নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Rahul

রাউল।।

রাউল।। › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৬ মের মধ্যে বড় ভূমিকম্প আসছে?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪১

ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেয়া না গেলেও ইদানীং কিছু কিছু আভাস দেয়া যাচ্ছে। ভূতাত্ত্বিক পর্যালোচনা করে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউএসজিএস এমন একটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যাতে বলা হয়েছে, আগামী মে মাসের মধ্যে অন্তত একটি বড় ভূমিকম্প বাংলাদেশসহ আশেপাশের অঞ্চলকে ঝাঁকুনি দিতে পারে। হতে পারে মাঝারি থেকে বড় ধরনের আরও কয়েকটি ভূমিকম্প। ঢাকাটাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী।


ভূমিকম্পের ওপর জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এই বিশেষজ্ঞ। প্রকৌশল বাংলাদেশ আর্থ কোয়াক সোসাইটির সাধারণও সম্পাদকও তিনি। তাঁর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, দুর্যোগের পর আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মানুষ। কিন্তু মানুষ সচেতন বা সতর্ক হয় না সেভাবে। এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্ক ছড়ালে লাভ হবে না। সচেতনভাবে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলাই জরুরি। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে যতোটা না ক্ষতি হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আতঙ্কের কারণে। সোমবার ভূমিকম্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় দেশের কোথাও তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভয়ে চারজনের মৃত্যু ও প্রায় ৭০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও সতর্কতা থাকলে এসব দুর্ঘটনাও এড়ানো যেতো।


কীভাবে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলা করা যায়, সতর্ক ও নিরাপদ থাকা যায়- এসব নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন অধ্যাপক আনসারী। আলোচনায় ছিলেন মহিউদ্দিন মাহী।


ঢাকাটাইমস: আমরা আসলে কতটা ঝুঁকিতে আছি?


মেহেদি আহমেদ আনসারী: এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঘটনাগুলোর কথা তুলে ধরতে চাই। ১৮৬৯ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ৭.৫ মাত্রার, ১৮৮৫ সালে ঢাকা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে মধুপুরে ৭.১ মাত্রার এবং ১৮৯৭ সালে ঢাকা থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।


নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কথাই যদি ধরি, মূল দুর্যোগটি হয়েছে কাঠমান্ডু থেকে পশ্চিম দিকে। তারপর কয়েকটি আফটার শক হয়েছে এবং সর্বশেষটি হয়েছে দার্জিলিংয়ের দিকে, যার মাত্রা ছিল ৫.৯। প্রথমটি থেকে এটার দূরত্ব ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার এবং এ ক্ষেত্রে ক্রমেই আফটার শকগুলো পূর্ব দিকে সরে এসেছে। পূর্ব দিক মানেই হচ্ছে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, আমাদের এই অঞ্চলে ২০১৫ সালের ২৬ মে থেকে ২০১৬ সালের ২৬ মের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রার অন্তত একটি, ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত অন্তত চারটি এবং ৫ থেকে ৬ পর্যন্ত অন্তত আটটি ভূমিকম্প হবে। কারণ, সৃষ্ট ফাটলের নড়াচড়া এখনো থামেনি। এর মধ্যে একটা বড় ভূমিকম্প যদি হয়ে যায় তো হলোই। তারা সেটা অনুমান করতে চাচ্ছে না।


১৮৬৯ সালের ভূমিকম্প আমাদের দিকে হয়েছে। ১৮৯৭ সালেরটিও এ দিকেই হয়েছে, একই রেখা ধরে। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার দিকে হলো; ২০০৫ সালে কাশ্মীরে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্ব দিকটায় ৮০ থেকে ১০০ বছর ধরে স্থিত হয়ে আছে। শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। যেকোনো সময় এর বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে। তাই প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া আমাদের গতি নেই।


ঢাকাটাইমস: ঢাকা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?


মেহেদি আহমেদ আনসারী: ঢাকায় যদি সাড়ে সাত মাত্রায় ভূমিকম্প হয় তাহলে ৩০ শতাংশ ভবন ভেঙে পড়তে পারে। আর এরকম ঘটনা ঘটলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


ঢাকাটাইমস: ভূমিকম্পের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় কী?


মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভূমিকম্প থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ কখন এটা হবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। তবে সতর্কতামূলক, সচেতনমূলক ও প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে।


ঢাকাটাইমস: কী ধরনের প্রস্তুতি দরকার।


মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভূমিকম্প প্রতিকার ও প্রতিরোধে প্রস্তুতি হতে হবে তিনটি স্তরে। প্রথমটি হলো, সাধারণ মানুষের প্রস্তুতি। এর মধ্যে রয়েছে তিনি যে ভবনটিতে থাকেন সেটি ভূমিকম্প সহনীয় কি না, যদি ভূমিকম্প সহনীয় না হয় তাহলে সেটাকে ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা। নতুন ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি করা। ভূমিকম্পের সময় করণীয় এবং ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে করণীয়গুলো জেনে রাখা। দ্বিতীয় স্তরে সচেতনতার বিষয়টি হলো, জাতীয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি এবং সবশেষে সরকারের সমন্বয়।


ঢাকাটাইমস: শুধু বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলেই কী সমস্যা সমাধান হবে?


মেহেদি আহমেদ আনসারী: শুধু বিল্ডিং কোড মেনে ভবন মজবুত করলে হবে না। মাটিও শক্ত করতে হবে।


ঢাকাটাইমস: মাটি কীভাবে মজবুত করা যাবে?


মেহেদি আহমেদ আনসারী: এই প্রযুক্তি আছে। মাটির মধ্যে জোর করে সিমেন্ট পুশ করে দিতে হবে। তাহালে মাটি অনেক মজবুত হবে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হচ্ছে। ঢাকাতেও ব্যবহার শুরু হয়েছে।


ঢাকাটাইমস: ভূমিকম্প হলেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কথা আসে, কিন্তু সমাধান তো হয় না।


মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভবনগুলোর ঠিকঠাক চিহ্নিত হয় না। আবার যেসব ভবন চিহ্নিত হয় সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কেন এমনটা হয়, সেটা সরকারই ভাল বলতে পারবে।


ঢাকাটাইমস: তাহলে সতর্কতার ক্ষেত্রে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে?


মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলা, দুর্যোগ প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন করণীয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা ও উদ্যোগের বিকল্প নেই। প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ নিলে ঝুঁকির পরিমাণটিই কমিয়ে আনা যায়। আমরা তো ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারব না। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ড, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকি এবং মানুষের সচেতনতাই পারে বড় ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে।


ঢাকাটাইমস: আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।


মেহেদি আহমেদ আনসারী: ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.