নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Rahul

রাউল।।

রাউল।। › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশীয় চলচ্চিত্রের ‘জীবন কিংবদন্তি’ নায়ক রাজ রাজ্জাক

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১২


*****************************************
আজ নায়ক রাজের ৭৫ তম জন্মদিন। আজকের সফল নায়কের এমন সফলতা কিন্তু এমনি এমনি চলে আসেনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এখন এই অভিনেতাকে ‘ জীবন্ত কিংবদন্তী বলা হয়। ভালোবেসে মানুষ ডাকে ‘নায়করাজ’ নামে । কিন্তু এই খ্যাতি, এই সফলতার পেছনে এই নায়কের সংগ্রামী জীবনের গল্প হয়তো অনেকেই জানেনা। সময়ের কণ্ঠস্বরের পাঠকদের জন্য আজ থাকছে ‘ কোলকাতার টালিগঞ্জ থেকে শুন্য হাতে ঢাকায় এসে যেভাবে আজকের নায়ক রাজের অভিনয় জীবনের উত্থান’ বিষয়ক একটি ফিচার

——————-
: বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাকের ৭৫তম জন্মদিন আজ। তিনি দুই বাংলার চলচ্চিত্রের একজন শক্তিমান অভিনেতা। যার হাত ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পেয়েছে আলো। যার অভিনয়ে এদেশে পেয়েছে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিনেমা জগতে পূর্ণাঙ্গ অভিষেক ঘটে এই শক্তিমান অভিনেতার। এ পর্যন্ত ৬শ’র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

নতুন জীবন গড়তে একজন সাধারণ মানুষ আবদুর রাজ্জাক স্ত্রী ও শিশুসন্তান বাপ্পাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন শূন্য হাতে। সেখান থেকে কঠিন জীবনসংগ্রামের পর সফল হয়ে তিনি আজকের নায়করাজ। তাকে বলা হয় চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি। অসীম মনোবল, প্রচণ্ড পরিশ্রম আর সাধনার মাধ্যমে তিনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।

নায়ক রাজের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকতার টালিগঞ্জে। তার প্রকৃত নাম আব্দুর রাজ্জাক। টালিগঞ্জের মোল্লা বাড়ির আকবর হোসেন ও মা মিনারুন্নেসার ছোট ছেলে তিনি। জন্মের পর কলকাতায় বেড়ে ওঠা রাজ্জাকের। কখনই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো না তার; বরং তার ইচ্ছে ছিলো খেলোয়াড় হওয়ার।

কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় মঞ্চ নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রের জন্য তার স্পোর্টস শিক্ষক তাকে বেছে নেন। অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষকের কথায় তিনি অভিনয় করেন। কিন্তু আশ্চর্য্জনকভাবে তার অভিনয় দেখে সবাই মুগ্ধ হন। এই থেকেই তিনি অভিনয়ের আনন্দ পেতে শুরু করেন।

শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক ‘বিদ্রোহীতে’ গ্রামের কিশোর চরিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে যুক্ত হন। কিন্তু অভিনয়ের কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও প্রধান বাধা ছিলো তার পরিবার। পরিবারের কেউ চাননি তিনি অভিনয় করেন।

তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজ্জাক ছিলেন সবার ছোট। বড় দুই ভাই ব্যবসা করছেন তাই তাকেও সেটি অনুসরণ করতে হবে এটি তিনি মেনে নিতে পারেননি তিনি। পরে মেজ ভাইয়ের সাহায্যে অভিনয় জগতে আসার সমস্ত সহযোগিতা পান রাজ্জাক।

এসএসসি পাশ করার পর রাজ্জাক কিছু অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করা শুরু করেন। নিজের প্রতিভার গুণে ধীরে ধীরে ছোট পর্দার নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ওই সময়েই রাজ্জাক কলকাতার নামকরা নাট্যভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। অভিনয়ের অধ্যায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের আরেকটি অধ্যায় শুরু করেন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে তার সখ্য। মঞ্চের সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্বপ্ন ছিল সিনেমাকে ঘিরে।

১৯৬২ সালে লক্ষ্মীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন রাজ্জাক। সেসময় কলকাতায় অভিনয় করতে গিয়ে তার স্পর্শে আসেন খ্যাতিমান অভিনেতা উত্তম কুমার, তপন সিনহা এবং পরিচালক পীযূষ সাহা। পীযূষ সাহার কথাতেই ঢাকায় পাড়ি জমান নায়ক রাজ রাজ্জাক।

