নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

সাইয়িদ রফিকুল হক

আমি লিখি “দেশ, জাতি, মানুষ আর মানবতার” জন্য। আমার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সমালোচনা আমার নিজস্ব ও মৌলিক রচনা। তাই, আমার অনুমতি ব্যতিরেকে এগুলো কপি বা নকল করা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসা। জয় মানবের জয়।

সাইয়িদ রফিকুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: নতুন জাতের মাংসাশী

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩


ছোটগল্প:
নতুন জাতের মাংসাশী

সাইয়িদ রফিকুল হক

এই বহুজাতিক কোম্পানির বড়সড় একটা অফিসার-পদে যোগদান করেও নিবেদিতা রায়চৌধুরী বুঝতে পারলো, চাকরিটা সে করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তার। এটা সে প্রথমদিন অফিসে পা দিয়েই বুঝতে পেরেছে। তার চেহারা ও ব্যক্তিত্বের প্রতি এই অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই আকর্ষিত। এভাবে তার দিনকাল চললে তো সে কিছুতেই শান্তিতে অফিস করতে পারবে না।
কারণে-অকারণে প্রায় সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেকের ‘কেমন আছেন ম্যাডাম’ থেকে শুরু করে অহেতুক আদাব, নমস্কার, হাসি-বিনিময় করার প্রচেষ্টা সমানতালে চলছে। আর যে যেমন পারছে নিবেদিতাকে চোখে-চোখে রাখে।
অফিসের গেইটম্যান পর্যন্ত তাকে দেখে একগাল হেসে বলে, “দিদি, কেমন আছেন? ভালো আছেন তো?” এসব যে সে অসৎ-উদ্দেশ্যে বলেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সব শুনেও বেশিরভাগ সময় সে চুপ করে থাকে।
আর যখন সে চুপ করে থাকতে পারে না তখন নিতান্ত দায়ঠেকে, আর শুধু ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য বলে, “ভালো। আপনি?” কথাটা বলেই সে দ্রুত সটকে পড়ে। কোথাও আর দাঁড়ায় না সে।
এই অফিসে আরও বড়-বড় অফিসার আছে। এদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই চাকরি করছেন। কিন্তু অন্য কারও বেলায় এত লোকদেখানো আদর-আপ্যায়ন সেখানে নেই! শুধু তার প্রতি অনেকের এই অশুভদৃষ্টি! হ্যাঁ, সে এটাকে মনেপ্রাণে অশুভদৃষ্টিই মনে করে। আর এটা মনে করার ক্ষেত্রে তার পক্ষে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সে কোনো বাচ্চা মেয়ে নয় যে, মানুষের লোলুপদৃষ্টি বুঝতে পারবে না। সবকিছু বুঝেও সে চুপ করে থাকে। এই সমাজে মেয়েদের অনেককিছুই করার থাকে না। তাই, সবকিছু নীরবে সয়ে যেতে হয়।
নিবেদিতার বয়স চব্বিশ পেরিয়ে এখন পঁচিশে পরেছে। লম্বা, ফর্সা, স্লিম, আর সবদিক দিয়ে আকর্ষণীয় একটা মেয়ে সে। অসম্ভব সুন্দর ফিগার তার! এজন্য ঘনঘন তার প্রতি সবার এত-এত দরদ!
মাত্র এক সপ্তাহ অফিস করেই সে যেন হাঁপিয়ে ওঠে। কারণে-অকারণে কতজন তার কাছে ভিড়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে লাঞ্চটাইমে অনেকে খুব বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে কী খায়? কী খেতে পছন্দ করে? খাবার খেতে তার ভালো লাগে কিনা? তার খাবারগুলো কে তৈরি করে দেয়? সে নিজে রান্নাবান্না করে কিনা? রান্নাবান্না সে করতে পারে কিনা? অবসরে সে কী করে? টিভি দেখে কিনা? টিভি দেখলে কী-কী দেখে সে? সময় পেলে নাটক-সিনেমা দেখে কিনা? দেখলে কোনটি তার ভালো লাগে? ইত্যাকার অযাচিত প্রশ্নবাণে তারা তাকে জর্জরিত করে ফেলে। তারউপরে তার সাজসজ্জা দেখে অনেকে তার পোশাকআশাক থেকে শুরু করে ফিগারের প্রশংসাও করতে থাকে।
সে মন দিয়ে সবার কথা শোনে। আর গা-বাঁচিয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এ-পর্যন্ত সে কারও কাছে ধরা দেয়নি। একটা ভালো পাত্রের হাতে তার বাবা-মা তাকে তুলে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের প্রতি তার আস্থা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা রয়েছে। এই বয়সে সে কারও সঙ্গে হুট করে আর প্রেম করতে পারবে না। তার প্রেমের বয়স চলে গিয়েছে। এখন সে শুধু একটা মানানসই কিংবা চলনসই সেটেল ম্যারেজের কথাই ভাবছে। তবুও কিছু লোক তার পিছন ছাড়ে না। তার আশাও ছাড়ে না। এদের প্রায় সবাই আবার বিবাহিত!
এভাবে চলতে-চলতে তবুও সে একমাস পার করে ফেলে। এবার তার মনে একটু সাহস সঞ্চারিত হতে থাকে যে, সে চাকরিটা বোধ হয় করতে পারবে। সে লোকজনের সস্তা প্রশংসা আর তারিফের আসল কারণ খুঁজে পেয়েছে। তার এই ফিগারটা অনেকের খুব পছন্দ। তাছাড়া, আর কিছু নয়। এটা বুঝতে পেরে সে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে। এই আধুনিকযুগেও এত শিক্ষিত পুরুষেরা আজও তাকে শুধু একটা মাংসপিণ্ড মনে করে! তবে এদের এত-এত পড়ালেখা শিখে কী লাভ হলো? তাকে কেউ মানুষ কিংবা বন্ধু ভাবে না!

