নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুকান্ত কুমার সাহা

I like to seek knowledge.

সুকান্ত কুমার সাহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

" বাসন মেজে আন " - একটা ঠগি কোড !

১২ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:৩৩

" বাসন মেজে আন " - বাক্যটি, আপাতদৃষ্টিতে একজন গৃহিণীর খুবই সাধারণ একটা ঘরোয়া আদেশ বলেই মনে হবে সবার কাছে !



কিন্তু কখনো কখনো বিষয়টা তা নাও হতে পারে। এই যেমন- এই বাক্যটাকেই ঠগিরা ব্যবহার করত মানুষ খুন শুরু করার কোড হিসেবে। অর্থাৎ ঠগি সর্দাররা এই কোড ব্যবহার করেই তার শিষ্যদের আদেশ দিত মানুষ শিকার শুরু করতে। আর এইভাবেই প্রায় ২০ লক্ষ নিরীহ পথচারী মারা পড়েছিল তাদের হাতে ষোড়শ - সপ্তদশ শতাব্দী ধরে এই ভারতবর্ষে এবং এর একটা বড় অংশ সংগঠিত হয়েছিল এই বাংলায় ।



বাড়ি থেকে বের হওয়া কর্মজীবী এই নিরীহ মানুষগুলো স্রেফ হাওয়া হয়ে যেত সেইসময় গুলোতে। তাদের নির্মমতা এত ভয়ংকর ছিল যে, মাত্র ২০ জনের একটা দল প্রায় ৫,২০০ মানুষ হত্যা করে নিখুঁত ভাবে মাটিতে পুঁতে গুম করার পাশাপাশি তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছিল। আর সর্দার বেহরাম একাই হত্যা করেছিল প্রায় ১,২০০ মানুষ। ধরা পড়ার পর এর জন্য ন্যুনতম অনুশোচনাও প্রকাশ করেনি সে, উলটো বলেছিল, ব্যবসা করে মানুষ কি কখনো অনুশোচনা করে?



মজার বিষয় হল, এই ঠগি প্রজাতির মানুষ গুলোর উৎপত্তি হয়েছিল উত্তর ভারতে এবং তারা বহু শতাব্দী ধরে কারও কোন কিছু জানার বাইরেই বংশ পরম্পরায় তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে পেরেছিল। কিন্তু ১২৯০ এর দিকে সুলতানের শাসন আমলে কিছু ঠগ ধরা পরে, যাদের সংখ্যা ছিল প্রায় হাজার খানেক। ধরা পড়ার পর তাদের সবাইকে দিল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কঠোর শাস্তির জন্য। সম্রাটের পারিষদ বর্গ যদিও ওদের সবার জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সুলতান তাদের একজনকেও হত্যা না করে জামাই আদরে নৌকায় তুলে ভাটির দেশে- তথা এই বাংলা মূলকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, দিল্লীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার শর্তে। আর তারপর থেকেই- এই বাংলার জলে-স্থলে, মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে পরে এই খুনির দল।



আরো মজার বিষয় ছিল যে, ধর্ম বিশ্বাসে ওরা হিন্দু, মুসলিম ও শিখ হলেও সবাই মা ভবানী তথা মা কালীর উপাসক ছিল এবং তার আশীর্বাদ কামনা করত বেশী বেশী শিকারের আশায় ! বর্তমান পশ্চিম বাংলার গঙ্গা নদী ধারে অবস্থিত কালীঘাট মন্দিরটি ছিল তাদের ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র।



তারপর, ১৮৩০-এর সালে ভারতের প্রশাসক উইলিয়াম হেনরি শ্লীম্যান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দলে দলে ধরে ধরে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন জেল ও দ্বীপান্তর দিয়ে এদের দমন করেন এবং বাকী গুলো ওনার ভয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষ তথা বাংলা ঠগি মুক্ত হয়।



আমার এই লেখার মুল উদ্দেশ্য আসলে ঠগিদের ইতিহাসের পুরনো কাসুন্দি ঘাটাঘাটি করা নয়। আমি আসলে বুঝতে চেষ্টা করছি- ঠগিরা তাদের কর্মকাণ্ড বাদ দিলেও মানুষ খুন করার যে স্পৃহা বংশ পরম্পরায় তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল তা বর্তমান প্রজন্মে চলে এসেছে কিনা?- সেই সম্পর্কে।



আমি যতদূর বুজি, তাতে করে আমি বিশ্বাস করি, এই স্পৃহা মানব ডিএনএ এর মাধ্যমে তাদের পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও সুপ্ত অবস্থায় চলে এসেছে এবং ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মত সময় ও ক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছে। হয়ত এরা আমাদেরও মধ্যেই মিশে আছে আর তাই স্থান কাল পাত্র পরিবর্তিত হলেও খুনের নেশা কমেনি, হয়ত এর ধারা ও কৌশল কিছুটা পাল্টেছে । আর তাইতো প্রতিনিয়তই আমরা দেখতে পাই রাস্তা ঘাটে সজ্জনের মত আচরণকারী পার্শ্ব যাত্রীর দেওয়া খাবার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে কোন কোন মানুষ, এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মারাও যাচ্ছেন। অনেককে আবার খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না- গুম হয়ে যাচ্ছে চিরতরে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি বা গুম পার্টির মানুষগুলো কি সেইসব ঠগিদের জিন বহন করছে না ? এরা কি তাদেরই উত্তরাধিকার নয় ? – আমার প্রশ্ন আসলে এটাই।



যদিও আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই, তবুও যতটুকু বুঝি, তাতে করে বলেতে পারি, খুনে জিন এখনো এই বাংলার মানুষের মধ্যে বহমান, সময় সুযোগে তা বার বার একটিভ হয়ে ওঠে এবং নিঃশব্দে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। গুম করে ফেলে নিরীহ নিরাপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে সামান্য কিছুটা টাকার লোভে বা ব্যক্তিস্বার্থে । তার নমুনা কি আমরা আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো থেকে বুঝতে পারছি না ?



তাই বলছি, যতদিন না উইলিয়াম হেনরি শ্লীম্যান-এর মত একজন দক্ষ প্রকাশক আবার এসে এই একটিভ হয়ে ওঠা ঠগি জিন গুলোকে ডি-একটিভ করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ "বাসন মেজে আন" বললেই খুশি হয়ে উঠবেন না বা শুনে ক্ষুধা অনুভব করবেন না !!!



খুব খেয়াল কইরা, কইলাম !!!



১২.০৫.২০১৪ ৫.০০ বিকাল

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.