,৫০০ লাইট মেশিন গান আর সমসংখ্যক স্টেনগান দেবো।কিন্তু আমরা দিয়েছিলাম ২৭৫ টি লাইট মেশিন গান আর ৩৯০ টি স্টেনগান ।
-এত কম সংখ্যক দিয়েছিলেন কেন?
-গাদ্দারকে কেউ বিশ্বাস করেনা রাজু সাব।যারা আপন ভাইয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তারা সবার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।আমরাও রাজাকারদের পূর্ণ আস্তায় রাখতে পারিনি।রাজু সাব,আজ আলোচনা বাদ রাখি,আর একদিন আলাপ করবো।
রাজু ডায়েরী বন্ধ করে।চায়ের কাপ নিয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়।ফিরে এসে দেখে নিয়াজী চলে গিয়েছেন।রাজু রেডিও অন করে।শেখ মুজিবের বক্তৃতা চলছে রেডিওতে-“ আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে,আমরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নই।এ কথার জবাবে আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট।আমরা লেবেল সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই।আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে।আমাদের ইসলাম হযরত মুহম্মদ (সা.) এর ইসলাম,যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোগমন্ত্র।ইসলামের প্রবক্তা সেজে যারা অন্যায়,অত্যাচার,শোষণ ও বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছে আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে।যে দেশের শতকরা ৯৫ ভাগই মুসলমান সে দেশে ইসলাম বিরোধী আইন পাশের কথা ভাবতে পারে তারাই,ইসলামকে যারা ব্যবহার করে দুনিয়াটা ফারাস্থা করে তোলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত”।

চলবে

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

বিজন রয় বলেছেন: কবিতা কি আর পোস্ট দিবেন না!!

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৮

সুদীপ কুমার বলেছেন: এই লেখাটি শেষ করার জন্য আপাতত কবিতা লেখাই বন্ধ রেখেছি।

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৫৪

রিএ্যাক্ট বিডি বলেছেন: wow হোচে

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১১

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: আগে এই লেখাটা সুন্দরভাবে শেষ করুন।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১১

সুদীপ কুমার বলেছেন: ঠিক আছে রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.