নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অরূপকথার জাদুকর আমি!!
একটা সুন্দরী মেয়ে দাঁত বের করে হাসছে। তার ডান হাতে একটা ক্রিম। সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিম। মেয়েটার পাশে একটা সুদর্শন ছেলেকেও দেখা যাচ্ছে। ছেলেটা মেয়েটার বাম হাতের অনামিকায় একটা আংটি পরিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটার দৃষ্টি ঝুকে আছে মেয়েটার হাতে, কিন্তু মেয়েটার দৃষ্টি ছেলেটার দিকে নিবদ্ধ নেই। সে ছেলেটার দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে উল্টো দিকে তাকিয়ে ডান হাতের সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিম প্রসারিত করে ধরেছে। বিয়েটা যে তার ক্রিমের বদৌলতে হচ্ছে এটা সে সবাইকে জানান দিচ্ছে হেসে হেসে সংগোপনে।
এটা একটা বিজ্ঞাপন। পত্রিকার শেষের পাতায় ঢুকতেই বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ে হাফিজের। অদ্ভুত বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে শুধু সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিমের যাদুকরী চরিত্রই ফুটে উঠেনি, একইসাথে উপমহাদেশীয় চরিত্রটাও ফুটে উঠেছে। হাফিজ পত্রিকাটা দোকানের এক কোণে রেখে চায়ের কেটলি নামায়। দোকানে ভিড় লেগেই আছে। পত্রিকা পড়ার ফুরসৎ নেই। এমনসময় একজন বৃদ্ধ পত্রিকাটা চেয়ে নেন ওর কাছ থেকে। বৃদ্ধ হাফিজের বেশ পরিচিত। বৃদ্ধের হাত থেকে পত্রিকা ঘুরতে থাকে চায়ের কাপে কাপে। পত্রিকা থেকে লাফ দিয়ে সমাজ, দেশ, রাজনীতি ঢুকে পড়ে চায়ের কাপের ভেতর। চায়ের কাপে কথার ঝড় উঠে। হাফিজের ছোট চায়ের দোকান সরগরম হয়ে যায় ধীরে ধীরে।
হাফিজের চায়ের দোকানে প্রতি সকালেই এমন দৃশ্য দেখা যায়। হাফিজ নিজে অবশ্য কখনো চায়ের কাপের কথার ঝড়ে যোগ দেয় না। তবে যোগ না দিলেও কথাগুলো সে উপভোগ করে নীরবে। কিন্তু আজ তাকে বেশ অন্যমনস্ক লাগছে। চায়ের কাপের কথায় তার কোন মন নেই আজ। মনের ভেতর দুর্ভাবনার ভার। হারুনের দুর্ভাবনা। হারুনকে কি সে কোনভাবেই ফেরাতে পারবে না?
হাফিজের চায়ের দোকানটা ধানমণ্ডি মাঠের দক্ষিণ দিকের রাস্তা ঘেঁষে এক কোণে অবস্থিত। এই ছোট চায়ের দোকানেই হাফিজের পরিবার চলে। হাফিজের বাবা নেই। মা আর ছোট ভাই--হারুন। ধানমণ্ডির এক বন্ধুর সহযোগিতায় সে এই চায়ের দোকানটা দিয়েছে। হাফিজের চায়ের দোকানটা ধানমণ্ডিতে হলেও সে তার মা আর ভাইকে নিয়ে মিরপুরে থাকে। আজ থেকে সাত বছর আগে হাফিজের বাবা তাদেরকে নিয়ে মিরপুরের এই বাড়িটাতে এসে ভাড়া উঠেছিলেন। দু’ বছর আগে তিনি হঠাৎ মারা যান। হাফিজ বাড়িটা ছাড়েনি। বাড়িটাতে তার বাবার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাছাড়া মিরপুরে বাড়িভাড়া ধানমণ্ডির তুলনায় একটু কম। কিন্তু এবার সে ঠিক করেছে ধানমণ্ডিতে চলে আসবে। মিরপুর থেকে ধানমণ্ডিতে এসে দোকান চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে যায়।
পরিচিত বৃদ্ধ মানুষটি হাফিজের অন্যমনস্কতাটা মনে হয় বুঝতে পারেন। বলেন, কি হাফিজ তোর মন খারাপ ক্যান?
