নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/tonmoypoetry

তন্ময় কে সাহা

কোন এক শনিবার সকাল ছয় টায় আমার জন্ম হয়েছল। আর বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। এখনকার মত তখন যদি দৌড়াতে পারতাম, তবে একদৌড়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতাম।

তন্ময় কে সাহা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঃশেষে নিশাব্দি

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

নিশাব্দি উনিশ বছর বয়সী ধীর স্থির চুপচাপ একজন মেয়ে, আপাতত তার সুশ্রী রূপ, মায়াকাড়া চোখ, লম্বা কালো চুল সব কিছুই আছে। একটা প্রেমিক পাওয়ার ইচ্ছা কোন কালেই তার ছিল না, কিন্তু যারা ওর পেছনে মৌমাছির মতো ঘুরে বেড়ায় তাদেরও কখনো অবহেলা বা ওর যোগ্য না এমন কখনো ভাবে নাই। বন্ধুত্তের হাত টা সব সময় ও বাড়িয়ে দিত তাদের জন্য কিন্তু শর্ত ছিল যে বন্ধুত্ব মানেই পরে একটা পর্যায়ে যেয়ে আবার প্রপোজ করা নয়।

নিশাব্দি সব কিছুর পর ও নিজের ভেতরে থাকা নিশাব্দি কে নিয়ে ভাবতো। কখনো আনমনা হয়ে যেতেও লক্ষ্য করা গেছে। কখনো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আনমনা হয়ে বির বির করে একা একাই কথা বলতে দেখা গেছে। কেউ জানতোনা কি চায় ও, কি ভালো লাগে ওর। কখনো ঘরে কাঁদতেও শোনা গেছে কিন্তু কারনটা সকলের অজানাই ছিল।
নিশাব্দি প্রতিদিন কলেজ থেকে বাসায় আসার পথে ঔষধের দোকানে ঢুকে কিছু ঔষধ কিনত, কিন্তু কিসের সে ঔষধ তার পরিবারের কেউ কি জানতো সে কিসের ঔষধ কিনছে আর তাকে ঔষধ সেবন করতেও দেখা যায় নি।

প্রতিদিন যে কাজ গুলো নিশাব্দি করে থাকে আজো সেই কাজ গুলো করেছে, কলেজ থেকে ফিরে স্নান সেরে খেয়ে নিজের ঘরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিল ও।খানিক পরে আয়নার সামনে গিয়ে সুন্দর করে সেজে নিল। একটা শাড়ী পরে নিল গোলাপি রঙের। শাড়ির সাথে মিলিয়ে টিপ দিলো কপালের মাঝখানে তবে একটু বাকা করে। ওর অভ্যাসটাই ছিল একটু উল্টো রকমের। তার পর চুরি পড়লো। এবার সে ড্রয়ার খুলে নিল,প্রতিদিন যে ঔষধ গুলো সে কিনত সেই ঔষধ গুলো সে বের করলো। তার পর বিছানায় বসে সব গুলো ঔষধ কিছু কিছু করে গিলে ফেলল।

ঔষধ গুলো খাওয়ার পর তার জানালার কাছে যেতে ইচ্ছে করছিলো সে চলেও গেলো সে দেখতে পেল সাইকেল এ চেপে একটি ছেলে আসছিলো, নিশাব্দি কে দেখা মাত্রই সে সাইকেল থামিয়ে একটু ইশারা করলো নিশাব্দির দিকে, নিশাব্দি একটু মুচকি হেসে সরে আসলো জানালা থেকে।

আসার সময় তার কানে একটা সুমিষ্ট সুর ভেসে আসলো, সে জানালার কাছে আবার গেলো কিন্তু ছেলেটি নেই, গাছ গুলোর ওই পাশে বসে কে যেন গীটার আর বাঁশি বাজাচ্ছিল, ঔষধ গুলোর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আর ওর মনে হচ্ছিল সেই ভেসে আসা সুরের সাথে ও পারি দিচ্ছিল কোন এক অচেনা অন্ধকারের পথে। নিশাব্দি লুটিয়ে পড়লো জানলার কোল ঘেঁষেই।

হ্যাঁ নিশাব্দি সুইসাইড করার জন্য ঔষধ গুলো কিনত। একেবারে ঘুমের ঔষধ পাওয়া যাবে না বলে প্রতিদিন সে কিছু কিছু করে কিনত। আর মেয়েরা একটু রোমান্টিক পদ্ধতিতেই সুইসাইড করতে চায় তাই হয়তো অনেক সেজেছিল।

চোখ খুলে নিশাব্দি দেখতে পেলো তার গায়ে সাদা পোশাক, বা হাতে একটা সিরিঞ্জ এর নল ঢুকানো, সে শুয়ে আছে একটা সিঙ্গেল ব্যাডে, তার একটুও বুঝতে অসুবিধা হোল না সে হাসপাতালে আছে। সে তখন এটাও ভাবছে তাকে কে বাঁচাল? যদিও মরতে চেয়েছিল তবুও শেষ পর্যায়ে তার বাঁচার ইচ্ছা ছিল তাই হয়তো ঈশ্বর তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

