নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্পকে জাদু বানানোর প্রচেষ্টায় আছি। যে জাদুর মোহনীয়তায় মানুষ মুগ্ধ হবে, বুঁদ হয়ে ঘুম হারাবে, রাত কাটাবে নির্ঘুম।

তাহসিনুল ইসলাম

অরূপকথার জাদুকর আমি!!

তাহসিনুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ নীলার বিয়ে----

১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫

আজ নীলার বিয়ে। বরের বাড়ি থেকে নীলার জন্য একটা লাল টুকটুক শাড়ি এসেছে। নীলা লাল টুকটুক শাড়িটা পরেনি। সে পরেছে হালকা নীল রঙের একটা শাড়ি। তাকে দেখতে নীল প্রজাপতির মতো লাগছে।

বিয়ের দিন কনেকে চেহারার মধ্যে একটু বিষাদ বিষাদ ভাব ফুটিয়ে তুলতে হয়। কিন্তু নীলার চেহারায় বিষাদের কোন রেখা নেই। সে নীল প্রজাপতির মতোই সারা বাড়িতে উড়ে বেড়াচ্ছে। নীলার এই উড়ন্ত মুগ্ধমূর্তি বাড়িতে আমন্ত্রিত বয়স্কা অতিথিদের কারও কারও চোখে অশ্লীল ঠেকছে। তারা মনে মনে ভাবছে, মেয়েটা একদম নির্লজ্জ। বিয়ের দিন এভাবে কেউ নেচে বেড়ায়!

নীলার পুচকি ভাইটাও উড়ছে। নীলা যে তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে এই ব্যথাটা এখনো তার মনের ভেতর বেজে ওঠার ফুরসৎ পায়নি। সে বিয়ের আনন্দে মেতে আছে। উচ্চ ভলিউমে হিন্দি গান ছেড়ে দিয়েছে--- মেরে পিয়া ঘার আয়ে-গা ও রামজি---
হিন্দি গানে নীলার ভীষণ এলার্জি। গান কানে ঢুকতেই সে উড়তে উড়তে পুচকির রুমে এসে হাজির হলো। রুমে ঢুকতেই রাফির চোখে চোখ পড়লো তার। রাফি নীলার দূর সম্পর্কের কাজিন। নীলাদের বাড়িতে থেকেই পড়াশুনা করছে। দু’জনই ইংরেজি সাহিত্যে পড়ছে ঢাবিতে। এবার তাদের ফাইনাল ইয়ার।

রাফি যে পুচকির রুমেই আছে এটা অবশ্য নীলা জানতো। চোখ দ্রুত সরিয়ে নিয়ে পুচকির মাথায় টুক করে একটা টোকা মেরে বললো, অ্যাই বান্দর হিন্দি গান বন্ধ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালু কর।
পুচকি বিরক্ত হয়ে বললো, কি আপু সারাক্ষন শুধু রবীন্দ্র সঙ্গীত রবীন্দ্র সঙ্গীত করো। বিয়ের দিন কেউ কখনো রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজায়। মিনমিন সুরে বাজবে। এগুলো কারও কানেই ঢুকবে না।

নীলা উত্তরে কিছু বললো না। পুচকির মাথায় পূর্বের চেয়ে একটু স্বাস্থ্যবান শব্দে টোকা মেরে নিজেই হিন্দি গানের লাগাম টেনে ধরলো। হিন্দির তিরোধানে এবার রবীন্দ্রসঙ্গীত সরব হয়ে উঠলো মৃদুমধুর মন্দ্রে--তুমি মোর পাও নাই, পাও নাই পরিচয়--------

নীলা যেন রাফিকে তার মনের কথা বিশেষভাবে জানানোর জন্যই ইচ্ছে করে রবীন্দ্রনাথের এই গানের শরণাপন্ন হলো। রাফির সাথে তার সম্পর্কটা বেশ ছিলো। কিন্তু মাঝখানে প্রেমের হাওয়া ঢুকে সেটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। দু’ মাস আগের কথা। নীলা একদিন ক্যাম্পাসে রাফিকে আড়ালে ডেকে বললো, আমার বিয়ের জন্য বাড়িতে যে খুব তোড়জোড় চলছে সেটা কি বুঝতে পারছিস?
রাফি নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো, হ্যাঁ পারছি। ক্যান তুই কি বিয়ে করতে চাস না ?

