নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খন্ডিত রুপকথা (৮ ম অংশ)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৭


-স্যার,আর এক দফা চা চলেগা?
মেজর শালিকের কথায় ইয়াহিয়া সম্মতি জানায়।
রাজু রান্নাঘরের দিকে যায়।আশরাফুজ্জামানও সাথে যায়।
রাজু চায়ের জল তুলে দেয়।আশরাফুজ্জামান চায়ের কাপ ধুতে থাকে।
-ভাই, আপনাদের খারাপ লাগতোনা?
রাজু প্রশ্ন করে।
-কি?
আশরাফুজ্জামান কাপ ধোয়া থামিয়ে দেয়।
-এই যে আপনি আপনার শিক্ষকদের গুলি করে মারলেন।
রাজু উত্তর করে।
-কোন শিক্ষকদের কথা বলছেন?
-কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের?
-তারা শিক্ষক নামের কুলাঙ্গার ছিল।ইসলামের দুশমন ছিল।আওয়ামীলীগের সমর্থক ছিল।আর মদ্দা কথা পরিস্থিতি যেভাবে বাঁক নিচ্ছিল তাতে আমরা বুঝতেই পারছিলাম আমরা পরাজিত হবো।অবশ্য এসব বোঝার অনেক আগেই আমাদের উপর নির্দেশ এসেছিল বাঙালি স্বাধীনতাপন্থী বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করার।আর এসব আমরা বেশ আনন্দের সাথেই করেছি।কারণ পাকিস্থান ভাঙ্গার অর্থই হলো আল্লাহর ঘর ভাঙ্গা।

চা আর চানাচুর নিয়ে রাজু আর আশরাফুজ্জামান বসার ঘরে প্রবেশ করে।চা শেষ করে সবাই।চৌধুরী মঈনউদ্দিনই সর্বপ্রথম নীরবতা ভাঙ্গে।
-ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা এত যত্মে রেখেছেন যে? কি আছে ওতে?
-ডায়েরীটি ছিল আশরাফুজ্জামান ভাইয়ের।রাজু বলা শুরু করে।
যুদ্ধের পর আশরাফুজ্জামানের বাসায় ডায়েরীর রক্তমাখা ছেঁড়া পাতাগুলি পাওয়া যায়।মূলত এটি ছিল হিট লিষ্ট।যেমন হিটলিষ্ট পাওয়া যায় জঙ্গীদের কাছে।পাওয়া যায় শিবিরের ক্যাডারদের কাছে।পাতাগুলিতে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম।কে কোন অনুষদের আর বাসার ঠিকানা।আরও আছে শিক্ষকদের মধ্যে যারা ছিল পাকিস্থানপন্থী তাদের নাম।ঢাকা শহরের শীর্ষস্থানীয় আল-বদর নেতার নাম।স্বাধীনতার পর ওই সব শিক্ষকদের লাশ রায়ের বাজার আর মীরপুরে পাওয়া গিয়েছে।অবশ্য বেশীরভাগ বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করা হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর।
-ওতে আমার নাম আছে?
চৌধুরী মঈনউদ্দিন উৎসাহ নিয়ে বলে।
-আছে।সাথে আরও একজনের নাম আছে,সাখাওয়াৎ ইমরান।আচ্ছা মঈনউদ্দিন ভাই আপনিতো বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডের মূল হোতা ছিলেন?
-কি যে বলেন রাজু ভাই।সারাজীবন আমি ইসলামের জন্য যুদ্ধ করছি।
-আশরাফুজ্জামান খান ভাই আপনিতো ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন?
আশরাফুজ্জামান খান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।
-আশরাফুজ্জামান ভাই, পাতায় একজনের নাম পেয়েছি,যিনি কিনা শিক্ষক ছিলেননা।
-নামটা বলুন।আশরাফুজ্জামান বলেন।
-আব্দুল খালেক।
-উনি তখন পাকিস্থান জুট বোর্ডে কর্মরত ছিলেন।অর্থ বিভাগে ছিলেন।আমরা তাকে ধরে এনে ভাবীর কাছে মাত্র দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাই।কিন্তু খালেক ভাবীর কাছে তখন ছিল মাত্র ৪৫০ টাকা।কি আর করা বেটারে জবাই করে ফেললাম।
-গুলি করে মারতে পারতেন?
-জবাই করার মধ্যে আলাদা একটা জোস আছে।ও রাজু ভাই আমাদের সময় যদি এখনকার মত ইলেকট্রিক মিডিয়া থাকতো,ফেসবুক থাকতো কত মজাই না হতো!
আশরাফুজ্জামানের কথায় ঘরের সবাই অবাক হয়।
-কেন?চৌধুরী মঈনউদ্দিন প্রশ্ন করে।
-আরে ভাই পত্রিকায় দেখেননি দায়েস জঙ্গীরা জবাই করার আগে কত সুন্দর পোজ দেয়।শুধু দায়েসের কথা বলি কেন,আমাদের পোলাপান কম কিসে?হলি আর্টিজান অপারেশনের আগে কত সুন্দর করে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছিল।আমিও ছবি তুলতাম যদি থাকতো।বিশেষ করে প্রফেসর মুনীর চৌধুরী হত্যার আগে।আমি অবশ্য দায়েসের মত মুখোশ পড়তামনা।
আশরাফুজ্জামানের কথায় ইয়াহিয়া খান উচ্চস্বরে হেসে ফেলেন।মেজর শালিক নড়েচড়ে বসেন।চৌধুরী মঈনউদ্দিন দাঁত বের করে হাসে তবে নিঃশব্দে।রাজু চৌধুরী মঈনউদ্দিনকে দেখতে থাকে।রাজুর কাছে মনে হয় পাকিস্থানী আর্মীর পিছনে একটি কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। যে কিনা লেজ নাড়ছে।

