নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“নিতান্ত শায়িত আমি / কোথা আছি / কেউ তা জানে না শুধু / মাছেদের / রাষ্ট্রযন্ত্র তটস্থ / সমাজ / তারা জানে আমার / স্ট্যাটাস” -(ব্রাত্য রাইসু)

তাওহিদ হিমু

.

তাওহিদ হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাষ্ট্রীয় শোক! রাষ্ট্র, তুমি উপনিবেশবাদের বর্জ্য?

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৪৬


দুই হাজার বছরের দাসত্বের রেশ অত সহজে কাটে না; তাই পরপর দুবার স্বাধীনতা পেয়েও শেষ প্রভুদের প্রতি মানসিক দাসত্ব ঘুচছে না। ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব-জিডিপির ২২.৬% ছিল তৎকালীন ভারতের জিডিপি, যা ছিল তখনকার সমগ্র ইউরোপের জিডিপির সমান। আর ১৯৫২ সালে তা হয়ে গেল ৩.৮% মাত্র। ঐতিহাসিক Angus Maddison এর দেওয়া এ তথ্যমতে, ব্রিটিশ শোষণে উপমহাদেশের অর্থনীতির আকার প্রায় ৬ গুণ ছোট হয়ে গেছিল। Zero-sum game থিওরি অনুযায়ী, আমাদের বাকি ৫ গুণ সম্পদ ব্রিটিশদের ঘরে গেছে। ব্রিটিশ ভারত ছিল ব্রিটিশদের জন্য নিছক captive market. অর্থাৎ, তৎকালীন শিল্পব্যবস্থা ধ্বংস করে এ দেশীয় কাঁচামাল নিয়ে যেত পানির দামে, আর তাদের উৎপাদিত পণ্য আমাদের কাছেই বিক্রি করত চড়া দামে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সাথে বানিজ্যের পথ বন্ধ করে আমাদের শোষণ করে গেছে দুই শতক ধরে। যে সুবা বাংলা ছিল মুঘল ভারতের সমৃদ্ধতম অঞ্চল, ব্রিটিশ শাসনাবসানে সেটা হয়ে গেল অন্যতম দারিদ্রপীড়িত অঞ্চল। অর্থাৎ, উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আমরা কয়েকগুণ বেশি শোষিত হয়েছি। তাহলে আমাদের এই করুণ দারিদ্রের জন্য ব্রিটিশ উপনিবেশ ছাড়া আর কাকে দুষতে পারি? হ্যাঁ, তাদের রেখে যাওয়া মানসিক গোলামদের কিছুটা দুষা যায়; যারা তাদের রাণীর মরণে কাতর হয়ে এদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। অথচ এদেশে জাতীয় আনন্দ ঘোষণা করা দরকার ছিল।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সংঘটিত করে বাঙালি জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশকে খুন করেছিল এই এলিজাবেথ-২ এর পূর্বসূরিরা; তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষে তার বাবার রাজত্বে আরো ৩০ লক্ষাধিক খুন। অর্থাৎ বিশ্বে এখন বাঙালির সংখ্যা ৩০ কোটির বদলে ৫০ কোটি হওয়া কথা ছিল। আমরা কি এত সহজে ক্ষমা করে দিতে পারি তাদেরকে? কখনোই না। হয়ত প্রতিশোধ নিতে পারব না বা নেব না; কিন্তু তাদের প্রতি পাকিস্তানের সমান ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়ে যাব, যতদিন না তারা অন্তত ক্ষমা চেয়ে অনুতপ্ত হবে। ক্ষতিপূরণ না দিক।

ভারতে ছয়শ বছরের মুসলিম শাসনামলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অহরহ। এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে, যেখানে মুসলমান রাজা-বাদশাহ'র মন্ত্রী-সেনাপতি ছিল হিন্দু, যেমন মানসিংহ, টোডরমল, হিমু প্রমুখ; আর হিন্দু রাজাদের মন্ত্রী-সেনাপতি ছিল মুসলমান, যেমন ইব্রাহীম গার্দী। ধর্মের চেয়ে ট্যালেন্ট ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ব্রিটিশরা সে-সুন্দর পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে নিয়ে এসেছে হিন্দু-মুসলিম ঘৃণার সংস্কৃতি। একের পর এক দাঙ্গা ঘটিয়েছে, বপন করে গেছে রামমন্দির ইস্যুর মত ভয়াবহ সমস্যার বীজ। স্বাধীনতাকামী কোনো বিপ্লবী হিন্দু হলে তার পিছে লেলিয়ে দিত গোঁড়া মুসলিম পুলিশ, আর মুসলিম হলে তার পিছে লেলিয়ে দিত গোঁড়া হিন্দু পুলিশ। তাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় ভারত তো ভাগ হলোই, সেই সাথে হিন্দু-মুসলিম দ্বৈরথের ফলে এখনো উপমহাদেশের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে আছে। বলা হয়, একটি পুকুরে দুইটি মাছ ঝগড়া করলে, বুঝতে হবে সেখানেও ব্রিটিশদের হাত আছে।