১৯৬৪ সালে রাজ্জাক কলকাতা থেকে স্ত্রী লক্ষ্মী ও ছয় মাসের ছেলে বাপ্পারাজকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। চোখে তখন অনেক স্বপ্ন। অভিনয় দিয়ে নিজের সর্বোচ্চ অভিনয় করার। কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে তিনি থিয়েটারে কাজ শুরু করেন।

থিয়েটারে কাজ করতে করতে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর দু’বছর টেলিভিশন অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন। ছোট পর্দায় ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের নজরে চলে আসেন রাজ রাজ্জাক।

টালিগঞ্জের সিনেমাশিল্পে তখন ছবি বিশ্বাস, উত্তমকুমার, সৌমিত্র, বিশ্বজিৎদের যুগ। সেখানে তার অভিনয়ে সুযোগ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।এর মধ্যে শুরু হলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এই দাঙ্গাই তার জীবনের সঠিক পথ বাতলে দেয়। দাঙ্গার কারণে কলকাতায় থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন এক শুভাকাঙ্ক্ষী রাজ্জাককে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় চলে আসতে। বললেন, ঢাকার চলচ্চিত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে গেলে হয়তো কিছু একটা হবে। ভদ্রলোক ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল জব্বার খানের পরিচিত। তিনি রাজ্জাককে পাঠালেন তার কাছে একটা চিঠি দিয়ে। এরপর রাজ্জাক ঢাকা এলেন এবং জয় করলেন।

ঢাকায় এসে কমলাপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন আবদুল জব্বার খান। রাজ্জাক স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ঢাকায় এসে কমলাপুরেই প্রথমে বাসা নেন। জব্বার খান ইকবাল ফিল্মস লিমিটেডে কাজ করার সুযোগ করে দেন রাজ্জাককে। সহকারী পরিচালকের কাজ। কামাল আহমেদের সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন উজালা ছবিতে। শুরু হলো ঢাকায় রাজ্জাকের চলচ্চিত্র জীবন। সহকারী পরিচালক হলেও অভিনয়ের নেশা মাথায়। এর মধ্যে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন বেশ কিছু ছবিতে। এসব ছবির মধ্যে ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন উল্লেখযোগ্য।

একসময় জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ভাগ্য খুলে যায় এখান থেকেই। বেশ কয়েকটি ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পর ভাগ্যচক্রে হঠাৎ একদিন নায়ক হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান রাজ্জাক। লোককাহিনি নিয়ে জহির রায়হান তখন বেহুলা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘বেহুলা’ হবেন সুচন্দা। কিন্তু লখিন্দরের চরিত্রে কাউকেই তার পছন্দ হচ্ছে না। ওই সময়ে যারা একটু নামীদামি শিল্পী, তারা প্রায় পুরো ছবিতেই কংকাল হয়ে শুয়ে থাকতে চাইলেন না।

অবশেষে রাজ্জাকের স্বপ্ন পূরণ হয় ১৯৬৮ সালে। জহির রায়হানের চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’ প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর তাকে আর ফিরে তাকে হয়নি। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘আনোয়ারা’ আর তৃতীয় ‘আগুন নিয়ে খেলা’। এই ছবি বের হওয়ার আগেই তিনি সুপারস্টার খেতাবে ভূষিত হন তিনি।

নায়ক রাজ রাজ্জাক চলচ্চিত্রে প্রথম জুটি বেধে কাজ করেছেন জনপ্রিয় নায়িকা সুচন্দার সঙ্গে। এরপর একে একে কবরী, শাবানা, সূচনা, ববিতার সঙ্গে জুটি বেধে কাজ করেন। তবে রাজ্জাক-কবরী জুটি এক অনবদ্য সৃষ্টি। যুগের পর যুগ শেষ হলেও এই জুটির খ্যাতি শীর্ষে।

