নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নব নব সৃষ্টি

সোলায়মান সুমন

সৃষ্টির আনন্দে ঈশ্বর এ মন

সোলায়মান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবুল ফজলের মানবতন্ত্র ও সমসাময়িক ভাবনা

০২ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৫





আবুল ফজলের (১ জুলাই, ১৯০৩-৪ মে, ১৯৮৩) চর্চা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজেও খুব একটা দেখি না। আসলে আমরা তো নক্ষত্র নয় আঁধারের বন্দনায় অভ্যস্ত। আত্মস্বার্থ যেখানে চরিতার্থ হবে না সেখানে আমরা নীরব। আবুল ফজল যে সমাজ ও সভ্যতার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের রাষ্ট্রীয় অবস্থান আজ তার সম্পূর্ণ প্রতিকূলে। আবুল ফজল তাঁর সুচিন্তিত মতামতগুলো মানবতন্ত্র নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। মানবতন্ত্র: যে তন্ত্র ইহজাগতিক সুখ, সমৃদ্ধি, উন্নত জীবন-চেতনার কথা বলে। যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে মজবুত সভ্যতার বুনিয়াদ- এক উজ্জ্বল-উন্নত সংস্কৃতি।



আবুল ফজল বলেন,‘... সভ্যতার প্রথম সোপানই হল চিন্তা- চিন্তার অভ্যাস তথা বুদ্ধির চর্চা।’(সভ্যতার সঙ্কট:মানবতন্ত্র)। তিনি আমাদের এ সভ্যতাকে উপকরণের প্রাচুর্য় ও গতির সভ্যতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিই সভ্যতার একমাত্র মাপকাঠি নয়। মানুষের জীবন চেতনারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন,‘প্রাচীন জীবন দর্শন থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন অথচ নতুন কোন জীবন দর্শনও গড়ে ওঠেনি।’(ঐ)। তিনি আরো বলেন,‘ফলে ব্যক্তি, সমাজ রাষ্ট্র সবই প্রায় হয়ে পড়েছে নীতি ভ্রষ্ট।’(ঐ)। আমাদের জীবনের বিলাসিতা বেড়েছে ( যদিও তা গুটিকতক মানুষের হাতে সীমাবদ্ধ) কিন্তু আমাদের সমাজ, সভ্যতা দিন দিন এক ভয়াবহ সঙ্কট ও ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ মানুষ হয়ে পড়ছে ভোগসর্বস্ব, সবকিছুর মাঝে সে এখন খুঁজে অর্থনৈতিক উপযোগিতা। ফলে মানুষের মধ্যে আসছে হতাশা। হতাশার ফলাফল কী তা প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাবো।