সিরাজুদ্দৌলা, মীর কাশেম, ভবানীচরণ, মজনু শা, তিতুমীর, শরীয়তুল্লাহ, মঙ্গল পাঁড়ে, বাহাদুর শাহ, তাঁর শহীদ প্রিন্সরা, নানা সাহেব, রাণী লক্ষীবাঈ, ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, আমাদের গ্রামের মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা, নেতাজী ও এমন অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী বীরের আত্মবলিদানকে অবজ্ঞা ও অসম্মান করা হলো এই রাষ্টীয় শোক দ্বারা। অধিকতর পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের প্রশাসনযন্ত্র, বিচারব্যবস্থা ও মিলিটারি এখনো ব্রিটিশ সম্রাজ্যের পচাগলা মৃতদেহ ধারণ করে আছে নির্বিকারচিত্তে। এখনো পুলিশ চলে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে, বিচারবিভাগের প্রতিটি স্তরে ব্রিটিশ নিয়মনীতি, চলে অবাধ ইংরেজি। লজ্জাজনক!

মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমাদের করা সবচেয়ে বড় জাতীয় ভুল কোনটি? কেউ বলে ঘাতক রাজাকারদের দ্রুত বিচার না করা, কেউ বলে যুদ্ধ শেষেই মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধে শহীদগণের তালিকা না করা, কেউ বলে সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী সরকার গঠন না করা ইত্যাদি; কিন্তু আমি বলি, সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের ক্রীত গোলামদের প্রশাসন, বিচারবিভাগ ও মিলিটারি সমূলে উৎপাটিত করে নতুন আইন-কানুনসহ সম্পূর্ণ নতুন প্রশাসন, বিচারবিভাগ ও মিলিটারি গড়ে না তোলা।

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:০৪

জিকোব্লগ বলেছেন:



উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম ঘৃণার সংস্কৃতি তৈরী করার জন্য
ব্রিটিশদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। ব্রিটিশ সম্রাজ্য নিপাত যাক।

আচ্ছা, মুক্তিযুদ্ধে এই রানীর কি কোন ভূমিকা ছিল ?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:২৮

তাওহিদ হিমু বলেছেন: নিপাত অলমোস্ট গেছে। কিন্তু এখনো তাদের রীতি-রেওয়াজ ও তাদের প্রতি এক রকম দাসত্বের মানসিকতা পোষণ করা দেখলে বিরক্ত লাগে আরকি।
মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা যাই হোক, ব্রিটিশ সম্রাজ্য আমাদের যা ক্ষতি করে গেছে তা ভুলবার নয়। তাদের প্রতি ঘৃণা না জানালে, ভবিষ্যতে এমন সমাজ্যবাদ আবার চালু হতে পারে এবং গোলামেরা নতুন প্রভু খুঁজে নিয়ে শোষণকে নর্মালাইজড করার চেষ্টা করবে।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:৫৬

রাােসল বলেছেন: Thanks for your topic. Agree with you. So far I observed the British developed very little in Bangladesh compare to other part of Indian sub continent and Burma.
I think we have also fault. We had much good things to acquire from British but we did not do that. We accepted the bad things.