হাফিজ কথা বলে এবার, হারুনকে বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কোনদিন মারিনি চাচা। গতকাল রাতে তারে একটু মারধর করছি। হারুন রাতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। বাড়িতে ফেরেনি সারারাত।
বৃদ্ধ তার হাতের চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলেন, ও এই ব্যাপার। হারুন তাহলে এখনো বদভ্যাসটা ছাড়ে নি?
বদভ্যাসের গন্ধ পেয়ে দোকানের অন্যান্য কানগুলো একটু সচেতন হয়ে ওঠে। হাফিজ চুপ হয়ে যায়। বৃদ্ধও সবাইকে হতাশ করে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোকান ছেড়ে উঠতে উঠতে বলেন, হাফিজ চায়ের দামটা লিখে রাখিস বাপ।
হাফিজ বেশিদূর পড়ালেখা করার সুযোগ পায় নি। কিন্তু তারপরও তার ভেতর একটা গুণ আছে। সে সৎ। তার এই সততা সহজাত। তার বাবার মধ্যেও এই গুনটা ছিলো। অথচ হারুন যে পকেট কাটার বিদ্যাটা কিভাবে শিখলো হাফিজের এটা মাথায় আসে না। বিভিন্ন লোকাল এমনকি সিটিং বাসে ঘুরে ঘুরে সে মানুষের পকেট কাটে। পকেট সে টাকার জন্য কাটে না। পকেট কাটে মোবাইলের জন্য। হাফিজ তাকে কতো শত ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু হারুন পকেট-কাটা শিল্প ত্যাগ করে না। সে যে পেটের দায়ে এই কাজটা করছে এমন কিন্তু না। পকেট কাটা ওর একপ্রকার নেশা হয়ে গেছে। এটা সে ছাড়তে পারে না। দু’ একবার ধরা পড়ে গণপিটুনিও খেয়েছে কিন্তু তারপরও সে অদম্য। হারুন যে কেনো এই কাজ করে হাফিজ সেটা ভেবে পায় না। সেতো যথাসম্ভব ওর চাওয়া পাওয়া সব পূরণ করে। দামী মোবাইল কিনে দিয়েছে। হারুন রঙ বেরঙের টিশার্ট পরতে পছন্দ করে। হাফিজ প্রায় তাকে সেটা কিনে দেয়। গতকালও সে ফেরার সময় তার জন্য সবুজ রঙের একটা টি-শার্ট নিয়েছিলো। বাড়িতে ফিরেই সে হারুনের রুমে ঢুকে আগে। হারুনের টেবিলে একটা দামী মোবাইল দেখতে পায়। মোবাইল দেখেই মাথা বিগড়ে যায় ওর। হারুন যখন মার খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন হাফিজ চেঁচিয়ে বলে, ছোটু তুই এরপর যদি কারো মোবাইল নেস তাহলে দেখিস আমি কিন্তু একটা অঘটন ঘটাবো।
হাফিজের ভেতরটা উপলব্ধি করে হারুনও বেশ মর্মযাতনায় পুড়ে। হাফিজ যে তাকে কি পরিমাণ ভালোবাসে এটা সে জানে। মনে মনে ঠিক করে আর কখনো পকেট কাটবে না, কিন্তু নিজের মনের ওপরই খুব একটা ভরসা পায় না সে। ভরসা পাক আর না পাক হাফিজকে কিছু একটা ভরসার কথা শুনাতে হবে। তার এই কর্মকাণ্ডে হাফিজ কতোই না কষ্ট পাচ্ছে। সে যে এই কাজ আর করবে না এই কথাটা অন্তত তার সামনে গিয়ে বলতে হবে। হারুন সারারাত নিদ্রাহীন কেটে সকাল বেলা বাড়িতে ফেরে। ঠিক করে বাড়িতে ফিরেই হাফিজকে কথাটা বলবে। কিন্তু বাড়িতে ফিরে সে হাফিজকে আর পায় না। হাফিজ ঘুম থেকে উঠেই দোকানে চলে এসছিলো। সে আজ সকালে মুখেও কিছু দেয়নি।
সারাদিন আজ বিষণ্ণতায় কেটে যায় হাফিজের। মনে মনে ঠিক করে হারুনকে পাশে বসিয়ে আজকে আরও সুন্দরভাবে বুঝাবে। হারুনকে একটা স্কুলেও ভর্তি করে দিয়েছিলো সে। কোন কাজ হয় নি। হারুন স্কুলে যায় না। আজ ঠিক করে হারুনকেও এমন একটা ছোট দোকান ধরিয়ে দেবে। দোকানে বসলে পকেট কাটার আর ফুরসৎ পাবে না। বুদ্ধিটা বেশ ভালোই। হাফিজের মনে হঠাৎ যেনো একটু আনন্দের বিদ্যুৎ ঝিলিক খেলে যায়। দোকান একটু দ্রুতই বন্ধ করে ফেলে সে। প্রথম সন্ধ্যা প্রহরে।
