নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নব নব সৃষ্টি

সোলায়মান সুমন

সৃষ্টির আনন্দে ঈশ্বর এ মন

সোলায়মান সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভগ্ন সময়ের কোলাজ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৯


রবিরশ্মির উজ্জ্বলতায় বাংলা ছোটগল্প অঙ্কুরিত হয়েছে। আর সে আলোতেই পেয়েছে পূর্ণ যৌবন। অতঃপর পূর্ণতার পথ ধরে চলেছে তার অবিরাম পথ চলা। তারাশঙ্কর, মানিক, বিভূতি হয়ে বাংলা ছোটগল্প যখন ছুটে চলেছে ঠিক তখনই রাজনৈতিক হটকারিতায় বাংলা হল দ্বিখণ্ডিত- এটি চল্লিশের দশকের কালোগল্প বলছি। নতুন অসমরাষ্ট্র পাকিস্তানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, শওকত ওসমান, শাহেদ আলী, আবু রম্নশদ, শামসুদ্দিন আবুল কালাম, আবু ইসাহাকের হাত ধরে বাংলা ছোটগল্প এক নবধারার সূচনা করল। বাঙালি মুসলমান গল্পকাররা বাঙালি ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এগোতে পারেননি। তাঁরা এক নতুন ধারার সূচনা করেছেন। তবে ঢাকাকেন্দ্রিক গল্পচর্চায় যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের সকলের অগ্রবর্তী ছিলেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌। তিনি আমাদের গল্পের ভাষা, শিল্পবোধ নির্মাণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন।
আজ বাংলাদেশ এক স্বাধীন ভূমি। সমকালীন বাংলাদেশ বাঙালির শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয় চেতনার পূর্ণাঙ্গ প্রতীক। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, হাসান আজিজুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত আলী, শহীদ সাবের, জহির রায়হান, আবুবকর সিদ্দিক প্রমুখ বাংলাদেশের ছোটগল্পের এক স্বতন্ত্র পরিচয় নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের ছোটগল্প পশ্চিমবঙ্গের ছোটগল্প থেকে ভিন্ন চরিত্র লাভ করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বরাবরই থেকেছে বিক্ষুব্ধ, উত্তপ্ত, অশান্ত; এর সাথে নব নব চেতনা ও আত্মপরিচয়ের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে এদেশীয় বাঙালির মন ও মনন। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা আমাদের গল্পের ভাষা, বিষয় ও শৈলীকে প্রভাবিত করেছে। সত্তরের দশকের রাজনৈতিক সংঘাতের মাঝে আমাদের ছোটগল্প বলতে গেলে একটা নিষ্ফলা সময় কাটিয়েছে। তারপরও এ-সময় গর্ব করার মত কয়েকজন গল্পকারকে আমরা পেয়েছি: মঞ্জু সরকার, ইমদাদুল হক মিলন, জাফর তালুকদার, হুমায়ূন আহমেদ, মঈনুল আহসান সাবের তাঁদের অন্যতম।
আশির দশক, লিটলম্যাগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক দ্রোহের সূচনা করল। তাঁদের ভাষ্য ছিল এমন- গল্প পাঠকের মনোরঞ্জনের বিষয় নয়। গল্প শিল্পের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। আর এই কাজের জন্য তাঁদের একমাত্র আশ্রয়-প্রশ্রয় ছিল লিটলম্যাগ। আশির দশক বাংলা ছোটগল্পকে আবার তার গৌরবের হৃত আসন ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ আমাদের ছোটগল্প বিশ্বসাহিত্যের বিচারে কোন অংশে কম নয়। এতে যাঁদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাঁদের মধ্যে ইমতিয়ার শামিম, ওয়াসী আহমেদ, ঝর্ণা রহমান, পারভেজ হোসেন, শহীদুল জহির, মহীবুল আজিজ, প্রশান্ত মৃধা, মামুন হুসাইন, হুমায়ুন মালিক, শাহাদুজ্জামান অন্যতম।

এ গল্প সঙ্কলনের মূল উদ্দেশ্য নব্বই, প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের গল্পকারদের একটা সাঁকো নির্মাণ করা। যার মধ্য দিয়ে পাঠক সমকালীন বাংলা ছোটগল্প চর্চার একটা খণ্ডিত ধারণা লাভ করবে। খণ্ডিত কারণ: এই স্বল্প পরিসরে সামগ্রিক ধারনা পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সঙ্কলনে বেশ কিছু গল্পকার আছেন যাঁরা সাহিত্যমহলে একেবারেই অপরিচিত বা অল্প পরিচিত। তাঁদের লেখার গুণেই সঙ্কলনের অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। যাদুবাস্তবতার দেশীয় রসায়ন, পৌরাণিক বিশ্বাস ও মাবনচিন্তনের সংঘর্ষ, বাংলাদেশে সামরিক শাসন অতঃপর নষ্ট রাজনীতির উত্থান, বাংলার প্রাচীন ইতিহাস থেকে উঠে আসা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, সাম্প্রতিক দেশের ভঙ্গুর অর্থব্যবস্থার শিকার বিপর্যস্ত মানুষ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক মূল্যবোধের বিচিত্র বিষয়ে লিখিত এসময়ের বায়ু-জলে বেড়ে ওঠা গল্পগুলো বাঙালির জীবনপ্রবাহের ভগ্ন সময়গুলোকে একসূত্রে গেঁথেছে। সেই কারণেই সঙ্কলনটির নাম 'ভগ্ন সময়ের কোলাজ'।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৩৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনার সংকলেনের বহুল প্রসার কামনা করছি

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

সোলায়মান সুমন বলেছেন: ধন্যবাদ, আরণ্যক রাখাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.