সরদার ফজলুল করিম এক বক্তৃতায় বলেছিলেন,‘রাজনীতি এখন একটি ব্যবসায়িক অভিধানের শব্দ। রাজনীতির মধ্যে এখন আর রাজনীতি নেই, আছে আত্মস্বার্থ লাভের তৎপরতা, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রবৃত্তি।’ আসলে আমরা ভালো রাজনীতির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারি নি। আবুল ফজল ক্ষোভ পকাশ করে বলেছেন,‘রাষ্ট্র পরিচালকদের অসহিষ্ণুতা প্রকাশ্য মোকাবিলা এক রকম অসম্ভব বললেই চলে। ...সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় এ পরিবেশের জন্যই আমাদের দেশে ‘শ, রাসেল কি হাক্সলীর মত বুদ্ধিজীবীর আবির্ভাব কল্পনাই করা যায় না।’ (ধর্ম ও রাষ্ট্র: মানবতন্ত্র)। তিনি মনে করতেন রাষ্ট্র একটি মৌলিক ব্যাপার, এর সাথে অলৌকিকতাকে যুক্ত করলে সেটা গোঁজামিল হবে। আর গোঁজামিল দিয়ে নিশ্চয় সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আমাদের দেশ পরিচালকগণ মানুষের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধান করতে পারে নি। আর তারা তাদের এ ব্যর্থতাকে ঢাকতে অলৌকিকতাকে উলঙ্গ ভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে তাদেরকে খুব সহজেই বলতে শুনি, ‘আল্লার মাল আল্লা নিছে।’ আবুল ফজল বলেছেন. ‘আসল কথা এ যুগে কোন রাষ্ট্রই ধর্মভিত্তিক হতে পারে না, পারবে না, করাতে গেলেই ধর্মকে ফাঁকি ও গোঁজামিলের আড়ালে মুখ ঢাকতে হবে।’ ( ধর্ম ও রাষ্ট্র: মানবতন্ত্র)। তাই বলে তিনি মানবজীবনে ধর্মের ভূমিকাকে অস্বীকার করেন নি। তবে তিনি এও বলেছেন, ‘অন্য মানুষটাও আমার মতই মানুষ- এ বোধ এ চেতনাকে ব্যাপক ও ব্যবহারিক করে তুলতে না পারলে মানুষের রক্ষা নেই। ধর্ম বা সিক্যলারিজম মানবতার স্থান নিতে পারে না।’ ( মানবতন্ত্র: মানবতন্ত্র)। রাষ্ট্রীয় জীবনে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটানোর কথা বলেছেন। সেই সাথে তিনি বার্নাড শ’র সেই বিখ্যাত উক্তিটি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন, ‘Beware of that man whose God is in haven.’ এবং এর জন্য দরকার উন্নত সংস্কৃতির বিকাশ। আবুল ফজল মনে করেন, যে কোনো ধর্মের ধার্মিক হয়েও uncultured থাকা অসম্ভব নয়। এমনকি নির্দিষ্ট কোনো সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি সঙ্কীর্ণ পক্ষপাত uncultured - এর লক্ষণ। আবুল ফজলের মতে, সংস্কৃতি (culture অর্থে) হচ্ছে এক ধরনের সত্য উপলব্ধি। তিনি বলেন, ‘মনুষ্যত্ব তথা মানব ধর্মের সাধনাই সংস্কৃতি এবং একমাত্র এ সাধনাই জীবনকে করতে পারে সুন্দর ও সুস্থ।’ (সংস্কৃতি: মানবতন্ত্র)।





আসলে আবুল ফজল চেয়েছিলেন মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদার প্রতিষ্ঠা। ভিক্ষা ভিক্ষুককে সর্বদা মাথা নিচু করেই নিতে হয়। এখানে মানব মর্যাদা লুণ্ঠিত হয়। ঠিক তেমন এক জাতি বা এক রাষ্ট্র যদি অন্য জাতি বা রাষ্ট্রের সাহায্যে ও দয়া দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকে তবেও মানব-অপমান ঘটে। আবার বল প্রয়োগ কিংবা সামরিক আগ্রাসনেও মানব মর্যাদা ধুলোয় লুণ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদার স্বীকৃতি আর প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব-কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত না হয়ে পারে না।’( মানব কল্যাণ: মানবতন্ত্র)। কিন্তু আজ আমরা মানব মর্যাদাকে ধুলায় লুটোপটি খেতে দেখছি। শুধু দেশের অভ্যান্তরে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমরা দেখছি গুটিকতক শক্তিশালী রাষ্ট্র বিশ্বকে তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে ইচ্ছে মতো পুতুল নাচ নাচাচ্ছে। কখনো দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে কুটকৌশলে তাদের পণ্যের বাজার গড়ে তুলছে, এমনকি তাদের অস্ত্র বিক্রির জন্য অযথা তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে। আবার কখনো বিভিন্ন অজুহাতে এসব দুর্বল রাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ জবরদখলের পায়তারা চালাচ্ছে। ওদের শকুন দৃষ্টি আজ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করার শক্তি টুকু অর্জন করতে পারিনি।



আকাশে আঁধার যত গাঢ় হয় তারার উজ্জ্বলতা ততো বাড়ে, ঠিক তেমনি এ সময়ের আঁধার যত বাড়ছে আবুল ফজল আমাদের কাছে তত উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে।





মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩১

রাজিব বলেছেন: আবুল ফজল এর মত লোকেরা না থাকলে আমরা শুধু কেরানিই থাকতাম বা বড়জোর অফিসার হতাম কিন্তু বুদ্ধির চর্চা আমাদের মধ্যে থাকতো না। আজ আমাদের সমাজে বুদ্ধিজীবী একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। কাজি মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আমাদের জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলাম, কাজি আব্দুল ওদুদ, ড. মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ এরা ছিলেন সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী কিন্তু আমরা তাদের ভুলে গেছি। তাই এ লেখায় কোন কমেন্ট নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.