সে যে একটা মানুষ, আর পরিপূর্ণ মানুষ―তা কেউ ভাবে না। সবাই তাকে শুধু একজন মেয়েমানুষ ভাবে। আর তার অসামান্য লোভনীয় ফিগারটাকে হয়তো মনে মনে শুধু কামনা করে! আর তাকে আজও মাংসের দলা মনে করে থাকে!
মাস দুয়েক পরে তার এক সিনিয়র অফিস-কলিগ একদিন বলেই বসলো, “আমরা কি শুধুই অফিস-কলিগ? অন্যকিছু কি ভাবতে পারি না? অন্যদের থেকে আমরা দুজন কি একটু আলাদা হতে পারি না?”
নিবেদিতা এতে খুব অবাক হয়ে বললো, “মানে, আর কী হতে পারি?”
“কেন আমরা কি প্রেমিক-প্রেমিকা হতে পারি না!“―কথাটা বলে লোকটা আপনমনে খুব হাসছিল!
সব শুনে নিবেদিতা নীরসকণ্ঠে বলে, “আসলে, আপনাদের তো বলা হয়নি গতমাসে হঠাৎ করেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে, এখন প্রেম করবো কীভাবে? আমার স্বামী এসব শুনলে খুব রাগ করবেন যে! আর বিয়ের পরে কি মেয়েদের অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেম করা সাজে?”
কথাটা শুনে জাহিদসাহেব কেমন যেন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন। আর কিছুটা আমতা-আমতা করে তবুও বললেন, “কিন্তু আপনাকে তো কখনো সিঁদুর-শাঁখা পরতে দেখি না!”
নিবেদিতা একটু হেসে বলে, “পড়ি তো। খুব হালকাভাবে চিকন করে সিঁদুর লাগাই। আজ হয়তো তাড়াহুড়ার কারণে সিঁদুর লাগাতে একেবারে ভুলে গিয়েছি। আর আপনি যখন বলছেন... কাল থেকে নাহয়... দেখবেন, এরপর থেকে মোটা করে সিঁদুর লাগাবো। আর শাঁখা পরতেও ভুলে গিয়েছি।”
জাহিদসাহেব আর-কিছু বলার ভাষা একেবারে হারিয়ে ফেললেন যেন। তিনি কোনোরকমে তার লাঞ্চের থালা-বাটি গুছিয়ে অন্যদিকে সরে গেলেন। তার গণেশ বুঝি উল্টে গেছে!
তার এই কাণ্ড দেখে আপনমনে হাসে নিবেদিতা। সে বুঝতে পারলো, এখন থেকে তাকে অফিসে নিয়মিত এই নাটকটাও করতে হবে। রোজ সকালে অফিসে আসার আগে সে কপালে নাহয় একটু সিঁদুররেখা টেনে দিবে। আর দু’হাতে সযত্নে পরে নিবে একজোড়া শাঁখা। এতে এমন আর কী হবে! তবুও তো সে এদের ক্ষুধার্ত চোখের দৃষ্টি থেকে একটুখানি হলেও বাঁচতে পারবে।

নিবেদিতা সেদিন লাঞ্চের পর তার আর-এক অফিস-কলিগের সঙ্গে কথায়-কথায় জাহিদসাহেবের সম্পর্কে অনেককিছু জানার চেষ্টা করলো। তাতে সে ওই লোকটির মুখে যা শুনলো―রীতিমতো আঁতকে উঠলো! জাহিদসাহেব অনেক আগে থেকে বিবাহিত। তার দুটি ছেলেমেয়েও রয়েছে! নিবেদিতার মনে হলো এরা প্রেমিক নয়, শুধুই মাংসাশী!

