নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: গলির মাথায় দাঁড়ানো সেই লোকটা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৫১



গল্প:
গলির মাথায় দাঁড়ানো সেই লোকটা

সাইয়িদ রফিকুল হক

লোকটাকে দেখলাম—বড় রাস্তাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। তাকে দেখে হঠাৎ মনে কেমন যেন একটা খটকা লাগলো! এত রাতে একটা মাঝবয়সী লোক রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কী করছেন!
একটু দূর থেকে তাকে দেখছিলাম। কিছুটা দূর থেকেই তাকে কেমন যেন উস্কোখুস্কো মনে হচ্ছিল। তার হাবভাব সবটা বুঝতে পারছিলাম না। কী তার মতিগতি জানতে মনে না চাইলেও হঠাৎ তার জন্য মনটা কেমন যেন করে উঠলো। কিছু-একটা ভেবে তার কাছে এগিয়ে গেলাম।
কিছুটা কাছে যেতেই বুঝলাম—লোকটা কী যেন খুঁজছে!
আর-একটু কাছে এগিয়ে আন্তরিকভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কিছু খুঁজছেন?”
লোকটা যেন এতোক্ষণ আমাকে দেখেনি। হঠাৎ এবার আমি তার নজরে পড়ে গেলাম। তবুও তিনি আমার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে তার জামাকাপড় হাতড়ে বারবার কী যেন খুঁজতে লাগলেন। আর তার পরনের শার্ট-প্যান্টের প্রতিটি পকেট তন্ন-তন্ন করে কী যেন খুঁজতে লাগলেন—সেই আগের মতো।
আমি একটা ভ্যাবাচাকা খেয়ে তার কাণ্ডকারখানা দেখতে লাগলাম। আর ভাবছিলাম, লোকটা আসলে কী খুঁজছেন? আর কেনইবা খুঁজছেন? এত রাতে হঠাৎ তার কী প্রয়োজন হলো?
শেষমেশ তিনি আমার দিকে তাকিয়ে খুব নীরস গলায় বললেন, “আপনার কাছে একটা দেশলাই হবে? মাত্র একটা কাঠি খরচ করবো। দেশলাইটা আমি বাড়ি থেকে সঙ্গে করে এনেছিলাম। কিন্তু তাড়াহুড়ার কারণে কোথায় যেন পড়ে গেছে! কিছুতেই আর খুঁজে পাচ্ছি না!”

আমি তার কথা শুনে একেবারে হতভম্ব! এত রাতে কেউ কারও কাছে দিয়াশলাই চায়! হতে পারে লোকটা কোনো চেইন স্মোকার! কিন্তু তাকে দেখে তো সেরকম মনে হচ্ছে না! তবুও কেন তিনি দিয়াশলাই চাচ্ছেন!
সিনেমা হলের শেষ নাইট-শো দেখে বাড়ি ফিরছিলাম। মদ্যপান করিনি। তবুও এই রাত বারোটায় নিজেরই একটা টালমাটাল অবস্থা। তারউপরে এই লোকটার হাবভাব আমাকে ভয়ংকরভাবে বিস্মিত করেছে। এমনিতে আমি নিয়মিত সিগারেট খাই। আমার পকেটে সবসময় একটা-না-একটা দিয়াশলাই থাকে। আজও আমার পকেটে কাঠিভর্তি একটা দিয়াশলাই আছে।
আমি তার কাছে আরও কিছুটা এগিয়ে দিয়াশলাইটা দিতে যাবো—এমন সময় বুঝলাম—লোকটার গায়ে কেরোসিনের গন্ধ! সারা গায়ে তার কোরোসিন মাখা! হঠাৎ তার তীব্র গন্ধ এলো নাকে! আর মনে হলো—এর সঙ্গে পেট্রোলও থাকতে পারে কিছুটা!

