নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভদ্রতার সন্ধানে একদিন জাদুঘরে যেতে হবে (প্রথম পর্ব)

১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮




ভদ্রতার সন্ধানে একদিন জাদুঘরে যেতে হবে (প্রথম পর্ব)
সাইয়িদ রফিকুল হক

আর-কিছুকাল পরে মনে হয় ভদ্রতা খুঁজতে আমাদের কোনো জাদুঘরে যেতে হবে। দেশের মানুষের আচার-আচরণ, বেশভূষা ও সর্বোপরি মানবাত্মার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আজকাল তাইতো মনে হচ্ছে। মানুষ এখন বদলে যাচ্ছে। আর সে বদলে যেতেই পারে। মানুষ পরিবর্তিত হবে—এটাই স্বাভাবিক। মানুষের এই পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক বা কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আজকাল সে বদলে গিয়ে ভালো কিংবা মানুষ হচ্ছে না। সে নির্দ্বিধায় হচ্ছে—আপাদমস্তক-ভণ্ড আর চিরায়ত-পশু। এজন্য তার মনে কোনো আফসোস নাই—দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা অনুশোচনাও নাই। সে হাসিমুখে নিজের জন্য পশুত্বকে বরণ করে নিচ্ছে।

আগে মানুষ পরিবর্তিত হতো—আর দিনে-দিনে একটু-একটু করে আরও ভালো হতো। আর আরও ভালো হওয়ার চেষ্টা করতো। আর এখন মানুষ রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে সরাসরি অমানুষে পরিণত হচ্ছে। আরও বেশি পশু হচ্ছে। মানুষ এখন নিজেকে পশুত্বের দিকে ধাবিত করে পশুতে রূপান্তর করছে। নেশাগ্রস্তের মতো মানুষ এখন নিজের উন্নতির দিকে ছুটছে। এখন তার অন্য কোনোদিকে তাকাবার কোনো সময় নাই। মানুষের এই আত্মোন্নয়ন এখন নেশায় পেয়ে বসেছে। আর তার এই মরণনেশা—বাড়ি, গাড়ি, জায়গাজমি, টাকাপয়সা, সুন্দরীস্ত্রীসহ যাবতীয় পার্থিব বস্তুর জন্য। আসলে, এর নাম হচ্ছে—লোভ। মানুষকে এখন লোভে পেয়ে বসেছে আর পাপে ধরেছে।

মানুষ এখন খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে উঠছে। আর এই মানুষ এখন নিজের স্বার্থ ষোলোআনা ব্যতীত আর-কিছুই বোঝে না। স্বার্থনেশায় একশ্রেণীর অমানুষ এখন ভয়ানক অন্ধ। এদের কাছে নিজের লাভ ছাড়া আর কোনো কথা নাই। এই অমানুষের দল এখন চেনে শুধু অর্থসম্পদ, টাকাকড়ি, আর সীমাহীন ভোগ-বিলাসিতা। স্বার্থনেশায় ডুবে এরা এখন রাষ্ট্র চেনে না, সমাজ চেনে না, জাতি চেনে না, মানুষ চেনে না—আর মানুষের মন বোঝে না। এরা আজ এমনই এক ভয়াবহ পশুতে পরিণত হয়েছে। আজ এদের কাছে শুধু নিজের স্বার্থই সবচেয়ে বড়!

একশ্রেণীর মানুষ এখন দিন-দিন লোভী-ইতর হয়ে উঠছে। সে যে আর মানুষ নাই—এই বোধও এখন তার মধ্যে নাই। সে শুধু চেনে টাকাপয়সা, ধনদৌলত, যুবতীনারী আর জায়গাজমি। আর শুধু পরের জমিজমার উপর তার লোভ সর্বাধিক। এই অমানুষগুলো এতো জঘন্য আর এতো ইতর হয়ে উঠছে যে, এদের কাছে আজ দেশ, মানুষ, মানবতাসহ জাগতিক মনুষ্যত্বর ভাবনাসমূহ আজ সম্পূর্ণ তুচ্ছ ও উপেক্ষিত। আর তাই, এই অমানুষগুলো ভদ্রতা শিখবে কোত্থেকে?

কথাগুলো মিথ্যা বলছি না। অদূর-ভবিষ্যতে ভদ্রতা খুঁজতে আমাদের হয়তো জাদুঘরেই যেতে হবে। আজকাল রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মসজিদ-মাদ্রাসায় সর্বত্র এখন বেআদবির ছড়াছড়ি। এ যেন এখন—কে কতবড় বেআদব হতে পারে তারই প্রতিযোগিতা চলছে। আজ গুরুজনের প্রতি অনেকের ন্যূনতম ভক্তিশ্রদ্ধা নাই, শিক্ষকের প্রতি সামান্য আনুগত্য নাই, পিতামাতার প্রতি পরিপূর্ণ ভক্তিভাব নাই, গরিব-দুঃখীমানুষের প্রতি যথার্থ সহানুভূতি নাই, আর ছোটদের প্রতি বিশেষ স্নেহ নাই। সবখানে আজ শুধু নাই আর নাই। এর ভিতরে ভদ্রতা আসবে কোত্থেকে? একশ্রেণীর মানুষ-নামধারী অমানুষের হৃদয়ভূমি থেকে মনুষ্যত্ব ও ভদ্রতা এখন পালিয়ে যাচ্ছে। এদের হৃদয়ে নাই স্নিগ্ধ সতেজ অনুভূতি। এদের হৃদয়ের পলিমাটি ক্ষয়ে-ক্ষয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে পাথুরে কয়লার নতুন সংসার। আর সেই সংসার সর্বদা লোভ, হিংসা, অহংকার, লাম্পট্য, চাতুর্য, দুশ্চরিত্র, দুর্বিনীতভাব, দুর্নীতি, মূর্খতা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ। তাই, এখানে ভদ্রতার ফুল ফুটবে কীভাবে?