(৫)
দীপ্ত গরুর গাড়িতে চড়ে বসে।নলিন গাড়োয়ানের পাশে বসে আছে।শহরের মানুষগুলি দ্বিগ্বিদিক জ্ঞান শূণ্য হয়ে গ্রামের দিকে ছুটছে।
-বাবা,তুমি পালাচ্ছো?
দীপ্তর কথায় নলিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।কিছুক্ষণ চুপ থাকে।তারপর মৃদস্বরে বলে,আমি তো এখনও বিয়ে করিনি।
-আমার জন্ম হয়েছে দেশ স্বাধীনের পরে।তুমি আমার পিতা।
নলিন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
-গাড়িতে কে আছে?
-তোর ঠাকমা?
গাড়ির পর্দা উঠায় দীপ্ত।ঠাকুমা দীপ্তর দিকে চায়।মিষ্টি করে হাসে।
-ভালো আছিস বাবা?
-হ্যাঁ,ঠাকমা ভালো আছি।
দীপ্তর ভালোই লাগে গরুর গাড়িতে বসে থাকতে।
-বাবা,তোমার পা দিয়ে রক্ত ঝরছে।
-আর বলিসনা শেলের শব্দে এমন ভয় পেয়েছিলাম যে মাকে নিয়ে লালদিঘির পাড় দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছি।দৌড়ানোর সময় পায়ে কাঁচ ফুটেছে।
-বাবা পালাচ্ছো কেন?
-পাকিস্থানী আর্মী আর বিহারীরা যা শুরু করেছে।জীবন বাঁচানোই কঠিন।
-ঘুরে দাঁড়াও।মুক্তিযুদ্ধে অংশ নাও।
নলিন উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কথা বলেনা।দীপ্ত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।বাবাকে চলে যেতে দেখে।বাবা তার পালিত মাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।মাতৃভূমির ডাক উপেক্ষা করে।নলীন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেইনি।কাপুড়িয়াপট্টির কয়জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল,দীপ্ত ভাবতে থাকে।চিন্তামগ্ন হয়েই দীপ্ত পা বাড়ায়।সিলেটের হাওড়ে যেতে হবে।দাস পার্টি অপেক্ষা করছে দীপ্তর জন্যে।
(চলবে)
১ম অংশ (Click This Link)
২য় অংশ (Click This Link)
৩য় অংশ (Click This Link)
৪র্থ অংশ (Click This Link)
৫ম অংশ (Click This Link)
৬ষ্ঠ অংশ (Click This Link)
৭ম অংশ (Click This Link)



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৪

শ.ম. শহীদ বলেছেন: অনেক সুন্দর উপস্থাপন।
সবগুলো অংশ পড়তে হবে।।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩৭

ইরিবাসের রাত বলেছেন: অসাধারণ। আজ রাত জেগে সবগুলো পড়ব।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫

সুদীপ কুমার বলেছেন: ভালোলাগা জানালাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.