নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুকান্ত কুমার সাহা

I like to seek knowledge.

সুকান্ত কুমার সাহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৩

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১

তেল নিয়ে আর একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিশ্বে; আর সেটা হলো এর দাম কমানোর যুদ্ধ। তেল উৎপাদনকারীদের মধ্যে অন্যতম; সৌদি আরব মুলতঃ এই যুদ্ধ শুরু করেছে- তার চিরশত্রু ইরানকে শায়েস্তা করার জন্য। এমনকি এই দেশটার একরোখা মনোভাবের কারণে ওপেক আজ নিজেই আছে বিপদে; আছে চাপে ক্রমাগত ‘তেল উৎপাদন’ বাড়ানোর। ফলশ্রুতিতে ডিম্যান্ড আর সাপ্লাই-এর ধ্রুম নিয়মে এর দাম ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।

‘দাম কমানোর যুদ্ধ’ কথাটা শুনে হয়ত আমাদের কাছে অবাকই লাগছে কারণ আমরা সচরাচর দাম বাড়ানোর যুদ্ধ দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান যুদ্ধের মধ্যে নানা ধরনের যুদ্ধ হচ্ছে। কখনো হচ্ছে শিয়া-সুন্নি যুদ্ধ, কখনো হচ্ছে- আইএস বনাম কুর্দি। আবার যুদ্ধ হচ্ছে- সৌদি, ইসরাইল, তুরস্কসহ আরব শেখ রাজদের মিলিত বন্ধু শক্তির সাথে আসাদ, ইরান, রাশিয়া আর হিজবুল্লাহ গেরিলাগোষ্ঠীর মধ্যে। আর এদের সবার সাথে কখনো বন্ধুবেশে আবার কখনোবা শত্রুবেশে আছে আমেরিকা স্বয়ং।

মুলতঃ বেশী দামে অস্ত্র বিক্রি আর কমদামে তেল কিনে ধ্বসে যাওয়া নিজ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য; যার ফল সে ইতিমধ্যেই হাতে হাতে পাচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে দিন দিন এবং সামনের দিনগুলোতে ডলার ক্রমাগত শক্তিশালী হবে। ফলে দুর্বল হবে স্বর্ণসহ ইউরো, ইয়েনের মত মুদ্রাগুলো। এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভাল যে, মূলতঃ মার্কিন মুদ্রা ‘ডলার’ বিশ্বব্যাপী কেনাবেচার কমিশন থেকেই আমেরিকার মূল আয়টা আসে। মোদ্দাকথা পৃথিবীতে যত ব্যবসায়িক লেনদেন হয় তার সিংহভাগই হয় ডলার দিয়ে আর এথেকে আমেরিকা একটা কমিশন পায় ‘সার্ভিস ফি’ হিসেবে।

ইউরো, ইউয়ান শক্তিশালী হয়ে যাওয়ায় ডলার ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছিলো গত কয়েক বছর ধরে। এবার সে রিভার্স খেলতে যাচ্ছে। এথেকে ধারণা করি, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধটা র‍্যাপিডলী বিস্তৃতি লাভ না করলেও চলবে অনেকদিন ধরে এবং আইএস ধ্বংস হবে না ততদিন পর্যন্ত যতদিন না তার প্রয়োজন ফুরাচ্ছে। আমার এই ধারণা আবার ভুলও হতে পারে কারণ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এটা মেনে নেবে না বলেই মনে হচ্ছে; ক্ষতিটা যে তারই হচ্ছে শেষ পর্যন্ত।