অফিস-ছুটির পর নিবেদিতা এক শিশি সিঁদুর আর একজোড়া শাঁখা কিনে বাসায় ফিরলো। তা দেখে ওর মা বললেন, “সে কী রে! হঠাৎ এসব কিনলি যে?”
নিবেদিতা হাসতে-হাসতে বললো, “এখন থেকে কপালে সিঁদুর পরতে হবে। আর মেয়েদের হাতে শাঁখাও রাখতে হবে। আমাদের অফিসে এমনই একটা নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। তাই, এসব ভালোবেসে কিনেছি, মা। তাছাড়া, আমি তো হিন্দুর মেয়ে! আমার এসব পরতে কোনো দোষ বা বাধা নেই।”
সব শুনে ওর মা বললেন, “এ আবার কেমন নিয়ম রে! বিয়ের আগে তো আমাদের ধর্মে মেয়েদের শাঁখা-সিঁদুর পরার কোনো নিয়ম নেই!”
নিবেদিতা বললো, “থাকবে না কেন, মা। আমি ধর্ম মেনে সিঁদুর পরছি না। এখন ফ্যাশন হিসাবে পরবো। আর বিয়ের পরে ধর্ম মেনে পরবো নাহয়। অনেক মুসলমান মেয়েও তো ফ্যাশন হিসাবে আজকাল সিঁদুর পরে থাকে। তাই বলে তারা তো আর হিন্দু হয়ে যায় না! এটাকে ফ্যাশন হিসাবে ভাবো তো, মা!”
ওর মা তবুও খুঁতখুঁত করেন। আর কী যেন ভাবতে-ভাবতে বললেন, “কিন্তু, তা-ই বলে বিয়ের আগে...। আচ্ছা। ঠিক আছে। অফিসের যখন নিয়ম তখন তো তা মানতেই হবে।”
অফিসের পোশাক ছেড়ে সে সাধারণ পোশাকে টিভিরুমে গিয়ে বসলো। তার বাবা বললেন, “তা অফিস কেমন মনে হচ্ছে, মা?”
সে হেসে বলে, “ভালো, বাবা। ভালো। এখন অনেক ভালো লাগছে। প্রথম-প্রথম কিছুদিন তো খুব খারাপ লাগছিল। এখন বেশ মানিয়ে নিতে পেরেছি। মনে হয় চাকরিটা করতে পারবো।”
ওর বাবা বললেন, “ভালো-ভালো। মানিয়ে নিতে শেখো, মা। আর মনে রাখবে: সকল পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে যে খাপ খাইয়ে নিতে পারে―সেই সবচেয়ে বড় শিক্ষিত!”
নিবেদিতা এবার হাসতে-হাসতে বলে, “বাবা, তাহলে আমি তো এখন থেকে অনেক বড় শিক্ষিতা হয়ে যাবো!”