-- হ্যাঁ চাই। তবে বিয়েটা আমি অন্য কাউকে না তোকেই করতে চাই-------

কথাটা বলেই নীলা দ্রুত চলে গেলো। রাফিও যে তাকে ভেতরে ভেতরে ভালোবাসে এই ব্যাপারটা তার কাছে দিনের আলোর মতোই সত্য মনে হতো। কিন্তু সত্য জিনিসটাও পরম নয়। একজনের কাছে যা সত্য মূর্তিরূপে ধরা দেয় অন্য জনের কাছে তা সেই রূপে ধরা দেয় না। রাফির কাছ থেকে কোন সাড়াশব্দই পাওয়া গেলো না। নীলা রাফির এই নির্লিপ্ততায় রাগ, অভিমান আর অপমানে সংকুচিত হয়ে তার সাথে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতে লাগলো। বেচারা রাফি তার ওপর এই অবিচারের কোন প্রতিবাদ করতে পারলো না---
রাফিকে ছাড়াই নীলা যে খুব সুখে থাকবে এই ব্যাপারটা তাকে জানানোর জন্যই এতোদিন বিয়েতে রাজী না হলেও এবার তার মা যখন বিয়ের কথা তুললো তখন সে কোন প্রতিবাদ ছাড়াই দ্রুত রাজী হয়ে গেলো এবং আজ বিয়ের দিন সেটাই আরও জোরেশোরে প্রমান করার জন্য সে ইচ্ছে করে চেহারার মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি আনন্দের ভাব ফুটিয়ে তুলে সারা বাড়ি মাথায় তুলে রাখলো। কিন্তু তার মনের ভেতর এদিকে যে বিপরীত ভাবাবেগের স্রোত বইছে সেটার সাথে লড়াই করতে করতে একইসাথে কেমন ক্লান্ত হয়ে পড়তে লাগলো ভেতরে ভেতরে। রাফি যে শেষমেশ তাকে হারানোর ব্যথায় কাতর হয়ে তাকে বিয়ে থেকে ফেরাবে এমন একটা ক্ষীণ বিশ্বাস তার মনের ভেতর আন্দোলিত হতে লাগলো এখনো। কিন্তু সময় ধীরে ধীরে ফুরিয়ে এলেও রাফির সীমাহীন নির্লিপ্ততা কাটার কোন লক্ষণ যখন সে দেখতে পেলো না, তখন তার ভেতরের বেদনাবোধের বাঁধটা ভেঙ্গে গেলো। একলা ঘরের ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু সময় দরজা বন্ধ করে রাখলো। নির্জন একলা রুমে তার ভেতরের সেই বেদনাবোধ কান্নার জল হয়ে ঝরতে লাগলো বেশ কিছু সময়। প্রায় আধাঘণ্টা পর যখন সে রুম থেকে বের হলো পুচকির ঘরে তখনো রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে--- কাঁদালে তুমি মোরে, ভালোবাসারই ঘায়ে---

নীলা ভেবেছিলো পুচকি হয়তো তার রুম থেকে বের হওয়ার পরই গান পরিবর্তন করে দেবে। দীর্ঘসময় ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার ধৈর্য যে তার নেই এটা সে ভালোভাবেই জানে। রাফিই যে তাকে গান পরিবর্তন করতে দেয় নি এটা তার বুঝতে আর বাকি রইলো না। নীলা মনে মনে পুচকির রুমে যাওয়ার উপলক্ষ খুঁজতে লাগলো। রবীন্দ্রসঙ্গীত বন্ধ হলে সেই উপলক্ষে খুব সহজেই যাওয়া যেতো। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীত চলতে থাকায় অন্য কোন উপলক্ষ তার মনের মধ্যে সহজে উদয় হলো না। উপলক্ষের জন্য এদিকে ধৈর্য ধারণ করা তার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠলো। শেষমেশ নীলা উপলক্ষহীনভাবে পুচকির রুমে এসে হানা দিলো আবার। পুচকি নীলাকে দেখে বিস্মিত হয়ে বললো, আপু রবীন্দ্রসঙ্গীত চলছে তো !!

নীলা বললো, জানি। তুই রুম থেকে বের হ এখন----

পুচকি কোন প্রতিবাদ না করে বের হয়ে গেলো তৎক্ষণাৎ। নীলা রাফির দিকে তাকিয়ে বললো, রাফি তুই এভাবে আমাকে দুঃখ দিলি ক্যান ?

রাফি বললো, তোকে শুধু দুঃখ না সাথে মুক্তিও দিলাম। আর এই মুক্তি দুঃখের চেয়ে বড়। রবীন্দ্রনাথ কি বলেছিলেন, দুঃখের ভেতর দিয়ে যে মুক্তি আসে তা দুঃখের চেয়ে বড়।

-- এই মুক্তি তো আমি চাই নি ?
-- কিন্তু তোকে তো বন্দিও আমি করতে পারবো না----
-- তুই কি আমাকে ভালোবেসেছিলি কখনো?
-- এই প্রশ্নটা আজকের দিনের জন্য অনুকূল নয় --------

নীলার মুখে একটা কাঠিন্যের ভাব ফুটে উঠলো। সে দ্রুত মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই দরজায় তার বাবার মুখোমুখি পড়ে গেলো। নীলা তার বাবার চোখে চোখ রাখার সাহস পেলো না, পাছে তার বাবা সব বুঝতে পারেন।

নীলার বাবা অবশ্য সব বুঝেই ফেলেছেন। দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের দু’জনের কথোপকথন শুনছিলেন তিনি। নীলার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন, মা, এখনো সময় আছে। বিয়েটা কি ভেঙ্গে দেবো--- ?
নীলা দৃঢ়ভাবে বললো, না বাবা, এখন আর তার দরকার নেই----------------

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভারী কঠিন মেয়ে তো নীলা! রাফিও। বাবাটা অন্যরকম।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৬

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: হা হা হা ধন্যবাদ ভাই --

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: তাহসিনুল ইসলাম ,



াএকজনের কাছে যা সত্য মূর্তিরূপে ধরা দেয় অন্য জনের কাছে তা সেই রূপে ধরা দেয় না।
তাই প্রেমে অভিমান কখনও কখনও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে । গল্পের নীলা যেন তাই-ই দেখিয়ে দিয়ে গেলো ।

যেহেতু গল্পের শেষটুকু না টেনে ডট ডট ....................... দিয়ে গেছেন , তাই পাঠক নিজের মতো করে একটা মিলনাত্বক এন্ডিং ভেবে নিলে ক্ষতি নেই তো ?


১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: হা হা হা ভালো বলেছেন। ধন্যবাদ অশেষ :)

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর কাহিনী। ধন্যবাদ

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২০

এহসান সাবির বলেছেন: দারুন ছোট গল্প।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: রাফির নির্লিপ্ততা ঠিকই আছে যেহেতু শুরু থেকে রাফির নীলার প্রতি তেমন উড়ু উড়ু ভাব দেখা যায়নি । সে হিসেবে বাবাটা আশীর্বাদ।
ভালো লাগলো লেখা।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১১

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ চমৎকার মন্তব্যের জন্য --

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.