বৈপরীত্যের এক চরম প্রকাশ দেখা যাচ্ছে আজ মধ্যপ্রাচ্যে- একদিকে আমেরিকা ও তার ইউরোপ-আরবের মিত্রদেশ গুলো আইএসকে অস্ত্র, ট্রেনিং, অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাত করার জন্য; আবার অপরদিকে সেই আইএসেরই উপর বম্বিং করছে সিরিয়ার কোবানীতে, ইরাকে তাদের দখলীকৃত ভূমিতে। আবার অন্যদিকে আল কায়দার মধ্যপ্রাচ্যের উইং আল-নুসরাকে অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা জোট, দিচ্ছে ট্রেনিংও আবার সেই আল-নুসরার উপরেও বম্বিং করছে সেই আমেরিকাই। বলা হয়ে থাকে, আইএস আমেরিকার ব্রেনচাইল্ড হলেও এটা তৈরিতে মূল ভূমিকা রেখেছিল সৌদি আরব, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের রাজকীয় সুন্নি ভাবধারার সরকারগুলো যাদের মূল লক্ষ্য ছিল শিয়া বলয়টাকে ভেঙ্গে ফেলা কিন্তু যেদিন আইএস প্রধান নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের খলিফা হিসেবে ঘোষণা দিলেন; সেদিনই আসলে সে নিজের পতন নিজেই ডেকে আনলেন। সৌদি রাজের চক্ষুশূল হলেন, খেলার দান উল্টে গেল; যেমনটা হয়েছিলেন মিশরের পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুসরির বেলায়। এটা আসলেই এক ঘরকা দো পীর সমস্যা। এখন আইএস, সৌদি বিমানের মূল টার্গেট; একে আবার সঙ্গ দিচ্ছে আমিরাতের বাদশাহ।

তুরস্ক খেলছে মাল্টি গেম; সে আছে দুদিকেই তার লক্ষ্য সীমান্তের আতঙ্ক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ আর সংখ্যালঘু কুর্দিরা; যারা আবার অধিকাংশই সুন্নি মতাবলম্বী এবং স্বাধীনতা চায়। একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে- তুরস্ক আর কাতার আছে দুইদিকেই। একদিকে যেমন তারা আমেরিকা ও তার মিত্রদের পক্ষে আছে; আছে আইএসের পক্ষেও। কোবানীর যুদ্ধে তুরস্ক যেমন আছে আইএসের পক্ষে; আবার আছে কুর্দিদের পক্ষে-বিপক্ষেও। আইএসকে তারা সহযোগিতা করছে বা মৌন সম্মতি দিচ্ছে কোবানি দখলে ও গণহত্যায়, আবার কোবানির কুর্দি জনগণকে নিজভূমিতে আশ্রয়ও দিচ্ছে রিফিউজি হিসেবে। অপরদিকে কুর্দিদের এই খারাপ সময়ের মধ্যেও তারা কুর্দি যোদ্ধাদের উপর বম্বিং করেছে। আবার ইরাকের কুর্দিস্তানের পেশমেরগা যোদ্ধাদের নিজ ভূখণ্ড ব্যবহার করে কোবানিতেও ঢুকতে দিয়েছে অস্ত্রশস্ত্রসহ; আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য।

মধ্যপ্রাচ্যের এই বহুরূপী যুদ্ধের মধ্যে আসলেই আমার মত একজন অতি সাধারণ মানুষের পক্ষে তাল সামলানো সম্ভব না। তবে যে যুদ্ধের কথা বলতে যেয়ে আজকের এই লেখার অবতারণা করেছিলাম তা থেকে ইতিমধ্যেই অনেক দূরে চলে এসেছি। বলছিলাম ‘তেলের দাম কমানোর যুদ্ধ’ নিয়ে।

হ্যাঁ! ইতিমধ্যেই এই যুদ্ধের ফল হাতে নাতে পাওয়া যাচ্ছে, বিশ্ববাজারের তেলের দাম গত বছরের তুলনায় এবছরেই ৩৫ ভাগেরও বেশী কমে গেছে। এখন এক ব্যারেল ক্রুড তেলের বাজার মূল্য ৭০ ডলারের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে; কয়েকদিন আগে যা প্রতি ব্যারেল ৬৬ ডলারেও নীচে নেমে গেছিলো।