আশীর্বাদ--- মিরপুর টু আজিমপুর। গাড়িটা সিটিং না লোকাল ঠিক বুঝা যায় না। হাফিজ নতুন আশা নিয়ে আশীর্বাদে উঠে বসে পেছনের সিটের কর্নারে জানালার কাছে। হারুনকে একটা ফোন দেয় কিন্তু নাম্বার ব্যস্ত দেখায়। মোবাইল কান থেকে সরিয়ে সে জানালায় হাত রাখে। হঠাৎ তার হাত থেকে মোবাইলটা কে জানি ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। হাফিজ কোনকিছু না ভেবেই খোলা জানালা দিয়ে লাফ দেয় রাস্তায়। পেছন থেকে চলন্ত একটা গাড়ি এসে তাকে মুহূর্তেই লাশ বানিয়ে দেয়। হাফিজের রক্তাক্ত বিকৃত লাশ দেখে চলন্ত রাস্তা থমকে দাঁড়ায় নির্বাক। লাশ ঘিরে ভিড় জমে। কোলাহল গুঞ্জন শুরু হয়। কোলাহল ঠেলে হঠাৎ একটা ছেলে দৌড়ে হাফিজের বিচূর্ণ বিকৃত শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তীব্র আর্তনাদে। ছেলেটার গায়ে হাফিজের গতকালের কেনা সবুজ রঙের নতুন টি-শার্টটি আর তার হাতে দেখা যায় হাফিজের কমদামী চায়না মোবাইলটা। মোবাইলটা থেকে যেনো বারবার একটা কথা বেজে ওঠে ছেলেটার কানে-- ছোটু তুই এরপর যদি কারো মোবাইল নেস তাহলে দেখিস আমি কিন্তু একটা অঘটন ঘটাবো।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ। হ্যাঁ তাই-----
২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
কাবিল বলেছেন: হারুন হয়তো ভাল হয়ে যাবে, কিন্তু একটা জীবনের বিনিময়ে। সারা জীবন কুরে কুরে খাবে।
ছোট গল্পে মন ছুঁইয়ে গেল।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ অশেষ
৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর গল্প। ভাল লাগল।
একটা কথা ভাবি প্রায়ই। অনেককে বলব, বলব করেও বলা হয় না। আপনাকে বলছি।
ছোট গল্প একটা ছোট্ট জায়গা নিয়ে হয়। এখানে অতিরিক্ত চরিত্রের সমাবেশ ঘটানো ঠিক না। যেমন এখানে আপনি একবার হারুন, একবার হাফিজ, দুজনেরই মন বিশ্লেষণ করেছেন, এতে গল্পটার ক্ষতি হয়েছে অনেকটা। যদি একজনের অবস্থান বিশ্লেষণ করে লিখতেন গল্পটা, আরো সুখপাঠ্য হত, হত আরো উপভোগ্য।
এটা আমার মত। আপনার নাও ভাল লাগতে পারে। আমি শুধু বললাম।
গল্পের রেটিং- 3.5/5
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৩৩
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার !! বর্ণনা আর শেষটা অনেক ভালো হয়েছে। +।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ -------------
৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভালো লাগলো। যেহেতু গল্পটা হাফিজের দৃষ্টিকোন থেকে লেখা সেখানে হারুনের মর্মবেদনা হারুন না হয়ে হাফিজের কাছ থেকে আসলেই ভালো হতো
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৭| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৫
সুলতানা রহমান বলেছেন: মর্মান্তিক!
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: হুম অনেকটাই ------
৮| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৯
প্রামানিক বলেছেন: বর্ননা চমৎকার। অনেক ভাল লাগল।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৮
তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১
বাংলার ফেসবুক বলেছেন: আসলে সমাজে হাফিজের মতো অনেকেই আছে।