আজকাল বাসে উঠলে দেখা যায়, বেআদব কতরকমের। এখন তো বাসের ভিতরে বেআদবিপ্রদর্শন রীতিমতো একটা ‘স্টাইলে’ পরিণত হয়েছে। একশ্রেণীর ছোকরা-বেআদব বাসের একটা সিটদখল করার জন্য আশেপাশের একজন বয়ঃজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে, কখনও-কখনও সজোরে ধাক্কা মেরে, গুতা মেরে, ঠেলে চ্যাপ্টা বানিয়ে ছুটে চলেছে। তবুও এদের একটা সিটদখল করা চাই! এরা আজ একঘণ্টাও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এদের কোমরের জোর আজ বুঝি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেছে! এদের হাবভাব দেখলে মনে হয়—এরা একেকটা শিংভাঙ্গা গণ্ডার। আফসোস, এরা একজন বয়োবৃদ্ধকে আজ সম্মান করতে জানে না!
আপনি ইউরোপে যান—দেখবেন, সেখানেও এরকম বেআদব কোনো লোকজন নাই। সেখানে খ্রিস্টানদের মধ্যেও ধর্ম আছে, ভদ্রতা আছে, আর মনুষ্যত্ব আছে। অথচ, বাংলাদেশে আজ প্রায় সবাই মুখে-মুখে বিরাট-বিরাট মুসলমান! এরা সবখানে আজ ইসলামের দোহাই দিচ্ছে! কিন্তু এদের কার্যকলাপ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট।

আগে বাঙালির ধর্ম ছিল বয়ঃজ্যেষ্ঠকে সম্মান করা—আজ এটিও উঠে যেতে বসেছে! এখন শুধু সবাই লোকদেখানো-নামাজী। আর জুম্মার দিন এলে দেখা যায়, কতকগুলো নরপশু একেবারে পাগল হয়ে উঠছে। এরা কার আগে কে মসজিদে ঢুকবে! এরা বাইরে নামাজী কিন্তু ভিতরে-ভিতরে একেকটা ভয়ানক পাজী! এরা আজও একটি দুষ্কর্মও পরিত্যাগ করেনি। এরা আগে-পরে-এখনও মিথ্যা বলছে, মানুষের ক্ষতি করছে, পরের জমি দখল করছে, খাসজমি হাতিয়ে নিচ্ছে, প্রতিদিন নিয়মিত ঘুষ খাচ্ছে, কাজের মেয়েকে গর্ভবতী করছে, পারজায়িক হচ্ছে, এতিমের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে, ব্যভিচার করছে, বেশ্যার দালালি করছে, রাজনীতির নামে মানুষের ক্ষতি করছে, সরকারি অর্থ লুটপাট করছে, গরিব-মানুষকে ঠকিয়ে সুদ খাচ্ছে—আবার লোকদেখাতে দৌড়ে মসজিদেও যাচ্ছে! হায়রে ভণ্ড! এই আছে তোদের মনে?


এভাবে চলতে থাকলে সত্যি-সত্যি একদিন আমাদের ভদ্রতা খোঁজার জন্য কোনো প্রাচীন জাদুঘরে যেতে হবে। কারণ, আধুনিক জাদুঘরগুলো তো সম্পূর্ণ বেআদবিতে পরিপূর্ণ থাকবে। আর তাই, সেই জাদুঘরে গিয়ে ভদ্রতার চেহারা দেখে আমাদের সন্তুষ্টচিত্তে বাড়ি ফিরতে হবে।



সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি কি সময়ের সাথে ভদ্র হচ্ছেন, নাকি ক্রমেই অভদ্র হয়ে যাচ্ছেন?

১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১২

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আমি যে-টুকু ভদ্র আছি তৎসহ দিন-দিন আরও ভদ্র হওয়ার চেষ্টা করছি।
অভদ্র হওয়ার চেষ্টা করি না।

ধন্যবাদ আপনাকে। ;)

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬

ফয়সাল রকি বলেছেন: মানছি ভদ্রতার বিষয়টা হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ভাই ক্ষেপলেন কেনো?

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: ৭৫ এর পর থেকে বাঙ্গালী বদমাইশ হতে শুরু করে। এখন বদমাইশের চূড়ান্ত হয়েছে মানুষ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:০৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ভালো বলেছেন।
অশেষ ধন্যবাদ ভাই।
সঙ্গে রইলো শুভেচ্ছাসহ শুভকামনা।

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পরিবর্তন অবশ্যসম্ভাবী, এটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আর জাতি হিসেবে আমাদের গর্ব করার মতো আমাদের খুব বেশী কিছু নেই। বর্তমান দুনিয়াতেও আমরা অনেকটাই অভদ্র জাতি, তার অনেক উদাহরণ আমি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনেই পেয়েছি। প্রশ্ন হলো আত্ম-সমালোচনা করার মতো মানসিকতা বা নিজে নিজেদের বিচার করার মতো সৎ সাহস আমাদের আছে কি না? খুব সম্ভবত নেই। তবে এটাও সত্য সময় বা অভিজ্ঞতা ছাড়া ভালো পরিবর্তন আসাটা কঠিন।

রাস্তায় চলতে গিয়ে হোচট না খেলে কেউ কোনদিন রাস্তায় আরো সতর্ককতার সাথে চলাচল করবে না। হোচট না খাওয়ার আগ পর্যন্ত তা ধিন তা ধিন নৃত্য থামানো কঠিন ব্যাপার। লিখার জন্য ধন্যবাদ।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ভালো বলেছেন।

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
সঙ্গে শুভেচ্ছা অন্তহীন। ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.