পরদিন নিবেদিতা অফিসে গিয়ে নতুন একটা কৌশল-অবলম্বন করলো। সে সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে শুরু করে দিলো। আগের মতো সে নিজেকে আর গুটিয়ে রাখলো না। সে ভেবে দেখেছে, ভয় পেলেই যত ভয়। আর ভয়কে তাড়াবার কৌশল হচ্ছে―যাদের থেকে ভয়―তাদের সঙ্গে সাহস রেখে কথা বলা।
অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে তার উর্ধ্বতন-বস পর্যন্ত আজ তার এই আচরণে বেশ খুশি। সে সকলের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছে। অফিসে যারা এতদিন তার আচরণে কিছুটা মনখারাপ করেছিল তাদেরও মন আজ আনন্দে উদ্বেলিত হলো। তারা এখন সহজে তার সঙ্গে মিশতে পারবে! কিন্তু নিবেদিতা শুধু অফিসিয়াল কাজকর্ম এগিয়ে নিতেই সবার সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ-সম্পর্ক চাচ্ছে। এটা কি সবাই বুঝতে পারবে?
নিবেদিতা সকালের নাশতা খেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিল। তবুও দুপুরের কিছুটা আগে তার সামান্য ক্ষুধা লাগায় নিজের রুমে বসে সে আপনমনে বিস্কুট খাচ্ছিলো। এমন সময় তার কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন তার থেকে দুই ধাপ উপরের একজন বস। এর নাম তুহিন সরকার।
তিনি নিবেদিতার দিকে হাত এগিয়ে দিলেন করমর্দন করার জন্য। নিবেদিতা অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাতটা বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছিলো আর তখনই তার মনে হলো―হঠাৎ এই সাতসকালে সে কেন তার সঙ্গে হাত মেলাবে? এটা তো অফিসিয়াল কোনো সিস্টেমের মধ্যে পড়ে না। সে অমনি দ্রুত হাতটা গুটিয়ে নিয়ে বললো, “স্যার, আপনার বিশেষ কোনো প্রয়োজন? আমাকে ডাকলেই তো পারতেন!”
তুহিনসাহেব খানিকটা হেসে বললেন, “এটা অফিসিয়াল কাজ না-হলেও আবার অনেকটা অফিসিয়ালই। তাই, আপনার কাছে ছুটে এসেছি। আপনি তো আমাদের সিনিয়র-কলিগ জাহিদসাহেবকে চেনেন। উচ্চপর্যায়ের ট্রেনিংয়ের জন্য জাহিদসাহেব, আলমসাহেব আর আমি সিঙ্গাপুরে যাচ্ছি। জাহিদসাহেব বলছিলেন, আপনি রাজী থাকলে বসকে বলে আপনাকেও সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার সুব্যবস্থা করবেন। বোঝেনই তো, জাহিদসাহেব এই অফিসে অনেকদিন। বস তার কথা শোনেন। আর চাকরি-জীবনের শুরুতে আপনি বিদেশ থেকে একটা বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে আসতে পারলে আপনার দ্রুত পদোন্নতি হতে থাকবে। এবার বলুন, আপনি আমাদের সঙ্গে যেতে রাজী কিনা?”
নিবেদিতা তাকে দেখে আগেই উঠে দাঁড়িয়েছিল। এবার সে নিজের চেয়ারটা টেনে বসে খুব সুন্দর করে হেসে বললো, “জ্বি-না, স্যার। আমার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে বা শখ নেই। আমি এখানে এই নিয়ে বেশ তো আছি।”
কথাটা শোনামাত্র তুহিনসাহেব আর কালবিলম্ব করলেন না। তিনি মুখকালো করে দ্রুত সটকে পড়লেন। এইমাত্র তারও গণেশ উল্টে গেল যে!
নিবেদিতা বিস্কুটের টুকরোগুলো আর মুখে দিতে পারে না। তার সারাশরীর যেন কাঁপতে থাকে। সে লজ্জায় কুঁকড়ে যায় যেন! আর ভাবতে থাকে―এরাই তার কলিগ! এদের কাছে তার মনের কোনো দাম নেই। শুধু তার শরীরের জন্য এদের কত দরদ! তার এই শরীরটাকে পাওয়ার জন্য তারা তাকে সিঙ্গাপুরে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে! হায় রে শরীর! এই আধুনিকযুগেও মানুষের শরীরভাবনা আর গেল না!

