নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি দৌঁড়ে ট্রেনটির সামনে দিয়ে পার হবার চেষ্টা করব। ট্রেনটি আমার কাছাকাছি চলে আসবে। আমি তবু লাইনটি পার হবার চেষ্টা করব। যদিও জানি পার হওয়াটা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ একে তো ট্রেনটি তার চরম গতিতে থাকবে তার উপর আমার বুক বরাবর এসে যাবে। হ্যাঁ, তারপরও আমি পার হবার চেষ্টা করব। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেললাইন থেকে পা টেনে নিব। ট্রেনটি বাতাসে তীক্ষ্ণ আওয়াজ তুলে চলে যাবে। বাতাসের সাই সাই শব্দ আমার শরীরটাকে জন্মদিনের কেকের মত তাল তাল করে কেটে ফেলতে চাইবে। তবে আমি বেঁচে যাব নিশ্চয়। আমার চোখের সামনে দ্রুতগামী ট্রেনের যাত্রীগুলো আবছা, অস্পট, ধূসর মনে হবে। ট্রেনটি চলে যেতে থাকবে, ঝিকঝিক ঝিকঝিক। আমি শুধু তাকিয়ে থাকব—এই ঝিকঝিকের অর্থ খুঁজব। যেভাবে খুঁজতাম ছোটবেলায়। তখন ট্রেনের এ ভাষা আমার কাছে ভীষণ স্পষ্ট ছিল। এখন একেবারেই অস্পষ্ট। আসলে শৈশবে আমাদের চারিপাশের সবকিছুর সুন্দর অর্থ থাকে ধীরে ধীরে তা বদলে যায়। ধূসর থেকে ধূসর হয়।
ট্রেনটি চলে গেলে আমি আবার রেল লাইন পা দিব। পেছন থেকে একজন আমাকে বলবে, থামো।
আমি দাঁড়িয়ে পড়ব হয়ত।
-তুমি আত্মহত্যা করতে চাইছিলে কেন?
- আসলে আমি ঐ পারে যেতে চাইছিলাম।
-না, তুমি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলে।
-আমার মধ্যে অনেক অপূর্ণতা। সেই অপূর্ণতা থেকে মুক্তি পেতে ওপারের স্কুলে যাচ্ছিলাম।
- কোথায়?
-ওপারে ঐ যে স্কুলে।
- কোথায়? কোনো স্কুল দেখছি না তো। শুধু দিগন্ত জোড়া মাঠ।
-না। আমি তো ঠিক দেখতে পাচ্ছি। ঐ স্কুলে মানুষের অপূর্ণতা ঘোচানোর টিউশন দেয়া হয়।
-আসলে তুমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে। প্রত্যেক মানুষ অপূর্ণতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। অতপর সে সারাটি জীবন পূর্ণতার খোঁজ করে। কিন্তু ট্রাজেডিটা কোথায় জানো?
- কোথায়?
- সে অপূর্ণতা নিয়েই মৃত্যুবরণ করে।
আমার দু চোখ জুড়ে জল চলে আসবে হয়ত। আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকব।
-আসলে আমরা যে বেঁচে আছি কারণ আমরা কাঁদতে জানি। কাঁদো। তোমায় আমি বাঁধা দেব না।
বাতাস ভারি হয়ে আসবে আকাশ ভারি হয়ে আসবে। আরেকাট ট্রেনের শব্দ দূরে শোনা যাবে। আমি বলব, আমার মনে হয় ভীষণ তাড়া ছিল তাই ঐ দ্রুতগামী ট্রেনের সামনে দিয়ে রেল লাইনটা পার হতে চলে ছিলাম।
-ওসব বাদ দাও। আমি সব জানি। তবু একটি প্রশ্ন তোমাকে করতে চাই।
-করো।
- শেষ মুহূর্তে তুমি ফিরে এলে কেন?
-কারণ.. . আমি জীবনকে ভালবাসি।
©somewhere in net ltd.