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:২৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: এদেশের রাজনীতিবিদরা পাকিস্তানেই আটকে আছে, এর পিছনে আর তাকাতে পারে না।
এতে তাদের তাজনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হবার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১১

তাওহিদ হিমু বলেছেন: এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তার চেয়ে বড় দুঃখ, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সকল বৈশিষ্ট্য আমাদের রাষ্ট্র ধরে রেখেছে (রাষ্ট্র তো ধরে রাখে না, রাষ্ট্রকে ধরে রাখিয়েছে আমাদের নেতারা)। এমনকি আমাদের দেশে বর্তমানে উন্নয়নের যে হৈচৈ চলছে, তাও আইয়ুব খান ও জিয়াউল হকের উন্নয়নের অনুকরণ বলা যায়।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৯

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: এর রানীর আব্বু আমাদের অঞ্চলের শেষ রাজা ছিলেন।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯

তাওহিদ হিমু বলেছেন: তার বাবা জর্জ-৬ এর রাজত্বে আমাদের বিপুল ক্ষতি হয়েছিল।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: কোহিনুর এখন কার মাথায় ওঠে, সেটাই দেখার বিষয়। ডায়না বেচেঁ থাকলে হয়ত ভারতবর্ষকে ফেরত দিত।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২৯

তাওহিদ হিমু বলেছেন: মনে হয় না ফেরত দিত। সব রসুনের গোড়া এক।

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:০৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: তাওহিদ হিমু,



দু'শ বছরের গোলামীর রক্ত এখনও প্রবাহমান আমাদের রক্তে! গোলামীর সুযোগ পা্ওয়া মাত্রই তা টগবগিয়ে ওঠে।
স্বভাব যায়না ম'লে......

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:১২

তাওহিদ হিমু বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫২

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: কূটনীতিক সৌজন্যতা থাকুক কিন্তু বাঙালিদের কান্নাকাটির হেতু বুঝি নি। গোলামের জাত গোলামই থাকবে।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০১

তাওহিদ হিমু বলেছেন: কূটনৈতিক সৌজন্যের জন্যও শোক পালনের দরকার ছিল না। একটা বিবৃতি যথেষ্ট ছিল।

৮| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২২

নূর আলম হিরণ বলেছেন: জাপানিরা আমেরিকানদের কি চোখে দেখে?

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৮

তাওহিদ হিমু বলেছেন: জাপান-আমেরিকার উদাহরণ এখানে খাটে না। ওদের মধ্যে একটামাত্র যুদ্ধ হয়েছিল, তাও জাপানিদের আগাম হামলায় শুরু হওয়া। জাপানিরা আশেপাশের দেশে যেসব নৃশংস ইনভেশন চালিয়েছে, সে তুলনায় ২টা এটম বোমা বেশি না। আবার পরে আমেরিকা ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক সাহায্যের মাধ্যমে। আজ জাপানের এত উন্নতির পেছনে আমেরিকার অবদান সবচেয়ে বেশি।

৯| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৪৮

নূর আলম হিরণ বলেছেন: ব্রিটিশদের আমেরিকানরা কি চোখে দেখে? সৌদিদের সাথে ইসরাইলীদের সম্পর্ক কেমন?

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:১১

তাওহিদ হিমু বলেছেন: কী চোখে দেখে বা সম্পর্ক কেমন, তা সবই জানি। দুটার কোনোটাই এখানে উদাহরণ হিসেবে খাটে না। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের উদাহরণ কিছুটা খাটে।

১০| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:১৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আমার ইতিহাস ক্লাসে এক ব্রিটিশ ছেলে পড়তো, বিভিন্ন আলোচনা প্রসঙ্গে তাদের উপনিবেশিকতার বিষয় আসলে পুরো ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে ৫/৭ মিনিটে ধুঁয়ে দিয়েছি। আমার পূর্ব পুরুষদের সম্পদ লুণ্ঠন আর তাদের প্রতি করা অন্যায়-অত্যাচারের কিছু নমুনা তুলে ধরেছিলাম। ওর বকবকানি ঐ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

অবাক লাগে যে একটা দুষ্ট বুড়ির মৃত্যুতেও বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। খুব সম্ভবত দু'শ বছরের দাসত্বের মানসিকতা থেকে কিছু মানুষ এখনো পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে নি। জাতি হিসেবে এটা লজ্জ্বার এবং ঘৃণার। এক চার্চিলের সিদ্ধান্তের কারণে লক্ষ ক্ষুধার্ত বাঙালীর প্রাণ গেলেও বাঙালী তা বেমালুম ভুলে যায় তার পূর্ব-পুরুষের প্রতি করা অন্যায়কে। এমন জাতি ধ্বংস হবে শুধুমাত্র স্বজাতির প্রতি অকৃতজ্ঞতা আর বেঈমানির কারনে।

লেখককে ধন্যবাদ জানাই সময়োপযোগী লিখার জন্য।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১৭

তাওহিদ হিমু বলেছেন: ঠিক বলেছেন। আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.