সে কিছুটা শান্ত হয়ে আবার মন দিয়ে অফিসের কাজ করতে বসলো। আর সে ভেবেছিল, ঘটনাটা হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু একটু পরেই তার ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হলো।
হঠাৎ নিবেদিতার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো তার এক জুনিয়র মহিলা-কলিগ। এর নাম খালেদা আক্তার বানু। সে ভিতরে আসতে চাইছিল। নিবেদিতা তাকে অনুমতি দিলো। সে হাসিমুখে কাচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।
তাকে বসতে বললো নিবেদিতা। আর সে একটু অপেক্ষা করলো। সে দেখতে চায়, খালেদা তাকে নিজে থেকে সবকিছু বলে কিনা! সে কী জন্য হঠাৎ রুমে এসেছে তাও সে তার কাছে জানতে চাইলো না।
নিবেদিতাকে চুপচাপ থাকতে দেখে খালেদা মুখে একটুকরো হাসি এনে বললো, “ম্যাডাম, একটা বিষয়ে আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। এজন্য আপনার অনুমতি চাইছি।”
নিবেদিতা হাতের কাজটা রেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, “অনুমতি নিতে হবে না। আপনি বলুন। কী কথা?”
খালেদা বানু এবার কোনোরকম ভনিতা না-করে বললো, “ম্যাডাম, আপনি নাকি বড়-স্যারদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন?”
“হ্যাঁ, দিয়েছি।” বেশ দৃঢ়ভাবে বললো নিবেদিতা।
“কেন ম্যাডাম কেন?” খুব উত্তেজিত হয়ে জানতে চায় খালেদা বানু।
“কেন আবার? এটা আমার পছন্দ নয়। তাছাড়া, অফিসিয়ালভাবে তো আমাকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হয়নি। আর কারও সুপারিশে আমি কখনো বিদেশে যেতেও চাই না।” বেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথাটা বলে খালেদার দিকে তাকালো নিবেদিতা।
“ম্যাডাম গেলে খুব ভালো করতেন আপনি! খুব তাড়াতাড়ি আপনার প্রমোশন হয়ে যেতো!” বিজ্ঞের মতো করে বলে খালেদা।
নিবেদিতা এবার ভিতরে-ভিতরে খুব রেগে গিয়ে বললো, “কোনটা ভালো আর কোনটা ভালো নয়, তা আমি ভালোভাবে বুঝি, খালেদা। এসব আপনার কাছ থেকে আমার শিখতে হবে না।”
“তবুও ম্যাডাম...।” সে কিছু বলার চেষ্টা করলো।
“তোমার ইচ্ছে থাকলে তুমি যেতে পারো।” নিবেদিতা এবার রেগে তাকে আপনি থেকে তুমি সম্বোধন করে বসলো।
না ম্যাডাম, মানে, সে এবার আমতা-আমতা করে বললো, “আমি তো বিবাহিতা। তাই...।”
“ওহ! তোমার বিয়ে না-হলে তুমি যেতে!” নিবেদিতা খুব অবাক হয়ে কথাটা তাকে বললো।
খালেদা এবার চুপ করে বসে রইলো। সে আর কোনো কথা বলছে না। তার এখন বলার মতো আর-কিছু নেই!
নিবেদিতা তাকে বললো, “ওরা আমাকে বিদেশে নিয়ে রেইপ করতে চায়। তুমি ওদের সাহায্য করে টাকাপয়সা কামাতে চাও? ওরা বুঝি তোমাকে ওদের উকিল করে আমার কাছে পাঠিয়েছে?”
খালেদা এবার মাথানিচু করে চুপচাপ বসে থাকে। চোর ধরা পড়ে গেলে তার যে অবস্থা হয় খালেদারও তা-ই হয়েছে। সে এখন খুব অসহায় যেন!
এতে নিবেদিতা যাকিছু বোঝার তা বুঝে নিয়েছে। সে বুঝে গেছে, এই অফিসের নেকড়েগুলো তাকে যেকোনোভাবে বাগে আনার জন্য সবসময় জোরপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে আগের চেয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। তবে সে এদের কাছে কিছুতেই হার মানবে না।
সবশেষে নিবেদিতা তার চোয়াল দুটো শক্ত করে দৃঢ়স্বরে বলে, “তুমি এবার যেতে পারো। আর বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া কক্ষনো আমার রুমে আসবে না।”

নিবেদিতা কিছুক্ষণ পরে বিস্কুটের টুকরোগুলো মুখে পুরে নিজেকে চাঙ্গা করে তোলার চেষ্টা করতে থাকে। আর তার মনটাকে শক্ত করে ভাবতে থাকে: সে কিছুতেই এদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। আর তার চাকরিটাও সে ছাড়বে না। সে এদের শেষটা দেখে ছাড়বে।



সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৪/১১/২০২০

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

আমি মিয়াবাড়ির ছেলে বলেছেন: ভালো লাগার মতো গল্প। সমাজের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। +++++

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২২

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পাশে থাকায় কৃতজ্ঞ।

২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হচ্ছে এরকম একটা গল্প কোথায় যেন পড়েছি।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: আমার লেখা ১০০% মৌলিক।
কোথায় পড়েছেন? মনে করার চেষ্টা করুন।
পাশে থাকায় কৃতজ্ঞ।

৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৪

ভুয়া মফিজ বলেছেন: গল্পটা ভালোই লেগেছে। সাবলীলভাবে লিখেছেন। তবে বেশ কিছু অসামন্জস্যতা আছে গল্পে, নয়তো আরো ভালো হতো। মেয়ে-প্রধান গল্প লেকার সময়ে আপনার নিজেকে মেয়ে হয়ে যেতে হবে। পুরুষ হয়ে মেয়েদের গল্প লিখলে হবে না। B-)

আশা করছি সামনে আরো আরো গল্প পাবো।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।
আরও ভালো লেখার চেষ্টা করবো।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আর শুভেচ্ছা নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.