নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Rahul

রাউল।।

রাউল।। › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐশীর অপরাধ সামনে ঘোর অমানিশা, বাবা-মায়েরা জেগে উঠুন

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

November 12, 2015 - 20:13
১২ নভেম্বর ২০১৫
******************************************************************************************************************************
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পলাতক ছিল তাদের সন্তান ঐশী রহমান। একদিন পরই তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং এরপর খুলতে থাকে চাঞ্চল্যকর হত্যা রহস্যের জট। বাবা-মাকে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিও দেন তিনি। আর এ অপরাধেই সন্তান ঐশীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, ‘ঐশী পরিকল্পিতভাবে, সময় নিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সে খুনের সময় সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। আসামিপক্ষ তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বললেও তা প্রমাণ করতে পারেনি। সে মাদকাসক্ত হলেও বাবা-মাকে সে হত্যা করেছিল সুস্থ মস্তিষ্কে।’

কিন্তু এই হত্যার দায় কী ঐশীর একার? তার বাবা-মা, এই সমাজব্যবস্থার কী কোনো দায় নেই। কী এমন কারণ যে, নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করার পরিকল্পনা করে সন্তান? একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে এটা কীভাবে সম্ভব?

বাবা-মাকে খুনের মতো একটি ঘৃণ্য, জঘন্য, দুঃসাহসী পরিকল্পনা কীভাবে আঁটতে পারলেন তিনি? প্রকাশিত সংবাদ ও পুলিশী তথ্যে জানা গেছে, ঐশী স্কুলে পড়াবস্থায়ই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। যখন তার পরিবারের সদস্যরা একথা জানতে পারে, তখন ঐশী নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন; আর সেই ইয়াবার উৎস তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাদকে জড়িয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই খারাপ আচরণ করতেন ঐশী। যা ইচ্ছে হয়, তাই করতেন। রাত করে বাসায় ফিরতেন। রাতের বেলায় ছেলে বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসতেন। এসব উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা যখন বাবা-মার নজরে আসে, তখন তারা বোঝাতে চেষ্টা করেন মেয়েকে। কিন্তু ততদিনে ইয়াবার অন্ধকারের অতলে ডুবে গেছে বাবা-মায়ের আদরের ঐশী। যা হওয়ার হয়ে গেছে। ইয়াবার ঝাপসা ধোঁয়াশার চোখে ঐশী দেখতে শুরু করে নিজের জন্মদাতাদেরকে ‘শত্রু’ হিসেবে। এরপরই তার মনের ভেতর ক্ষোভের সৃষ্টি হতে থাকে। একপর্যায়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে বসে প্রিয় থেকে শত্রু বনে যাওয়া বাবা-মাকে। কফির সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে তাদের খাইয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। কিন্তু এটা কী শুধুই একটা হত্যাকাণ্ড?

এই হত্যাকাণ্ড সমাজের বর্তমান বাস্তবতার চেহারাটাই যেন খুলে দিয়েছে। ঐশী নামের মেয়েটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি যেন বললেন, ‘হে বাবা-মায়েরা, আমাদের নিয়ন্ত্রণ করো মাদকে ডুবে লাগামহীন হওয়ার আগেই। আমরা সবাই লাগামহীন হয়ে গেলে কোনো বাবা-মা'ই আর রক্ষা পাবেন না।’ অষ্টাদশীর চাঁদ ডুবে গেলে আঁধার ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকে না।

নিজের মেয়ের হাতে বাবা-মায়ের এই নির্মম খুন হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। আমাদের সমাজে এমন পরিবার অনেক রয়েছে যে, বাবা-মা জানেই না, তার মেয়ে বা ছেলে সারাদিন কোথায় যাচ্ছে? কার সঙ্গে ঘুরছে? কী করছে না করছে? ঢাকা শহরে আমি একটা পরিবারকে চিনি, যাদের সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মার ঠিকমতো কথাবার্তাও হয় না। বছরে দুই ঈদে হয়তো বা পাশাপাশি বসে কথা হয়, আবার হয়ও না। অথচ তারা একই ছাদের নিচে বসবাস করছে দিব্যি। সারাদিনে দেখা হলে কেবল হাই-হ্যালোতে শেষ। একই বাসায় থেকে যে পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের খোঁজ নেয় না বা নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না, সেই পরিবারে হঠাৎ করে ছেলেমেয়ের উপর খবরদারি বা শাসন নেমে এলে এমন কিছুই ঘটবে। কেননা বাবা-মায়ের শাসন বা আদর তারা কখনই পায়নি। পেলেও তা কাজের মতো কিছু না। আর সেই ছেলেমেয়ে যদি হয় মাদকাসক্ত কিংবা বখে যাওয়া, তাহলে তো কথাই নেই। তাদের কাছে, কীসের আবার বাবা-মা? অভিভাবক হয়ে যায় তখন ‘শত্রু’। এটা কিন্তু একেবারে অস্বাভাবিক নয়।