ঢাকার সিনেমা হলগুলোতে তখন পাক-ভারতীয় ছবির দাপট। ভারতের রাজকাপুর, দিলীপ কুমার, নার্গিস, পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী, জেবা, সুধির, শামীম আরা, ওয়াহিদ মুরাদ এবং কলকাতার ছবি বিশ্বাস, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, বিশ্বজিৎ, সৌমিত্রদের ছবির সঙ্গে পালা দিয়ে চলতে শুরু করল ঢাকার নির্মাতাদের নির্মিত ছবি। আবদুল জব্বার খান, রহমান, শবনম, খলিল, ফতেহ লোহানী, খান আতা, সুমিতা দেবী, আনোয়ার হোসেন, সুচন্দাদের সঙ্গে যোগ হলো আরো একটি নাম ‘রাজ্জাক’।

চলচ্চিত্র জীবনে ছয়’শ ছবিতে অভিনয় করলেও তার তিন’শ ছবি রয়েছে বাংলা ও উর্দু। চলচ্চিত্রে বহু নামি-দামি অভিনেতাদের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন তিনি। আনোয়ার হোসেন, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানা মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করা হয়েছে তার। এছাড়া এ প্রজন্মের মৌসুমী, রিয়াজ শাকিব খান’র মতো তারকাদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন।

নায়ক হিসেবে রাজ রাজ্জাক সর্বশেষ অভিনয় করেন ১৯৯৪ সালে ‘অন্ধ বিশ্বাস’ চলচ্চিত্রে। এরপর দীর্ঘ পাঁচবছর চলচ্চিত্র থেকে বিরতি নেন। ফিরে আসেন সুপারহিট ‘বাবা কেন চাকর ছবির’ মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তখন তিনি কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। দুইবাংলার চলচ্চিত্রে তিনিই ছিলেন নায়ক রাজ রাজ্জাক।

ব্যক্তিগত জীবনে রাজ্জাকের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মারা গেছেন। বড় ছেলে জনপ্রিয় অভিনেতা বাপ্পারাজ ও ছোট ছেলে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক স্রমাট।

চলচ্চিত্র জীবনে তিনি বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। পাঁচবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৩ সালে নায়ক রাজ রাজ্জাক জাতীয় চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়া মেরিল প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাসহ বহু চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।

নায়ক রাজের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র
অবাক পৃথিবী, অলংকার, অবকাশ, অবুঝ মন, আলোর মিছিল, জীবন থেকে নেয়া, আশার আলো, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, দুই পয়সার আলতা, চোখের জ্বলে, ছন্দ হারিয়ে গেলো, কাঁচ কাটা হিরে, কাজল লতা, কে তুমি, মানুষের মন, মাটির ঘর, মায়ার বাধন, মধুর মিলন, মনের মত বউ, রংবাজ, ময়নামতি, নাচের পুতুল, নীল আকাশের নীচে, ওরা এগারো জন, নতুন পৃথিবী, অমর প্রেম, পিচ ঢালা পথ, পরিচয়, প্রতিশোধ, পুত্রবধূ, সমাপ্তি, স্বরলিপি, সংসার, বাবা কেন চাকর ও সো

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

রাজীব বলেছেন: পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম যে, একসময় এদেশে ভারতীয় ও পাকিস্তানী সিনেমা চলত। সেগুলোর সাথে প্রতিযোগীতা করেই আমাদের সিনেমা যাত্রা শুরু করেছে ও এক সময়ে টিকেও গেছে। আর এখন দেশে ভারতীয় ও পাকিস্তানী সিনেমা চলে না, তারপরও আমাদের সিনেমা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

কেন যেন সালমান শাহ -এর অভিনয় দেখে আমার রাজ্জাকের যুবক বয়সের অভিনয় মনে পড়ে যেত।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৬

মহা সমন্বয় বলেছেন: শুভ জন্মদিন- মহা নায়ক রাজ রাজ্জাক

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬

ইকরাম উল হক বলেছেন: রাজীব সাহেব আপনি ঠিকই বলছেন

''কেন যেন সালমান শাহ -এর অভিনয় দেখে আমার রাজ্জাকের যুবক বয়সের অভিনয় মনে পড়ে যেত।"


এখানে আশা ভালবাসা ছবিটির একদম প্রথম সিনটা দেখুন , সালমান শাহকে সত্যিই রাজ্জাক সাহেবের মত লাগছিল। এবং সালমান শাহ চেস্টা করতেন।
পৃথিবীতে তো মাত্র তিনটা নায়ক ১. উত্তম কুমার ২. রাজ রাজ্জাক ৩.সালমান শাহএখানে আশা ভালবাসা ছবিটির একদম প্রথম সিনটা দেখুন


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.