শুয়ে থাকা অবস্থায় নিশাব্দি ঘাড় ঘুরিয়ে পুরো ঘরটা দেখে নিলো, বড্ড অদ্ভুদ লাগছে সব, সব কিছু এক রং এর মনে হচ্ছে। পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটার দিকে চোখ পড়লো তার, কিছু গোলাপি আর হলুদ রঙের গ্যাডিওলাক্স ফুল শোভা পাচ্ছিলো ওইখানে। গোলাপি রং টা দেখা মাত্র তার সবকিছু এক রঙের মনে হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।

সে চিৎকার দিবে কিন্তু তার শরীরে একটুও শক্তি ছিল না, গলাটাতেও প্রচণ্ড বেথা অনুভব করছিলো সে, ঠিক এই মুহূর্তে তার কেবিনে কর্তব্যরত চিকিৎসক এসে হাসিমুখে বলল কেমন আছো মামনি। ঘাড় নেড়ে স্বস্তির আভাস দিলেন চিকিৎসককে।

তার পর তাকে একটু দেখে জানতে চাইলেন কেন করেছিলে এমন মামনি। নিশাব্দি ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে। পৃথিবীর সমস্ত অসহায়ত্ব তার মুখে ফুটে উঠেছিলো, চিকিৎসক বুঝতে পেরে আর কিছু না বলে হাসিমুখে চলে গেলেন।

এর মধ্যেই নিশাব্দির বাবা মা আর অনির্বাণ নামের একজন ছেলে তাকে দেখতে আসে। যখন তার কেবিনে সকলে ঢুকে পড়লো তখন নিশাব্দির মনে অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো, তখনো নিশাব্দি অনির্বাণ কে দেখেনি, সে পাশ ফিরে মুখটি কে আড়াল করার চেষ্টা করলো কিন্তু তার বাবা মা তাকে ডেকে মুখটি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো তখন নিশাব্দির চোখ পড়লো অনির্বাণ এর দিকে।

ওকে দেখে একটা শুকনা হাসি হাসল নিশাব্দি আর অনির্বাণ করুণ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল। ওদের রেখে বাবা মা বাইরে এসে চিকিৎসক এর সাথে কথা বলতে লাগলো।

অনির্বাণ ও একই প্রশ্ন করলো কেন করলা এমন। নিশাব্দি চুপ, চোখের কিছু জল আর একটু শুকনো হাসি দিয়েই হয়তো এবারও আড়াল করতে চেয়েছিল কারণটা। কিন্তু অনির্বাণ তো নাছোড়বান্দা সে বলল বলতেই হবে। নিশাব্দি আর না পেরে বলে দিলো বাসায় গিয়ে কোন এক বিকেলে কফি পান করতে করতে কথা হবে।

নিশাব্দি দুইদিন পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল। ঘরে ফিরে এসে দেখল তার ঘর অন্যরকম করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। মাদার তেরেসার ছবিটা মাথার কাছ থেকে এনে সামনে রাখা হয়েছে যেন চোখ খুলেই তাকে দেখা যায়।

বিছানাটা জানালা থেকে অনেকটাই দূরে ছিল কিন্তু এখন তা জানালার কাছাকাছি আনা হয়েছে, বেশ স্বস্তি বোধ করছে নিশাব্দি কিন্তু শরীর তখনো দুর্বল। বিকেলের সূর্য টা বেলা শেষে বাড়ি ফিরছে, আধশোয়া অবস্থায় নিশাব্দি দৃশ্যটা উপভোগ করছে।

তার বাবা ঘরের দরজায় এসে বলল- মা আসবো? নিশাব্দি একটু হেসে বলল এসো বাবা। কেমন লাগছে মা? ভালো লাগছে বাবা। তোর ঘরটা একটু অন্যরকম করে গুছিয়ে দিতে বলেছি পছন্দ হয়েছে তো?
নিশাব্দি- পছন্দ হয়েছে বাবা। তুই এখন একটু শুয়ে থাক মা, আমি পরে এসে তোকে দেখে যাবো, আচ্ছা বাবা।

নিশাব্দি আবার জানালায় চোখ রাখল। সেদিনের সেই সাইকেলওয়ালা ছেলেটিকে দেখতে ইচ্ছে করছে। সে কি বিগত দিনেও এই রাস্তায় যাওয়া আসা করেছে, জানালায় তাকিয়েছে?

গীটার আর বাঁশির সুর এখন বাজছে না কেন, নিশাব্দির খুব অস্থির লাগতে শুরু করল। আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে কানে, নিশাব্দির বের হতে ইচ্ছে করছে বাড়ি থেকে কিন্তু শক্তি পাচ্ছে না। কাল একবার বের হতে চায় নিশাব্দি। রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের বাতিটাকে তার চাঁদ মনে হয়, চাঁদেরও কলঙ্ক আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.