নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনি এখন এমন একজন \"সাহসী\" মানুষের প্রোফাইলে ঢুকেছেন,যে কিনা ভাগ্যের কাছে সব সময়ই পরাজিত।

টি-ভাইরাস

জীবনে সফল হতে না পারি দুঃখ নেই...একজন ভাল মানুষ হিসেবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই...

টি-ভাইরাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রসফায়ারের সহজ-সরল বর্ননা আর রহস্যময় ক্ষমা প্রার্থনা

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫



সাভারে অনেক ক্যাডার আর মাস্তান ছিল। এখন সব পানি হয়ে গেছে। কারো টুঁ শব্দ করার সাহস নেই। পাঁচজনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছি আরো ১৪ জনের লিস্ট করেছি। সব ঠান্ডা। লিস্ট করার পর যে দু-একজন ছিল, তারা আমার পা ধরে বলেছে, আমাকে জানে মাইরেন না, আমরা ভালো হয়ে যাব। এই হলো বর্তমান জাতীয় সংসদের একজন সদস্যের তার নিজ এলাকার (ঢাকা ১৯) পরিস্থিতির ব্যাখ্যা। ওই এমপি আবার পেশায় চিকিৎসক। ১৯ জুলাই একটি বাংলা ট্যাবলয়েড মানবজমিন কে তিনি ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন।

এর কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তার অনভিপ্রেত, অশোভনীয় ও নিন্দনীয়’ বক্তব্য ‘প্রত্যাহার’ করে নেন। তিনি ‘লজ্জিত’ ও ‘দুঃখিত’ হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে জানান, তার কাজের ‘পূর্ণ দায়দায়িত্ব’ তার একান্ত নিজের এবং এতে সরকার, বা তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বাংলা দৈনিকটি তার মূল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, এমপির সাথে সংলাপের রেকর্ড তাদের কাছে আছে।

বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম নয়ন ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন। সাভার থানার দুই উপ-পরিদর্শক ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে তার মোহাম্মদপুর বাসভবন থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাবার অভিযোগ রয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাটি তোতা পাখির বুলির মতো বলেছে, ‘তাকে গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধারের সময় দুস্কৃতিকারীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন নিহত হয়েছে’। ওই ঘটনার আগে ও পরে ওই এলাকায় এ ধরনের আরো কয়েকটি হত্যাকান্ড ঘটেছে।

এমপির বক্তব্যে সাভারে বিরোধী কর্মীদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। সংবাদপত্রে তাদের নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতির কথা প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন, অনেকে অবস্থান গোপন রাখার জন্য মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। এমপির তালিকায় নাম আছে কিনা জানতেও আগ্রহী হয়েছেন অনেকে।

সাম্প্রতিক অতীতে তাদেরকে ক্রসফায়ারের শঙ্কা তাড়া করে থাকলে এখন এমপির স্বীকারোক্তির পর তাদের জীবনের উপরে হুমকি আরেক দফা বেড়েছে। এমপির বক্তব্য কিছু দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কথা বলার আগে জনপ্রতিনিধিদের উচিত সতর্ক থাকা। এধরনের বক্তব্য দিলে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা বলার আগে দুবার চিন্তা করা উচিত তাদের। এমপির বক্তব্যের সাথে একমত হয়নি র্যাব বা পুলিশ। র্যাবের মুখপাত্র কোথায় কিভাবে কাকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে সে প্রশ্ন এমপিকে করার জন্য সাংবাদিকদের উপদেশ দিয়েছেন। মনে হচ্ছে, সংস্থাটি এমপির স্বীকারোক্তি নিয়ে তার কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার কোনো তাগিদ অনুভব করছে না। এমনকি এ নিয়ে কোনো তদন্ত করার উদ্যোগও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাটির পক্ষ থেকে গ্রহন করা হচ্ছে না।

বছরের পর বছর ধরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং তাদের রাজনৈতিক প্রভুরা জোরালোভাবে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ডের দাবি অস্বীকার করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানান, দেশে কোনো বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটছে না এবং সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি আরো দাবি করেন, সরকার এ ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে।

এমপির স্বীকারোক্তির পর এ ধরনের বক্তব্য টেকে না। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের ক্রসফায়ার নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য প্রদানের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের মধ্য আগস্টে ঢাকার আরেক প্রভাবশালী এমপি যুবলীগের এক কর্মীর র্যাবের হাতে হত্যা নিয়ে ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন।

আইনবিদেরা ‘এনামুর কথন’কে ‘আইনহীনতার প্রকাশ’ এবং রাজনীতিবিদদের ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত দাবি করেছে। প্রমাণিত হলে অপরাধ সংগঠনের ষড়যন্ত্র (ধারা ৩৪), অপরাধের পৃষ্ঠপোষতা (ধারা ১০৯) এবং খুন করার (ধারা ৩০২) অভিযোগ আনা যেতে পারে।

সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি এবং এর পরপরই ক্ষমা প্রার্থনা অধিকার অ্যাক্টিভিস্ট এবং বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের ক্ষুদ্র একটি অংশের দীর্ঘ দিন ধরে দাবীকৃত অভিযোগেরই বৈধতা দিয়েছে। এতে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ডের নির্মম বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক বিরোধিতা বন্ধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার অভিযোগই প্রমাণ করে দিয়েছে। ঘটনাটি বাংলাদেশে রাজনীতির অপরাধীকরণের বাস্তবতাও প্রকাশ্যে তুলে এনেছে। যে লোকটি ডাক্তারির ‘শপথ’ গ্রহণ করেছেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির সময় জাতির শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন, সেই মানুষটি মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ক্ষমতার দম্ভে ভীষণভাবে বদলে গেলেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের এবং তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের দৈহিকভাবে শেষ করে দেবার বক্তব্য তিনি অতি সহজে দিতে পারলেন।
এটাও হৃদয়বিদারক বিষয় যে, ‘এনামুর কথন’ রাজনৈতিক মহল এবং সেইসাথে মূলধারার সুশীল সমাজের মধ্যে সামান্যই আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছে। জাতীয় দৈনিকগুলোর মতামত কলামে স্থান পাওয়া কিংবা দর্শকদের চাহিদার আলোকে প্রচারিত টকশোর বিষয়ে পরিণত হওয়ার জন্য এই ঘটনা মানানসই বলে বিবেচিত হয়নি। যারা ‘স্বাধীনতার চেতনা’ নিয়ে ঝড় বইয়ে দেন তাদের মনে এ ধরনের নির্মম স্বীকারোক্তি কেন দোলা লাগাল না সেটাও ধাঁধার কথা। সর্বোপরি তাদের অনুধাবন করা উচিৎ সাধারণ মানুষের কাছে ওই চেতনার অর্থ হলো- ভয় থেকে সুরক্ষিত থাকা এবং মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকা এবং মৃত্যুবরণ করার অধিকার ভোগ করা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫২

নতুন বলেছেন: মিথ্যা কখনোই ভাল কিছু আনতে পারেনা।

হয়তো এই ক্রসফায়ারে কিছুটা পরিস্হিতি ভালো হবে.. কিন্তু রাজনিতিকরাই এই সব দানব তৌরি করে.... সেটা বন্ধ করলেই সব ভালো হবে। এইভাবে না।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭

টি-ভাইরাস বলেছেন: আপনার কথার সাথে একমত

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: আপনার মন্তব্যগুলো আপনাকেই নোটিঃ দেখাচ্ছে, আপনি মনে হয় বুঝতে পারছেন না।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৭

টি-ভাইরাস বলেছেন: ধন্যবাদ :) মোবাইল দিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম তাই এমন হয়েছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.