নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ফেসবুক লিংক:-https://www.facebook.com/SyedAlFahad.BD

সৈয়দ আল ফাহাদ

টুকটাক লেখালিখি করি!

সৈয়দ আল ফাহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দোয়া করবেন,সকল সাদাকাপড় পরিহিত পরপারের মায়েদের জন্যে

২৭ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩

খড়খড়ে রোদ।
হাতে কিছু ঈদের শপিং।
মনের কোনে একধরনের বিষন্নতা কাজ করছে।
কারো জন্যে কিছু কেনা মিস করিনি তো।না,সব ঠিকঠাক আছে।
ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাচ্ছি।
এবার হয়ত বেশ কিছুদিন ছুটি কাটাবো।
একাকিত্বের রাজধানীতে থাকতে থাকতে জীবন টা কেমন যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।যদিও বাড়িতে গেলে একাকিত্ব আরো ঘিরে ধরবে।তারপরেও নিজের ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় অসংখ্য স্মৃতি জমা পড়ে আছে।আর আছে কিছু চাপা পড়া করুন আর্তনাত।একটি নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের করুন আর্তনাত।
২০১৪ এর রমজান মাস।ছয়মাস যাবৎ আমার মা বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।বয়স টাও তেমন আহামরি কিছু না।তবে অনুপাতিক হারে আম্মুর শরীরে জমাট বাঁধা রোগগুলোর অনেক বয়স হয়েছে।১৫ টি বছর ধরে এই রোগগুলো আম্মুর লিভার,কলিজা,হাড়-মাংস পর্যন্ত চিবিয়ে চিবিয়ে গিলেছে।চিকিৎসাও অনেক করিয়েছে।একটি মধ্যবিত্ত পরিবার যতটুকু করতে পারে, তার চেয়ে অনেকাংশে বেশি করিয়েছে বাবা,মামারা।কিছুতেই কিছু হয়নি।
সম্ভবত ২৫ রমজান।জোহরের নামাজ পড়ে আম্মুর জন্যে দোয়া করলাম।ঘরে এসে আম্মুর চৌকির কাছে গেলাম। পিছনের ঘরের ওই চৌকি টাতে আম্মু ৬মাস যাবৎ শুয়ে আছেন।আম্মু আমার চোখ লাল দেখে বুঝতে পারে আমি কান্না করেছি।আমার আম্মু আমার সব কিছুই বুঝতে পারত।২০১১-১২ সালের দিকে শহরে একটা গার্মেন্টস এ চাকরি করতাম।তখন আমার বয়স ১৮ বছরের মত।পেটের দায়ে গ্রাম থেকে শহরে গিয়েছিলাম।একদিন রাত্রে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম।হাতে থাকা মোবাইলে রিং হচ্ছে।রাত বারোটায় মোবাইলের স্ক্রিনে MA লিখাটা দেখে হৃদপিন্ডের কম্পনটা বেড়ে গিয়েছিল।হ্যালো আম্মু,আস্সালামুআলাইকুম।ঐই দিক থেকে আমার আম্মুর কাঁদো কাঁদো কন্ঠস্বর ভেসে এলো।আম্মু স্বপ্নে দেখেছিলেন আমাকে কেউ মারধর করছে।আমার চোখের জল আর আটকাতে পারলাম না।একটু আগে যে গার্মেন্টস ম্যানেজার ফাইল দিয়ে আঘাত করল তখন ও চোখের টল টল করা পানিটাকে অন্যের হাসির খোরাগ হব ভেবে পড়তে দেয়নি।কিন্তু আমার আম্মুর স্বপ্নের কথা শুনে পানিটাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে শহরের অনেকটা নির্জন রাস্তায় লেমপোস্টের আলোতে হাটছি।আর সমানে চোখের পানি ঝরাচ্ছি।আমার আম্মু এরকম সবকিছুই জেনে যেতেন।তেমন করে সেদিনও চোখ লাল দেখে বলেছিলো কেন কেঁদেসিছ।আমি বলেছিলাম, আম্মু আল্লাহ্'র কাছে আগে দোয়া করতাম তোমার দীর্ঘায়ু চেয়ে।কিন্তু তোমার কষ্টের কথা চিন্তা করে সবাই বলতেছে তোমার সহজ মৃত্যুর জন্য যেন আল্লাহ্'র কাছে দোয়া করি।কথাটা আর শেষ পারলাম না।আম্মু আমাকে কাছে টেনে কপালে একটা চুমু দিয়ে চোখের পানি শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে দিলো। আর হাতের মধ্যে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল ঈদের কাপড় নিয়ে নিতে।এক হাজার টাকাতো একটা নরমাল পাঞ্জবী কিনতেও লাগে।আর আম্মুও জানতেন এই টাকাটা দিয়ে তেমন কিছুই কিনতে পারবো না।
আম্মুকে বললাম,আমার তো নতুন জামা আছে। টাকাটা দিয়ে তোমার জন্যে একটা শাড়ী কিনে আনি।তিনচার বছর ধরেই দেখছি আম্মু নিজের জন্যে কিছুই কিনত না।
পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আম্মুর কিছুই কিনা হয়না।আম্মু আমাকে জড়ীয়ে ধরে বলেছিলেন যেদিন আমার ছেলে আয়-রোজগার করবে সেদিন আমার ছেলের টাকা দিয়ে শাড়ী কিনব।
আজ তার ছেলে আয় রোজগার করছে।মায়ের জন্যে শাড়ী কিনার সামর্থ্য হয়েছে।কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেলেছে ছেলেটা।শাড়ী পড়ার মানুষটা যে অনেক আগেই সাদা কাপড় পরে নিয়েছে।
আমার মায়ের জন্য কিছু করতে না পারাটা আমাকে রাত্রে ঘুমোতে দেয়না।মা, কিছুই করতে পারলামনা তোমার জন্যে। সবার কাছে একটা অনুরোধ কেউ মাকে কখনো কষ্ট দিবেননা।দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্যে। দোয়া করবেন,সকল সাদাকাপড় পরিহিত পরপারের মায়েদের জন্যে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.