চমকে উঠলাম। আর ভাবলাম—এখন রাত বারোটার বেশি। নির্জন পথের মোড়ে লোকটা দাঁড়িয়ে রয়েছে সারা গায়ে পেট্রোল কিংবা কেরোসিন মেখে! হঠাৎ মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করে উঠলো।
আর অমনি একলাফে দিয়াশলাইটা মুঠো করে দিলাম এক দৌড়!
দৌড়াতে-দৌড়াতে ভাবলাম—ভাগ্যিস তার কাছে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাইনি কিংবা অন্যমনস্কভাবে লোকটার হাতে তুলে দিইনি দিয়াশলাইটা! তাইলে মানুষের কাছে না হোক, বিবেকের কাঠগড়ায় চিরদিন আমাকে হন্তারক হিসাবে অনুশোচনা করতে হতো।
লোকটা আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে আসতে-আসতে তবুও বলছিলেন, “আপনার দেশলাইটা আমাকে একটু দিন। মাত্র একটা কাঠি খরচ করবো। মাত্র একটা কাঠি…!”


পুনশ্চ:
বাড়ি ফিরে মনে মনে ভাবলাম—লোকটা যেন আত্মহত্যা না করে! আহা! জানি না কী দুঃখ-কষ্ট তার মনে! আর মনে মনে প্রার্থনা করলাম কিছুক্ষণ—কেউ যেন তাকে একটা দিয়াশলাই কিংবা তার একটা কাঠিও না দেয়। আর ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই লোকজন যেন তাকে বুঝিয়েশুনিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। আবার এও মনে হলো—যে একবার আত্মহত্যার খাতায় নাম লিখিয়েছে—তাকে কে বাঁচাবে?


সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১২

ইসিয়াক বলেছেন:


বিষন্ন ভালো লাগা। শেষ পর্যন্ত লোকটার কি হলো?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: শে

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি (গল্পের কথক) নিজে লোকটাকা আত্মহত্যা থেকে সরানোর চেষ্টা না করে, চলে গেছেন; আর আশা করছেন যে, অন্য কেহ তাকে বাঁচাবে, এটা প্লট হলো? খাঁটি বাংগালী লেখক।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: গল্পের প্লট।
সবাই তো সাহসী হয় না।
তাছাড়া, বাঙালির ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ অবস্থা।

মন্তব্য করায় আনন্দিত।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫

তারেক ফাহিম বলেছেন: যে একবার আত্মহত্যার খাতায় নাম লিখিয়েছে—তাকে কে বাঁচাবে?


তারপর কোন খবর মিলল?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪৭

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: খবর মিললে আপনাকে ই-মেইলে জানাবো। ;)

মন্তব্যের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
আর শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: গল্প পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম হয়তো এমন হবে যে আপনি তাকে দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিবেন আর চোখের সামনে সে শরীরে আগুন ধরিয়ে দিবে । সেটা শেষ পর্যন্ত হয় নি ।

সুপাঠ্য গল্প !

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৩

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: গল্প ভালো লাগায় আনন্দিত। ;)
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর শুভেচ্ছা অন্তহীন।

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৯

ইসিয়াক বলেছেন:


লেখক বলেছেন: শে
দুঃখিত ভাইয়া বুঝতে পারিনি।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫২

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আমিও দুঃখিত ভাই। :(

আমার প্রথম মন্তব্যটা কেমন করে যেন কেটে গেছে। শুধু শে শব্দটি উঠেছে।
আসলে ভাই, ‘বিধির বিধান কে পারে খণ্ডাতে’?
যে যা চায় ভাগ্য তাকে সেদিকেই টানে।

আবারও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৪

অধীতি বলেছেন: হয়ত বেঁচে গিয়েছিলো।এটাই প্রত্যাশ।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ভাগ্য অনিশ্চিত।
জানি না তার খবর।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা আর শুভকামনা।

৭| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: লোকটা আত্মহত্যা করবে না।

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: ভাই, উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় দুঃখিত।
লোকটার ভবিষ্যৎ জানি না।

আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা আর শুভকামনা।
আর আপনার পরীর জন্য দোয়া রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.