নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সর্বদায় জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়াই

তারেক ফাহিম

অজানাকে জানতে গিয়ে অস্থিরতার বোঝা নিয়ে স্পষ্টতাকে পুড়ে দিয়ে অন্ধকারে বুক পুলাই

তারেক ফাহিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন জীবনে অতি প্রিয়দের আগমন কিংবা প্রস্থানে ভালোবাসা পরিবর্তীত

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮




সগীর ভাই আপনি এখানে? একটু আগেতো দেখলাম আপনার ভাই কবিরকে একই স্থানে, অথচ পাড়ার প্রত্যেকে জানে আপনারা নাকী সামনা সামনি আসলে তুমল ঝগড়া সৃষ্টি হয়। দেখা হলো কবিরের সাথে? কথাটি শুনে সগীর ফাহিমের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে কিছু না। ফাহিমের সাথে সগিরের যতবারই দেখা হয়েছে ততবারেই সালাম ও আদবের সহিত কথা বলে এবং সগীরও স্নেহের সহিত দেখে, আজ এরূপ ফাহিম আশা করেনি। দুজনকে কোর্টের বারান্দায় দেখে ওরা যে কোর্টে হাজিরা দিতে আসছে তা বুঝতে ফাহিমের বাকী রইল না।

ছোট বেলায় সগীর ও কবির দুই ভাই এক সাথে খেলতো, একেকজন অন্যজনকে খাইয়ে দিতো, ঘুমাতো একসঙ্গে, স্কুলে যেতো একসঙ্গে, সগিরের সাথে কারো সাথে ঝগড়া হলে কবির এগিয়ে যেতো, কবিরের সাথে হলে সগির যেতো। সগীরের বিয়ের প্রায় এক বৎসর পরেই কবির বিয়ে করে। দুইজন বিয়ের পরও তাদের সম্পর্ক ভালোই টিকেছিলো। তাদের ঘরে যখন স্ত্রী সন্তান আসলো সগীর ও কবীরের পরস্পরের ভালোবাসায় তাদের স্ত্রী, সন্তান ভাগ বসাতে শুরু করল। এক পর্যায়ে উভয়ে তাদের স্ত্রী সন্তানের প্রতি এত দরদ আর ভালোবাসায় ঘেরাও করেছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে কোন ভাইয়ে কোন ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা অবশিষ্ট রহিল না। উভয়ের সংসারে ছেলে সন্তান বড় হয়ে যাচ্ছিল উভয়ে তাদের বড় করে তুলতে, লেখাপড়া করাতে, সংসার চালাতে গিয়ে ব্যস্ত।
এরই মাঝে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির ভোগ দখল নিয়ে সামাজিকভাবে শালিশী বৈঠকে মিমাংশা না করতে পেরে দু’জন আজ কোর্টের বারান্দায়।

তিন বোনের মাঝে মেঝো বোন তমা। ছোট বেলা থেকেই একটু বেশি দুরন্ত ও অভিমানি। তিথী’র ন্যায় তার হাসি আর কান্নাগুলো। এমন কোনদিন নাই যে সে তার ছোট বোন রুপার সাথে পুরোদিন রেগে কিংবা হেসেছিলো। ঠুনকো ব্যাপারেও তার অভিমানের কিংবা ভালোবাসার ছাপ ছিলো অপ্রতুল।শুধু রুপা কেন তার এক বৎসরের বড় ভাইয়ের সাথেও তার এমটি লক্ষনিয়। তবে বাবা-মা’র কাছে অভিমানের চেয়ে ভালোবাসার মাত্রাটাই বেশি ছিলো।