এখন মূল প্রশ্ন হল, এই যুদ্ধ শুরু করে সৌদি আরবের কি লাভ? এর উত্তর হল- সৌদি রাজ পরিবার ইরানের ভয়ে এতই ভিত যে, তারা তাদের ধ্বংসের জন্য যে কোন কাজ করতে তৈরি থাকে সবসময়। আর তেলের দাম কমানোর মধ্যেই রয়েছে এই যুদ্ধের নীল নকশার আর একটা রূপ। আইএসকে তৈরিটা; যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া সরকার গুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া কিন্তু ঘটনাচক্রে তা বুমেরাং হয়ে যাওয়ায় সৌদিআরব এই নতুন ধরনের তেল যুদ্ধ শুরু করেছে; যাতে আবার বাতাস দিচ্ছে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। কারণ এতে একঢিলে বহু পাখি মারা যাচ্ছে- রাশিয়া ইতিমধ্যেই তেল বিক্রিতে একশত বিলিয়ন ডলারেরও বেশী লোকসান দিয়েছে, ভেনিজুয়েলাও দিচ্ছে ব্যাপক লস। তাতে করে আমেরিকার শত্রু দেশগুলো পড়তে যাচ্ছে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় যা বর্তমানে চলছে আমেরিকা তথা ইউরোপীয় দেশগুলোতে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় এখন তা রিভার্স হবে, অন্য দেশের মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ‘ডলার’ মুদ্রা হিসেবে ক্রমেই শক্তিশালী হবে। আয় বাড়বে আমেরিকার। পাশাপাশি তার তৈরী কূট প্ল্যানের থিওরী আর প্র্যাক্টিকালটা খাপে খাপে মিলে যাওয়ায় তা মধ্যপ্রাচ্যে অনেকদিন বলবত থাকবে- এটা ধরে নেওয়া যায়। যতদিন না রাশিয়া বাগড়া দিচ্ছে।

ইতিমধ্যেই রাশিয়ার মুদ্রা ‘রুবল’ ধসে পড়তে শুরু করেছে এবং অবস্থার পরিবর্তন না হলে ২০১৫ সালে এটা পুরোপুরি ধ্বসে যাবে। অপরদিকে কম দামে তেল কেনার এমন মওকা পেয়ে চিন আর ভারত আছে চুপ মেরে। সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশও কমদামে তেল কেনার। ওই যে গত পর্বে বলেছিলাম, আলুর গুদামে আগুন লাগলে ক্ষতি এর মালিকেরই হয় কিন্তু তা থেকে লাভ অনেকেই ঘরে তোলে; এবার সেই অনেকের দলে আমরাও আছি। অন্ততঃ বিদ্যুতের দাম আগামী কিছুদিন বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে! থ্যাঙ্কু সৌদি রাজ!

০৩/১২/২০১৪

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

আহসানের ব্লগ বলেছেন: কিছু জানলাম।
থ্যাংকস

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮

সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেন: ধন্যবাদ !!!

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাকীটা নিয়ে ভিন্নমত না থাকলেও -ন্ততঃ বিদ্যুতের দাম আগামী কিছুদিন বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে! এটা মনে হয় ঠিক না!

কারণ ওইযে লাভের এমন মওকা বেপারীরা ছাড়বে কেন???

নইলে ভাবা যায়- একলাফে আড়াইগুনের বেশী দাম পৃথিবীর কোনদেশে বাড়ানো যাবে? না অতীতে বাড়িয়েছে?
অথচ গ্যাস বার্ণার হাজার টাকা হয়ে গেল!
বাড়ী ওয়ালার নোটিশ দিয়ে খালাশ!!!

মরল কে?

আমজনতা!!!!

জয় বাংলা!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯

সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেন: পুড়োটাতে একমত না হলেও চলবে ! তবে আমার মনে হয় বিদ্যুতের দাম বাড়বে না অন্তত কিছুদিন !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.