চিন্তা করা যায়, কত সহজ হয়ে গেছে হত্যা করা! না হলে কি এভাবে নিজের বাবা-মাকে হত্যা করা সম্ভব। অন্যের গায়ে তো একটা আঁচড় দিতেই খারাপ লাগে। আর বাবা-মাকে হত্যা, তা-ও ঠাণ্ডা মাথায়। মানুষের সামাজিক অবক্ষয় কতটা নিচে নামলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষার অভাবে এ ধরনের খুনখারাবি কোনো ব্যাপার না! যে পুলিশ কর্তা সমাজের অপরাধ ঠেকানোর চেষ্টা করে গেছেন নিরন্তর, তাকেই বলি হতে হলো অপরাধের। তা-ও আবার নিজের রক্তের কাছে, নিজের মেয়ের হাতে।

এই লেখাটা বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে। আপনার সন্তান কী করছে দেখুন। তার উপর নজর রাখুন ছোট থেকেই। বছরের পর বছর খবর না নিয়ে হঠাৎ করে বাপগিরি, অভিভাবকগিরি দেখাতে যাবেন না। তাদের আদর দিন, ভালবাসুন, কথা বলুন। তাদের মনকে জানুন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এই দায়িত্বগুলো পালন করলে সন্তান বখে যাবে না। আদর ভালোবাসার পাশাপাশি শাসনের সংমিশ্রণ দিন। দেখবেন, ওরা ভালভাবে সেই ভর্ৎসনাগুলো গিলছে গোগ্রাসে। শুধু ক্যারিয়ার আর টাকার পিছনে ছুটে সময় নষ্ট করে কী হবে, যদি আপনার সন্তান গোল্লায় যায়। সেই গোল্লায় যাওয়ার আগেই সচেতন হোন। টাকার পেছনে তো ছুটতেই হবে! টাকা ছাড়া তো আর জীবন চলে না। কিন্তু তা করতে গিয়ে ছেলেমেয়ের জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারেন না। এতকিছু করছেন কার জন্য? আর যাদের জন্য করছেন, তারা অর্থাৎ আপনার সন্তানরাই যদি ঠিক না থাকে তাহলে কী লাভ? একবার চিন্তা করুন।

ভাবছেন- ছেলেমেয়ে তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় গড়ে উঠছেই। তাহলে আর চিন্তা কি? অবশ্যই চিন্তার বিষয় আছে। শুধু প্রাতিষ্ঠাতিক শিক্ষাই সব নয়। সামাজিক শিক্ষাটাও দরকার। আর এই সামাজিক শিক্ষাটা সন্তানরা পায় পরিবার তথা বাবা-মায়ের কাছেই। এর প্রথম গাঁথুনিটা পরিবার থেকেই পায় সন্তানরা। আর যদি আপনি এই শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনার সন্তান অকালেই ঝরে যেতে পারে। তেমনি তার হাতে আপনিও ঝরে যেতে পারেন।

বাপ-চাচাদের কাছে শুনেছি, আগে কোথাও যাত্রাপালা দেখতে হলে কঠোর গোপনীয়তায় লুকিয়ে যেতেন তারা। দাদার ভয়ে। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ আর ভালবাসা দুটোই ছিল সমপরিমাণে। ছিল না নীল মাদকের ভয়াল আগ্রাসন। সেই সমাজ বদলে গেছে। কঠিন সময় এখন। মোকাবিলা করতে হবে আমাদেরই।

বাবা-মায়েরা জেগে উঠুন, অষ্টাদশীর চাঁদেরা ডুবে যাওয়ার আগেই জাগুন। নইলে ঘোর অমানিশা অপেক্ষা করছে সামনে। মনে রাখা প্রয়োজন, শুধু সন্তানকে জন্ম দেওয়া আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার মধ্যেই আপনার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ নয়। তাকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.