উচ্চ মাধ্যমিকের পর লেখাপড়ার জন্য তমা পরিবার ছেড়ে ছাত্রাবাসে থাকতে বাধ্য হলো। এর আগে তমা কখনো পরিবার ছেড়ে কোথাও থাকেনি। পরিবারে অন্য কেউ থাক আর না থাক ছায়ার মত রূপাই তার সাথে ছিলো। আজ রুপা-তমা দুজনেরই মন খারাপ। প্রতিদিনের মত আজ আর কোন ঝগড়া নয়। একটু পরেই তমা চলে যাবে। দু-জনের চোখে অশ্রু টলমল করছে। তমা ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে, আজ থেকে তোকে মুক্ত করে দিলাম যা। পুরো খাঁটটাতে তুই একাই ‍ঘুমাবি, যেদিকে ইচ্ছে ঐ দিকে মাথা রেখে ঘুমাবি, আর কখনো তোকে লাইট কিংবা ফ্যান অফ করতে বলব না, কখনো আর হেডফোনের ভালো-খারাফ মাথা নিয়ে কাড়াকাড়ি করব না, টিভির রিমোটিও তোর একক ক্ষমতায় থাকবে, ইচ্ছে মত চ্যানেল দেখবি। লুডু খেলা নিয়ে আর গুটিও চুরি করতে আসবো না। পছন্দ অপছন্দ গান নিয়েও আর বিতর্কে আসবো না।রুপা চুপ হয়ে শুধু শুনেই যাচ্ছে রুপার বুক পেটে কান্না পাচ্ছে কাঁদতে পারছে না, কেননা রুপা আর তমা দুইজনে অভিমানের বলে ফুপিয়ে আড়ালে কাঁদতো। আজও দু জন আড়ালেই কাঁদছে। কাল থেকে তমার অনুপস্থিত রুপা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তমাও রুপাকে ছেড়ে একাকি থাকবে বিয়ে ছাড়া কখনো ভাবেনি। এই দিকে রুপা তমার যতগুলো পছন্দের খাবার/জিনিস (যা নিয়ে রুপার সাথে প্রায় ঝগড়া হতো) প্রায় তৈরি করে বক্সে রেখে বক্সটি হাতে ধরিয়ে দিয়ে মুখ খুলল রুপা। তোর সাথে আমার যা নিয়ে ঝগড়া হতো সাধ্যমত তাই দিলাম, চাইলে টিভি ছাড়া রিমোটিও নিয়ে যেতে পারস। লুডু ঘর লাগবে?? এ- নে ধর হেডফোনটি, সব সময় খোটা দিয়ে আসছিস আমার ফোনটি তোর চেয়ে ভালো নে ধর। সব তোকে দিয়ে দিলাম। কিন্তু সব তোকে দিয়েও শুধু অার এক রাত্রে তোর সাথে ঝগড়া করতে চাই, থাকবি? কথাটি ‍শুনে দু’জন দু’জনকে জড়ায় ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। তাদের কান্নায় তাদের মা, ভাইও আরও বেশি ভেঙ্গে পড়েছে।বিয়েতো আর হয়নি, পড়তে যাচ্ছে ভুলে গেলে চলবে? দুদিন পরতো আসবে। ব্যাগটি হাতে নিয়ে তার ভাই বলল, আর তমাকে আসতে তাড়া দিয়ে হাটতে শুরু করল। তমা কিছু দুর গিয়ে পেছনে বার বার তাকিয়ে দেখে রূপা ও তার মা দাঁড়িয়ে আছে দুজনেই কান্নায় আচ্ছন্ন। যাওয়ার পথে ভাই’র উপদেশগুলো শুনতে অন্য দিনের মত কোন হেয়ালি করে নাই তমা। তমাকে ছাত্রাবাসে রেখে তার ভাই চলে আসে। সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে তমা নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছে না, সবসময় তার পরিবারের লোকদের কথা মনে পড়ে বিশেষ করে রুপার কথা। রুপার সাথে কাটানো সময়গুলো তমা এখন খুব বেশি মিস করে। ঐ দিকে রুপাও তমার অনুপস্থিতে কিছুদিন খারাপ লাগলেও পরে কেটে গেলো। ছাত্রাবাসে এসে তমা পড়ালেখার ব্যস্ততা আর অন্যদের সাথে কাটানো সময়তে রুপার অনুপস্থিত খুব বেশি দিন কষ্ট দেয়নি তমাকে। দুজনের মাঝে ফোনালাপ হতো দিনে এক-দুবার কিংবা জরুরী কথা ছাড়া এমন কথা হতো না।

সগীর-কবির, তমা-রুপা’র মত মানুষের জীবনে কারো আগমন কিংবা প্রিয়জনের অনুপস্থিতে ভালোবাসা পরিবর্তন হয়।

কান্নায় জর্জরিত হয়ে নব বধু সেজে শ্বশুড় বাড়ীতে আসা মেয়েটিও একসময় বাবার বাড়ীর লোকজনের অনুপস্থিতে এবং স্বামী এবং শ্বশুড় বাড়ীর লোকদের ভালোবাসায় ভালোবাসা পরিবর্তিত হয় এবং এক সময় তা তার ছেলে-সন্তানের উপর বর্তায়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: দুঃখিত ভাইয়া, প্রথম প্রতিত্তরটি তাড়াহুড়ো করেই দিলাম।
কিছু মনে করবেনা প্লিজ।

আমার ব্লগে মন্তব্য করে সবসময় প্রেরণা দিচ্ছেন।

পাঠ ও মন্তব্যে কৃতজ্ঞ।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪১

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ভালোবাসা মনে হয় চিরদিনের জন্যে পরিবর্তিত হয় না। কখনো কোন একলা পথে রাত্রের অন্ধকারে পুরোনো স্মৃতি হঠাৎ ফিরে এসে মনকে আবারো দোলা দিয়ে যায়।

আপনার লেখা যেমন আমার প্রায় ভুলে যাওয়া সেই সব সোনালী স্মৃতিগুলোকে মনে করিয়ে দিয়ে গেলো!

পাঠে ভালো লাগা।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: কখনো কোন একলা পথে রাত্রের অন্ধকারে পুরোনো স্মৃতি হঠাৎ ফিরে এসে মনকে আবারো দোলা দিয়ে যায়।

সহমত। তবে দুঃখের স্মৃতিগুলোতে দুঃখ বারে।
সুখের স্মৃতিগুলো স্থান কাল ও ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তাও সুখের হয়ে উঠে না আমার কাছে মনে হয়।

পাঠ ও মন্তব্যে ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৫৬

ওমেরা বলেছেন: ভালবাসা ঠিকই থাকে তবে ব্যস্ততার বাস্তবতায় চাপা পরে। আবার ব্যাস্ততা কমে যায় মানে ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে যায়, সংসারের ঝামেলাও তেমন থাকে না তখন আবার নিজের ভাই বোনদের সাথে সম্পর্ক জোড়াল হয় । এটা আমি আমার নানীকে দেখে বুঝেছি।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: : আমি আমার নানীকে দেখে বুঝেছি
হুঁম, নানি কেন, বিভিন্ন ধর্মিয় অনুষ্ঠান কিংবা বড় ছুটি গুলোতেও বাসের টিকেটের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা দেখলেও বুঝা যায় পরিবারের লোকদের ভালোবাসা।

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.